উপসংহার

Durga Saptashati Image

উপসংহার

এইভাবে সপ্তশতী পাঠ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে প্রথমে নবার্ণমন্ত্রজপ করে তারপর দেবীসূক্ত পাঠের নিয়ম রয়েছে। সুতরাং এখানেও নবার্ণ- বিধি উদ্ধৃত করা হল। সব ক্রিয়া আগের মতই হবে।

বিনিয়োগঃ

শ্রীগণপতির্জয়তি। ওঁ অস্য শ্রীনবার্ণমন্ত্রস্য ব্রহ্মবিষ্ণুরুদ্রা ঋষয়ঃ, গায়ত্র্যফিগনুষ্টুভহুন্দাংসি, শ্রীমহাকালীমহালক্ষ্মী- মহাসরস্বত্যো দেবতাঃ, ঐং বীজম্, হ্রীং শক্তিঃ, ক্লীং কীলকম, শ্রীমহাকালীমহালক্ষ্মীমহাসরস্বতীপ্রীত্যর্থে জপে বিনিয়োগঃ।

ঋষ্যাদিন্যাসঃ

ব্রহ্মবিষ্ণুরুদ্রঋষিভ্যো নমঃ, শিরসি। গায়ত্র্যষ্ণিগনুষ্টুপ্- হন্দোভ্যো নমঃ, মুখে। মহাকালীমহালক্ষ্মীমহাসরস্বতী- দেবতাভ্যো নমঃ, হৃদি। ঐং বীজায় নমঃ, গুহ্যে। হ্রীং শক্তয়ে নমঃ, পাদয়োঃ। ক্লীং কীলকায় নমঃ, নাভৌ।
'ওঁ ঐ হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে'-এই মূল মন্ত্রে করশুদ্ধি করে করন্যাস করবে।

করন্যাসঃ

ওঁ ঐং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ। ওঁ হ্রীং তর্জনীভ্যাং নমঃ। ওঁ ক্লীং মধ্যমাভ্যাং নমঃ। ওঁ চামুণ্ডায়ৈ অনামিকাভ্যাং নমঃ। ওঁ বিচ্চে কনিষ্ঠিকাভ্যাং নমঃ। ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে করতলকরপৃষ্ঠাভ্যাং নমঃ।

হদয়াদিন্যাসঃ

ওঁ ঐং হৃদয়ায় নমঃ। ওঁ হ্রীং শিরসে স্বাহা। ওঁ ক্লীং শিখায়ৈ বষট্। ওঁ চামুণ্ডায়ৈ কবচায় হুম্। ওঁ বিচ্চে নেত্রত্রয়ায় বৌষট্। ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে অস্ত্রায় ফট্।

অক্ষরন্যাসঃ

ওঁ ঐং নমঃ, শিখায়াম্। ওঁ হ্রীং নমঃ, দক্ষিণনেত্রে। ওঁ ক্লীং নমঃ, বামনেত্রে। ওঁ চাং নমঃ, দক্ষিণকর্ণে। ওঁ মুং নমঃ, বামকর্ণে। ওঁ ডাং নমঃ, দক্ষিণনাসাপুটে। ওঁ য়ৈং নমঃ, বামনাসাপুটে। ওঁ বিং নমঃ, মুখে।ওঁ চ্চেং নমঃ, গুহ্যে।'এবং বিন্যস্যাষ্টবারং মূলেন ব্যাপকং কুর্যাৎ'

দিঙ্ন্যাস

ওঁ ঐং প্রাচ্যে নমঃ। ওঁ ঐং আগ্নেয্যৈ নমঃ। ওঁ হ্রীং দক্ষিণায়ৈ নমঃ। ওঁ হ্রীং নৈঋত্যৈ নমঃ। ওঁ ক্লীং প্রতীচ্যে নমঃ। ওঁ ক্লীং বায়ব্যৈ নমঃ। ওঁ চামুণ্ডায়ৈ উদীচ্যৈ নমঃ। ওঁ চামুণ্ডায়ৈ ঐশান্যৈ নমঃ। ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে উর্ধ্বায়ৈ নমঃ। ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে ভূম্যৈ নমঃ।

ধ্যানম্

খড়গং চক্রগদেষুচাপপরিঘাঞ্ছলং ভুশুণ্ডীং শিরঃ শঙ্খং সংদধতীং করৈস্ত্রিনয়নাং সর্বাঙ্গভূষাবৃতাম্। নীলাম্মদ্যুতিমাস্যপাদদশকাং সেবে মহাকালিকাং যামস্তৌৎ স্বপিতে হরৌ কমলজো হন্ত্রং মধুং কৈটভম্৷৷ ১ ৷৷
অক্ষস্রক্সরশুং গদেষুকুলিশং পদ্মং ধনুঃ কুণ্ডিকাং দণ্ডং শক্তিমসিং চ চর্ম জলজং ঘণ্টাং সুরাভাজনম্। শূলং পাশসুদর্শনে চ দধতীং হস্তৈঃ প্রসন্নাননাং সেবে সৈরিভমর্দিনীমিহ মহালক্ষ্মীং সরোজস্থিতাম্।৷৷ ২৷৷
ঘণ্টাশূলহলানি শঙ্খং মুসলে চক্রং ধনুঃ সায়কং হস্তাজৈর্দধতীং ঘনান্তবিলসচ্ছীতাংশুতুল্যপ্রভাম্। গৌরীদেহসমুক্তবাং ত্রিজগতামাধারভূতাং মহা- পূর্বামত্র সরস্বতীমনুভজে শুম্ভাদিদৈত্যার্দিনীম্।। ৩।।

এইভাবে ন্যাস ও ধ্যান করে মানসিক উপচারে দেবীর পূজা করা কর্তব্য। তারপর ১০৮ অথবা ১০০৮ বার নবার্ণমন্ত্র জপ করা উচিত। জপের প্রারম্ভে প্রথমে 'ঐং হ্রীং অক্ষমালিকায়ৈ নমঃ' এই মন্ত্রে মালাকে পূজা করে এইভাবে প্রার্থনা করবে-

ওঁ মাং মালে মহামায়ে সর্বশক্তিস্বরূপিণি।
চতুর্বর্গস্তুয়ি ন্যস্তস্তস্মান্মে সিদ্ধিদা ভব।
ওঁ অবিঘ্নং কুরু মালে ত্বং গৃহ্ণামি দক্ষিণে করে।
জপকালে চ সিদ্ধ্যর্থং প্রসীদ মম সিদ্ধয়ে।।
ওঁ অক্ষমালাধিপতয়ে সুসিদ্ধিং দেহি দেহি সর্বমন্ত্রার্থসাধিনি সাধয় সাধয় সর্বসিদ্ধিং পরিকল্পয় পরিকল্পয় মে স্বাহা।

এই প্রার্থনার পর জপ আরম্ভ করবে। জপ সম্পূর্ণ করে ভগবতীর কাছে জপ সমর্পণ করবে।

গুহ্যাতিগুহ্যগোপী ত্বং গৃহাণাস্মৎকৃতং জপম্। সিদ্ধির্ভবতু মে দেবি ত্বৎপ্রসাদান্মহেশ্বরি।

তারপর নিম্নলিখিতভাবে ন্যাস করবে।

করন্যাসঃ

ওঁ হ্রীং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ। ওঁ চং তর্জনীভ্যাং নমঃ। ওঁ ডিং মধ্যমাভ্যাং নমঃ। ওঁ কাং অনামিকাভ্যাং নমঃ। ওঁ য়ৈং কনিষ্ঠিকাভ্যাং নমঃ। ওঁ হ্রীং চণ্ডিকায়ৈ করতলকরপৃষ্ঠাভ্যাং নমঃ।

হৃদয়াদিন্যাসঃ

ওঁ খড়িগনী শূলিনী ঘোরা গদিনী চক্রিণী তথা।
শঙ্খিনী চাপিনী বাণভুশুণ্ডীপরিঘায়ুধা।। হৃদয়ায় নমঃ।
ওঁ শূলেন পাহি নো দেবি পাহি খড়োন চাম্বিকে।
ঘণ্টাস্বনেন নঃ পাহি চাপজ্যানিঃস্বনেন চ।। শিরসে স্বাহা।
ওঁ প্রাচ্যাং রক্ষ প্রতীচ্যাং চ চণ্ডিকে রক্ষ দক্ষিণে।
ভ্রামণেনাত্মশূলস্য উত্তরস্যাং তথেশ্বরি।। শিখায়ৈ বষট্।
ওঁ সৌম্যানি যানি রূপাণি ত্রৈলোক্যে বিচরন্তি তে।
যানি চাত্যর্থঘোরাণি তৈ রক্ষাস্মাংস্তথা ভুবম্।। কবচায় হুম্।
ওঁ খড়াশূলগদাদীনি যানি চাস্ত্রাণি তেহম্বিকে।
করপল্লবসঙ্গীনি তৈরস্মান্ রক্ষ সর্বতঃ।। নেত্রত্রয়ায় বৌষট্।
ওঁ সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে।
ভয়ভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোহস্তু তে।। অস্ত্রায় ফট্।

ধ্যানম্

ওঁ বিদ্যুদ্দামসমপ্রভাং মৃগপতিঙ্কন্ধস্থিতাং ভীষণাং কন্যাভিঃ করবালখেটবিলসদ্ধস্তাভিরাসেবিতাম্।
হন্তৈশ্চক্রগদাসিখেটবিশিখাংশ্চাপং গুণং তর্জনীং বিভ্রাণামনলাম্বিকাং শশিধরাং দুর্গাং ত্রিনেত্রাং ভজে।।

ঋগ্বেদোক্ত দেবীসূক্ত

Durga Saptashati Image

অথ ঋগ্বেদোক্ত দেবীসূক্তম্

ঋগ্বেদোক্ত দেবীসূক্ত

ওঁ অহমিত্যষ্টর্চস্য সূক্তস্য বাগাঞ্ছণী ঋষিঃ, সচ্চিৎসুখাত্মকঃ সর্বগতঃ পরমাত্মা দেবতা, দ্বিতীয়ায়া ঋচো জগতী, শিষ্টানাং ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ, দেবীমাহাত্ম্যপাঠে বিনিয়োগঃ।

ধ্যানম্

ওঁ সিংহঙ্গা শশিশেখরা মরকতপ্রখ্যৈশ্চতুর্তির্ভুজৈঃ শঙ্খং চক্রধনুঃশরাংশ্চ দধতী নেত্রৈস্ত্রিভিঃ শোভিতা।
আমুক্তাঙ্গদহারকঙ্কণরণৎকাঞ্চীরণন্নুপুরা দুর্গা দুর্গতিহারিণী ভবতু নো রত্নোল্লসৎকুণ্ডলা।

সিংহের পৃষ্ঠে বিরাজমানা, শশিমৌলিশেখরা, মরকতমণিসমুজ্জ্বলা, চার হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনু ও বাণধারিণী, ত্রিনয়না, বিভিন্ন অঙ্গে বাজুবন্ধ, হার, কঙ্কন, ঝনঝন শব্দকারী করধনী এবং নূপুরসিঞ্জিত চরণযুগল আর যার কর্ণযুগলে রত্নখচিত কুণ্ডল দোদুল্যমান, সেই ভগবতী দুর্গা আমার দুর্গতি নাশকারিণী হোন।

দেবীসূক্তম্

ওঁ অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরাম্যহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ। অহং মিত্রাবরুণোভা বিভ্যহমিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা। ১ ৷৷

(মহর্ষি অঙ্গণের কন্যার নাম বাক্। তিনি অসীম ব্রহ্মজ্ঞানী ছিলেন। তিনি দেবীর সাথে তাদাত্ম্য লাভ করেছিলেন। তিনি বলছেন-) আমি সচ্চিদানন্দময়ী সর্বাত্মা দেবী রুদ্র, বসু, আদিত্য তথা বিশ্বেদেবগণরূপে বিচরণ করি। মিত্র এবং বরুণ দুজনকে, ইন্দ্র ও অগ্নিকে তথা অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে আমিই ধারণ করি। ১ ৷৷

অহং সোমমাহনসং বিভ্যহং ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম্। অহং দধামি দ্রবিণং হবিস্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুম্বতে। ২৷৷

