অথ একাদশোহধ্যায়ঃ
একাদশ অধ্যায়
দেবগণের দ্বারা দেবীর স্তুতি এবং দেবী কর্তৃক দেবতাদের বরদান
ধ্যানম্
ওঁ বালরবিদ্যুতিমিন্দুকিরীটাং তুঙ্গকুচাং নয়নত্রয়যুক্তাম্। স্মেরমুখীং বরদাঙ্কুশপাশাভীতিকরাং প্রভজে ভুবনেশীম্ ।।
আমি ভুবনেশ্বরী দেবীর ধ্যান করছি। তাঁর শ্রীঅঙ্গের আভা নবোদিত রবির সমান এবং চন্দ্র তাঁর মস্তকের মুকুট। তিনি উন্নত স্তনযুগলশোভিতা এবং ত্রিলোচনা। তাঁর মুখের ওপর মৃদু হাসি সর্বদাই বিরাজিত এবং তাঁর হাতে বরমুদ্রা, অঙ্কুশ, পাশ ও অভয়মুদ্রা শোভা পায়।
'ওঁ' ঋষিরুবাচ। ১ ৷৷
ঋষি বললেন-৷৷ ১ ৷৷
দেব্যা হতে তত্র মহাসুরেন্দ্রে সেন্দ্রাঃ সুরা বহ্নিপুরোগমাস্তাম্। কাত্যায়নীং তুষ্টুবুরিষ্ট লাভাদ্ বিকাসিবত্ত্বাব্জ-বিকাসিতাশাঃ ২॥
দেবী কর্তৃক মহাসুর শুম্ভ নিহত হলে ইন্দ্রাদি দেবতারা অগ্নিকে পুরোভাগে রেখে সেই কাত্যায়নী দেবীকে স্তুতি করতে লাগলেন। তাঁদের মনের বাসনা পূর্ণ হওয়ায় তাঁদের মুখপদ্ম আনন্দে উজ্জ্বল এবং তার প্রকাশে চারদিক উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল ৷৷২ ৷৷
দেবি প্রপন্নার্তিহরে প্রসীদ প্রসীদ মাতর্জগতোহখিলস্য। প্রসীদ বিশ্বেশ্বরি পাহি বিশ্বং ত্বমীশ্বরী দেবি চরাচরস্য।। ৩।।
দেবতারা স্তুতিতে বললেন-হে শরণাগতের দুঃখহারিণী দেবি! আমাদের প্রতি প্রসন্না হউন। হে নিখিল বিশ্বজননী! আপনি প্রসন্না হউন। হে বিশ্বেশ্বরি! বিশ্বকে রক্ষা করুন। হে দেবি! আপনি চরাচর জগতের অধীশ্বরী।। ৩ ৷৷
আধারভূতা জগতত্ত্বমেকা মহীস্বরূপেণ যতঃ স্থিতাসি। অপাং স্বরূপস্থিতয়া ত্বয়ৈত- দাপ্যায্যতে কৃৎস্নমলঙ্ঘ্যবীর্যে৷৷ ৪ ৷৷
আপনি এই জগতের একমাত্র আশ্রয়স্বরূপা; কারণ, আপনিই পৃথিবীরূপে বিরাজিতা। হে দেবি! আপনার শক্তি অলঙ্ঘনীয়। আপনি জলরূপে অবস্থিতা হয়ে এই জগৎকে তৃপ্ত করছেন। ৪ ॥ ।।
ত্বং বৈষ্ণবীশক্তিরনন্তবীর্যা বিশ্বস্য বীজং পরমাসি মায়া। সম্মোহিতং দেবি সমস্তমেতৎ ত্বং বৈ প্রসন্না ভুবি মুক্তিহেতুঃ৷৷ ৫ ৷৷
আপনি অনন্তবীর্যা বৈষ্ণবীশক্তি (বিষ্ণুর জগৎপালিনী শক্তি)। আপনি এই বিশ্বের আদিকারণ মায়াশক্তি। হে দেবি! (এই মায়াশক্তি দিয়ে) আপনি সমগ্র জগৎকে মোহিত করে রেখেছেন। আপনি প্রসন্না হলে এই পৃথিবীতে আপনি মোক্ষপ্রদান করেন। ৫ ৷৷
