Durga Saptashati Image

অথ তৃতীয়োহধ্যায়ঃ

তৃতীয় অধ্যায়

সেনাপতিগণসহ মহিষাসুরকে বধ

ধ্যানম্

ওঁ উদ্যানুসহস্রকান্তিমরুণক্ষৌমাং শিরোমালিকাং রক্তালিপ্তপয়োধরাং জপবটীং বিদ্যামভীতিং বরম্। ত্রিনেত্রবিলসদ্বজ্ঞারবিন্দশ্রিয়ং দেবীং বদ্ধহিমাংশুরত্নমুকুটাং বন্দেহরবিন্দস্থিতাম্।।

দেবী জগদম্বার শ্রীঅঙ্গের কান্তি উদয়কালীন সহস্র সূর্যের মতো। তাঁর পরণে রক্তবর্ণ কৌষেয় বস্ত্র। তিনি নরমুণ্ডমালিনী, তাঁর স্তনযুগল রক্তরঞ্জিত, চার কমলহস্তে অক্ষমালা, বিদ্যা ও অভয় তথা বরমুদ্রাধারিণী। তাঁর মুখমণ্ডল ত্রিনয়নে শোভিত ও কমলবৎ সুন্দর। তাঁর মাথায় চন্দ্রের সাথে রত্নময় মুকুট এবং তিনি কমলাসনে অবস্থিতা। সেই দেবীকে আমি ভক্তিপূর্বক প্রণাম করি।

'ওঁ' ঋষিরুবাচ৷৷ ১ ৷৷

মেধা ঋষি বললেন-৷৷ ১ ।।

নিহন্যমানং তৎসৈন্যমবলোক্য মহাসুরঃ।
সেনানীশ্চিক্ষুরঃ কোপাদ্ যযৌ যোক্কুমথাম্বিকাম্৷ ২৷

অসুরসেনাদের এই রকম তছনছ অবস্থা দেখে সেনাপতি চিক্ষুর ক্রোধে আরক্ত হয়ে অগ্নিকা দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে এগিয়ে এল।। ২ ।।

স দেবীং শরবর্ষেণ ববর্ষ সমরেহসুরঃ।
যথা মেরুগিরেঃ শৃঙ্গং তোয়বর্ষেণ তোয়দঃ।। ৩ ৷৷

মেঘ যেমন সুমেরু পর্বতের চূড়াকে বারিধারায় আচ্ছন্ন করে, সেই চিক্ষুরাসুরও সেই রকম ভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে বাণ বৃষ্টি করতে লাগল। ৩ ৷৷

তস্যচ্ছিত্ত্বা ততো দেবী লীলয়ৈব শরোৎকরান।
জঘান তুরগান্ বাণৈর্যন্তারঞ্চৈব বাজিনাম্।। ৪ ৷৷

অনন্তর দেবী স্বীয় বাণের দ্বারা চিক্ষুরের বাণসকল অনায়াসেই ছেদন করে তার রথের সারথি ও অশ্বগুলিকেও বধ করলেন। ৪।।

চিচ্ছেদ চ ধনুঃ সদ্যো ধ্বজঞ্চাতিসমুচ্ছিতম্।
বিব্যাধ চৈব গাত্রেষু ছিন্নধন্বানমাশুগৈঃ ৷৷ ৫ ৷৷

সাথে সাথে তার ধনু এবং অতি উচ্চ রথধ্বজা কেটে দিলেন। পরে ধনুকহীন সেই অসুরের সর্বাঙ্গ বাণ দ্বারা বিদ্ধ করলেন। ৫ ॥

সচ্ছিন্নধন্বা বিরথো হতাশ্বো হতসারথিঃ।
অভ্যধাবত তাং দেবীং খড়াচর্মধরোহসুরঃ ৷৷ ৬ ৷৷

ধনুক, রথ, অশ্ব ও সারথিবিহীন হয়ে সেই অসুর খড়া ও ঢাল নিয়ে দেবীর প্রতি ধাবিত হল ।। ৬ ।।

