Durga Saptashati Image

অথ ত্রয়োদশাহধ্যায়ঃ

ত্রয়োদশ অধ্যায়

সুরথ আর বৈশ্যকে দেবীর বরদান

ধ্যানম্

ওঁ বালার্কমণ্ডলাভাসাং চতুর্বাহুং ত্রিলোচনাম্। পাশাঙ্কুশবরাভীতীর্ধারয়ন্তীং শিবাং ভজে।।

উদয়কালীন সূর্যমণ্ডলের তুল্য প্রভাময়ী, চতুর্ভুজা ও ত্রিনেত্রা এবং চারহাতে পাশ, অঙ্কুশ, বর এবং অভয়মুদ্রা ধারণকারিণী শিবা দেবীকে আমি ধ্যান করি।

'ওঁ' ঋষিরুবাচ ৷৷ ১ ৷৷

মেধা ঋষি বললেন-৷৷ ১ ৷৷

এতৎ তে কথিতং ভূপ দেবীমাহাত্ম্যমুত্তমম্। এবংপ্রভাবা সা দেবী যয়েদং ধার্যতে জগৎ৷ ২৷

হে মহারাজ সুরথ! তোমাকে এই উত্তম দেবী-মাহাত্ম্য বললাম। যিনি এই নিখিল বিশ্ব ধারণ করে রয়েছেন, সেই দেবীর প্রভাব এইরকমই । ২ ।

বিদ্যা তথৈব ক্রিয়তে ভগবদ্বিষ্ণুমায়য়া। তয়া ত্বমেষ বৈশ্যশ্চ তথৈবান্যে বিবেকিনঃ ৷৷ ৩ ৷৷

মোহান্তে মোহিতাশ্চৈব মোহমেষ্যন্তি চাপরে। তামুপৈহি মহারাজ শরণং পরমেশ্বরীম্।। ৪ ৷৷

তিনিই বিদ্যা (জ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞান) সৃষ্টি করেন। ভগবান বিষ্ণুর মায়াস্বরূপা সেই ভগবতী দ্বারাই তুমি, এইসব বৈশ্য এবং অন্যান্য বিবেকাভিমানী পণ্ডিতেরা মোহাচ্ছন্ন হয়ে থাক, মোহিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও মোহিত হবে। হে মহারাজ! তুমি সেই পরমেশ্বরীরই শরণাগত হও ।। ৩-৪ ।।

আরাধিতা সৈব নৃণাং ভোগস্বর্গাপবর্গদা ।। ৫ ৷৷

আরাধনা করলে তিনিই মানুষকে ইহলোকে ভোগ, পরলোকে স্বর্গ তথা মোক্ষ প্রদান করেন ।। ৫ ।।

মার্কণ্ডেয় উবাচ।। ৬।

মার্কণ্ডেয় মুনি বললেন-।। ৬।

ইতি তস্য বচঃ শ্রুত্বা সুরথঃ স নরাধিপঃ ।। ৭৷৷

প্রণিপত্য মহাভাগং তমৃষিং সংশিতব্রতম্। নির্বিগ্নোহতিমমত্বেন রাজ্যাপহরণেন চ॥৮॥

হে ক্রোষ্টুকি! মেধাঋষির এই উপদেশ শুনে রাজা সুরথ কঠোর তপস্যাপরায়ণ সেই মহর্ষিকে প্রণাম করলেন। তিনি (পুত্র-মিত্র-কলত্রাদিতে) অত্যধিক মমতা এবং শত্রু কর্তৃক রাজ্যাপহরণে অতীব দুঃখিত ছিলেন।। ৭-৮ ।।

জগাম সদ্যস্তপসে স চ বৈশ্যো মহামুনে। সন্দর্শনার্থমন্বায়া নদীপুলিনসংস্থিতঃ ।। ৯ ৷৷

হে মহামুনে! এর ফলে বৈরাগ্যবান হয়ে সেই রাজা ও সেই বৈশ্য (সমাধি) তপস্যা করতে চলে গেলেন এবং জগদম্বাকে দর্শন লালসায় নদীতীরে অবস্থান করে তপস্যায় বসলেন৷৷ ৯ ৷৷