বিদ্যাঃ সমস্তাস্তব দেবি ভেদাঃ স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ সকলা জগৎসু। ত্বয়ৈকয়া পূরিতমম্বয়ৈতৎ কা তে স্তুতিঃ স্তব্যপরা পরোক্তিঃ।।॥ ৬৷৷
হে দেবি! সমস্ত বিদ্যাই আপনার ভিন্ন ভিন্ন স্বরূপ। সংসারে সমস্ত নারীই আপনারই মূর্তি। হে জগদম্বিকে! একমাত্র আপনিই এই সমগ্র জগৎ ব্যাপ্ত করে রেখেছেন। আপনার স্তুতি কী দিয়ে হতে পারে? আপনি স্বয়ংই তো স্তুতির বিষয়ে মুখ্য ও গৌণ উক্তিসমূহ। ৬ ।।
সর্বভূতা যদা দেবী স্বর্গমুক্তি প্রদায়িনী। ত্বং স্তুতা স্তুতয়ে কা বা ভবন্ত পরমোক্তয়ঃ ।। ৭ ৷৷
আপনিই যখন সর্বস্বরূপা, স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদানকারিণী দেবী, তখন এই রূপেই আপনার স্তুতি করা হয়। আপনাকে স্তুতি করার জন্য এর চেয়ে উপযোগী আর কোন শ্রেষ্ঠ বাক্য হতে পারে? ॥৭॥
সর্বস্য বুদ্ধিরূপেণ জনস্য হৃদি সংস্থিতে। স্বর্গাপবর্গদে দেবি নারায়ণি নমোহস্তু তে৷৷৮৷
সমস্ত মানুষের হৃদয়ে বুদ্ধিরূপে অবস্থিতা এবং স্বর্গ ও মোক্ষদায়িনী নারায়ণী দেবী, আপনাকে নমস্কার।। ৮।।
কলাকাষ্ঠাদিরূপেণ বিশ্বস্যোপরতৌ শক্তে নারায়ণি নমোহস্তু তে৷ ৯৷
কলা, কাষ্ঠাদিরূপে ক্রমশঃ পরিণাম (অবস্থা পরিবর্তন)-দায়িনী এবং জগতের সংহারসমর্থা শক্তিরূপিণী নারায়ণি, আপনাকে প্রণাম ।। ৯।
পরিণামপ্রদায়িনি। সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে। শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তু তে৷৷ ১০৷৷
নারায়ণি! আপনি সর্বমঙ্গলদায়িনী মঙ্গলময়ী। কল্যাণদায়িনী শিবা। সমস্ত প্রকার পুরুষার্থ সিদ্ধিদায়িনী, শরণাগতবৎসলা, ত্রিনয়নী গৌরী আপনি, আপনাকে প্রণাম। ১০ ৷৷
সৃষ্টিস্থিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি। গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোহস্ত তে৷৷ ১১৷৷
আপনি সৃষ্টি, পালন ও সংহারের শক্তিভূতা, সনাতনী দেবী, সর্বগুণের আধার এবং সর্বগুণময়ী, নারায়ণি! আপনাকে প্রণাম ।। ১১ ।।
শরণাগতদীনার্তপরিত্রাণপরায়ণে। সর্বস্যার্তিহরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তু তে। ১২ ৷৷
শরণাগত দীন এবং আর্তগণের পরিত্রাণপরায়ণা এবং সকলের পীড়ানাশিনী দেবী নারায়ণি, আপনাকে প্রণাম ।। ১২ ।।
হংসযুক্তবিমানছে ব্রহ্মাণীরূপধারিণি। কৌশান্তঃক্ষরিকে দেবি নারায়ণি নমোহস্তু তে। ১৩৷
