অথ সপ্তমোহধ্যায়ঃ
সপ্তম অধ্যায়
চণ্ড ও মুণ্ড বধ
ধ্যানম্
ওঁ ধ্যায়েয়ং রত্নপীঠে শুককলপঠিতং শৃণ্বতীং শ্যামলাঙ্গীং ন্যন্তৈকাস্প্রিং সরোজে শশিশকলধরাং বল্লকীং বাদয়ন্তীম্। কহ্লারাবদ্ধমালাং নিয়মিতবিলসচ্চোলিকাং রক্তবস্ত্রাং মাতঙ্গীং শঙ্খপাত্রাং মধুরমধুমদাং চিত্রকোভাসিভালাম্।।
আমি মাতঙ্গীদেবীর ধ্যান করি। তিনি রত্নময় সিংহাসনে বসে শুকপাখীর মধুর কলরব শ্রবণরতা। তিনি শ্যামবর্ণা। তাঁর একটা পা কমলের ওপর ন্যস্ত এবং তিনি শশিশেখরা তথা তাঁর গলায় কহ্লার ফুলের মালা এবং তিনি বীণাবাদনরতা। তাঁর অঙ্গে চোলি সুষ্ঠুরূপে শোভিত। তাঁর পরনে রক্তবস্ত্র, হাতে শঙ্খপাত্র, মুখমণ্ডল সুমিষ্ট অমৃতপানে রক্তিমাভামণ্ডিত আর কপাল বিশিষ্ট তিলকশোভায় শোভিত।
'ওঁ' ঋষিরুবাচ ।। ১ ৷৷
মেধা ঋষি বললেন-৷৷ ১ ।।
তখন শুন্তের আদেশ পেয়ে চণ্ড-মুণ্ডপ্রমুখ অসুরেরা চতুরঙ্গিণী সেনায় সজ্জিত ও নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্র ধারণ করে দেবীর উদ্দেশ্যে রওনা হল। ২।
আজ্ঞপ্তাস্তে ততো দৈত্যাশ্চণ্ডমুণ্ডপুরোগমাঃ।
চতুরঙ্গবলোপেতা যযুরভ্যুদ্যতায়ুধাঃ।।২৷৷
দদৃশুন্তে ততো দেবীমীষদ্ধাসাং ব্যবস্থিতাম্।
সিংহস্যোপরি শৈলেন্দ্রশৃঙ্গে মহতি কাঞ্চনে৷৷ ৩৷৷
অনন্তর সেখানে গিয়ে তারা গিরিরাজ হিমালয়ের সুবর্ণপ্রভা চূড়ায় সিংহের ওপর সমাসীনা দেবীকে দেখতে পেল। তিনি তখন ঈষৎ মৃদু মৃদু হাস্য করছিলেন।। ৩ ।।
তে দৃষ্টা তাং সমাদাতুমুদ্যমং চক্রুরুদ্যতাঃ।
আকৃষ্টচাপাসিধরাস্তথান্যে তৎসমীপগাঃ ।। ৪।।
তাঁকে দেখে দৈত্যেরা প্রচণ্ড উৎসাহে তাঁকে ধরবার চেষ্টা করল। কেউ নিল ধনুর্বাণ, কেউ নিল খড়া আর অন্যান্য সকলে মিলে দেবীর দিকে এগিয়ে গেল। ৪।
ততঃ কোপং চকারোচ্চৈরম্বিকা তানরীন্ প্রতি।
কোপেন চাস্যা বদনং মষীবর্ণমভূৎ তদা৷৷ ৫৷৷
তখন অম্বিকা দেবী সেই সব শত্রুদের প্রতি ভীষণ ক্রোধ প্রকাশ করলেন। সেই ক্রোধের অভিব্যক্তিতে তাঁর মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করল।। ৫ ।।
