অথ ষষ্ঠোহধ্যায়ঃ
ষষ্ঠ অধ্যায়
ধূম্রলোচন-বধ
ধ্যানম্
নাগাধীশ্বরবিষ্টরাং ফণিফণোত্তংসোরুরত্নাবলী- ভাস্বদ্দেহলতা দিবাকরনিভাং নেত্রত্রয়োদ্ভাসিতাম্। মালাকুম্ভকপালনীরজকরাং চন্দ্রার্থচূড়াং পরাং সর্বজ্ঞেশ্বরভৈরবাঙ্কনিলয়াং পদ্মাবতীং চিন্তয়ে।।
সর্বজ্ঞেশ্বর ভৈরবের কোলে অবস্থিতা পরমোৎকৃষ্টা পদ্মাবতী দেবীকে আমি চিন্তা করি। নাগরাজ বাসুকি তাঁর আসন, সর্পফণায় সুশোভিত, মণিসমূহে গ্রথিত বিশাল মালা তাঁর দেহলতায় উদ্ভাসিত। তিনি রবিতুল্য তেজে উজ্জ্বল এবং ত্রিনয়নে শোভিতা। তাঁর চার হাতে (অক্ষ) মালা, কমণ্ডলু, নরমুণ্ড এবং পদ্মফুল আর তাঁর মস্তক অর্দ্ধচন্দ্রচূড়াশোভিত মুকুটমণ্ডিত।
'ওঁ' খঋষিরুবাচ ৷৷ ১ ৷৷
মেধা ঋষি বললেন-৷৷ ১ ।।
ইত্যাক্য বচো দেব্যাঃ স দূতোহমর্ষপূরিতঃ।
সমাচষ্ট সমাগম্য দৈত্যরাজায় বিস্তরাৎ৷৷ ২৷৷
দেবীর এই কথা শুনে সেই দূত ক্রোধে পরিপূরিত হয়ে দৈত্যরাজ (শুম্ভের) এর কাছে এসে সমস্ত বৃত্তান্ত সবিস্তারে জানিয়ে দিল।। ২ ৷৷
তস্য দূতস্য তদ্বাক্যমাক্যাসুররাট্ ততঃ।
সক্রোধঃ প্রাহ দৈত্যানামধিপং ধূম্রলোচনম্ ॥ ৩ ৷৷
দূতের মুখে সেই সংবাদ শুনে অসুররাজ কুপিত হয়ে দৈত্যসেনাপতি ধূম্রলোচনকে বলল। ৩ ॥
হে ধূম্রলোচনাশু ত্বং স্বসৈন্যপরিবারিতঃ।
তামানয় বলাদ্ দুষ্টাং কেশাকর্ষণবিহ্বলাম্। ৪।।
'হে ধূম্রলোচন! তুমি অবিলম্বে নিজের সৈন্যদলে পরিবেষ্টিত হয়ে সেখানে যাও এবং সেই দুষ্টাকে কেশাকর্ষণের দ্বারা ব্যাকুলিত করে বলপূর্বক তাকে এখানে নিয়ে এস।। ৪ ৷৷
তৎপরিত্রাণদঃ কশ্চিদ্ যদি বোত্তিষ্ঠতেহপরঃ।
স হন্তব্যোহমরো বাপি যক্ষো গন্ধর্ব এব বা৷৷ ৫৷৷
তাকে রক্ষা করতে যদি কেউ আসে, তাহলে সে দেবতা, যক্ষ অথবা গন্ধর্ব যে কেউই হোক না কেন, তাকেও অবশ্যই বধ করবে'।। ৫ ॥
ঋষিরুবাচ। ৬ ৷৷
মেধা ঋষি বললেন-। ৬।
তেনাজ্ঞপ্তস্ততঃ শীঘ্রং স দৈত্যো ধূম্রলোচনঃ।
বৃতঃ ষষ্ট্যা সহস্রাণামসুরাণাং দ্রুতং যযৌ৷৷ ৭৷৷
শুন্তের এই আদেশ পেয়ে সেই ধূম্রলোচন অসুর ষাট হাজার অসুরসেনায় পরিবৃত হয়ে সেখান থেকে দ্রুতবেগে গমন করল।। ৭ ।।
স দৃষ্টা তাং ততো দেবীং তুহিনাচলসংস্থিতাম্।
জগাদোচ্চৈঃ প্রযাহীতি মূলং শুম্ভনিশুম্ভয়োঃ ৷৷ ৮৷৷