হে নারায়ণি! আপনি ব্রহ্মাণীর রূপ ধারণ করে হংসযুক্ত বিমানে অবস্থিতা হয়ে কুশ দ্বারা জল সিঞ্চন করেন, আপনাকে প্রণাম।। ১৩ ।।
ত্রিশূলচন্দ্রাহিধরে মহাবৃষভবাহিনি। মাহেশ্বরীস্বরূপেণ নারায়ণি নমোহস্তু তে৷ ১৪৷৷
মাহেশ্বরীরূপে ত্রিশূল, অর্দ্ধচন্দ্র এবং সর্পধারিণী এবং মহাবৃষভের পিঠে উপবিষ্টা নায়ায়ণী দেবী, আপনাকে প্রণাম।। ১৪ ।।
ময়ূরকুক্কুটবৃতে মহাশক্তিধরেহনঘে। কৌমারীরূপসংস্থানে নারায়ণি নমোহস্তু তে৷৷ ১৫৷৷
ময়ূর ও কুকুটবেষ্টিতা ও মহাশক্তিধারিণী কৌমারী শক্তিরূপিণী, অপাপবিদ্ধা নারায়ণি! আপনাকে প্রণাম ।। ১৫ ৷
শঙ্খচক্রগদাশাঙ্গগৃহীতপরমায়ুধে। প্রসীদ বৈষ্ণবীরূপে নারায়ণি নমোহস্তু তে৷৷ ১৬৷৷
শঙ্খ, চক্র, গদা ও শাঈধনু নামক উত্তম আয়ুধধারিণী বৈষ্ণবী শক্তিরূপা নারায়ণি! আপনাকে প্রণাম। ১৬
গৃহীতোগ্রমহাচক্রে দংষ্ট্রোষ্কৃতবসুন্ধরে। বরাহরূপিণি শিবে নারায়ণি নমোহস্তু তে৷৷ ১৭৷
হস্তে ভয়ানক মহাচক্র এবং দীর্ঘ দন্ত সমন্বিত বরাহরূপে ধরণীকে ধারণকারী কল্যাণময়ী মা! তোমাকে নমস্কার ।। ১৭ ।।
নৃসিংহরূপেণোগ্রেণ হস্তং দৈত্যান্ কৃতোদ্যমে। ত্রৈলোক্যত্রাণসহিতে নারায়ণি নমোহস্তু তে৷ ১৮৷৷
ভয়ঙ্কর নৃসিংহরূপে দৈত্যবিনাশে উদ্যতা এবং ত্রিভুবন রক্ষাপরায়ণা নারায়ণি! আপনাকে প্রণাম ।। ১৮ ।।
কিরীটিনি মহাবজে সহস্রনয়নোজ্জ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোহস্তু তে। ১৯৷৷
শিরে মুকুটযুক্তা, হাতে মহাবজ্রধারিণী, সহস্রনয়নশোভিতা, বৃত্রাসুরনাশিনী ইন্দ্রশক্তি-স্বরূপা নারায়ণী, দেবি! আপনাকে প্রণাম । ১৯ ।।
শিবদূতীস্বরূপেণ হতদৈত্যমহাবলে। ঘোররূপে মহারাবে নারায়ণি নমোহস্তু তে৷ ২০৷
শিবদূতীরূপে বিশাল অসুরসেনা সংহারকারিণী, ভয়ঙ্কর মূর্তিধারিণী তথা বিকট গর্জনকারিণী নারায়ণি! আপনাকে প্রণাম । ২০ ।।
দংষ্ট্রাকরালবদনে শিরোমালাবিভূষণে। চামুণ্ডে মুণ্ডমথনে নারায়ণি নমোহস্তু তে৷৷ ২১৷
বিকটদন্তবিশিষ্টা ভীষনবদনা, গলায় মুণ্ডমালাবিভূষিতা, মুণ্ডাসুরমর্দিনী, চামুণ্ডারূপা নারায়ণি! আপনাকে প্রণাম ৷ ২১ ।।
লক্ষ্মি লজ্জে মহাবিদ্যে শ্রদ্ধে পুষ্টি স্বধে ধ্রুবে। মহারাত্রি(২) মহাবিদ্যে নারায়ণি নমোহস্তু তে। ২২৷
লক্ষ্মী, লজ্জা, মহাবিদ্যা, শ্রদ্ধা, পুষ্টি, স্বধা, ধ্রুবা, মহারাত্রি তথা মহা-অবিদ্যারূপা নারায়ণি! আপনাকে প্রণাম । ২২৷৷
মেখে সরস্বতি বরে ভূতি বাক্সবি তামসি।নিয়তে ত্বং প্রসীদেশে নারায়ণি নমোহস্তু তো।। ২৩৷৷