ভ্রুকুটীকুটিলাৎ তস্যা ললাটফলকাদ্রুতম্।
কালী করালবদনা বিনিষ্ক্রান্তাসিপাশিনী ৷৷ ৬ ৷৷
তাঁর ভ্রূকুটীকুটিল ললাটদেশ থেকে তৎক্ষণাৎ ভীষণবদনা কালী বিনিঃসৃতা হলেন, তাঁর হাতে খড়া ও পাশ অস্ত্র ধরা রয়েছে ।। ৬ ।।
বিচিত্রখটাঙ্গধরা নরমালাবিভূষণা।
দ্বীপিচর্মপরীধানা শুষ্কমাংসাতিভৈরবা। ৭ ॥
সেই দেবী কালীর হাতে বিচিত্র নরকঙ্কাল, পরনে ব্যাঘ্র চর্ম, তিনি নরমুণ্ডমালিনী। তাঁর দেহ অস্থিচর্মসার অতিভীষণদর্শনা।। ৭ ।।
অতিবিস্তারবদনা জিহ্বাললনভীষণা।
নিমগ্নারক্তনয়না নাদাপূরিতদিমুখা।। ৮ ৷৷
তিনি বিশাল-বদনা, লোলজিহ্বার দরুন ভীষণ ভয়প্রদা। তিনি কোটরগত আরক্ত চক্ষুবিশিষ্টা, বিকট ভয়ঙ্কর গর্জনে তিনি দশদিক ছাইয়ে দিলেন। ৮ ॥
সা বেগেনাভিপতিতা ঘাতয়ন্তী মহাসুরান্।
সৈন্যে তত্র সুরারীণামভক্ষয়ত তদ্বলম্৷ ৯৷৷
সেই কালিকাদেবী মহাসুরদের বধ করতে করতে সবেগে অসুরসেনাদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসুরসৈন্যদের ভক্ষণ করতে লাগলেন। ৯ ॥
পার্ফিংগ্রাহাঙ্কুশগ্রাহি- যোধঘন্টাসমন্বিতাম্।
সমাদায়ৈকহস্তেন মুখে চিক্ষেপ বারণান্৷ ১০৷৷
পার্শ্বরক্ষক, অঙ্কুশধারী মহামাত্র (মাহুত), (গজারূঢ়) বীর যোদ্ধা এবং গলঘণ্টাদিসহিত হাতীদের অনেকগুলোকে একসাথে করে এক হাতের মধ্যে নিয়ে তিনি মুখের ভেতর ভরে দিতে লাগলেন। ১০ ॥
তথৈব যোধং তুরগৈ রথং সারথিনা সহ।
নিক্ষিপ্য বজ্রে দশনৈশ্চর্বয়ন্ত্য তিভৈরবম্।। ১১ ৷৷
এইভাবে ঘোড়া, রথ আর রথী এবং অশ্বারোহী যোদ্ধাদের মুখের মধ্যে পুরে দিয়ে ভীষণভাবে চিবোতে লাগলেন ৷৷ ১১ ।।
একং জগ্রাহ কেশেষ গ্রীবায়ামথ চাপরম্।
পাদেনাক্রম্য চৈবান্যমুরসান্যমপোেথয়ৎ৷৷ ১২ ৷৷
কাউকে চুল ধরে, কাউকে গলা টিপে, আবার কাউকে পায়ের তলায় পিষে এবং অন্য অনেককে বুকের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বধ করতে লাগলেন। ১২ ৷৷
তৈমুক্তানি চ শস্ত্রাণি মহাস্ত্রাণি তথাসুরৈঃ।
মুখেন জগ্রাহ রুষা দশনৈর্মথিতান্যপি।। ১৩৷৷
