অথ ঋগ্বেদোক্ত দেবীসূক্তম্
ঋগ্বেদোক্ত দেবীসূক্ত
ওঁ অহমিত্যষ্টর্চস্য সূক্তস্য বাগাঞ্ছণী ঋষিঃ, সচ্চিৎসুখাত্মকঃ সর্বগতঃ পরমাত্মা দেবতা, দ্বিতীয়ায়া ঋচো জগতী, শিষ্টানাং ত্রিষ্টুপ্ ছন্দঃ, দেবীমাহাত্ম্যপাঠে বিনিয়োগঃ।
ধ্যানম্
ওঁ সিংহঙ্গা শশিশেখরা মরকতপ্রখ্যৈশ্চতুর্তির্ভুজৈঃ শঙ্খং চক্রধনুঃশরাংশ্চ দধতী নেত্রৈস্ত্রিভিঃ শোভিতা।
আমুক্তাঙ্গদহারকঙ্কণরণৎকাঞ্চীরণন্নুপুরা দুর্গা দুর্গতিহারিণী ভবতু নো রত্নোল্লসৎকুণ্ডলা।
সিংহের পৃষ্ঠে বিরাজমানা, শশিমৌলিশেখরা, মরকতমণিসমুজ্জ্বলা, চার হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনু ও বাণধারিণী, ত্রিনয়না, বিভিন্ন অঙ্গে বাজুবন্ধ, হার, কঙ্কন, ঝনঝন শব্দকারী করধনী এবং নূপুরসিঞ্জিত চরণযুগল আর যার কর্ণযুগলে রত্নখচিত কুণ্ডল দোদুল্যমান, সেই ভগবতী দুর্গা আমার দুর্গতি নাশকারিণী হোন।
দেবীসূক্তম্
ওঁ অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরাম্যহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ। অহং মিত্রাবরুণোভা বিভ্যহমিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা। ১ ৷৷
(মহর্ষি অঙ্গণের কন্যার নাম বাক্। তিনি অসীম ব্রহ্মজ্ঞানী ছিলেন। তিনি দেবীর সাথে তাদাত্ম্য লাভ করেছিলেন। তিনি বলছেন-) আমি সচ্চিদানন্দময়ী সর্বাত্মা দেবী রুদ্র, বসু, আদিত্য তথা বিশ্বেদেবগণরূপে বিচরণ করি। মিত্র এবং বরুণ দুজনকে, ইন্দ্র ও অগ্নিকে তথা অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে আমিই ধারণ করি। ১ ৷৷
অহং সোমমাহনসং বিভ্যহং ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম্। অহং দধামি দ্রবিণং হবিস্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুম্বতে। ২৷৷
দেবশত্রুবিনাশন আকাশচারী দেবতা সোমকে, ত্বষ্টা প্রজাপতি তথা পৃষা এবং ভগকে আমিই ধারণ করি। যিনি হবিষ্যের দ্বারা সম্পন্ন হয়ে দেবতাদের উত্তম হবিষ্য প্রাপ্ত করান এবং তাঁদের সোমরসের দ্বারা তৃপ্ত করান সেই যজমানকে আমিই উত্তম যজ্ঞফল এবং ধন প্রদান করি। ২ ।
অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্। তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূর্যাবেশয়ন্তীম্৷৷ ৩৷৷
আমি সমগ্র জগতের ঈশ্বরী, আমার উপাসকদের ধনপ্রাপ্তকারিণী, সাক্ষাৎকারের যোগ্য পরব্রহ্মকে অভিন্নরূপে জ্ঞাতা তথা পূজনীয় দেবতাদের প্রধান আমি। প্রপঞ্চরূপে আমি নানা ভাবসমূহে অবস্থিতা। সর্বভূতে জীবরূপে আমি প্রবিষ্টা। বিভিন্নস্থানে অবস্থিত দেবতারা যেখানে যা কিছুই করেন, সবই আমার আরাধনার উদ্দেশ্যে করেন।। ৩ ॥