মেধা, সরস্বতী, বরা (শ্রেষ্ঠা), ভূতি (ঐশ্বর্যরূপা), বাভ্রবী (গৈরিকবর্ণা অথবা পার্বতী), তামসী (মহাকালী), নিয়তা (সংযমপরায়ণা) তথা ঈশা (সর্বেশ্বরী) রূপিণী নারায়ণি! আপনাকে প্রণাম। ২৩ ৷৷
সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে। ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোহস্তু তে। ২৪৷৷
সর্বস্বরূপা, সর্বেশ্বরী তথা সর্বশক্তিময়ী দিব্যরূপা দুর্গে দেবি! সকল আপদ থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আপনাকে প্রণাম। ২৪ ।।
এতৎ তে বদনং সৌম্যং লোচনত্রয়ভূষিতম্। পাতু নঃ সর্বভীতিভ্যঃ কাত্যায়নি নমোহস্তু তে। ২৫ ৷৷
হে কাত্যায়নি! এই ত্রিলোচনবিভূষিতা আপনার সৌম্যবদন সব রকম উপদ্রব থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আপনাকে প্রণাম। ২৫ ।
জ্বালাকরালমত্যুগ্রমশেষাসুরসূদনম্। ত্রিশূলং পাতু নো ভীতের্ভদ্রকালি নমোহস্তু তে৷৷ ২৬৷৷
ভদ্রকালি! জ্বালাসমূহে বিকরাল, অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং সমস্ত অসুরগণকে বধকারী আপনার এই ত্রিশূল ভয় হতে আমাদের রক্ষা করুন। আপনাকে নমস্কার। ২৬।।
হিনস্তি দৈত্যতেজাংসি স্বনেনাপূর্য যা জগৎ। সা ঘণ্টা পাতু নো দেবি পাপেভ্যোহনঃ সুতানিব। ২৭ ৷৷
দেবি! যে ঘন্টাধ্বনিতে সমগ্র জগৎ ব্যাপ্ত থেকে দৈত্যদের তেজ হরণ করে, আপনার সেই ঘন্টা-মা যেমন ছেলেকে অমঙ্গল থেকে রক্ষা করেন-সেইরকম আমাদের সকল পাপ থেকে রক্ষা করুক।। ২৭ ।।
অসুরাসৃস্বসাপঙ্কচর্চিতন্তে করোজ্জ্বলঃ। শুভায় খড়েঙ্গা ভবতু চণ্ডিকে ত্বাং নতা বয়ম্। ২৮ ৷৷৷
চণ্ডিকে, আপনার হাতের উজ্জ্বল খড়া, যেই খড়া অসুরের রক্তসিক্ত ও মেদলিপ্ত, সেই খড়া আমাদের মঙ্গল করুক। আমরা আপনাকে প্রণাম করি।। ২৮।
রোগানশেষানপহংসি তুষ্টা রুষ্টা(১) তু কামান্ সকলানভীষ্টান্। ত্বামাশ্রিতানাং ন বিপন্নরাণাং ত্বামাশ্রিতা হ্যাশ্রয়তাং প্রয়ান্তি৷ ২৯৷৷
হে দেবি! আপনি তুষ্ট হলে সকল রকম রোগ বিনাশ করেন এবং কুপিত হলে মনোবাঞ্ছিত সকল কামনা নাশ করেন। আপনাকে যারা আশ্রয় করেছে তাদের কখনও বিপত্তি আসেই না। আপনার চরণাশ্রিত মানুষ অন্যেরও আশ্রয়যোগ্য হয়।। ২৯ ৷৷
এতৎ কৃতং যৎ কদনং ত্বয়াদ্য ধর্মন্বিষাং দেবি মহাসুরাণাম্। রূপৈরনেকৈর্বহুধাহহত্মমূর্তিং কৃত্বাম্বিকে তৎ প্রকরোতি কান্যা৷৷ ৩০ ৷৷