ন চেৎ প্রীত্যাদ্য ভবতি মন্তর্তারমুপৈষ্যতি।
ততো বলান্নয়াম্যেষ কেশাকর্ষণবিহ্বলাম্৷৷ ৯৷৷
ওখানে পৌঁছে সে হিমাচলবাসিনী দেবীকে দেখতে পেল এবং উচ্চৈঃস্বরে বলল-রে দুষ্টা! তুই শুম্ভ নিশুম্ভের কাছে চল্। আজ যদি খুশীমনে ভালোয় ভালোয় আমার প্রভুর কাছে না যাস্, তাহলে আমি জোর করে কেশাকর্ষণ করে তোকে নিয়ে যাব।। ৮-৯ ।।
দেব্যুবাচ। ১০৷৷
দেবী বললেন-৷ ১০।।
দৈত্যেশ্বরেণ প্রহিতো বলবান্ বলসংবৃতঃ।
বলান্নয়সি মামেবং ততঃ কিং তে করোম্যহম্।। ১১৷৷
দৈত্যরাজ তোমাকে পাঠিয়েছে, তুমি নিজেও অতি বলবান আর তোমার সাথে রয়েছে বিশাল সৈন্যবাহিনী; এই অবস্থায় যদি তুমি জোর করে আমাকে নিয়ে যাও আমি আর তোমার কী করতে পারি? । ১১ ৷৷
ঋষিরুবাচ।। ১২৷৷
ঋষি বললেন-৷৷ ১২৷৷
ইত্যুক্তঃ সোহভ্যধাবৎ তামসুরো ধূম্রলোচনঃ।
হুঙ্কারেণৈব তং ভস্ম সা চকারাম্বিকা ততঃ৷৷ ১৩৷৷
দেবীর এই কথা শুনে অসুর ধূম্রলোচন তাঁর দিকে ধেয়ে যাওয়া মাত্র অম্বিকা দেবী তাঁর হুঙ্কার শব্দের দ্বারাই তাকে ভস্ম করে ফেললেন।। ১৩ ।।
অথ ক্রুদ্ধং মহাসৈন্যমসুরাণাং তথাম্বিকা।
ববর্ষ সায়কৈস্তীক্ষৈস্তথা শক্তিপরশ্বধৈঃ ।। ১৪৷৷
অনন্তর সেই বিশাল অসুর সৈন্যবাহিনী ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে জগদম্বার প্রতি তীক্ষ্ণ শর, শেল ও কুঠার প্রভৃতি অস্ত্র বর্ষণ করতে লাগল।। ১৪ ।।
ততো ধুতসটঃ কোপাৎ কৃত্বা নাদং সুভৈরবম্।
পপাতাসুরসেনায়াং সিংহো দেব্যাঃ স্ববাহনঃ ৷৷ ১৫ ৷৷
এই অবস্থায় দেবীর বাহন সিংহ অতিক্রুদ্ধ হয়ে কেশর ফুলিয়ে ভয়ংকর গর্জন করে অসুরসেনার মধ্যে লাফ দিয়ে পড়লেন। ১৫ ৷৷
কাংশ্চিৎ করপ্রহারেণ দৈত্যানাস্যেন চাপরান।
আক্রম্য চাধরেণান্যান স জঘান মহাসুরাম্।। ১৬৷৷
অসুরসেনাদের মধ্যে কাউকে আবার আঘাতে, বহু সেনাকে দংশন দ্বারা এবং আরও বহু সেনাকে মাটীতে ফেলে নিজের অধরদেশ দ্বারা আহত করে বধ করতে লাগলেন।। ১৬ ।।
কেষাঞ্চিৎ পাটয়ামাস নখৈঃ কোষ্ঠানি কেসরী।
তথা তলপ্রহারেণ শিরাংসি কৃতবান্ পৃথক্ ।। ১৭৷৷
বহু অসুরকে নিজের ধারাল নখ দিয়ে, আবার অনেককে পেট চিরে ফেলে এবং বহু সৈন্যকে থাবার প্রহারে শরীর থেকে মাথা দুটুকরো করে ফেললেন। ১৭ ॥
বিচ্ছিন্নবাহুশিরসঃ কৃতান্তেন তথাপরে।