অসুরদের দ্বারা নিক্ষিপ্ত বড় বড় অস্ত্রশস্ত্র সব তিনি মুখের মধ্যে নিয়ে ভয়ঙ্কর ক্রোধে দাঁত দিয়ে চিবিয়ে চূর্ণ করলেন।। ১৩ ৷৷
বলিনাং তদ্বলং সর্বমসুরাণাং দুরাত্মনাম্।
মমর্দাভক্ষয়চ্চান্যানন্যাংশ্চাতাড়য়ৎ তথা। ১৪ ৷৷
কালিকা দেবী বলবান এবং দুরাত্মা দৈত্যদের সেই সব সৈন্যদের বিধ্বংস করলেন, কতককে খেয়ে ফেললেন এবং অবশিষ্টগুলিকে নিদারুণভাবে আঘাত করলেন।। ১৪ ৷৷
অসিনা নিহতাঃ কেচিৎ কেচিৎ খটঙ্গতাড়িতাঃ।
জন্মর্বিনাশমসুরা দন্তাগ্রাভিহতাস্তথা।। ১৫ ৷৷
কোনও কোনও অসুর খড়াঘাতে নিহত হল, কেউ কেউ খট্টাঙ্গের প্রহারে আবার কেউ বা দাঁতের অগ্রভাগের আঘাতে মারা গেল। ১৫ ৷৷
ক্ষণেন তত্ত্বলং সর্বমসুরাণাং নিপাতিতম্।
দৃষ্টা চণ্ডোহভিদুদ্রাব তাং কালীমতিভীষণাম্৷৷ ১৬৷৷
এইভাবে অসুরদের সেই সমস্ত সৈন্যদের দেবী ক্ষণকাল মধ্যে শেষ করে ফেললেন। এই দৃশ্য দেখে চণ্ড সেই ভয়ঙ্কর কালিকাদেবীর দিকে ধেয়ে গেল ৷৷ ১৬ ।।
শরবর্ষৈমহাভীমৈভীমাক্ষীং তাং মহাসুরঃ।
ছাদয়ামাস চক্রৈশ্চ মুণ্ডঃ ক্ষিপ্তৈঃ সহস্রশঃ ৷৷ ১৭৷৷
মহাসুর মুণ্ডও ভয়ানক বাণ বর্ষণ করে এবং হাজার হাজার চক্র নিক্ষেপ করে ভীমনেত্রা দেবীকে আচ্ছন্ন করে দিল।। ১৭ ।।
তানি চক্রাণ্যনেকানি বিশমানানি তন্মুখম্।
বর্ভূর্যথার্কবিম্বানি সুবহুনি ঘনোদরম্।। ১৮৷৷
সেই বহুসংখ্যক চক্র দেবীর মুখের মধ্যে গিয়ে এমন দেখাতে লাগল যেন বহু সূর্যবিম্ব কাল ঘন মেঘের মধ্যে প্রবেশ করে রয়েছে৷৷ ১৮ ৷৷
ততো জহাসাতিরুষা ভীমং ভৈরবনাদিনী।
কালী করালবক্রান্তদুর্দর্শদশনোজ্জ্বলা৷৷ ১৯৷৷
অনন্তর ভীমনাদিনী কালিকা দেবী ভয়ানক ক্রোধে বিকট অট্টহাস্য করলেন। তখন তাঁর করাল বদনের মধ্যে ভীষণ দাঁতগুলি এমন ঝক্ ঝক্ দেখাতে লাগল যে সেই দীপ্তির দিকে চাওয়া যায় না। সেই প্রভায় তিনি তেজোময়ী রূপে উদ্ভাসিত হলেন ৷৷ ১৯।।
উত্থায় চ মহাসিং হং দেবী চণ্ডমধাবত।
গৃহীত্বা চাস্য কেশেষ শিরস্তেনাসিনাচ্ছিনৎ।। ২০॥
এক বিশাল খড়া হাতে নিয়ে দেবী কালী 'হং' এই বিকট ক্রোধসূচক শব্দ উচ্চারণ করে চণ্ডের দিকে ছুটে গেলেন এবং তার চুলের মুঠি ধরে সেই খড়গ দিয়ে তার মাথা কেটে ফেললেন। ২০৷৷