দেবশত্রুবিনাশন আকাশচারী দেবতা সোমকে, ত্বষ্টা প্রজাপতি তথা পৃষা এবং ভগকে আমিই ধারণ করি। যিনি হবিষ্যের দ্বারা সম্পন্ন হয়ে দেবতাদের উত্তম হবিষ্য প্রাপ্ত করান এবং তাঁদের সোমরসের দ্বারা তৃপ্ত করান সেই যজমানকে আমিই উত্তম যজ্ঞফল এবং ধন প্রদান করি। ২ ।

অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্। তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূর্যাবেশয়ন্তীম্৷৷ ৩৷৷

আমি সমগ্র জগতের ঈশ্বরী, আমার উপাসকদের ধনপ্রাপ্তকারিণী, সাক্ষাৎকারের যোগ্য পরব্রহ্মকে অভিন্নরূপে জ্ঞাতা তথা পূজনীয় দেবতাদের প্রধান আমি। প্রপঞ্চরূপে আমি নানা ভাবসমূহে অবস্থিতা। সর্বভূতে জীবরূপে আমি প্রবিষ্টা। বিভিন্নস্থানে অবস্থিত দেবতারা যেখানে যা কিছুই করেন, সবই আমার আরাধনার উদ্দেশ্যে করেন।। ৩ ॥

ময়া সো অন্নমত্তি যো বিপশ্যতি যঃ প্রাণিতি য ঈং শূণোত্যুক্তম্। অমন্তবো মাং ত উপ ক্ষিয়ন্তি শ্রুধি শ্রদ্ধিবং শ্রুত বদামি। ৪ ৷৷

আমারই শক্তিতে সকলে অন্ন ভোজন করে (কারণ আমিই ভোফ্-শক্তি); এইরকমই যে দেবতা, শ্বাসপ্রশ্বাসাদি নির্বাহ করে, তথা বক্তব্য বাক্য শ্রবণ করে, এই সবই আমারই শক্তিতে ওই সব কর্ম করতে সমর্থ হয়। যে আমাকে এভাবে না জানে সে অজ্ঞানতার দরুণই দীনদশা প্রাপ্ত হয়। হে বহুশ্রুত! আমি তোমাকে শ্রদ্ধালভ্য ব্রহ্মতত্ত্ব উপদেশ দিচ্ছি, শোনো-॥ 8 ॥

অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং দেবেভিরুত মানুষেভিঃ। যং কাময়ে তং তমুগ্রং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমৃষিং তং সুমেধাম্ ॥ ৫ ৷৷

দেবতা ও মানুষের প্রার্থিত এই দুর্লভ তত্ত্ব আমি স্বয়ং বর্ণন করছি। আমি যাদের রক্ষা করতে চাই, তাদের আমি সকলের চেয়ে অধিক শক্তিশালী করি। তাদের আমি সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পরোক্ষ জ্ঞানবান ঋষি এবং অতি উত্তম মেধাশক্তিসম্পন্ন করি।। ৫ ।।

অহং রুদ্রায় ধনুরা তনোমি ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ। অহং জনায় সমদং কৃণোম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ। ৬ ৷৷

ব্রহ্মদ্বেষী, হিংসুক অসুরদের বধ করার জন্য রুদ্রের ধনুতে আমি জ্যা সংযুক্ত করি। শরণাগতজনের রক্ষার্থে শত্রুদের সাথে আমি যুদ্ধ করি তথা অন্তর্যামীরূপে পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে ব্যাপ্ত রয়েছি।। ৬।।

অহং সুবে পিতরমস্য যোনির স্বন্তঃ মূর্ধন্মম সমুদ্রে। ততো বি তিষ্ঠে ভুবনানু বিশ্বো- তামূং দ্যাং বর্মণোপ স্পৃশামি। ৭৷৷

এই জগতের পিতৃস্বরূপ আকাশকে সর্বাধিষ্ঠানস্বরূপ পরমাত্মার ঊর্ধ্বে সৃষ্টি করি। সমুদ্রে (সর্বজীবের উৎপত্তিস্থান পরমাত্মাতে) তথা জলে (বুদ্ধির ব্যাপক বৃত্তিতে) আমার কারণের (কারণস্বরূপ চৈতন্য ব্রহ্মের) অধিষ্ঠান; সুতরাং আমি সমগ্র ভুবনে ব্যাপ্ত রয়েছি তথা সেই স্বর্গলোককেও নিজের শরীর দ্বারা স্পর্শ করে থাকি। ৭ ।।

অহমেব বাত ইব প্রবাম্যারভমাণা ভুবনানি বিশ্বা। পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈতাবতী মহিনা সংবভূব। ৮ ।।

কারণরূপে আমি যখন বিশ্বসৃষ্টি আরম্ভ করি, তখন অন্য কারও দ্বারা চালিত না হয়ে স্বয়ংই বায়ুর মতো স্বচ্ছন্দে সর্বত্র বিচরণ করি, নিজেরই ইচ্ছাশক্তিতে কর্মে প্রবৃত্ত হই। আমি পৃথিবী এবং আকাশ দুই-এরই অতীত। নিজের মহিমাতেই আমি এইরূপ হয়েছি। ৮।।

তন্ত্রোক্ত দেবীসূক্ত

Durga Saptashati Image

অথ তন্ত্রোক্তং দেবীসূক্তম্

তন্ত্রোক্ত দেবীসূক্ত

নমো দেব্যৈ মহাদেব্যৈ শিবায়ৈ সততং নমঃ।
নমঃ প্রকৃত্যৈ ভদ্রায়ৈ নিয়তাঃ প্রণতাঃ স্ম তাম্।১ ৷৷

রৌদ্রায়ৈ নমো নিত্যায়ৈ গৌর্যে ধাত্র্যৈ নমো নমঃ।
জ্যোৎস্নায়ৈ চেন্দুরূপিণ্যৈ সুখায়ৈ সততং নমঃ৷ ২৷৷

কল্যাণ্যৈ প্রণতাং বৃদ্ধ্যৈ সিন্ধ্যে কুর্মো নমো নমঃ।
নৈর্ঝত্যৈ ভূভৃতাং লক্ষ্যে শর্বাণ্যৈ তে নমো নমঃ৷৩৷৷

দুর্গায়ৈ দুর্গপারায়ৈ সারায়ৈ সর্বকারিণ্যৈ।
খ্যাত্যৈ তথৈব কৃষ্ণায়ৈ ধূম্রায়ৈ সততং নমঃ৷৪৷৷

অতিসৌম্যাতিরৌদ্রায়ৈ নতান্তস্যৈ নমো নমঃ।
নমো জগৎপ্রতিষ্ঠায়ৈ দেব্যৈ কৃত্যৈ নমো নমঃ ॥৫ ৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৬৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু চেতনেত্যভিষীয়তে।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ॥৭॥

যা দেবী সর্বভূতেষু বুদ্ধিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷ ৮৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু নিদ্রারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷ ৯৷

যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষুধারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷ ১০৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষুচ্ছায়ারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷ ১১৷

যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷১২৷

যা দেবী সর্বভূতেষু তৃষ্ণারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৷১৩৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷১৪৷৷।

যা দেবী সর্বভূতেষু জাতিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৷১৫৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু লজ্জারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷১৬৷

যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷১৭৷

যা দেবী সর্বভূতেষু শ্রদ্ধারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷১৮৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু কান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷১৯৷

যা দেবী সর্বভূতেষু লক্ষ্মীরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷ ২০৷

যা দেবী সর্বভূতেষু বৃত্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷২১৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু স্মৃতিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷ ২২৷

যা দেবী সর্বভূতেষু দয়ারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ। ২৩৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু তুষ্টিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ। ২৪৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ। ২৫৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু ভ্রান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ। ২৬৷৷

ইন্দ্রিয়াণামধিষ্ঠাত্রী ভূতানাং চাখিলেষু যা।
ভূতেষু সততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমো নমঃ৷ ২৭ ॥

চিতিরূপেণ যা কৃৎস্নমেতদ্ব্যাপ্য স্থিতা জগৎ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷ ২৮৷৷

স্তুতা সুরৈঃ পূর্বমভীষ্টসংশ্রয়া- ত্তথা সুরেন্দ্রেণ দিনেষু সেবিতা।করোতু সা নঃ শুভহেতুরীশ্বরী শুভানি ভদ্রাণ্যভিহন্ত্র চাপদঃ। ২৯৷৷

যা সাম্প্রতং চোদ্ধতদৈত্যতাপিতৈ- রস্মাভিরীশা চ সুরৈর্নমস্যতে।
যা চ স্মৃতা তৎক্ষণমেব হস্তি নঃ সর্বাপদো ভক্তিবিনম্রমূর্তিভিঃ ৷৷ ৩০ ॥

প্রাধানিক রহস্য

Durga Saptashati Image

অথ প্রাধানিকং রহস্যম্

প্রাধানিক রহস্য

ওঁ অস্য শ্রীসপ্তশতীরহস্যত্রয়স্য নারায়ণ ঋষিরনুষ্টুপছন্দঃ, মহাকালীমহালক্ষ্মীমহাসরস্বত্যো দেবতা যথোক্তফলাবাপ্ত্যর্থং জপে বিনিয়োগঃ।

ওঁ সপ্তশতীর এই তিন রহস্যের ঋষি নারায়ণ, অনুষ্টুপ্ ছন্দ, মহাকালী মহালক্ষ্মী ও মহাসরস্বতী দেবতা। শাস্ত্রোক্ত ফল লাভের জন্য এই রহস্য জপে বিনিয়োগ হয়।

রাজোবাচ

ভগবন্নবতারা মে চণ্ডিকায়াস্ত্রয়োদিতাঃ। এতেষাং প্রকৃতিং ব্রহ্মন্ প্রধানং বক্কুমর্হসি ৷৷ ১ ৷৷

রাজা বললেন-ভগবন্! দেবী চণ্ডিকার অবতারসমূহের কথা আপনি বলেছেন। হেব্রহ্মন্! এঁদের প্রধান প্রকৃতির কথা এখন আমাকে বলুন।। ১ ৷৷

আরাধ্যং যন্ময়া দেব্যাঃ স্বরূপং যেন বৈ দ্বিজ। বিধিনা রূহি সকলং যথাবৎ প্রণতস্য মে৷ ২৷

হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! আমি আপনাকে প্রণাম করছি। দেবীকে যেই স্বরূপে এবং যেই বিধিতে আরাধনা করা উচিত, সেই সব যথাযথভাবে আমাকে বলুন৷৷ ২৷৷

ঋষিরুবাচ

মেধা ঋষি বললেন-

ইদং রহস্যং পরমমনাখ্যেয়ং প্রচক্ষতে। ভক্তোহসীতি ন মে কিঞ্চিৎ তবাবাচ্যং নরাধিপ৷ ৩৷৷

হে রাজন! এই রহস্য পরম গোপনীয়। এই রহস্যকে অনাখ্যেয়-কথনযোগ্য নয় বলা হয়; কিন্তু তুমি আমার ভক্ত, তাই তোমাকে না বলার আমার কিছুই নেই। ৩।

সর্বস্যাদ্যা মহালক্ষ্মীস্ত্রিগুণা পরমেশ্বরী। লক্ষ্যালক্ষ্যস্বরূপা সা ব্যাপ্য কৃৎস্নং ব্যবস্থিতা।। ৪৷৷

ত্রিগুণময়ী পরমেশ্বরী মহালক্ষ্মীই সকল কারণের আদি কারণ। তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যরূপে সমগ্র বিশ্ব ব্যাপ্ত করে রয়েছেন।। ৪।।

মাতুলুঙ্গং গদাং খেটং পানপাত্রঞ্চ চ বিভ্রতী। নাগং লিঙ্গঞ্চ যোনিঞ্চ বিভ্রতী নৃপ মূর্খনি৷৷ ৫ ৷৷

হে রাজন! ইনি এঁর চার হাতে মাতুলুঙ্গ (লেবু বা শ্রীফল), গদা, খেট (ঢাল) এবং পানপাত্র আর মস্তকে নাগ, লিঙ্গ ও যোনি ধারণ করেন। ৫ ।।

তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভা তপ্তকাঞ্চনভূষণা। শূন্যং তদখিলং স্বেন পূরয়ামাস তেজসা৷৷ ৬ ৷৷

তাঁর কান্তি তপ্তকাঞ্চনের মতো, তপ্তকাঞ্চনই তাঁর অলঙ্কার। তিনি নিজ তেজে এই শূন্য (মহাকাশ) পরিপূর্ণ করে আছেন ।। ৬৷৷

শূন্যং তদখিলং লোকং বিলোক্য পরমেশ্বরী। বভার পরমং রূপং তমসা কেবলেন হি। ৭ ॥

পরমেশ্বরী মহালক্ষ্মী এই সমগ্র বিশ্ব শূন্য দেখে কেবল তমোগুণ দ্বারা এক অন্য উৎকৃষ্ট রূপ ধারণ করেছিলেন।। ৭ ।।

সা ভিন্নাঞ্জনসঙ্কাশা দংষ্ট্রাঙ্কিতবরাননা। বিশাললোচনা নারী বভূব তনুমধ্যমা ৷৷ ৮ ৷৷

সেই উৎকৃষ্ট রূপ এক নারীরূপে প্রকাশ পায় যার শরীরের ক্লান্তি ঘন কাজলের মতো গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ ছিল, তাঁর মুখমণ্ডল সুন্দর দন্তপংক্তিতে সুশোভিত ছিল। তিনি বিশালনয়না ও ক্ষীণকটি ছিলেন। ৮।।

খড়া-পাত্র-শিরঃ-খেটৈরলঙ্কৃত-চতুর্ভুজা। কবন্ধহারং শিরসা বিভ্রাণা হি শিরঃস্রজম্।। ৯ ৷৷

তাঁর চার হাত ঢাল, খড়গ, পানপাত্র ও নরমুণ্ডে শোভিত ছিল। তিনি বক্ষদেশে কবন্ধের মালা ও মস্তকে মুণ্ডমালা ধারণ করেন। ৯ ৷

সা প্রোবাচ মহালক্ষ্মীং তামসীং প্রমদোত্তমা। নাম কর্ম চ মে মাতর্দেহি তুভ্যং নমো নমঃ ॥ ১০ ৷৷

এই নারীশ্রেষ্ঠা তামসী দেবী মহালক্ষ্মীকে বললেন-মাতঃ, আপনাকে প্রণাম। আমার নাম এবং কী কাজ বলুন। ১০ ।

তাং প্রোবাচ মহালক্ষ্মীস্তামসীং প্রমদোত্তমাম্। দদামি তব নামানি যানি কর্মাণি তানি তে৷৷ ১১ ৷৷

তখন মহালক্ষ্মী সেই নারীশ্রেষ্ঠা তামসী দেবীকে বললেন-আমি তোমার নামকরণ করছি এবং তোমার যা যা কাজ তাও বলছি৷৷ ১১ ৷৷

মহামায়া মহাকালী মহামারী ক্ষুধা তৃষা। নিদ্রা তৃষ্ণা চৈকবীরা কালরাত্রিদূরত্যয়া৷৷ ১২ ৷৷

মহামায়া, মহাকালী, মহামারী, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা, একবীরা, কালরাত্রি তথা দুরত্যয়া-৷ ১২ ।

ইমানি তব নামানি প্রতিপাদ্যানি কর্মভিঃ। এভিঃ কর্মাণি তে জ্ঞাত্বা যোহধীতে সোহম্মুতে সুখম্। ১৩ ৷৷

এগুলি তোমার নাম, এই নামগুলি তদনুযায়ী কর্মের দ্বারা চরিতার্থ হবে ও এই নাম অনুযায়ী কর্ম দ্বারা তোমাকে জেনে যে তা (চণ্ডী) পাঠ করে সে সুখলাভ করে। ১৩ ৷৷

তামিত্যুত্ত্বা মহালক্ষ্মীঃ স্বরূপমপরং নৃপ। সত্ত্বাখ্যেনাতিশুদ্ধেন গুণেনেন্দুপ্রভং দধৌ৷৷ ১৪ ৷৷

হে রাজন! মহাকালীকে এই কথা বলে মহালক্ষ্মী অত্যন্ত শুদ্ধ সত্ত্বগুণদ্বারা দ্বিতীয় আর এক রূপ ধারণ করলেন যা চন্দ্রের মতো গৌরবর্ণা। ১৪ ৷৷

অক্ষমালাঙ্কুশধরা বীণাপুস্তকধারিণী। সা বভূব বরা নারী নামান্যস্যৈ চ সা দদৌ৷৷ ১৫ ৷৷

সেই শ্রেষ্ঠা নারী নিজের হাতে অক্ষমালা, অঙ্কুশ, বীণা ও পুস্তক ধারণ করেছিলেন। মহালক্ষ্মী তাঁরও নামকরণ করলেন।। ১৫ ।।

মহাবিদ্যা মহাবাণী ভারতী বাক্ সরস্বতী। আর্যা ব্রাহ্মী কামধেনুর্বেদগর্ভা চ ধীশ্বরী। ১৬ ৷৷

মহাবিদ্যা, মহাবাণী, ভারতী, বাক্, সরস্বতী, আর্যা, ব্রাহ্মী, কামধেনু, বেদগর্ভা ও ধীশ্বরী (বুদ্ধির ঈশ্বরী)- এইগুলো তোমার নাম হবে । ১৬ ৷

অথোবাচ মহালক্ষ্মীমহাকালীং সরস্বতীম্। যুবাং জনয়তাং দেব্যৌ মিথুনে স্বানুরূপতঃ। ১৭ ৷৷

তারপর মহালক্ষ্মী মহাকালী ও মহাসরস্বতীকে বললেন-হে দেবীদ্বয়! তোমরা দুজনে নিজ নিজ গুণানুরূপ যোগ্য স্ত্রী-পুরুষ উৎপন্ন করো ।। ১৭ ।।

ইত্যুত্ত্বা তে মহালক্ষ্মীঃ সসর্জ মিথুনং স্বয়ম্। হিরণ্যগর্ভো রুচিরৌ স্ত্রীপুংসৌ কমলাসনৌ৷৷ ১৮ ৷৷

তাদের দুজনকে একথা বলে মহালক্ষ্মী প্রথমেই নিজে নিজেই একটি পুরুষ ও একটি তদনুরূপ নারী সৃষ্টি করলেন। এঁরা দুজনে হিরণ্যগর্ভ (বিশুদ্ধজ্ঞান দেহ), সুন্দর ও কমলাসনে বিরাজ করছিলেন।। ১৮ ।।

ব্রহ্মন্ বিধে বিরিঞ্চেতি ধাতরিত্যাহ তং নরম্। শ্রীঃ পদ্মে কমলে লক্ষ্মীত্যাহ মাতা চ তাং স্ত্রিয়ম্ ৷৷ ১৯ ৷৷

তারপর মহালক্ষ্মী সেই পুরুষকে ব্রহ্মন্! বিধে! বিরিঞ্চ! ও ধাতঃ! বলে সম্বোধন করলেন এবং নারীটিকে শ্রী! পদ্মা! কমলা! ও লক্ষ্মী! এই সকল নামে অভিহিতা করলেন ।। ১৯ ।।

মহাকালী ভারতী চ মিথুনে সৃজতঃ সহ। এতয়োরপি রূপাণি নামানি চ বদামি তে৷৷২০৷৷

তারপর মহাকালী এবং মহাসরস্বতীও এক এক যুগল সৃষ্টি করলেন। এদের নাম ও রূপের কথাও তোমাকে বলছি৷৷ ২০ ।।

নীলকণ্ঠং রক্তবাহুং শ্বেতাঙ্গং চন্দ্রশেখরম্। জনয়ামাস পুরুষং মহাকালী সিতাং স্ত্রিয়ম্। ২১ ৷৷

মহাকালী নীলকণ্ঠ, রক্তবাহু, শ্বেতবর্ণ ও ললাটে চন্দ্রমুকুট শোভিত পুরুষ এবং গৌরীদেহা নারী সৃষ্টি করলেন । ২১ ৷৷

স রুদ্রঃ শঙ্করঃ স্থাণুঃ কপর্দী চ ত্রিলোচনঃ। ত্রয়ী বিদ্যা কামধেনুঃ সা স্ত্রী ভাষাক্ষরা স্বরা। ২২ ৷৷

সেই পুরুষ রুদ্র, শঙ্কর, স্থাণু, কপর্দী ও ত্রিলোচন নামে অভিহিত হলেন। সেই নারীর নাম হল ত্রয়ী, বিদ্যা, কামধেনু, ভাষা, অক্ষরা ও স্বরা। ২২ ৷

সরস্বতী স্ত্রিয়ং গৌরীং কৃষ্ণঞ্চ পুরুষং নৃপ। জনয়ামাস নামানি তয়োরপি বদামি তে। ২৩ ॥

হে রাজন! মহাসরস্বতী গৌরবর্ণা নারী ও শ্যামবর্ণ পুরুষ সৃষ্টি করলেন। সেই দুজনের নামও আমি তোমাকে বলছি ৷৷ ২৩ ৷৷

বিষ্ণুঃ কৃষ্ণো হৃষীকেশো বাসুদেবো জনার্দনঃ। উমা গৌরী সতী চণ্ডী সুন্দরী সুভগা শিবা৷৷ ২৪ ৷৷

সেই পুরুষের নাম বিষ্ণু, কৃষ্ণ, হৃষীকেশ, বাসুদেব এবং জনার্দন আর সেই নারীর নাম হয়েছিল উমা, গৌরী, সতী, চণ্ডী, সুন্দরী, সুভগা ও শিবা। ২৪ ।।

এবং যুবতয়ঃ সদ্যঃ পুরুষত্বং প্রপেদিরে। চক্ষুষ্মন্তো নু পশ্যন্তি নেতরেহতবিদদো জনাঃ৷৷ ২৫ ৷৷

এরপর সেই তিন যুবতীই তৎকালে পুরুষরূপ প্রাপ্ত হলেন। এই বিষয়টি শুধু জ্ঞানীগণই বুঝতে পারে। অজ্ঞানীরা এই রহস্যের তত্ত্ব অবগত হতে পারে না। ২৫ ॥

ব্রহ্মণে প্রদদৌ পত্নীং মহালক্ষ্মীনূপ ত্রয়ীম্। রুদ্রায় গৌরীং বরদাং বাসুদেবায় চ প্রিয়ম্ ॥ ২৬৷৷

হে নৃপ! মহালক্ষ্মী ব্রহ্মার জন্য ত্রয়ীবিদ্যারূপা সরস্বতীকে পত্নীরূপে সমর্পণ করলেন, রুদ্রকে বরদায়িনী গৌরী এবং ভগবান বাসুদেবের পত্নীরূপে লক্ষ্মীকে প্রদান করলেন । ২৬ ।।

স্বরয়া সহ সম্ভূয় বিরিঞ্চোহ গুমজীজনৎ। বিভেদ ভগবান্ রুদ্রস্তদ্ গৌর্যা সহ বীর্যবান্। ২৭ ॥

এইভাবে সরস্বতীর সাথে যুক্ত হয়ে ব্রহ্মা ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করলেন, পরম পরাক্রমী ভগবান রুদ্র গৌরীর সাথে মিলিত হয়ে সেই অণ্ডকে বিভক্ত করলেন। ২৭ ॥

অণ্ডমধ্যে প্রধানাদি-কার্যজাতমভূপ। মহাভূতাত্মকং সর্বং জগৎ স্থাবরজঙ্গমম্।। ২৮ ৷৷

হে রাজন! সেই অণ্ডের মধ্যে প্রধান (মহত্তত্ত্ব) কার্যসমূহ- পঞ্চমহাভূতাত্মক সমস্ত স্থাবর জঙ্গমরূপ জগতের উৎপত্তি হল। ২৮ ।।

পুপোষ পালয়ামাস তল্লক্ষ্ম্যা সহ কেশবঃ। সংজহার জগৎ সর্বং সহ গৌর্যা মহশ্বেরঃ। ২৯ ৷৷