দেবি! অগ্নিকে! আপনি স্বীয় স্বরূপকে বহু প্রকারে প্রকট করে নানা রূপ ধারণ করে এই যে এখানে ধর্মদ্রোহী মহাসুরদের বিনাশ সাধন করলেন, এইসব আপনি ছাড়া দ্বিতীয় আর কে করতে পারে? ।। ৩০ ।।
বিদ্যাসু শাস্ত্রেষু বিবেকদীপে- স্বাদ্যেষু বাক্যেষু চকা ত্বদন্যা। মমত্বগর্তেইতিমহান্ধকারে বিভ্রাময়ত্যেতদতীব বিশ্বম্ ।। ৩১ ৷৷
সমস্ত বিদ্যা, জ্ঞানপ্রকাশক ধর্মশাস্ত্রসমূহ তথা আদিবাক্যসমূহে (বেদে) একমাত্র আপনি ছাড়া আর কার বর্ণনা আছে? উপরন্তু আপনি ছাড়া দ্বিতীয় এমন কোন্ শক্তি আছে যে এই বিশ্বের অজ্ঞানময় ঘোর অন্ধকারে পরিপূর্ণ মমতারূপী সংসারগর্তে মানুষকে নিরন্তর ভ্রমণ করাতে পারে? ।। ৩১ ।।
রক্ষাংসি যত্রোগ্রবিষাশ্চ নাগা যত্রারয়ো দস্যুবলানি যত্র। দাবানলো যত্র তথান্ধিমধ্যে তত্র স্থিতা ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্ ॥ ৩২ ৷৷
যেখানে রাক্ষস, যেখানে ভয়ংকর বিষধর সর্প, যেখানে শত্রু, যেখানে দস্যুদল এবং যেখানে দাবানল, সেখানে আর সমুদ্রমধ্যেও সঙ্গে সঙ্গে থেকে আপনি বিশ্বকে রক্ষা করে থাকেন ৷৷ ৩২।
বিশ্বেশ্বরি ত্বং পরিপাসি বিশ্বং বিশ্বাত্মিকা ধারয়সীতি বিশ্বম্। বিশ্বেশবন্দ্যা ভবতী ভবন্তি বিশ্বাশ্রয়া যে ত্বয়ি ভক্তিনস্রাঃ৷৷ ৩৩৷৷
হে বিশ্বেশ্বরি! আপনি বিশ্বকে পালন করেন, আপনি বিশ্বরূপা, তাই আপনি সমগ্র বিশ্বকে ধারণ করেন। আপনি ভগবান বিশ্বনাথেরও বন্দনীয়া। যাঁরা ভক্তিভরে আপনাকে প্রণাম করেন, তাঁরা বিশ্বের আশ্রয়স্থল হন। ৩৩ ৷৷
দেবি প্রসীদ পরিপালয় নোহরিভীতে- নিত্যং যথাসুরবধাদধুনৈব সদ্যঃ। পাপানি সর্বজগতাং প্রশমং নয়াশু উৎপাতপাকজনিতাংশ্চ মহোপসর্গান্৷ ৩৪ ৷৷
দেবি! আমাদের প্রতি প্রসন্না হউন। এখন যেভাবে অসুরদের বধ করে আপনি দ্রুত আমাদের রক্ষা করলেন, সেইভাবে ভবিষ্যতেও সর্বদাই আমাদের শত্রুভয় থেকে রক্ষা করুন। আপনি সমগ্র জগতের পাপ নাশ করুন এবং উৎপাত ও পাপের ফলস্বরূপ দুর্ভিক্ষ, মহামারী ইত্যাদি ব্যাপক উপদ্রব শীঘ্র নাশ করুন। ৩৪ ।।
প্রণতানাং প্রসীদ ত্বং দেবি বিশ্বার্তিহারিণি। ত্রৈলোক্যবাসিনামীড্যে লোকানাং বরদা ভব৷৷ ৩৫৷৷
দেব্যুবাচ।। ৩৬।।
দেবী বললেন-। ৩৬ ।।
বরদাহং সুরগণা বরং যন্ মনসেচ্ছথ। তং বৃণুধবং প্রযচ্ছামি জগতামুপকারকম্।। ৩৭ ৷৷