অথ মুণ্ডোহভ্যধাবৎ তাং দৃষ্ট্রা চণ্ডং নিপাতিতম্।
তমপ্যপাতয়ভূমৌ সা খঙ্গাভিহতং রুষা। ২১॥
চণ্ডকে নিহত হতে দেখে মুণ্ডও দেবীর দিকে ধেয়ে গেল। তখন দেবী ক্রোধভরে তাকেও খড়োর আঘাতে ভূতলশায়ী করলেন ।। ২১ ।।
হতশেষং ততঃ সৈন্যং দৃষ্ট্রা চণ্ডং নিপাতিতম্।
মুণ্ডঞ্চ সুমহাবীর্যং দিশো ভেজে ভয়াতুরম্।। ২২।
মহাবিক্রম চণ্ড ও মুণ্ডের নিধন দেখে অবশিষ্ট সৈন্যরা প্রাণভয়ে ব্যাকুল হয়ে চারদিকে পালাতে লাগল। ২২ ৷৷
শিরশ্চণ্ডস্য কালী চ গৃহীত্বা মুশুমেব চ।
প্রাহ প্রচণ্ডাট্টহাসমিশ্রমভ্যেত্য চণ্ডিকাম্। ২৩৷৷
তদনন্তর চণ্ড ও মুণ্ডের মস্তকদুটী হাতে নিয়ে কালিকাদেবী চণ্ডিকার কাছে অট্টহাস্য করে বললেন-॥ ২৩ ৷৷
ময়া তবাত্রোপহৃতৌ চণ্ডমুণ্ডৌ মহাপশূ।
যুদ্ধযজ্ঞে স্বয়ং শুম্ভং নিশুম্ভঞ্চ হনিষ্যসি৷৷ ২৪৷৷
'দেবি! চণ্ড আর মুণ্ড নামক এই দুই মহাপশুকে তোমায় উপহার দিলাম। এইবার যুদ্ধযজ্ঞে শুম্ভ ও নিশুম্ভকে তুমি নিজেই বধ করবে' ।। ২৪ ৷৷
ঋষিরুবাচ। ২৫ ৷৷
মেধা ঋষি বললেন-॥ ২৫ ৷৷
তাবানীতৌ ততো দৃষ্টা চণ্ডমুণ্ডৌ মহাসুরৌ।
উবাচ কালীং কল্যাণী ললিতং চণ্ডিকা বচঃ৷ ২৬৷৷
মঙ্গলময়ী চণ্ডিকা দেবী মহাসুর চণ্ড ও মুণ্ডের মস্তক দুটী দেবী কালী দ্বারা আনা হয়েছে দেখে মধুর বাক্যে বললেন-॥ ২৬ ৷৷
যস্মাচ্চগুঞ্চ মুগুঞ্চ গৃহীত্বা ত্বমুপাগতা।
চামুণ্ডেতি ততো লোকে খ্যাতা দেবি ভবিষ্যসি ৷৷ ওঁ ৷৷ ২৭ ৷৷
'দেবি! যেহেতু তুমি চণ্ড ও মুণ্ডকে নিয়ে আমার কাছে এসেছ, এইজন্য সংসারে তুমি চামুণ্ডা নামে বিখ্যাত হবে।' ॥ ২৭ ৷৷
ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয় পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যে চণ্ডমুণ্ডবধো নাম সপ্তমোহধ্যায়ঃ।। ৭ ।।
এই অধ্যায়ে উবাচ-২, শ্লোক-২৫, মোট ২৭ আদি হতে সর্বমোট ৪৩৯
শ্রীমার্কণ্ডেয় পুরাণে সাবর্ণিকমন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যপ্রসঙ্গে 'চণ্ড-মুণ্ড-বধ' নামক সপ্তম অধ্যায় সম্পূর্ণ হল। ৭ ॥