স চ বৈশ্যস্তপন্তেপে দেবীসূক্তং পরং জপন। তৌ তস্মিন্ পুলিনে দেব্যাঃ কৃত্বা মূর্তিং মহীময়ীম্।১০ ৷৷

অর্হণাঞ্চক্রতুস্তস্যাঃ পুষ্পধূপাগ্নিতর্পণেঃ। নিরাহারৌ যতাহারৌ তন্মনস্কৌ সমাহিতৌ৷৷ ১১ ৷৷

সেই বৈশ্য সর্বশ্রেষ্ঠ দেবীসূক্ত জপ করতে করতে তপস্যায় প্রবৃত্ত হলেন। তাঁরা দুজনে নদীর তটে দেবীর মাটীর প্রতিমা নির্মাণ করে পুষ্প, দীপ ও যজ্ঞদ্বারা তাঁর পূজা করতে লাগলেন। তাঁরা প্রথমে সংযমিত আহার, তারপরে উপবাস করে দেবীতে সমাহিতচিত্ত হয়ে ধ্যানে তন্ময় হলেন । ১০-১১ ॥

দদতুস্তৌ বলিঞ্চৈব নিজগাত্রাসৃগুক্ষিতম্। এবং সমারাধয়তোস্ত্রিভিবর্ষের্যতাক্সনোঃ৷৷ ১২৷৷

তাঁরা দুজনেই নিজ নিজ শরীরের রক্তসিক্ত (পশুকুষ্মাণ্ডাদি) বলি দেবীর চরণে নিবেদন করে ক্রমাগত তিন বছর সংযমিত থেকে দেবীর আরাধনা করতে লাগলেন। ১২ ।।

পরিতুষ্টা জগদ্ধাত্রী প্রত্যক্ষং প্রাহ চণ্ডিকা৷৷ ১৩৷৷

এরপর তুষ্টা হয়ে জগদ্ধাত্রী চণ্ডিকা দেবী তাদের প্রত্যক্ষ দর্শন দিয়ে বললেন-৷৷ ১৩।

দেব্যুবাচ ।। ১৪৷৷

দেবী বললেন-৷৷ ১৪ ।।

যৎ প্রার্থ্যতে ত্বয়া ভূপ ত্বয়া চ কুলনন্দন। মত্তস্তৎ প্রাপ্যতাং সর্বং পরিতুষ্টা দদামি তৎ৷ ১৫৷৷

হে মহারাজ! এবং হে বৈশ্যকুলনন্দন! তোমরা তোমাদের মনোভিলাষ আমার কাছে প্রার্থনা করো। আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, তোমাদের প্রার্থিত অভিলাষ পূর্ণ করব।। ১৫ ৷৷

মার্কণ্ডেয় উবাচ।। ১৬৷৷

মার্কণ্ডেয় মুনি বললেন-৷৷ ১৬ ।।

ততো বরে নৃপো রাজ্যমবিভ্রংশ্যন্যজন্মনি। অত্রৈব চ নিজং রাজ্যং হতশত্রুবলং বলাৎ৷৷ ১৭ ৷৷

অনন্তর রাজা সুরথ জন্মান্তরে চিরস্থায়ী (নষ্ট হবে না এমন) রাজ্য এবং এই জন্মে নিজের শক্তিতে শত্রুবিনাশ করে নিজ রাজ্যপ্রাপ্তির প্রার্থনা জানালেন। ১৭ ।।

সোহপি বৈশ্যস্ততো জ্ঞানং বক্সে নির্বিঃমানসঃ। মমেত্যহমিতি প্রাজ্ঞঃ সঙ্গবিচ্যুতিকারকম্৷৷ ১৮৷৷

বৈশ্যের মন সংসারের ওপর অসন্তুষ্ট ও বিরক্ত ছিল আর সে বুদ্ধিমানও ছিল; সেইজন্য সে ঐ সময় মমতা ('আমার ও আমি') এইরকম অভিমান যাতে নাশ হয় এমন তত্ত্বজ্ঞান প্রার্থনা করলেন।। ১৮৷৷