হে দেবগণ! আমি তোমাদের বরদান করতে প্রস্তুত। তোমাদের মনোমত বর প্রার্থনা করো। জগতের কল্যাণার্থে আমি সেই বর অবশ্যই প্রদান করব। ৩৭ ।।
দেবা উচুঃ ।। ৩৮ ৷৷
দেবতাগণ বললেন-।। ৩৮ ।।
সর্বাবাধাপ্রশমনং এবমেব ত্বয়া ত্রৈলোক্যস্যাখিলেশ্বরি। কার্যমস্মদ্বৈরিবিনাশনম্৷৷ ৩৯ ৷৷
হে সর্বেশ্বরি! আপনি এইভাবে ত্রিভুবনের সমস্ত বিঘ্নের প্রশমন করুন এবং (ভবিষ্যতেও) আমাদের শত্রুকুল নাশ করবেন ।। ৩৯ ৷৷
দেব্যুবাচ। ৪০৷৷
দেবী বললেন-॥ ৪০ ।
বৈবস্বতেহন্তরে প্রাপ্তে অষ্টাবিংশতিমে যুগে। শুম্ভো নিশুম্ভশ্চৈবান্যাবুৎপৎস্যেতে মহাসুরৌ৷৷ ৪১ ৷৷
হে দেবগণ! বৈবস্বত মন্বন্তরে অষ্টবিংশতিযুগে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে অন্য দুই অসুর জন্মাবে। ৪১ ॥
নন্দগোপগৃহে জাতা যশোদাগর্ভসম্ভবা। ততম্ভৌ নাশয়িষ্যামি বিন্ধ্যাচলনিবাসিনী৷৷ ৪২ ৷৷
তখন আমি নন্দগোপের ঘরে তার পত্নী যশোদার গর্ভে অবতীর্ণ হয়ে বিন্ধ্যাচলে গিয়ে বাস করব। আর ওই দুই মহাসুরকে বিনাশ করব। ৪২ ।।
পুনরপ্যতিরৌদ্রেণ রূপেণ পৃথিবীতলে। অবতীর্য হনিষ্যামি বৈপ্রচিত্তাংস্তু দানবান্৷ ৪৩৷৷
পুনরায় অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রূপে পৃথিবীতে আবির্ভূতা হয়ে বৈপ্রচিত্ত নামে দানবদের বধ করব।। ৪৩ ।।
ভক্ষয়ন্ত্যাশ্চ তানুগ্রান্ বৈপ্রচিত্তান্ মহাসুরান্। রক্তা দস্তা ভবিষ্যন্তি দাড়িমীকুসুমোপমাঃ ।। ৪8
সেই ভীষণ বৈপ্রচিত্ত মহাসুরদের ভক্ষণ করার সময় আমার দাঁতগুলি (রক্তলিপ্তহেতু) ডালিমফুলের মতো লাল হবে।। ৪৪ ৷৷
ততো মাং দেবতাঃ স্বর্গে মর্ত্যলোকে চ মানবাঃ। স্তুবন্তো ব্যাহরিষ্যন্তি সততং রক্তদন্তিকাম্।। ৪৫৷৷
সেইজন্য স্বর্গে দেবতা আর মর্ত্যে মানুষরা সব সময় আমাকে স্তুতি দ্বারা সর্বদা আমাকে রক্তদন্তিকা বলবে ।। ৪৫ ।।
ভূয়শ্চ শতবার্ষিক্যামনাবৃষ্ট্যামনগুসি। মুনিভিঃ সংস্তুতা ভূমৌ সম্ভবিষ্যাম্যযোনিজা। ৪৬৷৷
তারপর আবার যখন পৃথিবীতে একশত বৎসর ধরে অনাবৃষ্টি হবে এবং পৃথিবীতে জলাভাব হবে, তখন মুনিগণ আমার স্তব করলে আমি অযোনিসম্ভবা হয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূতা হব।। ৪৬ ।।
ততঃ শতেন নেত্রাণাং নিরীক্ষিষ্যামি যমুনীন্। কীর্তয়িষ্যন্তি মনুজাঃ শতাক্ষীমিতি মাং ততঃ৷৷ ৪৭ ৷৷
তখন স্তবকারী মুনিদের আমি শতনেত্র দিয়ে দেখব। এইজন্য মানবগণ আমাকে শতাক্ষী নামে কীর্তন করবে। ৪৭ ।।