ময়া সো অন্নমত্তি যো বিপশ্যতি যঃ প্রাণিতি য ঈং শূণোত্যুক্তম্। অমন্তবো মাং ত উপ ক্ষিয়ন্তি শ্রুধি শ্রদ্ধিবং শ্রুত বদামি। ৪ ৷৷
আমারই শক্তিতে সকলে অন্ন ভোজন করে (কারণ আমিই ভোফ্-শক্তি); এইরকমই যে দেবতা, শ্বাসপ্রশ্বাসাদি নির্বাহ করে, তথা বক্তব্য বাক্য শ্রবণ করে, এই সবই আমারই শক্তিতে ওই সব কর্ম করতে সমর্থ হয়। যে আমাকে এভাবে না জানে সে অজ্ঞানতার দরুণই দীনদশা প্রাপ্ত হয়। হে বহুশ্রুত! আমি তোমাকে শ্রদ্ধালভ্য ব্রহ্মতত্ত্ব উপদেশ দিচ্ছি, শোনো-॥ 8 ॥
অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং দেবেভিরুত মানুষেভিঃ। যং কাময়ে তং তমুগ্রং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমৃষিং তং সুমেধাম্ ॥ ৫ ৷৷
দেবতা ও মানুষের প্রার্থিত এই দুর্লভ তত্ত্ব আমি স্বয়ং বর্ণন করছি। আমি যাদের রক্ষা করতে চাই, তাদের আমি সকলের চেয়ে অধিক শক্তিশালী করি। তাদের আমি সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পরোক্ষ জ্ঞানবান ঋষি এবং অতি উত্তম মেধাশক্তিসম্পন্ন করি।। ৫ ।।
অহং রুদ্রায় ধনুরা তনোমি ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ। অহং জনায় সমদং কৃণোম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ। ৬ ৷৷
ব্রহ্মদ্বেষী, হিংসুক অসুরদের বধ করার জন্য রুদ্রের ধনুতে আমি জ্যা সংযুক্ত করি। শরণাগতজনের রক্ষার্থে শত্রুদের সাথে আমি যুদ্ধ করি তথা অন্তর্যামীরূপে পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে ব্যাপ্ত রয়েছি।। ৬।।
অহং সুবে পিতরমস্য যোনির স্বন্তঃ মূর্ধন্মম সমুদ্রে। ততো বি তিষ্ঠে ভুবনানু বিশ্বো- তামূং দ্যাং বর্মণোপ স্পৃশামি। ৭৷৷
এই জগতের পিতৃস্বরূপ আকাশকে সর্বাধিষ্ঠানস্বরূপ পরমাত্মার ঊর্ধ্বে সৃষ্টি করি। সমুদ্রে (সর্বজীবের উৎপত্তিস্থান পরমাত্মাতে) তথা জলে (বুদ্ধির ব্যাপক বৃত্তিতে) আমার কারণের (কারণস্বরূপ চৈতন্য ব্রহ্মের) অধিষ্ঠান; সুতরাং আমি সমগ্র ভুবনে ব্যাপ্ত রয়েছি তথা সেই স্বর্গলোককেও নিজের শরীর দ্বারা স্পর্শ করে থাকি। ৭ ।।
অহমেব বাত ইব প্রবাম্যারভমাণা ভুবনানি বিশ্বা। পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈতাবতী মহিনা সংবভূব। ৮ ।।
কারণরূপে আমি যখন বিশ্বসৃষ্টি আরম্ভ করি, তখন অন্য কারও দ্বারা চালিত না হয়ে স্বয়ংই বায়ুর মতো স্বচ্ছন্দে সর্বত্র বিচরণ করি, নিজেরই ইচ্ছাশক্তিতে কর্মে প্রবৃত্ত হই। আমি পৃথিবী এবং আকাশ দুই-এরই অতীত। নিজের মহিমাতেই আমি এইরূপ হয়েছি। ৮।।