দেব্যুবাচ।। ১৯।।

দেবী বললেন-৷ ১৯ ।।

স্বল্পৈরহোভিনৃপতে স্বং রাজ্যং প্রাপ্স্যতে ভবান্৷ ২০॥

হত্বা রিপূনস্খলিতং তব তত্র ভবিষ্যতি। ২১ ৷৷

হে ভূপ! তুমি অল্প দিনের মধ্যেই শত্রুনাশ করে নিজের রাজ্য ফিরে পাবে। তোমার হৃতরাজ্য স্থির থাকবে। ২০-২১ ৷

মৃতশ্চ ভূয়ঃ সংপ্রাপ্য জন্ম দেবাদ্ বিবস্বতঃ।। ২২ ৷৷

সাবর্ণিকো নাম মনুর্ভবান্ ভুবি ভবিষ্যতি।।৷ ২৩৷৷

তারপর মৃত্যুর পরে তুমি বিবস্বান্ (সূর্য)-এর অংশে জন্ম নিয়ে এই পৃথিবীতে সাবর্ণিক মনু নামে বিখ্যাত হবে। ২২-২৩।।

বৈশ্যবর্ষ ত্বয়া যশ্চ বরোহস্মত্তোহভিবাঞ্ছিতঃ।। ২৪৷৷

তং প্রযচ্ছামি সংসিদ্ধ্যৈ তব জ্ঞানং ভবিষ্যতি ৷৷ ২৫৷৷

হে বৈশ্যশ্রেষ্ঠ! তুমিও আমার কাছে অভিলষিত যে বর চেয়েছ, সেই বর দিচ্ছি। তোমার মুক্তিলাভের উপযোগী তত্ত্বজ্ঞান লাভ হবে। ২৪-২৫ ॥

মার্কণ্ডেয় উবাচ।। ২৬৷

মার্কণ্ডেয় মুনি বললেন-। ২৬ ।

ইতি দত্ত্বা তয়োদেবী যথাভিলষিতং বরম্ ।। ২৭৷৷

বক্তৃবান্তর্হিতা সদ্যো ভক্ত্যা তাভ্যামভিষ্টুতা। এবং দেব্যা বরং লব্ধা সুরথঃ ক্ষত্রিয়র্ষভঃ ৷৷ ২৮ ৷৷

সূর্যাজ্জন্ম সমাসাদ্য সাবর্ণির্ভবিতা মনুঃ ৷৷ ২৯ ৷৷

এইপ্রকারে তাঁদের দুজনকে অভিলাষানুরূপ বর প্রদান করে এবং তাঁদের দ্বারা ভক্তিপূর্বক সংস্তুতা হয়ে দেবী অম্বিকা তৎক্ষণাৎ অন্তর্হিতা হলেন। এইভাবে মহামায়ার থেকে বরলাভ করে ক্ষত্রিয়শ্রেষ্ঠ সুরথ সূর্যদেবের থেকে জন্ম নিয়ে সাবর্ণি নামে মনু হবেন। ২৭-২৯৷৷

এবং দেব্যা বরং লব্ধা সুরথঃ ক্ষত্রিয়র্ষভঃ। সূর্যাজ্জন্ম সমাসাদ্য সাবর্ণির্ভবিতা মনুঃ ৷৷ ক্লীং ওঁ ৷৷

ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যে সুরথবৈশ্যয়োর্বরপ্রদানং নাম ত্রয়োদশোহধ্যায়ঃ ।। ১৩ ৷৷

এই অধ্যায়ে উবাচ-৬, অর্দ্ধশ্লোক-১১, শ্লোক-১২, মোট-২৯, আদি হতে সর্বমোট ৭০০।

তন্মধ্যে উবাচ ৫৭, অর্দ্ধশ্লোক-৪২, শ্লোক-৫৩৫, অবদান (ত্রিপান্মন্ত্র)-৬৬, সর্বমোট-৭০০

শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিক মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যপ্রসঙ্গে 'সুরথ ও বৈশ্যকে বরদান' নামক ত্রয়োদশ অধ্যায় সম্পূর্ণ হল ৷৷ ১৩ ৷৷