আবার লক্ষ্মীর সাথে ভগবান বিষ্ণু মিলিত হয়ে সেই জগতের পালন পোষণ করলেন আর প্রলয়কালে গৌরীর সাথে মিলে মহেশ্বর ওই সমগ্র জগৎ সংহার করলেন। ২৯।।

মহালক্ষ্মীমহারাজ সর্বসত্ত্বময়ীশ্বরী। নিরাকারা চ সাকারা সৈব নানাভিধানভৃৎ।।॥ ৩০ ৷৷

হে মহারাজ! মহালক্ষ্মীই সর্বসত্ত্বময়ী তথা সকল প্রকার সত্ত্বের অধীশ্বরী। তিনিই নিরাকার ও সাকাররূপে অবস্থান করে নানাপ্রকার নাম ধারণ করেন। ৩০ ॥

নামান্তরৈর্নিরূপ্যৈষা নাম্না নান্যেন কেনচিৎ। ওঁ ৷৷ ৩১ ৷৷

ইতি প্রাধানিকং রহস্যং সমাপ্তম্।

বৈকৃতিক রহস্য

Durga Saptashati Image

অথ বৈকৃতিকং রহস্যম্

বৈকৃতিক রহস্য

ঋষিরুবাচ

ওঁ ত্রিগুণা তামসী দেবী সাত্ত্বিকী যা ত্রিখোদিতা। সা শর্বা চণ্ডিকা দুর্গা ভদ্রা ভগবতীর্যতে৷৷ ১ ৷৷

ঋষি বললেন-হে রাজন! পূর্বে সত্ত্বগুণপ্রধানা ত্রিগুণাত্মিকা যেই মহালক্ষ্মী তামসী ইত্যাদি রূপ অনুসারে তিন স্বরূপের কথা বলা হয়েছে, তিনিই শর্বা, চণ্ডিকা, দুর্গা, ভদ্রা ও ভগবতী ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিতা হন।। ১ ৷৷

যোগনিদ্রা হরেরুক্তা মহাকালী তমোগুণা। মধুকৈটভনাশার্থং যাং তুষ্টাবাম্বুজাসনঃ ৷৷ ২৷৷

তমোগুণী মহাকালীকে ভগবান বিষ্ণুর যোগনিদ্রা বলা হয়, মধু ও কৈটভকে বিনাশের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মা যাঁর স্তুতি করেছিলেন, তিনিই মহাকালী। ২ ৷৷

দশবা দশভুজা দশপাদাঞ্জনপ্রভা। বিশালয়া রাজমানা ত্রিংশল্পোচনমালয়া৷৷ ৩ ৷৷

তাঁর দশ মুখ, দশহস্ত ও দশপদ। ইনি কাজলের মতো কৃষ্ণবর্ণা এবং ত্রিশটী নয়নমালার সহিত বিরাজিতা। ৩ ।।

স্ফুরদ্দশনদংষ্ট্রা সা ভীমরূপাপি ভূমিপ। রূপসৌভাগ্যকান্তীনাং সা প্রতিষ্ঠা মহাশ্রিয়ঃ। ৪ ৷৷

হে ভূপাল! সুন্দর ও উজ্জ্বল দন্তযুক্তা যদিও, তাঁর রূপ ভয়ঙ্কর, তথাপি তিনি রূপ, সৌভাগ্য, শান্তি এবং মহা-শ্রীর আশ্রয়।। ৪ ।।

খড়া-বাণ-গদা-শূল-শঙ্খ-চক্র-ভুশুণ্ডিতৃৎ। পরিঘং কার্মকং শীর্ষং নিশ্চ্যোতদ্রুধিরং দধৌ৷৷ ৫ ৷৷

তাঁর হাতে খড়া, বাণ, গদা, শূল, শঙ্খ, চক্র, ভুশুণ্ডি, পরিঘ, ধনুক ও রক্তক্ষরণশীল কাটা মুণ্ড। ৫ ॥

এষা সা বৈষ্ণবী মায়া মহাকালী দূরত্যয়া। আরাধিতা বশীকুর্যাৎ পূজাকর্তৃশ্চরাচরম্।। ৬।।

এই মহাকালী ভগবান বিষ্ণুর দুরত্যয়া মায়াশক্তি। ইনি আরাধিতা হলে চরাচর জগৎকে নিজের ভক্তের অধীন করে দেন।। ৬।

সর্বদেবশরীরেভ্যো যাহহবির্ভূতামিতপ্রভা। ত্রিগুণা সা মহালক্ষ্মীঃ সাক্ষান্মহিষমর্দিনী।। ৭ ॥

সব দেবতাদের অঙ্গ থেকে যাঁর উৎপত্তি হয়েছিল, তিনি অনন্ত কান্তিযুক্তা সাক্ষাৎ মহালক্ষ্মী, তিনিই ত্রিগুণময়ী প্রকৃতিরূপে পরিচিতা, তিনিই মহিষাসুরমর্দিনী।। ৭ ।।

শ্বেতাননা নীলভুজা রক্তমধ্যা রক্তপাদা সুশ্বেতস্তনমণ্ডলা। নীলজঙ্ঘোরুরুন্মদা।। ৮।

তিনি শ্বেতাননা, নীলহস্তা। তাঁর স্তনমণ্ডল অত্যন্ত শ্বেতবর্ণা, কটিদেশ ও চরণযুগল রক্তবর্ণ এবং জঙ্ঘা ও উরু নীলবর্ণ। তিনি অজেয়া, তাই নিজ শৌর্যে উন্মাদিনী ।। ৮ ।।

সুচিত্রজঘনা চিত্রানুলেপনা চিত্রমাল্যাম্বরবিভূষণা। কান্তি-রূপ-সৌভাগ্য-শালিনী৷৷ ৯ ৷৷

কটির উপরিভাগ নানাবর্ণে রঞ্জিত, বস্ত্রে আচ্ছাদিত হওয়াতে অপরূপ রূপশোভিতা। তাঁর মালা, বস্ত্র, আভূষণ ও অঙ্গরাগ সবই বিচিত্র। তিনি কান্তি, রূপ ও সৌভাগ্য- মণ্ডিতা।। ৯ ।।

অষ্টাদশভুজা পূজ্যা সা সহস্রভুজা সতী। আয়ুধান্যত্র বক্ষ্যন্তে দক্ষিণাধঃকরক্রমাৎ।৷৷ ১০ ৷৷

যদিও তিনি সহস্রভুজা, তথাপি অষ্টাদশভুজারূপে পূজ্যা। তাঁর ডানদিকের নীচের হাত থেকে পরের হাত এবং বাঁ দিকের উপরের হাত থেকে নীচের হাত পর্যন্ত আয়ুধের বর্ণনা এখানে করা হচ্ছে ৷৷ ১০ ॥

অক্ষমালা চ কমলং বাণোহসিঃ কুলিশং গদা। চক্রং ত্রিশূলং পরশুঃ শঙ্খো ঘণ্টা চ পাশকঃ ৷৷ ১১৷৷

শক্তির্দণ্ডশ্চর্ম চাপং পানপাত্রং কমণ্ডলুঃ। অলঙ্কৃতভুজামেভিরায়ুধৈঃ কমলাসনাম্।। ১২৷৷

সর্বদেবময়ীমীশাং মহালক্ষ্মীমিমাং নৃপ। পূজয়েৎ সর্বলোকানাং স দেবানাং প্রভুর্ভবেৎ৷৷ ১৩ ৷৷

অক্ষমালা, কমল, বাণ, খড়া, বজ্র, গদা, চক্র, ত্রিশূল, পরশু, শঙ্খ, ঘণ্টা, পাশ, শক্তি, দণ্ড, চর্ম (ঢাল), ধনুক, পানপাত্র ও কমণ্ডলু-এই আঠারটি আয়ুধে তাঁর হস্তগুলি বিভূষিত। তিনি কমলাসনে বিরাজিতা, তিনি সর্বদেবময়ী ঈশ্বরী। হে রাজন, এই মহালক্ষ্মী দেবীকে যে পূজা করে, সে সর্বলোকের ও দেবগণের প্রভু হন।। ১১-১৩।

গৌরীদেহাৎ সমুদ্ভূতা যা সত্ত্বৈকগুণাশ্রয়া। সাক্ষাৎ সরস্বতী প্রোক্তা শুম্ভাসুর-নিবর্হিণী৷৷ ১৪৷৷

যে সত্ত্বগুণময়ী দেবী পার্বতীর শরীর থেকে সমুতা হয়েছিলেন এবং যিনি শুম্ভ-নামক দৈত্যকে নিধন করেন, তাঁকে সাক্ষাৎ সরস্বতী বলা হয়। ১৪ ৷৷

দখৌ চাষ্টভুজা বাণমুসলে শূলচক্রভৃৎ। শঙ্খং ঘণ্টাং লাঙ্গলঞ্চ কার্মকং বসুধাধিপ৷৷ ১৫৷

হে পৃথিবীপতে! ইনি অষ্টভুজা এবং তিনি এই আট হাতে ক্রমশঃ বাণ, মুসল, শূল, চক্র, শঙ্খ, ঘণ্টা, লাঙ্গল ও ধনুক ধরে রয়েছেন।। ১৫ ।।

এষা সম্পূজিতা ভক্ত্যা সর্বজ্ঞত্বং প্রযচ্ছতি। নিশুম্ভমথিনী দেবী শুম্ভাসুরনিবর্হিণী৷৷ ১৬৷৷

নিশুম্ভমর্দিনী শুম্ভাসুরনাশিনী দেবী ভক্তিপূর্বক পূজিতা হলে তিনি সর্বজ্ঞত্ব প্রদান করেন।। ১৬।।

ইত্যুক্তানি স্বরূপাণি মূর্তীনাং তব পার্থিব। উপাসনং জগন্মাতুঃ পৃথগাসাং নিশাময়।। ১৭৷৷

হে নৃপ! এইভাবে মহাকালী ইত্যাদি তিন মূর্তির স্বরূপ তোমাকে বলা হল, এইবার জগন্মাতা মহালক্ষ্মী তথা এই মহাকালী আদি তিন মূর্তির পৃথক পৃথক উপাসনা শ্রবণ করো।। ১৭ ।। ।

মহালক্ষ্মীর্যদা পূজ্যা মহাকালী সরস্বতী। দক্ষিণোত্তরয়োঃ পূজ্যে পৃষ্ঠতো মিথুনত্রয়ম্।। ১৮ ৷৷

যখন মহালক্ষ্মীর পূজা করবে, তখন তাঁকে মধ্যে স্থাপিত করে দক্ষিণে বা বামে যথাক্রমে মহাকালী ও মহাসরস্বতীকে পূজা করবে এবং পৃষ্ঠভাগে (পশ্চাতে) যুগল-মূর্তি রূপে তিন দেবতার পূজা করবে। ১৮ ।।

বিরিঞ্চিঃ স্বরয়া মধ্যে রুদ্রো গৌর্যা চ দক্ষিণে। বামে লক্ষ্ম্যা হৃষীকেশঃ পুরতো দেবতাত্রয়ম্। ১৯ ৷৷

মহালক্ষ্মীর ঠিক পেছনে মধ্যভাগে সরস্বতীর সাথে ব্রহ্মার পূজা করবে। তাঁর ডান দিকে গৌরীর সাথে রুদ্রের পূজা করবে তথা বামদিকে লক্ষ্মীর সঙ্গে বিষ্ণুর পূজা করবে। মহালক্ষ্মী প্রভৃতি তিন দেবীর সামনে নিম্ন লিখিত তিন দেবীরও পূজা করা উচিত ॥১৯।।

অষ্টাদশভুজা মধ্যে বামে চাস্যা দশাননা। দক্ষিণেহষ্টভুজা লক্ষ্মীমহতীতি সমর্চয়েৎ ৷৷ ২০৷৷

মধ্যস্থ মহালক্ষ্মীর আগে মধ্যভাগে অষ্টাদশভুজা মহালক্ষ্মীর পূজা করবে। তাঁর বামদিকে দশাননা মহাকালী তথা ডানদিকে অষ্টভুজা মহাসরস্বতীর পূজা করবে। ২০ ॥

