Durga Saptashati Image

শ্রীদেব্যথর্বশীর্ষম্

ওঁ সর্বে বৈ দেবা দেবীমুপতঙ্গুঃ কাসি ত্বং মহাদেবীতি৷৷ ১ ৷৷

ওঁ সকল দেবতারা দেবীর কাছে গিয়ে বিনীতভাবে প্রশ্ন করলেন-হে মহাদেবি! তুমি কে? ।॥১॥

সাব্রবীৎ-অহং ব্রহ্মস্বরূপিণী মত্তঃ। প্রকৃতিপুরুষাত্মকং জগৎ। শূন্যং চাশূন্যং চ৷৷ ২৷৷

তিনি বললেন-আমি ব্রহ্মস্বরূপ। আমার থেকেই প্রকৃতি-পুরুষাত্মক সৎরূপ ও অসৎরূপ জগৎ উৎপন্ন হয়েছে। ২ ৷৷

অহমানন্দানানন্দৌ। অহং বিজ্ঞানাবিজ্ঞানে। অহং ব্রহ্মাব্রহ্মণী বেদিতব্যে। অহং পঞ্চভূতান্যপঞ্চভূতানি। অহমখিলং জগৎ ৷৷ ৩ ॥

আমি আনন্দ ও নিরানন্দরূপা। আমি বিজ্ঞান আর অবিজ্ঞানরূপা। অবশ্য জ্ঞাতব্য ব্রহ্ম এবং আমিই অব্রহ্ম। পঞ্চীকৃত ও অপঞ্চীকৃত মহাভূতও আমিই। এই সমগ্র দৃশ্য জগৎ আমিই৷৷ ৩ ৷৷

বেদোহহমবেদোহহম্। বিদ্যাহমবিদ্যাহম্। অজাহমনজাহম্। অধশ্চোধবং চ তির্যক্ চাহম্।। ৪

বেদ ও অবেদ আমি। বিদ্যা ও অবিদ্যাও আমি, অজা আর অনজাও (প্রকৃতি ও তার থেকে ভিন্ন) আমি, ঊর্ধ্ব অধঃ, চারিদিকও আমিই।। ৪ ৷৷

অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরামি। অহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ। অহং মিত্রাবরুণাবুভৌ বিভর্মি। অহমিন্দ্রাগ্রী অহমশ্বিনাবুভৌ৷৷ ৫ ৷৷

রুদ্র ও বসু রূপে আমি সঞ্চার করি। আমি আদিত্য ও বিশ্বদেবের রূপে বিচরণ করি। মিত্র ও বরুণ এবং ইন্দ্র ও অগ্নি তথা অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের আমি ভরণ পোষণ করি।।৫ ॥

অহং সোমং ত্বষ্টারং পূষণং ভগং দধামি। অহং বিষ্ণুমুরুক্রমং ব্রহ্মাণমুত প্রজাপতিং দধামি।। ৬ ৷৷

সোম, ত্বষ্টা, পূষা এবং ভগকে আমি ধারণ করি। ত্রিলোক অধিকার করার জন্য যে বিশাল পদবিস্তার বিষ্ণু করেছেন সেই বিষ্ণু, ব্রহ্মদেব এবং প্রজাপতিকে আমিই ধারণ করি । ৬ ॥

অহং দধামি দ্রবিণং হবিস্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্নতে। অহং রাষ্ট্রী সঙ্গমনী বসূনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্। অহং সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্মম যোনিরস্বন্তঃ সমুদ্রে। য এবং বেদ। স দৈবীং সম্পদমাপ্নোতি ৷ ৭ ॥

দেবতাদের কাছে উত্তম হবি পৌঁছে দেওয়া এবং সোমরস নিষ্কাষণকারী যজমানের জন্য হবিযুক্ত ধনসম্পদ ধারণ আমিই করি। আমিই সমগ্র জগদীশ্বরী, উপাসককে ফলদায়িনী, ব্রহ্মরূপা ও যজ্ঞহোমের (যজনের উপযুক্ত দেবতাদের মধ্যে) মুখ্যা। আমি নিজ স্বরূপরূপ আকাশাদি সৃষ্টি করি। আমি আত্মতত্ত্বনিহিতা উপলব্ধিরূপ বুদ্ধিবৃত্তি। যে এসব জানে তার দৈবীসম্পত্তি লাভ হয়৷৷ ৭ ॥