ততোহহমখিলং লোকমাত্মদেহসমুদ্ভবৈঃ। ভরিষ্যামি সুরাঃ শাকৈরাবৃষ্টেঃ প্রাণধারকৈঃ ।। ৪৮৷৷
হে দেবগণ! সেই সময় আমি নিজের শরীর থেকে উৎপন্ন হওয়া প্রাণধারক শাকপাতাদ্বারা সমগ্র জগতের ভরণ পোষণ করব। যতদিন পর্যন্ত বৃষ্টি না হবে, ততদিন ওই শাকই সমস্ত প্রাণীদের রক্ষা করবে।। ৪৮ ।।
শাকম্ভরীতি বিখ্যাতিং তদা যাস্যাম্যহং ভুবি। তত্রৈব চ বধিষ্যামি দুর্গমাখ্যং মহাসুরম্৷৷ ৪৯৷৷
এই কাজের জন্য পৃথিবীতে আমি 'শাকম্ভরী' নামে বিখ্যাত হব। ওই অবতারেই আমি দুর্গম নামে মহাসুরকে বধও করব।। ৪৯ ৷৷
দুর্গা দেবীতি বিখ্যাতং তন্মে নাম ভবিষ্যতি। পুনশ্চাহং যদা ভীমং রূপং কৃত্বা হিমাচলে। ৫০ ॥
রক্ষাংসিভক্ষয়িষ্যামি মুনীনাং ত্রাণকারণাৎ। তদা মাং মুনয়ঃ সর্বে ন্তোষ্যন্ত্যানম্রমূর্তয়ঃ ৷৷ ৫১ ৷৷
এর ফলে আমি 'দুর্গাদেবী' নামে বিখ্যাত হব। তারপর আমি যখন ভীমরূপ ধারণ করে মুনিদের রক্ষার জন্য হিমালয়নিবাসী রাক্ষসদের ভক্ষণ করব, তখন মুনিরা সব ভক্তিতে প্রণত মস্তকে আমার স্তুতি করবে। ৫০-৫১।
ভীমাদেবীতি বিখ্যাতং তন্মে নাম ভবিষ্যতি। যদারুণাখ্যস্ত্রৈলোক্যে মহাবাধাং করিষ্যতি।। ৫২ ৷৷
তখন আমার নাম ভীমাদেবীরূপে বিখ্যাত হবে। যখন অরুণ নামে অসুর ত্রিভুবনে ভীষণ অত্যাচার সুরু করবে । ৫২ ।
তদাহং ভ্রামরং রূপং কৃত্বাহসংখ্যেয়ষপদম্। ত্রৈলোক্যস্য হিতার্থায় বধিষ্যামি মহাসুরম্।। ৫৩ ৷৷
তখন ত্রিলোকের কল্যাণার্থে ষট্পাদবিশিষ্ট অসংখ্য ভ্রমরের রূপ ধারণ করে আমি সেই মহাসুরকে বধ করব। ৫৩ ।।
ভ্রামরীতি চ মাং লোকাস্তদা স্তোষ্যন্তি সর্বতঃ। ইত্থং যদা যদা বাধা দানবোখা ভবিষ্যতি।। ৫৪৷৷
তদা তদাবতীর্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম্।। ওঁ ৷৷ ৫৫ ৷৷
সেই সময় সকলে আমাকে 'ভ্রামরী' নামে সর্বত্র আমার স্তুতি করবে। এইভাবে যখনই সংসারে দানবদের অত্যাচারে বাধা উপস্থিত হবে, তখন তখনই অবতার গ্রহণ করে আমি শত্রুসংহার করব।। ৫৪-৫৫ ॥
ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যে দেব্যাঃ স্তুতির্নাম একাদশোহধ্যায়ঃ ৷৷ ১১ ৷৷
এই অধ্যায়ে উবাচ-৪, অর্দ্ধশ্লোক ১, শ্লোক-৫০, মোট-৫৫, আদি হতে সর্বমোট ৬৩০ রয়েছে।
শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিক মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যপ্রসঙ্গে 'দেবীস্তুতি' নামক একাদশ অধ্যায় সম্পূর্ণ হল ৷৷ ১১ ৷৷