অষ্টাদশভুজা চৈষা যদা পূজ্যা নরাধিপ। দশাননা চাষ্টভুজা দক্ষিণোত্তরয়োন্তদা।। ২১ ৷৷

কালমৃত্যু চ সম্পূজ্যৌ সর্বারিষ্টপ্রশান্তয়ে। যদা চাষ্টভুজা পূজ্যা শুম্ভাসুরনিবর্হিণী।২২৷

নবাস্যাঃ শক্তয়ঃ পূজ্যান্তদা রুদ্রবিনায়কৌ। নমো দেব্যা ইতি স্তোত্রৈমহালক্ষ্মীং সমর্চয়েৎ।। ২৩ ৷৷

হে রাজন! যখন কেবলমাত্র অষ্টাদশভুজা মহালক্ষ্মী অথবা দশাননা কালী বা অষ্টভুজা সরস্বতীর পূজা করবে, তখন সমস্ত অরিষ্ট (বিঘ্ন) প্রশান্তির জন্য তাঁর ডানদিকে কালের এবং বামদিকে মৃত্যুরও ভালভাবে পূজা করবে। যখন শুম্ভাসুরনাশিনী অষ্টভুজা দেবীর পূজা করবে, তখন তাঁর সাথে তাঁর নবশক্তির আর ডানদিকে রুদ্র এবং বামদিকে গণেশেরও পূজা করবে (ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, নারসিংহী, ঐন্দ্রী, শিবদূতী ও চামুণ্ডা- এই হল নবশক্তি)। 'নমো দেব্যৈ.............' এই স্তোত্রে মহালক্ষ্মীর পূজা করবে। ২১-২৩

অবতারত্রয়ার্চায়াং স্তোত্রমন্ত্রান্তদাশ্রয়াঃ। অষ্টাদশভুজা চৈষা পূজ্যা মহিষমর্দিনী৷৷ ২৪ ৷৷

মহালক্ষ্মীমহাকালী সৈব প্রোক্তা সরস্বতী। ঈশ্বরী পুণ্যপাপানাং সর্বলোকমহেশ্বরী।। ২৫ ৷৷

দেবীর তিন অবতারের পূজার সময় সেই সেই চরিত্রের যেই যেই স্তোত্র আর মন্ত্র আছে তার যথাযুক্ত প্রয়োগ করবে। অষ্টাদশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী মহালক্ষ্মীও বিশেষরূপে পূজনীয়া। কারণ তিনিই মহালক্ষ্মী, মহাকালী ও মহাসরস্বতীরূপে খ্যাতা। তিনিই পাপপুণ্যের ফলদাত্রী ও সর্বলোকের মহেশ্বরী। ২৪-২৫ ৷৷

মহিষান্তকরী যেন পূজিতা স জগৎপ্রভুঃ। পূজয়েজ্জগতাং ধাত্রীং চণ্ডিকাং ভক্তবৎসলাম্৷ ২৬৷৷

মহিষাসুর নাশিনী মহালক্ষ্মীকে যে ভক্তিভরে পূজা করে, সে সংসারের প্রভুত্ব লাভ করে। অতএব জগদ্ধাত্রী ভক্তবৎসলা ভগবতী চণ্ডিকাকে অবশ্যই পূজা করবে। ২৬।

অর্থ্যাদিভিরলঙ্কারৈর্গন্ধপুষ্পস্তথাক্ষতৈঃ। ধূপৈর্দীপৈশ্চ নৈবেদ্যের্নানাভক্ষ্যসমন্বিতৈঃ ৷৷ ২৭ ৷৷

রুধিরাজেন বলিনা মাংসেন সুরয়া নৃপ। বলিমাংসাদিপূজেয়ং বিপ্রবর্জ্যা ময়েরিতা।।

তেষাং কিল সুরামাংসৈর্বোক্তা পূজা নৃপ কচিৎ। প্রণামাচমনীয়েন চন্দনেন সুগন্ধিনা।। ২৮৷৷

সকপূরৈশ্চ তাম্বুলৈর্ভক্তিভাবসমন্বিতৈঃ। বামভাগে গ্রতো দেব্যাশ্ছিন্নশীর্ষং মহাসুরম্।। ২৯৷৷

পূজয়েন্মহিষং যেন প্রাপ্তং সাযুজ্যমীশয়া। দক্ষিণে পরতঃ সিংহং সমগ্রং ধর্মমীশ্বরম্ ।। ৩০ ৷৷

বাহনং পূজয়েদ্দেব্যা ধৃতং যেন চরাচরম্। কুর্যাচ্চ স্তবনং ধীমাংস্তস্যা একাগ্রমানসঃ ।। ৩১ ৷৷

ততঃ কৃতাঞ্জলির্ভূত্বা স্তুবীত চরিতৈরিমৈঃ। একেন বা মধ্যমেন নৈকেনেতরয়োরিহ।। ৩২ ৷৷

চরিতার্থং তু ন জপেজ্জপঞ্ছিদ্রমবাপুয়াৎ। প্রদক্ষিণা-নমস্কারান্ কৃত্বা মূর্রি কৃতাঞ্জলিঃ।। ৩৩ ৷৷

ক্ষমাপয়েজ্জগদ্ধাত্রীং মুহুর্মুহুরতন্দ্রিতঃ। প্রতিশ্লোকঞ্চ জুহুয়াৎ পায়সং তিলসপিষা৷৷ ৩৪ ৷৷

অর্থ্যাদি, অলঙ্কারাদি, গন্ধ, পুষ্প, আতপচাল, ধূপ, দীপ ও নানা আহার্য সমন্বিত নৈবেদ্যাদি, রক্তসিঞ্চিত বলি, মাংস তথা মদিরা দিয়েও দেবীর পূজা হয়। (১) (হে রাজন! বলি এবং মাংস ইত্যাদি দিয়ে পূজা অব্রাহ্মণদের জন্য বলা হয়েছে। অন্যান্যদের জন্য মদ ও মাংস দিয়ে পূজার বিধান কোথাও নেই।) প্রণাম, আচমনীয়, সুগন্ধি চন্দন, কপূরযুক্ত তাম্বুলাদি উপচার দিয়ে ভক্তিভাবে দেবীর পূজা করবে। দেবীর সামনে বাম দিকে দেবীর সাযুজ্যপ্রাপ্ত ছিন্নশির মহাদৈত্য মহিষাসুরের পূজা করবে। এইভাবে দেবীর সামনে ডানদিকে তাঁর বাহন সিংহের পূজা করবে। এই সিংহ সর্ব ধর্মের প্রতীক এবং ষড়ৈশ্বর্যযুক্ত হয়ে এই চরাচর জগৎ ধারণ করে রয়েছে। তারপর বুদ্ধিমান পুরুষ একাগ্রচিত্তে দেবীর স্তব করবে। তারপর কৃতাঞ্জলি হয়ে পূর্বোক্ত তিন চরিত্রসমূহ দ্বারা স্তব করবে। কেউ যদি একটি চরিত্র দিয়ে স্তব করতে চায়, তবে কেবলমাত্র মধ্যমচরিত্রের দ্বারা পাঠ করে নেবে। কিন্তু প্রথম আর উত্তর চরিত্র দিয়ে কেবলমাত্র একবার পাঠ করবে না। অর্দ্ধেক চরিত্রের পাঠ করাও নিষিদ্ধ। যে অর্দ্ধেক চরিত্রের পাঠ করে, তার পাঠ নিষ্ফল হয়। পাঠ শেষে প্রদক্ষিণ ও নমস্কার করবে এবং নিরলস হয়ে জগদম্বার উদ্দেশ্যে মস্তকে কৃতাঞ্জলি হয়ে বারংবার ত্রুটি বা অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। সপ্তশতীর প্রতিটি শ্লোক মন্ত্রস্বরূপ, তিলযুক্ত ঘৃত ও পায়েস দিয়ে হোম করবে। ২৭-৩৪ ।।

জুহুয়াৎ স্তোত্রমন্ত্রৈর্বা চণ্ডিকায়ৈ শুভং হবিঃ। ভূয়ো নামপদৈর্দেবীং পূজয়েৎ সুসমাহিতঃ ৷৷ ৩৫ ৷৷

অথবা সপ্তশতীতে যে স্তোত্রগুলি আছে সেই মন্ত্রগুলি দিয়ে চণ্ডিকার উদ্দেশ্যে পবিত্র হবি দিয়ে হোম করবে। যজ্ঞের পরে একাগ্রচিত্ত হয়ে মহালক্ষ্মী দেবীর নামমন্ত্র উচ্চারণ করে আবার তাঁর পূজা করবে।। ৩৫ ।।

প্রযতঃ প্রাঞ্জলিঃ প্রহৃঃ প্রণম্যারোপ্য চাত্মনি। সুচিরং ভাবয়েদীশাং চণ্ডিকাং তন্ময়ো ভবেৎ৷৷ ৩৬ ৷৷

নিজের মন ও ইন্দ্রিয়কে বশীভূত রেখে কৃতাঞ্জলি হয়ে বিনীতভাবে দেবীকে প্রণাম করে হৃদয়ে স্থাপিত করে দীর্ঘকাল চণ্ডিকাদেবীর ভাবনা করতে করতে তন্ময় হবে ।। ৩৬ ।।

এবং যঃ পূজয়েদ্ ভক্ত্যা প্রত্যহং পরমেশ্বরীম্।ভুত্ত্বা ভোগান্ যথাকামং দেবীসাযুজ্যমাপুয়াৎ৷৷ ৩৭ ৷৷

এইভাবে যে প্রতিদিন ভক্তিপূর্বক পরমেশ্বরীর পূজা করে, সে বাঞ্ছিত বস্তু ভোগ করে অন্তকালে দেবীর সাযুজ্য প্রাপ্ত হয়। ৩৭ ॥

যো ন পূজয়তে নিত্যং চণ্ডিকাং ভক্তবৎসলাম্। ভস্মীকৃত্যাস্য পুণ্যানি নির্দহেৎ পরমেশ্বরী। ৩৮ ৷৷

ভক্তবৎসলা চণ্ডীর পূজা প্রতিদিন যে না করে ভগবতী পরমেশ্বরী তার পুণ্য ভস্মীভূত করেন। ৩৮ ।

তস্মাৎ পূজয় ভূপাল সর্বলোকমহেশ্বরীম্। যথোক্তেন বিধানেন চণ্ডিকাং সুখমান্স্যাসি৷৷ ৩৯ ৷৷

এইজন্য হে রাজন! যথোক্তবিধানে সর্বলোকমহেশ্বরী চণ্ডিকার পূজা করবে। তাহলে ইহলোকে ও পরলোকে সুখ প্রাপ্ত হবে(১) ।। ৩৯ ৷৷

ইতি বৈকৃতিক রহস্যং সমাপ্তম্।

বৈকৃতিক রহস্য সমাপ্ত হল।

মূর্তিরহস্য

Durga Saptashati Image

অথ মূর্তিরহস্যম্

মূর্তিরহস্য

ঋষিরুবাচ

ওঁ নন্দা ভগবতী নাম যা ভবিষ্যতি নন্দজা। স্তুতা সা পূজিতা ভক্ত্যা বশীকুর্যাজ্জগৎত্রয়ম্। ১ ৷৷

ঋষি বললেন-হে রাজন! নন্দ থেকে উৎপন্ন হবেন যে নন্দা নাম্নী দেবী, সেই দেবীর ভক্তিভরে স্তুতি ও পূজা করলে তিনি তাঁর উপাসককে ত্রিলোকের অধীশ্বর করেন। ১ ।।

কনকোত্তমকান্তিঃ সা দেবী কনকবর্ণাভা সুকান্তিকনকাম্বরা। কনকোত্তমভূষণা৷৷ ২৷৷

তিনি উজ্জ্বল-সুবর্ণ কান্তিযুক্তা। তিনি স্বর্ণপ্রভ বস্ত্রপরিহিতা। তিনি কনকবর্ণা ও উত্তম স্বর্ণালঙ্কারশোভিতা৷৷ ২৷৷

কমলাঙ্কুশপাশাজৈরলঙ্কৃত-চতুর্ভুজা। ইন্দিরা কমলা লক্ষ্মীঃ সা শ্রী রুক্মাম্বুজাসনা ৷৷ ৩ ৷৷