তে দেবা অরুবন্ন নমো দেব্যৈ মহাদেব্যৈ শিবায়ৈ সততং নমঃ। নমঃ প্রকৃত্যৈ ভদ্রায়ৈ নিয়তাঃ প্রণতাঃ স্ম তাম্।॥ ৮৷৷

সেই দেবতারা তখন বললেন-দেবীকে প্রণাম! শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠতমদের নিজ নিজ কর্তব্যে প্রবৃত্তিরূপিণী, কল্যাণকর্ত্রীকে সদাই নমস্কার। ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতি দেবীকে প্রণাম। নিয়মিতভাবে আমরা তাঁকে প্রণাম করি।। ৮ ।।

তামগ্নিবর্ণাং তপসা জ্বলন্তীং বৈরোচনীং কর্মফলেষু জুষ্টাম্। দুর্গাং দেবীং শরণং প্রপদ্যামহেহসুরান্নাশয়িত্র্যৈ তে নমঃ। ৯ ৷

সেই অগ্নিবর্ণা, জ্ঞানে দেদীপ্যমানা, দীপ্তিমতী, কর্মফলদায়িনী, দুর্গাদেবীর আমরা শরণাগত হলাম। অসুরদলনী দেবি! তোমাকে প্রণাম ৷৷ ৯ ৷৷

দেবীং বাচমজনয়ন্ত দেবাস্তাং বিশ্বরূপাঃ পশবো বদন্তি। সা নো মন্দ্রেষমূর্জং দুহানা ধেনুর্বার্গম্মানুপ সুষ্টুতৈতু৷৷ ১০ ৷৷

প্রাণরূপ দেবগণ যে প্রকাশমান বৈখরী বাণীর উদ্গাতা, বিভিন্ন প্রাণীরা তাহাই উচ্চারণ করেন। সেই কামধেনুতুল্য আনন্দদায়িনী, অন্ন ও সামর্থ্যদায়িনী বারূপিণী ভগবতী সুন্দর স্তুতিতে প্রীত হয়ে আমাদের কাছে আসুন।। ১০ ৷৷

কালরাত্রীং ব্রহ্মস্তুতাং বৈষ্ণবীং স্কন্দমাতরম্। সরস্বতীমদিতিং দক্ষদুহিতরং নমামঃ পাবনাং শিবাম্৷৷ ১১ ৷৷

কালবিধ্বংসিনী, বেদসূক্তে স্তুতা বিষ্ণুশক্তি, স্কন্দমাতা (শিবশক্তি), সরস্বতী (ব্রহ্মশক্তি), দেবমাতা অদিতি এবং দক্ষকন্যা (সতী), পাপনাশিনী, কল্যাণকারিণী ভগবতীকে আমরা প্রণাম করি।। ১১ ৷৷

মহালক্ষ্ম্যৈ চ বিদ্মহে সর্বশক্ত্যৈ চ ধীমহি। তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ ৷৷ ১২৷৷

আমরা মহালক্ষ্মীকে যেন জানতে পারি এবং সেই সর্বশক্তিরূপিণীরই ধ্যান করি। সেই দেবী আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে সেই দিকে চালিত করুন৷৷ ১২ ৷৷

অদিতিহাজনিষ্ট দক্ষ যা দুহিতা তব। তাং দেবা অন্বজায়ন্ত ভদ্রা অমৃতবন্ধবঃ৷৷ ১৩ ৷৷

হে দক্ষ! আপনার যে কন্যা অদিতি, তিনি প্রসূতা হয়ে অমর কল্যাণময় দেবতাদের উৎপন্ন করেন । ১৩ ৷৷

কামো যোনিঃ কমলা বজ্রপাণিগুহা হসা মাতরিশ্বাভ্রমিন্দ্রঃ। পুনর্ভহা সকলা মায়য়া চ পুরূচ্যৈষা বিশ্বমাতাদিবিদ্যোম্৷৷ ১৪ ৷৷