পপৌ চ রুধিরং কোষ্ঠাদন্যেষাং ধৃতকেসরঃ৷৷ ১৮৷৷
কোনও অসুরের হাতগুলি, কোনও অসুরের মাথাগুলি ছিন্ন করে ফেললেন আবার কেশর ফুলিয়ে অনেকের পেটের ভেতর থেকে রক্তপান করতে লাগলেন। ১৮ ।।
ক্ষণেন তদ্বলং সর্বং ক্ষয়ং নীতং মহাত্মনা।
তেন কেসরিণা দেব্যা বাহনেনাতিকোপিনা৷৷ ১৯৷৷
অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়ে দেবীর বাহন সেই মহাসিংহ ক্ষণকালমধ্যে সমস্ত অসুরদল সংহার করে ফেললেন।। ১৯ ।।
শ্রুত্বা তমসুরং দেব্যা নিহতং ধূম্রলোচনম্।
বলঞ্চ ক্ষয়িতং কৃৎস্নং দেবীকেসরিণা ততঃ।৷ ২০৷৷
চুকোপ দৈত্যাধিপতিঃ শুম্ভঃ প্রস্ফুরিতাধরঃ।
আজ্ঞাপয়ামাস চ তৌ চণ্ডমুণ্ডৌ মহাসুরৌ। ২১ ৷৷
শুম্ভ যখন জানতে পারল যে দেবী ভগবতী ধূম্রলোচনকে নিহত করেছেন এবং দেবীর বাহন সিংহ সব অসুর সেনাদের শেষ করে দিয়েছেন, তখন সে ভীষণ ক্রুদ্ধ হল এবং রাগে তার ঠোঁট কাঁপতে লাগল। চণ্ড ও মুন্ড নামে দুই অসুরসেনাপতিকে ডেকে সে আদেশ দিল । ২০ - ২১ ৷৷
হে চণ্ড হে মুণ্ড বলৈবহুভিঃ পরিবারিতৌ।
তত্র গচ্ছতং গত্বা চ সা সমানীয়তাং লঘু। ২২ ৷৷
কেশেম্বাকৃষ্য বদ্ধা বা যদি বঃ সংশয়ো যুধি।
তদাশেষায়ুধৈঃ সর্বৈরসুরৈর্বিনিহন্যতাম্।। ২৩৷৷
হে চণ্ড হে মুণ্ড! তোমরা দুজনে বহু সৈন্য নিয়ে ওখানে যাও, সেই দেবীকে চুলের মুঠি ধরে আর নয়ত তাঁকে বেঁধে নিয়ে এস। আর যদি এই ব্যাপারে তোমাদের মনে কোনও অবস্থায় কোনও সংশয় জাগে, তবে সব সৈন্য একত্র হয়ে সমস্ত রকম অস্ত্র শস্ত্র দিয়ে তাকে বধ করবে।। ২২-২৩ ৷৷
তস্যাং হতায়াং দুষ্টায়াং সিংহে চ বিনিপাতিতে।
শীঘ্রমাগম্যতাং বদ্ধা গৃহীত্বা তামথাম্বিকাম্।। ওঁ ৷৷ ২৪ ৷৷
সেই দুষ্টা নিহত হলে এবং সিংহও মৃত হলে সেই দেবী অগ্নিকাকে বেঁধে তাড়াতাড়ি এখানে নিয়ে এস। ২৪ ৷৷
ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যে শুম্ভনিশুম্ভসেনানীধূম্রলোচনবধো নাম ষষ্ঠোহধ্যায়ঃ ।। ৬ ৷৷
এই অধ্যায়ে উবাচ-৪, শ্লোক-৩৫, মোট-২৪
আদি হতে সর্বমোট-৪১২
শ্রীমার্কণ্ডেয় পুরাণে সাবর্ণিক মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যপ্রসঙ্গে শুম্ভ-নিশুম্ভ সেনাপতি 'ধূম্রলোচন-বধ' নামক ষষ্ঠ অধ্যায় সম্পূর্ণ হল৷৷ ৬ ৷৷