তাঁর চারটা হাত পদ্ম, অঙ্কুশ, পাশ ও শঙ্খে শোভিত। তিনি ইন্দিরা, কমলা, লক্ষ্মী, শ্রী ও রুক্সাম্বুজাসনা (সুবর্ণময় কমলের আসনে অধিষ্ঠিতা) ইত্যাদি নামে বন্দিতা। ৩ ।।

যা রক্তদন্তিকা নাম দেবী প্রোক্তা ময়ানঘ। তস্যাঃ স্বরূপং বক্ষ্যামি শৃণু সর্বভয়াপহম্৷ ৪ ৷৷

হে নিষ্পাপ নরেশ! প্রথমে আমি রক্তদন্তিকা দেবীর স্বরূপ বর্ণনা করব, শোনো। তিনি সর্বভয়নাশিনী। ৪ ||

রক্তাম্বরা রক্তবর্ণা রক্তায়ুধা রক্তসর্বাঙ্গভূষণা। রক্তনেত্রা রক্তকেশাতিভীষণা।। ৫ ॥

রক্ততীক্ষনখা রক্তদশনা রক্তদন্তিকা। পতিং নারীবানুরক্তা দেবী ভক্তং ভজেজ্জনম্।। ৬ ৷৷

তিনি রক্তবসনা, রক্তবর্ণা, রক্তবর্ণ অলঙ্কারে ভূষিতা। তাঁর অস্ত্র-শস্ত্র, নেত্র, কেশ, তীক্ষ্ণ নখসমূহ ও দন্তপংক্তি, সবই রক্তবর্ণ; এইজন্য তিনি রক্তদন্তিকা নামে অভিহিতা এবং অতিভীষণদর্শনা। নারী যেমন পতির প্রতি অনুরক্তা হন, দেবীও তাঁর ভক্তের প্রতি (মায়ের মতো) স্নেহশীলা হয়ে অনুরাগিণী হন । ৫-৬।

বসুধেব বিশালা সা সুমেরুযুগলস্তনী। দীর্ঘো লম্বাবতিকূলৌ তাবতীব মনোহরৌ। ৭ ৷৷

কর্কশাবতিকান্তৌ তৌ সর্বানন্দপয়োনিষী। ভক্তান্ সম্পায়য়েদ্দেবী সর্বকামদুঘৌ স্তনৌ৷ ৮ ॥

দেবী রক্তদন্তিকার শরীর বিশ্বের মতো বিশাল। তাঁর স্তনযুগল সুমেরু পর্বতের মতো লম্বা, দীর্ঘ, অতিস্থূল, অতীব মনোহর, কর্কশ হয়েও অত্যন্ত কমনীয় এবং পূর্ণানন্দসমুদ্র। সর্বকামনাপূরক সেই স্তন দুটী দেবী তাঁর ভক্তদের পান করিয়ে থাকেন।। ৭-৮ ।।

খাং পাত্রঞ্চ মুসলং লাঙ্গলঞ্চ বিভর্তি সা। আখ্যাতা রক্তচামুণ্ডা দেবী যোগেশ্বরীতি চ॥৯৷

তাঁর চার হাতে তিনি খড়া, পানপাত্র, মুসল ও লাঙ্গল ধারণ করেন। তিনিই রক্তচামুণ্ডা ও যোগেশ্বরী দেবী নামে অভিহিতা হন।। ৯।।

অনয়া ব্যাপ্তমখিলং জগৎ স্থাবরজঙ্গমম্। ইমাং যঃ পূজয়েদ্ ভক্ত্যা স ব্যাপ্নোতি চরাচরম্। ১০৷

সমগ্র চরাচর জগৎ তাঁর দ্বারা পরিব্যাপ্ত। এই রক্তদন্তিকা দেবীকে যে ভক্তিভরে পূজা করে সে নিজেও চরাচর জগতে পরিব্যাপ্ত হয়ে যায় ।। ১০।।

(ভুক্তা ভোগান্ যথাকামং দেবীসাযুজ্যমাপুয়াৎ।)
অধীতে য ইমং নিত্যং রক্তদন্তা-বপুঃস্তবম্। তং সা পরিচরেদ্দেবী পতিং প্রিয়মিবাঙ্গনা৷৷ ১১ ৷৷

(সে যথেষ্ট ভোগ উপভোগ করে পরিশেষে দেবীর সাথে সাযুজ্য প্রাপ্ত হয়)। যে রক্তদন্তিকা দেবীর মূর্তির স্তব নিত্য পাঠ করে, দেবী স্নেহভরে তার প্রতিপালনরূপ পরিচর্যা করেন- যেমনভাবে নারী তার প্রিয়তম পতিকে পরিচর্যা করে। ১১ ।।

শাকম্ভরী নীলবর্ণা নীলোৎপলবিলোচনা। গম্ভীরনাভিস্ত্রিবলী-বিভূষিত-তন্দরী ॥ ১২৷

শাকম্ভরী দেবী নীলবর্ণা। তাঁর চোখ নীলপদ্মের মতো, নাভিদেশ গভীর এবং ত্রিবলীভূষিত উদর (মধ্যভাগ) ক্ষীণ। ১২ ৷

সুকর্কশ-সমোত্তুঙ্গ-বৃত্তপীনঘনস্তনী। মুষ্টিং শিলীমুখাপূণং কমলং কমলালয়া৷৷ ১৩৷৷

পুষ্পপল্লবমূলাদি-ফলাঢ্যং শাকসঞ্চয়ম্। কাম্যানন্তরসৈযুক্তং ক্ষুৎ-তৃমৃত্যু-ভয়াপহম্৷৷ ১৪ ৷৷

কামুকঞ্চ ক্ষুরৎকান্তি বিভ্রতী পরমেশ্বরী। শাকম্ভরী শতাক্ষী সা সৈব দুর্গা প্রকীর্তিতা৷৷ ১৫ ৷

তাঁর স্তনযুগল সুকর্কশ, সমান, উন্নত, সুগোল, স্থূল এবং ঘনসন্নিবিষ্ট। সেই পরমেশ্বরী কমলাসনা এবং হাতে বাণপূর্ণ মুষ্টি, পদ্ম, শাকসমূহ ও প্রকাশমান ধনুক ধারণ করেন। ঐ শাকসমূহ অনন্ত মনোবাঞ্ছিত রসযুক্ত এবং ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও মৃত্যুভয়নাশক এবং ফুল, পল্লব, মূলাদি ও ফলযুক্ত। এই শাকম্ভরী দেবীকেই শতাক্ষী তথা দুর্গা বলা হয়। ১৩-১৫ ৷৷

বিশোকা দুষ্টদমনী শমনী দূরিতাপদাম্। উমা গৌরী সতী চণ্ডী কালিকা সা চ পার্বতী৷ ১৬৷

তিনি শোকরহিতা, দুষ্টদমনী এবং পাপ ও বিপদতারিণী। উমা, গৌরী, সতী, চণ্ডী, কালিকা ও পাবতীও তিনিই। ১৬ ৷৷

শাকম্ভরীং স্তুবন্ ধ্যায়ন্ জপন্ সম্পূজয়ন্নমন্। অক্ষয্যমশ্নতে শীঘ্রমন্নপানামৃতং ফলম্।। ১৭ ৷৷

শাকম্ভরী দেবীর স্তুতি, ধ্যান, জপ, পূজা ও বন্দনা করলে শীঘ্রই অন্ন, পান ও অমৃতরূপ অক্ষয় ফল লাভ হয়। ১৭ ৷৷

ভীমাপি নীলবর্ণা সা দংষ্টাদশন-ভাসুরা। বিশাললোচনা নারী বৃত্তপীন-পয়োধরা। ১৮ ॥

চন্দ্রহাসঞ্চ ডমরুং শিরঃ পাত্রঞ্চ বিভ্রতী। একবীরা কালরাত্রিঃ সৈবোক্তা কামদা স্তুতা৷ ১৯৷৷

ভীমাদেবীও নীলবর্ণা। তাঁর দাড়া (লম্বা দাঁত) ও দন্তপংক্তি উজ্জ্বল। তাঁর নয়নদ্বয় বিশাল, তিনি স্ত্রীরূপা। তাঁর স্তনযুগল গোলাকার ও স্থূল। তিনি নিজের হাতে চন্দ্রহাসনামক খড়া, ডমরু, মস্তক ও পানপাত্র ধারণ করেন। তিনিই একবীরা, কালরাত্রি তথা কামদা নামে উক্তা ও স্তুতা হন৷৷ ১৮-১৯৷৷

তেজোমণ্ডলদুর্ধর্ষা ভ্রামরী চিত্রকান্তিভৃৎ। চিত্রানুলেপনা দেবী চিত্রাভরণভূষিতা। ২০॥

ভ্রামরী দেবী বিচিত্র (নানারকম) বর্ণধারিণী। তাঁর তেজোমণ্ডলের দরুন তাঁকে দুর্দ্ধর্ষা দেখায়। তিনি নানাবর্ণ অনুলেপনে অনুলিপ্তা ও বিচিত্র অলঙ্কার- বিভূষিতা। ২০ ।

চিত্রভ্রমরপাণিঃ সা মহামারীতি গীয়তে। ইত্যেতা মূর্তয়ো দেব্যা যাঃ খ্যাতা বসুধাধিপ৷ ২১৷৷

চিত্রভ্রমরপাণি ও মহামারী ইত্যাদি নামে তাঁর মহিমা গীত হয়। হে রাজন! এইভাবে জগন্মাতা চণ্ডিকা দেবীর এইসব মূর্তি বর্ণিত হল। ২১ ।।

জগন্মাতুশ্চণ্ডিকায়াঃ কীর্তিতাঃ কামধেনবঃ। ইদং রহস্যং পরমং ন বাচ্যং কস্যচিৎ ত্বয়া। ২২ ৷৷

এই সকল কীর্তন করলে তিনি কামধেনুর মতো সমস্ত কামনা পূর্ণ করেন। ইহা এক পরম গোপনীয় রহস্য। এই রহস্য যাকে-তাকে বলা উচিত নয়।। ২২ ।।

ব্যাখ্যানং দিব্যমূর্তীনামভীষ্টফলদায়কম্। তস্মাৎ সর্বপ্রযত্নেন দেবীং জপ নিরন্তরম্ ।। ২৩৷৷

দিব্যমূর্তির এই আখ্যান মনোবাঞ্ছাপূরণকারী, সুতরাং সর্বপ্রযত্নে তুমি নিরন্তর দেবীর জপ (আরাধনা) করতে থাক।। ২৩ ।।

সপ্তজন্মার্জিতৈর্ঘোরৈব্রহ্মহত্যাসমৈরপি। পাঠমাত্রেণ মন্ত্রাণাং মুচ্যতে সর্বকিল্বিষৈঃ। ২৪ ৷৷

সপ্তশতীর পাঠমাত্রই মানুষ সপ্তজন্মার্জিত ব্রহ্মহত্যাদিরূপ ঘোর পাপ এবং সমস্ত কলুষ থেকে বিমুক্ত হয়। ২৪ ৷৷

দেব্যা ধ্যানং ময়া খ্যাতং গুহ্যাদ্ গুহ্যতরং মহৎ। তস্মাৎ সর্বপ্রযত্নেন সর্বকামফলপ্রদম্৷ ২৫ ৷৷

এইজন্য আমি পূর্ণ প্রযত্ন করে গুহ্য থেকে গুহ্যতর ধ্যানের বর্ণনা করলাম, যা নাকি সমস্ত মনোবাঞ্ছা-পূরণকারী। ২৫ ।।

(এতস্যান্তং প্রসাদেন সর্বমান্যো ভবিষ্যসি।
সর্বরূপময়ী দেবী সর্বং দেবীময়ং জগৎ।
অতোহহং বিশ্বরূপাং তাং নমামি পরমেশ্বরীম্।)

(তাঁর কৃপায় তুমি সর্বমান্য হবে। দেবী সর্বরূপময়ী আর সমস্ত জগৎ দেবীময়ী। অতএব আমি সেই বিশ্বরূপা পরমেশ্বরীকে প্রণাম করি।)