কাম (ক), যোনি (এ), কমলা (ঈ), বজ্রপাণি-ইন্দ্র (ল), গুহা (হ্রীং), হ, স-বর্ণ, মাতরিশ্বা-বায়ু (ক), অভ্র (হ), ইন্দ্র (ল), পুনঃ গুহা (হ্রীং), স, ক, ল-বর্ণ, এবং মায়া (হ্রীং)-এরা সর্বাত্মিকা জগন্মাতার মূল বিদ্যা ব্রহ্মরূপিণী। ১৪ ৷৷

এষাহহত্মশক্তিঃ। এষা বিশ্বমোহিনী। পাশাঙ্কুশধনুর্বাণধরা। এষা শ্রীমহাবিদ্যা। য এবং বেদ স শোকং তরতি৷৷ ১৫ ৷৷

এই মন্ত্রের ভাবার্থ-শিবশক্ত্যভেদরূপা, ব্রহ্ম-বিষ্ণু-শিবাত্মিকা, সরস্বতী- লক্ষ্মী- গৌরীরূপা, অশুদ্ধ-মিশ্র-শুদ্ধোপাসনাত্মিকা, সমরসীভূত- শিবশ্যাত্মক ব্রহ্মরূপের নির্বিকল্প জ্ঞানদাত্রী, সর্বতত্ত্বাত্মিকা মহাত্রিপুরসুন্দরী। এই মন্ত্রসকল মন্ত্রের শিরোমণি এবং মন্ত্রশাস্ত্রে পঞ্চদশী ইত্যাদি শ্রীবিদ্যা নামে প্রসিদ্ধ। ইহার ছয়টা অর্থ অর্থাৎ ভাবার্থ, বাচ্যার্থ, সম্প্রদায়ার্থ, লৌকিকার্থ, রহস্যার্থ ও তত্ত্বার্থ 'নিত্যষোড়শীকার্ণব' গ্রন্থে উক্ত আছে। এইভাবে 'বরিবস্যারহস্যাদি' পুস্তকে আরও অনেক রকম অর্থ বলা আছে। শ্রুতিতেও এই মন্ত্র এইভাবে অর্থাৎ ক্বচিৎ স্বরূপোচ্চার, ক্বচিৎ লক্ষণা এবং লক্ষিত লক্ষণার্থে আবার কোথাও বর্ণের পৃথক পৃথক অবয়ব প্রদর্শন করে জেনে শুনেই অসংলগ্নভাবে বর্ণিত আছে। এর থেকে বোঝা যায় যে এই মন্ত্র কত গোপনীয় ও মহত্ত্বপূর্ণ। ইনি পরমাত্মার শক্তি, ইনি বিশ্বমোহিনী, পাশ, অঙ্কুশ, ধনু ও বাণধারিণী। ইনি শ্রীমহাবিদ্যা। যে তাঁকে এইভাবে জানে, সে শোকের দুস্তর সাগর পার হয়ে যায়।। ১৫ |

নমস্তে অস্ত্র ভগবতি মাতরস্মান্ পাহি সর্বতঃ৷৷ ১৬৷৷

ভগবতি! তোমাকে নমস্কার। মাগো! আমাদের সর্বতোভাবে রক্ষা করো।। ১৬ ।।

সৈষাষ্টৌ বসবঃ। সৈষৈকাদশ রুদ্রাঃ। সৈষা দ্বাদশাদিত্যাঃ। সৈষা বিশ্বেদেবাঃ সোমপা অসোমপাশ্চ। সৈষা যাতুধানা অসুরা রক্ষাংসি পিশাচা যক্ষাঃ সিদ্ধাঃ। সৈষা সত্ত্বরজস্তমাংসি। সৈষা ব্রহ্মবিষ্ণুরুদ্ররূপিণী। সৈষা প্রজাপতীন্দ্রমনবঃ। সৈষা গ্রহনক্ষত্রজ্যোতীংষি। কলাকাষ্ঠাদিকালরূপিণী। তামহং প্রণৌমি নিত্যম্। পাপাপহারিণীং দেবীং ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনীম্। অনন্তাং বিজয়াং শুদ্ধাং শরণ্যাং শিবদাং শিবাম্৷৷ ১৭৷৷

(মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিরা বলেন) ইনিই সেই অষ্টবসু, ইনিই একাদশ রুদ্র, ইনিই দ্বাদশ আদিত্য; ইনি সোমপায়ী ও সোম অপায়ী বিশ্বেদেব; ইনি যাতুধান (এক শ্রেণীর রাক্ষস), অসুর, রাক্ষস, পিশাচ, যক্ষ ও সিদ্ধ; ইনিই সত্ত্ব-রজ-তম; ইনিই ব্রহ্ম-বিষ্ণু-রুদ্ররূপিণী, ইনিই প্রজাপতি-ইন্দ্র-মনু, এই গ্রহ, নক্ষত্র ও তারা; ইনিই কলাকাষ্ঠাদি কালরূপিণী, পাপনাশিনী, ভোগ ও মোক্ষদায়িনী, অনন্তা, বিজয়াধিষ্ঠাত্রী, নির্দোষা, শরণ্যা, কল্যাণদাত্রী ও মঙ্গলরূপিণী। এই দেবীকে আমরা সদাই প্রণাম করি।। ১৭ ৷

বিয়দীকারসংযুক্তং বীতিহোত্রসমন্বিতম্। অর্ধেন্দুলসিতং দেব্যা বীজং সর্বার্থসাধকম্৷ ১৮৷৷ এবমেকাক্ষরং ব্রহ্ম যতয়ঃ শুদ্ধচেতসঃ। ধ্যায়ন্তি পরমানন্দময়া জ্ঞানাম্বুরাশয়ঃ ।। ১৯ ৷

বিয়ৎ-আকাশ (হ) তথা ঈ-কার যুক্ত, বীতিহোত্র-অগ্নি-(র) সহিত, অর্ধচন্দ্র অলঙ্কৃত দেবীর যে বীজ, তা সব মনোরথ পূর্ণ করে। এই রকমই এই একাক্ষর ব্রহ্ম (হ্রীং)-এর ধ্যান শুদ্ধচিত্ত যতিগণ করেন, যিনি নিরতিশয় আনন্দময় এবং জ্ঞানের সাগর। এই মন্ত্রকে দেবীপ্রণব বলে মনে করা হয়। ওঁকারের সমতুল্যই এই প্রণবও ব্যাপক অর্থে পরিপূর্ণ। সংক্ষেপে এর অর্থ হল ইচ্ছা-জ্ঞান-ক্রিয়া, ধারণ, অদ্বৈত, অখণ্ড, সচ্চিদানন্দ, সমরসীভূত, শিব শক্তিস্ফুরণ। ১৮-১৯ ৷৷

বাঙ্মায়া ব্রহ্মসূস্তস্মাৎ ষষ্ঠং বজ্রসমন্বিতম্। সূর্যোহ বামশ্রোত্রবিন্দুসংযুক্তষ্টাতৃতীয়কঃ । নারায়ণেন সম্মিশ্রো বায়ুশ্চাধরযুক্ ততঃ। বিচ্চে নবার্ণকোহর্ণঃ স্যান্সহদানন্দদায়কঃ।। ২০ ৷৷

বাণী (ঐং), মায়া (হ্রীং) ব্রহ্মস্-কাম (ক্লীং) এর আগে ছটী ব্যঞ্জন অর্থাৎ চ, সেই বজ্র অর্থাৎ আকারযুক্ত (চা), সূর্য (ম), 'অবাম শ্রোত্র'-দক্ষিণ কর্ণ (উ) আর বিন্দু অর্থাৎ অনুস্বারযুক্ত (মুং), ট বর্গের তৃতীয় বর্ণ ড, সেই নারায়ণ অর্থাৎ আ-সংযুক্ত (ডা), বায়ু (য়), সেই অধর অর্থাৎ এ-র সাথে যুক্ত (ঐ) এবং 'বিচ্চে' এই নবার্ণ মন্ত্র উপাসককে আনন্দ এবং ব্রহ্মসাযুজ্য দাতা ॥ ২০॥