ইতি মূর্তিরহস্যং সম্পূর্ণম্।

মূর্তিরহস্য সম্পূর্ণ হল।

ক্ষমা প্রার্থনা

Durga Saptashati Image

ক্ষমা প্রার্থনা

অপরাধসহস্রাণি ক্রিয়ন্তেহহর্নিশং ময়া। দাসোহয়মিতি মাং মত্বা ক্ষমস্ব পরমেশ্বরি ৷৷ ১ ৷৷

হে পরমেশ্বরি! প্রতি দিন আমি হাজার হাজার অপরাধ করে থাকি। 'এ আমার দাস'-এই মনে করে আমার সেই অপরাধ তুমি কৃপা করে ক্ষমা করো। ১।।

আবাহনং ন জানামি ন জানামি পূজাং চৈব ন জানামি ক্ষম্যতাং বিসর্জনম্। পরমেশ্বরি ৷৷ ২৷৷

হে পরমেশ্বরি! আমি না জানি আবাহন, না জানি বিসর্জন আর পূজাও আমি জানি না। ক্ষমা করো।। ২ ।।

মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং সুরেশ্বরি। যৎ পুজিতং ময়া দেবি পরিপূর্ণং তদস্তু মে৷৷৩৷৷

হে দেবি! সুরেশ্বরি! মন্ত্রহীন, ক্রিয়াহীন, ভক্তিহীন যে পূজা আমি করছি, সে সব তোমার কৃপায় পূর্ণতাপ্রাপ্ত হোক।। ৩ ।।

অপরাধশতং কৃত্বা জগদম্বেতি চোচ্চরেৎ। যাং গতিং সমবাপ্নোতি ন তাং ব্রহ্মাদয়ঃ সুরাঃ। ৪ ৷৷

সহস্র অপরাধ করেও যে তোমার শরণ নিয়ে 'মা জগদম্বা' বলে ডাকে, ব্রহ্মাদি দেবতাদের যে গতি সুলভ নয়, সে সেই গতিও প্রাপ্ত হয়।। ৪ ।।

সাপরাধোহস্মি শরণং প্রাপ্তত্ত্বাং জগদম্বিকে। ইদানীমনুকম্প্যোহহং যথেচ্ছসি তথা কুরু৷ ৫ ৷৷

হে জগদম্বিকে! আমি অপরাধী, কিন্তু তোমার শরণ গ্রহণ করেছি, আমি তোমার দয়ার পাত্র। তুমি যা ভাল মনে কর, করো । ৫ ৷৷

অজ্ঞানাবিস্মৃতোন্ত্যা যন্যূনমধিকং কৃতম্। তৎ সর্বং ক্ষম্যতাং দেবি প্রসীদ পরমেশ্বরি ।। ৬ ৷৷

হে দেবি! পরমেশ্বরি! অজ্ঞানতাহেতু, ভুলবশতঃ অথবা বুদ্ধির ভ্রান্তির দরুন আমি যা ন্যূন বা অধিক করেছি, সেইসব তুমি ক্ষমা করো আর প্রসন্না হও॥৬॥

কামেশ্বরি জগন্মাতঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহে। গৃহাণাচামিমাং প্রীত্যা প্রসীদ পরমেশ্বরি ।। ৭ ৷৷

সচ্চিদানন্দস্বরূপা পরমেশ্বরি! জগন্মাতা কামেশ্বরি! তুমি প্রীতিপূর্বক আমার এই পূজা গ্রহণ করো ও আমার প্রতি প্রসন্না হও ৷৷ ৭ ।।

গুহ্যাতিগুহ্যগোত্রী ত্বং গৃহাণাস্মৎকৃতং জপম্। সিদ্ধির্ভবতু মে দেবি ত্বৎপ্রসাদাৎ সুরেশ্বরি৷ ৮ ৷৷

হে দেবি! সুরেশ্বরি! তুমি গুহ্য থেকে গুহ্যতর বস্তুর রক্ষাকত্রী। আমার নিবেদিত এই জপ গ্রহণ করো। তোমার কৃপায় আমার সিদ্ধিলাভ হোক।।৮ ৷৷

।। শ্রীদুর্গাপূণমস্ত ।।

শ্রীদুর্গামানস পূজা

Durga Saptashati Image

শ্রীদুর্গামানস পূজা

উদ্যচ্চন্দনকুন্ধুমারুণপয়োধারাভিরাপ্লাবিতাং
নানানঘ্যমণিপ্রবালঘটিতাং দত্তাং গৃহাণাম্বিকে।
আমৃষ্টাং সুরসুন্দরীভিরভিতো হস্তাম্বুজৈর্ভক্তিতো
মাতঃ সুন্দরি ভক্তকল্পলতিকে শ্রীপাদুকামাদরাৎ৷৷ ১ ৷৷

হে মাতা ত্রিপুরসুন্দরি! ভক্তমনবাঞ্ছাপূরণকারিণী তুমি কল্পলতা। মা! এই শ্রীপাদুকা ভক্তিপূর্বক তোমার শ্রীচরণে সমর্পিত হয়েছে, তুমি গ্রহণ করো। এই পাদুকা উত্তম চন্দন ও কুঙ্কুমলিপ্ত মিলিত লাল জলধারায় ধৌত, তুমি ইহা গ্রহণ করো। নানারকম বহুমূল্য মণিমাণিক্য দিয়ে এটি রচিত করা হয়েছে, অনেক দেবাঙ্গনাদের করকমলদ্বারা ভক্তিপূর্বক সাদরে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে নির্মল করা হয়েছে ।। ১৷৷

দেবেন্দ্রাদিভিরর্চিতং সুরগণৈরাদায় সিংহাসনং
চঞ্চৎকাঞ্চনসংচয়াভিরচিতং চারুপ্রভাভাস্বরম্।
এতচ্চম্পককেতকীপরিমলং তৈলং মহানির্মলং
গন্ধোদ্বর্তনমাদরেণ তরুণীদত্তং গৃহাণাম্বিকে৷ ২৷

মা! তোমার বসবার জন্য দেবতারা এই দিব্য সিংহাসন এখানে রেখেছেন, তুমি এর ওপর বসো। এই সিংহাসনকে দেবরাজ ইন্দ্রাদিও পূজা করেন। নিজ কান্তিতে উদ্‌ভাসিত রাশি রাশি সুবর্ণ দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। আপন মনোহর প্রভায় এটি সর্বদা প্রকাশিত থাকে। এছাড়া, চাঁপা ও কেতকীর সুগন্ধে পূর্ণ অত্যন্ত নির্মল তেল আর সুগন্ধি মিশ্রণের বিলেপনে বিলেপিত এই সিংহাসন, দিব্য যুবতীরা অতি যত্ন করে তোমার সেবার জন্য প্রস্তুত করেছে, কৃপা করে এটি গ্রহণ করো।। ২।

পশ্চাদ্‌দেবি গৃহাণ শম্ভুগৃহিনি শ্রীসুন্দরি প্রায়শো
গন্ধদ্রব্যসমূহনির্ভরতরং ধাত্রীফলং নির্মলম্।
তৎকেশান্ পরিশোধ্য কঙ্কতিকয়া মন্দাকিনীস্রোতসি
স্নাত্বা প্রোজ্জ্বলগন্ধকং ভবতু হে শ্রীসুন্দরি ত্বম্মুদে। ৩ ৷৷

হে দেবি! এরপর তুমি এই আমলকী ফলটি গ্রহণ করো। হে শিবপ্রিয়ে! ত্রিপুরসুন্দরি! যত কিছু সগন্ধি এই সংসারে আছে, সবই এই আমলকীতে আছে যার ফলে এইটি এতই সুগন্ধিত হয়েছে। কাজেই চুলের মধ্যে এটি লাগিয়ে চুলটা কঙ্কতিকা দ্বারা (কাঁকুই চিরুণী দিয়ে) আচঁড়ে পবিত্র গঙ্গায় গিয়ে স্নান করে এসো। তারপর এই দিব্য গন্ধ তোমার জন্য প্রস্তুত করা রইল, এই গন্ধ তোমার আনন্দবর্দ্ধন করবে।। ৩ ।।

সুরাধিপতিকামিনীকরসরোজনালীধৃতাং
সচন্দনসকুক্কুমাগুরুভরেণ বিভ্রাজিতাম্।
মহাপরিমলোজ্জ্বলাং সরসশুদ্ধকস্তুরিকাং
গৃহাণ বরদায়িনি ত্রিপুরসুন্দরি শ্রীপ্রদে। ৪ ॥

সর্বসম্পদায়িনী বরদা ত্রিপুরসুন্দরি! এই সরস শুদ্ধ কস্তুরী গ্রহণ করো। দেবরাজ ইন্দ্রের পত্নী শচীদেবী স্বয়ং এইটি নিজের হাতে নিয়ে তোমার সেবার জন্য অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে চন্দন, কুঙ্কুম ও অগুরু একত্র হওয়াতে এর শোভা আরও বেড়ে গেছে। এর থেকে অতি সুন্দর গন্ধ নির্গত হওয়ায় এটি বড়ই মনোহর দেখাচ্ছে। ৪ ।।

গন্ধর্বামরকিন্নরপ্রিয়তমাসংতানহস্তাম্বুজ-
প্রস্তারৈপ্রিয়মাণমুত্তমতরং কাশ্মীরজাপিঞ্জরম্।
মাতর্ভাস্বরভানুমণ্ডললসৎকান্তিপ্রদানোজ্জ্বলং
চৈতন্নির্মলমাতনোতু বসনং শ্রীসুন্দরি ত্বম্মুদম্ ॥ ৫ ৷৷

মা শ্রীসুন্দরি! এই পরম উত্তম পবিত্র বস্ত্র তোমার সেবায় নিবেদিত হয়েছে, এটি তোমার হর্ষবৃদ্ধি করবে। মাতঃ! গন্ধর্ব, দেবতা তথা কিন্নরদের প্রেয়সী সুন্দরীরা নিজেদের প্রসারিত করকমলে এই বস্ত্র নিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। এই বস্ত্র কেশরের রংয়ে রঞ্জিত পীতাম্বর। এই বস্ত্র থেকে পরম প্রকাশমান সূর্যমণ্ডলের শোভাময়ী দিব্য কান্তি বিচ্ছুরিত হচ্ছে আর তাতে এই বস্ত্র অতীব সুশোভিত হয়েছে।। ৫ ।।

স্বর্ণাকল্পিতকুণ্ডলে শ্রুতিযুগে হস্তাম্বুজে মুদ্রিকা
মধ্যে সারসনা নিতম্বফলকে মঞ্জীরমস্ত্রিদ্বয়ে।
হারো বক্ষসি কঙ্কণৌ কণরণৎকারৌ করদ্বন্দ্বকে
বিন্যস্তং মুকুটং শিরস্যনুদিনং দত্তোম্মদং স্থয়তাম্। ৬ ৷৷

তোমার দুই কর্ণে স্বর্ণকুণ্ডল ঝিলমিল করছে, করকমলের এক আঙ্গুলে অঙ্গুরীয় শোভা পাচ্ছে, কটিদেশে নিতম্বের ওপর কাঞ্চী (করধনী) শোভিত রয়েছে, দুটি চরণকমলে নূপুর রিমঝিম বাজছে, বক্ষদেশে সুন্দর হার দোদুল্যমান আর দুই কবজিতে কঙ্কণ ঝনঝন্ করছে। তোমার মস্তকে স্থিত দিব্য মুকুট প্রতিদিন আনন্দ-প্রদানকারী হোক। এই সব অলঙ্কারই প্রশংসাযোগ্য সুন্দর ।। ৬ ৷৷

গ্রীবায়াং ধৃতকান্তিকান্তপটলং গ্রৈবেয়কং সুন্দরং
সিন্দুরং বিলসল্ললাটফলকে সৌন্দর্যমুদ্রাধরম্।
রাজৎকজ্জলমুজ্জ্বলোৎপলদলশ্রীমোচনে লোচনে
তদ্দিব্যৌষধিনির্মিতং রচয়তু শ্রীশান্তবি শ্রীপ্রদে। ৭ ॥

হে ধনদায়িনী শিবপ্রিয়া পার্বতি! তোমার গলায় এই অপূর্ব ঝক্সকে কণ্ঠভূষা হাঁসুলীটি পরে নাও, ললাটমধ্যে সৌন্দর্যের প্রতীকচিহ্ন সিন্দূরের টিপ লাগাও তথা অতীব সুন্দর পদ্মকোরকের লজ্জাদায়ী তোমার চোখে এই কাজলও লাগাও। এই কাজল দিব্য ওষধি দিয়ে প্রস্তুত হয়েছে।। ৭ ।।

অমন্দতরমন্দরোন্মথিতদুগ্ধসিন্ধুপ্তবং
নিশাকরকরোপমং ত্রিপুরসুন্দরি শ্রীপ্রদে।
গৃহাণ মুখমীক্ষিতুং মুকুরবিম্বমাবিদ্রুমৈ-
বিনির্মিতমঘচ্ছিদে রতিকরাম্বুজস্থায়িনম্।। ৮ ॥

পাপনাশিনী সম্পদদায়িনী ত্রিপুরসুন্দরি! নিজের চন্দ্রবদন বিম্বিত করার জন্য এই দর্পণ গ্রহণ করো। রতিদেবী স্বয়ং এই দর্পণ হাতে নিয়ে তোমাকে দেবার জন্য অপেক্ষমাণ। এই দর্পণের চারিদকে মুঙ্গ লেপন করা রয়েছে। ক্ষীরসমুদ্র মন্থনের সময় দুরন্তবেগে ঘূর্ণিত মন্দার পর্বতের মন্থনে এই দর্পণ উঠে এসেছিল। চন্দ্রের কিরণের মতো উজ্জ্বল এই দর্পণ। ৮ ।।

কস্তুরীদ্রবচন্দনাগুরুসুধাধারাভিরাপ্লাবিতং
চঞ্চচ্চম্পকপাটলাদিসুরভিদ্রব্যৈঃ সুগন্ধীকৃতম্।
দেবস্ত্রীগণমস্তকস্থিতমহারত্নাদিকুম্ভব্রজৈ-
রম্ভঃশান্তবি সংভ্রমেণ বিমলং দত্তং গৃহাণাম্বিকে ৷ ৯ ॥

হে শিবধর্মপত্নী পার্বতী দেবি! দেবাঙ্গনাদের মাথায় রাখা মহামূল্য রত্নময় কলসে স্থিত এই পবিত্র জল শীঘ্র গ্রহণ করো। এই জল চম্পা ও গুগুলাদি সুগন্ধি দ্রব্যে সুবাসিত করা হয়েছে আর কস্তুরীরস, চন্দন, অগুরু এবং সুধার ধারায় এই জল মিশ্রিত করা হয়েছে।। ৯।।

কহ্লারোৎপলনাগকেসরসরোজাখ্যাবলীমালতী-
মল্লীকৈরবকেতকাদিকুসুমৈ রক্তাশ্বমারাদিভিঃ।
পুষ্পৈমাল্যভরেণ বৈ সুরভিণা নানারসস্রোতসা
তাম্রাম্ভোজনিবাসিনীং ভগবতীং শ্রীচণ্ডিকাং পূজয়ে৷ ১০ ৷৷

কহ্লার, উৎপল, নাগকেশর, পদ্ম, মালতী, মল্লিকা, কুমুদ, কেতকী ও রক্তকনেরাদি পুষ্প দিয়ে, সুগন্ধি পুষ্পমাল্য দিয়ে এবং নানাপ্রকার রসধারা দিয়ে রক্তপদ্মে আসীনা শ্রীচণ্ডিকা দেবীর আমি পূজা করছি।। ১০ ৷৷

মাংসীগুগ্‌গুলচন্দনাগুরুরজঃ কপূরশৈলেয়জৈ-
মাধবীকৈঃ সহ কুঙ্কুমৈঃ সুরচিতৈঃ সর্পির্ভিরামিশ্রিতৈঃ।
সৌরভ্যস্থিতিমন্দিরে মণিময়ে পাত্রে ভবেৎ প্রীতয়ে
ধূপোহয়ং সুরকামিনীবিরচিতঃ শ্রীচণ্ডিকে ত্বম্মুদে। ১১ ৷৷

মাতা শ্রীচণ্ডিকে! দেববধূদের দ্বারা নির্মিত এই দিব্য ধূপ তোমার প্রসন্নতাবর্ধনকারী হোক। এই ধূপ রত্নময় সুবাসিত আধারে রাখা হয়েছে; এই ধূপ তোমার সন্তোষপ্রদায়িনী। এটি জটামাংসী, গুগুল, চন্দন, অগুরুচূর্ণ, কপূর, শিলাজীত, মধু, কুক্কুম ও ঘী একত্রিত করে উত্তম রীতিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।। ১১ ।।

ঘৃতদ্রবপরিস্ফুরদ্রুচির রত্নযষ্ট্যান্বিতো
মহাতিমিরনাশনঃ সুরনিতম্বিনীনির্মিতঃ।
সুবর্ণচষকস্থিতঃ সঘনসারবত্যান্বিত-
স্তব ত্রিপুরসুন্দরি স্ফুরতি দেবি দীপো মুদে৷৷ ১২ ৷৷

হে দেবী ত্রিপুরসুন্দরি! তোমাকে প্রসন্ন করার জন্য এখানে এই দীপ প্রজ্বলিত রয়েছে। ধৃত দিয়ে এই দীপ জ্বালান হয়েছে; এই দীপের নীচে দেবাঙ্গনাদের দ্বারা নির্মিত রত্নদণ্ড লাগান হয়েছে। সুবর্ণপাত্রে জ্বালান হয়েছে। এর মধ্যে কপূরের বাতিও রাখা হয়েছে। ভীষণতম অন্ধকারকেও এই দীপ দূর করে দেয়।। ১২ ৷৷

জাতীসৌরভনির্ভরং রুচিকরং শাল্যোদনং নির্মলং
যুক্তং হিঙ্গুমরীচজীরসুরভিদ্রব্যাম্বিত্যৈঞ্জনৈঃ।
পক্কান্নেন সপায়সেন মধুনা দধ্যাজ্যসম্মিশ্রিতং
নৈবেদ্যং সুরকামিনীবিরচিতং শ্রীচণ্ডিকে ত্বম্মুদে। ১৩ ৷৷

হে শ্রীচণ্ডিকে দেবি! তোমার প্রসন্নতার জন্য দেববধূরা ভোগ, নৈবেদ্য সাজিয়েছে। এই ভোগনৈবেদ্য শালী ধানের চালে শুদ্ধ রুচিকর, চামেলীর গন্ধে সুবাসিত অন্নের সাথে জিরা, লঙ্কা, হলুদ, ধনে ইত্যাদি মশলা দিয়ে নানাবিধ ব্যঞ্জনও রয়েছে, যার মধ্যে দুধ, মধু, দই ও ঘি যথোপযুক্তভাবে দেওয়া হয়েছে।। ১৩ ৷৷

লবঙ্গকলিকোজ্জ্বলং বহুলনাগবল্লীদলং
সজাতিফলকোমলং সঘনসারপূগীফলম্।
সুধামধুরিমাকুলং রুচিররত্নপাত্রন্থিতং
গৃহাণ মুখপঙ্কজে স্ফুরিতমম্ব তাম্বুলকম্ ॥ ১৪৷৷

মা! সুন্দর রত্নখচিত পাত্রে দিব্য তাম্বুল সুসজ্জিত করা হয়েছে, তুমি অনুগ্রহ করে এই তাম্বুল মুখে দাও। লবঙ্গ দিয়ে এই পানের খিলি আটকান হয়েছে, ফলে ইহা অতীব সুন্দর দেখতে হয়েছে। এই পানের খিলিতে অনেক পানাক্ষপাতা, নরম জৈত্রী, কপূর ও সুপারী দেওয়া হয়েছে। এই তাম্বুল সুধামাধুর্যে পরিপূর্ণ। ১৪ ৷৷

শরৎপ্রভবচন্দ্রমঃস্ফুরিতচন্দ্রিকাসুন্দরং
গলৎসুরতরঙ্গিণীললিতমৌক্তিকাড়ম্বরম্ ।
গৃহাণ নবকাঞ্চনপ্রভবদণ্ডখণ্ডোজ্জ্বলং
মহাত্রিপুরসুন্দরি প্রকটমাতপত্রং মহৎ৷৷ ১৫ ৷৷

হে মহাত্রিপুরসুন্দরী মাতা পার্বতি! এই দিব্য বিশাল ছত্র রাখা হয়েছে, দয়া করে এটা গ্রহণ করো। শারদপূর্ণিমার অমৃতবর্ষী সুধার মতো এই ছত্র সুন্দর। এই ছাতায় মুক্তার ঝালর দেখে মনে হয় যেন দেবনদী গঙ্গার স্রোত উপর থেকে নীচে পড়ছে। সুবর্ণময় দণ্ডের কারণ এই ছত্র অপূর্ব মনোরম দর্শনধারী ৷৷ ১৫ ৷৷

মাতত্ত্বম্মুদমাতনোতু সুভগস্ত্রীভিঃ সদাহহন্দোলিতং
শুভ্রং চামরমিন্দুকুন্দসদৃশং প্রস্বেদদুঃখাপহম্।
সদ্যোহগস্ত্যবসিষ্ঠনারদশুকব্যাসাদিবাল্মীকিভিঃ
স্বে চিত্তে ক্রিয়মাণ এব কুরুতাং শর্মাণি বেদধ্বনিঃ৷৷ ১৬৷

মা! সুন্দরী নারীদের হাতে নিরন্তর ব্যজনিত চন্দ্র ও কুন্দফুলের মতো উজ্জ্বল ও স্বেদনিবারক এই শ্বেত চামর তোমার আনন্দ বর্দ্ধন করবে। এছাড়া মহর্ষি অগস্ত্য, বসিষ্ঠ, নারদ, শুকদেব, ব্যাসাদি তথা বাল্মকী মুনি নিজেদের মনে যে সব বেদমন্ত্র উচ্চারণ করেন, তাদের সেই মানস সংকল্পিত বেদধ্বনি তোমার আনন্দ বৃদ্ধি করুক। ১৬ ৷৷

স্বর্গাঙ্গণে বেণুমৃদঙ্গশঙ্খভেরীনিনাদৈরুপগীয়মানা।
কোলাহলৈরাকলিতা তবাস্তু বিদ্যাধরীনৃত্যকলা সুখায়। ১৭৷৷

স্বর্গের আঙ্গিনায় বেণু, মৃদঙ্গ, শঙ্খ ও ভেরীর মধুর ধ্বনির মধ্যে যে সুর বাজে আবার এদের সমবেত কলতানে যে শব্দ ব্যাপ্ত হয়, সেই সবের তালে ছন্দে বিদ্যাধরীদের প্রদর্শিত নৃত্যকলা তোমার সুখবৃদ্ধি করুক । ১৭ ৷৷

দেবি ভক্তিরসভাবিতবৃত্তে প্রীয়তাং যদি কুতোহপি লভ্যতে।
তত্র লৌল্যমপি সৎফলমেকং জন্মকোটিভিরপীহ ন লভ্যম্৷ ১৮ ॥

হে দেবি! তোমার ভক্তিরসে ভাবিত এই ছন্দময় স্তোত্রে যদি কোথাও কোনও ভক্তির লেশও পাও, তবে তুমি তাতেই প্রসন্ন হও। মা! তোমার প্রতি ভক্তির উদ্রেকের জন্য মনের মধ্যে যে আকুলতা হয়, সেটাই জীবনের একমাত্র সার্থকতা। এই আকুলতা কোটি কোটি বার জন্মগ্রহণ করলেও তোমার কৃপা বিনা সুলভ হয় না৷৷ ১৮ ৷৷

এতৈঃ ষোড়শভিঃ পদ্যৈরূপচারোপকল্পিতৈঃ।
যঃ পরাং দেবতাং স্তৌতি স তেষাং ফলমাপুয়াৎ৷ ১৯ ৷৷

এই উপচার কল্পিত ষোলটা শ্লোকে পরাশক্তি ভগবতী ত্রিপুরসুন্দরীকে যে স্তব করে, সে এইসব উপচার সমর্পণের ফল লাভ করে। ১৯ ৷৷