হৃৎপুণ্ডরীকমধ্যস্থাং পাশাঙ্কুশধরাং সৌম্যাং প্রাতঃসূর্যসমপ্রভাম্। বরদাভয়হস্তকাম্। ত্রিনেত্রাং রক্তবসনাং ভক্তকামদুঘাং ভজে৷৷ ২১৷

এই মন্ত্রের অর্থ-হে চিৎস্বরূপিণী মহাসরস্বতী! হে সৎরূপিণী মহালক্ষ্মী! ব্রহ্মবিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্যে আমরা সর্বদাই তোমার ধ্যান করি। হে মহাকালী- মহালক্ষ্মী-মহাসরস্বতীরূপিণী চণ্ডিকে! তোমাকে নমস্কার। অবিদ্যারূপ রজ্জুর শক্ত গ্রন্থি খুলে দিয়ে আমাদের মুক্ত করো। হৃদয়-কমলের মধ্যস্থিত, প্রাতঃসূর্যের সম প্রভাশালিনী, পাশ ও অঙ্কুশ- ধারিণী, মনোহর রূপময়ী, বরাভয়মুদ্রাহস্তিনী, ত্রিনেত্রা, রক্তাম্বর-পরিধেয়া এবং কামধেনুসম ভক্তমনোরথ পূরণকারিণী দেবীকে ভজনা করি। ২১

নমামি ত্বাং মহাদেবীং মহাভয়বিনাশিনীম্।মহাদুর্গপ্রশমনীং মহাকারুণ্যরূপিণীম্।। ২২

মহাভয়নাশিনী, মহাসঙ্কট প্রশমনী ও মহান করুণার মূর্তিমতী তুমি। মহাদেবীকে আমরা নমস্কার করি ।। ২২ ৷৷

যস্যাঃ স্বরূপং ব্রহ্মাদয়ো ন জানন্তি তস্মাদুচ্যতে অজ্ঞেয়া। যস্যা অন্তো ন লভ্যতে তস্মাদুচ্যতে অনন্তা। যস্যা লক্ষ্যং নোপলক্ষ্যতে তস্মাদুচ্যতে অলক্ষ্যা। যস্যা জননং নোপলভ্যতে তস্মাদুচ্যতে অজা। একৈব সর্বত্র বর্ততে তস্মাদুচ্যতে একা। একৈব বিশ্বরূপিণী তস্মাদুচ্যতে নৈকা। অত এবোচ্যতে অজ্ঞেয়ানন্তালক্ষ্যাজৈকা নৈকেতি৷৷ ২৩ ৷৷

ব্রহ্মাদি দেবতাগণ পর্যন্ত যাঁর স্বরূপ জানেন না, যে জন্য তাঁকে অজ্ঞেয়া বলা হয়, যাঁর অন্ত খুঁজে না পাওয়াতে তাঁকে অনন্তা বলা হয়, যাঁর লক্ষ্য বুঝতে পারা যায় না বলে যাঁকে অলক্ষ্যা বলা হয়, যাঁর জন্মরহস্য বোঝাই যায় না বলে যাঁকে অজা বলা হয়, যিনি সর্বত্রই একক-যার জন্য তাঁকে একা বলা হয়, যিনি স্বয়ংই সমগ্র বিশ্বরূপে দৃশ্যমান, ফলে যাঁকে নৈকা বলা হয়, তিনি এইজন্যই অজ্ঞেয়া, অনন্তা, অলক্ষ্যা, অজা, একা ও নৈকা নামে অভিহিতা হন। ২৩।

মন্ত্রাণাং মাতৃকা দেবী শব্দানাং জ্ঞানরূপিণী। জ্ঞানানাং চিন্ময়াতীতা(১) শূন্যানাং শূন্যসাক্ষিণী। যস্যাঃ পরতরং নাস্তি সৈষা দুর্গা প্রকীর্তিতা৷৷ ২৪ ৷৷

সমস্ত মন্ত্রেই 'মাতৃকা'-মূলাক্ষররূপে অবস্থিতা, শব্দসমূহের মধ্যে জ্ঞান (অর্থ) রূপে অবস্থিতা, জ্ঞানের মধ্যে 'চিন্ময়াতীতা', শূন্যের মধ্যে 'শূন্যসাক্ষিণী' তথা যাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ আর কিছুই নেই, তিনি দুর্গা নামে প্রসিদ্ধা। ২৪ ৷৷

তাং দুর্গাং দুর্গমাং দেবীং দুরাচারবিঘাতিনীম্। নমামি ভবভীতোহহং সংসারার্ণবতারিণীম্৷ ২৫ ॥

দুর্বিজ্ঞেয়া, দুরাচারনাশিনী, সংসার সাগর হতে উদ্ধারকারিণী সেই দুর্গা দেবীকে ভবভয়ভীত আমরা নমস্কার করি।। ২৫ ৷

ইদমথর্বশীর্ষং যোহধীতে স পঞ্চাথর্বশীর্ষজপ ফলমাপ্নোতি। ইদমথর্বশীর্ষমজ্ঞাত্বা যোহর্চাং স্থাপয়তি শতলক্ষং প্রজপ্তাপি সোহচাসিদ্ধিং ন বিন্দতি। শতমষ্টোত্তরং চাস্য পুরশ্চর্যাবিধিঃ স্মৃতঃ। দশবারং পঠেদ্ যন্ত্র সদ্যঃ পাপৈঃ প্রমুচ্যতে। মহাদুর্গাণি তরতি মহাদেব্যাঃ প্রসাদতঃ। ২৬৷৷

এই অথর্বশীর্ষ যে পাঠ করে তার পঞ্চ অথর্বশীর্ষ জপের ফল লাভ হয়। এই অথর্বশীর্ষকে না জেনে যে প্রতিমাস্থাপন করে সে শত লক্ষ জপ করেও অর্চাসিদ্ধি পায় না। অষ্টোত্তর শতজপ (ইত্যাদি) ইহার পুরশ্চরণ বিধি। যে এই অথবশীর্ষ দশবার পাঠ করে সে সেই মুহূর্তেই সবপাপ হতে মুক্ত হয়ে যায় এবং মহাদেবীর প্রসাদে অতি বড় দুস্তর সঙ্কট থেকে উত্তীর্ণ হয়ে যায়৷৷ ২৬ ৷৷

সায়মধীয়ানো দিবসকৃতং পাপং নাশয়তি। প্রাতরধীয়ানো রাত্রিকৃতং পাপং নাশয়তি। সায়ং প্রাতঃ রযুঞ্জানো অপাপো ভবতি। নিশীথে তুরীয়সন্ধ্যায়াং জপ্তা বাক্সিদ্ধির্ভবতি। নূতনায়াং প্রতিমায়াং জপ্তা দেবতাসাংনিধ্যং ভবতি। প্রাণপ্রতিষ্ঠায়াং জত্ত্বা প্রাণানাং প্রতিষ্ঠা ভবতি। ভৌমাশ্বিন্যাং মহাদেবীসংনিধৌ জপ্তা মহামৃত্যুং তরতি। স মহামৃত্যুং তরতি য এবং বেদ। ইত্যুপনিষৎ।।

সন্ধ্যকালে পাঠ করলে দিনে কৃত পাপরাশি নষ্ট হয়। প্রাতঃকালে পাঠ করলে রাত্রিকালে কৃত পাপরাশি ধ্বংস হয়ে যায়। দুইবেলা পাঠ করলে পূর্ণ নিষ্পাপ হয়ে যায়। মধ্যরাত্রে তুরীয়(১) সন্ধ্যার সময় জপ করলে বাকসিদ্ধ হয়। নূতন প্রতিমায় জপ করলে দেবতাসান্নিধ্য প্রাপ্ত হয়। প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় জপ করলে প্রাণের প্রতিষ্ঠা হয়। ভৌমাশ্বিনী (অমৃতসিদ্ধি) যোগে মহাদেবীর সান্নিধ্যে জপ করলে মহামৃত্যুর থেকে রক্ষা হয়। যে এসব জানে সে মহামৃত্যুকে অতিক্রম করে। এটা হল অবিদ্যানাশিনী ব্রহ্মবিদ্যা।।