সিংহমাহত্য খড়োন তীক্ষ্ণধারেণ মূর্ধনি।
আজঘান ভুজে সব্যে দেবীমপ্যতিবেগবান্ ।। ৭ ৷৷

তীক্ষ্ণধার খড়া দিয়ে সিংহের মস্তকে আঘাত দিয়ে, দেবীরও বাম হাতে মহাবেগে খড়াপ্রহার করল।। ৭ ।।

তস্যাঃ খড়েঙ্গা ভুজং প্রাপ্য পফাল নৃপনন্দন।
ততো জগ্রাহ শূলং স কোপাদরুণলোচনঃ৷৷ ৮ ৷৷

রাজন! দেবীর বাহুতে লেগে সেই খড়গ টুকরো টুকরো হয়ে গেল দেখে রক্তচক্ষু হয়ে সেই অসুর শূল গ্রহণ করল। ৮ ৷৷

চিক্ষেপ চ ততস্তত্ত্ব ভদ্রকাল্যাং মহাসুরঃ।
জাজ্বল্যমানং তেজোভী রবিবিম্বমিবাম্বরাৎ ৷৷ ৯ ৷৷

অনন্তর সেই মহাসুর ওই শূলটী ভগবতী ভদ্রকালীর দিকে নিক্ষেপ করল। সেই শূলটী আকাশে ওঠামাত্র সূর্যমণ্ডলের মত নিজের তেজে জ্বলে উঠল। ৯ ৷৷

দৃষ্টা তদাপতচ্ছলং দেবী শূলমমুঞ্চত।
তচ্ছলং শতধা তেন নীতং স চ মহাসুরঃ৷৷ ১০৷

সেই শূলকে নিজের দিকে আসতে দেখে দেবীও তাঁর নিজের শূল নিক্ষেপ করলেন। দেবীর শূলে মহাসুরের শূল শতটুকরা হয়ে গেল এবং সেই সাথে মহাসুর চিক্ষুরও শতধা বিদীর্ণ হয়ে গেল।। ১০ ।।

হতে তস্মিন্ মহাবীর্যে মহিষস্য চমূপতৌ।
আজগাম গজারূঢ়শ্চামরস্ত্রিদশার্দনঃ ৷৷ ১১৷৷

সোহপি শক্তিং মুমোচাথ দেব্যাস্তামম্বিকা দ্রুতম্।
হুঙ্কারাভিহতাং ভূমৌ পাতয়ামাস নিষ্প্রভাম্৷৷ ১২৷

মহিষাসুরের সেনাপতি মহাপরাক্রমশালী চিক্ষুর নিহত হলে দেবশত্রু চামর হাতীর পিঠে চড়ে যুদ্ধ করতে এল। সেও এসে দেবীর প্রতি শক্তি অস্ত্র প্রয়োগ করল কিন্তু জগদম্বা হুঙ্কারনাদে তাকে প্রতিহত এবং নিষ্প্রভ করে ভূতলে নিপাতিত করলেন।। ১১-১২ ৷৷

ভগ্নাং শক্তিং নিপতিতাং দৃষ্টা ক্রোধসমন্বিতঃ।
চিক্ষেপ চামরঃ শূলং বাণৈস্তদপি সাচ্ছিনৎ৷৷ ১৩৷৷

শক্তি অস্ত্রকে ভগ্ন এবং ভূপাতিত দেখে চামরাসুর খুবই ক্রুদ্ধ হল। সে তখন শূল নিক্ষেপ করল কিন্তু সেই শূলও দেবী বাণ দিয়ে কেটে দিলেন। ৷৷ ১৩ ।।

ততঃ সিংহঃ সমুৎপত্য গজকুম্ভান্তরে স্থিতঃ।
বাহুযুদ্ধেন যুযুধে তেনোচ্চৈস্ত্রিদশারিণা৷৷ ১৪৷৷

তখন দেবীবাহন সিংহ হাতীর মাথার উপরে চড়ে বসল এবং সেই অসুরের সঙ্গে প্রচণ্ড বাহুযুদ্ধ করতে লাগল। ১৪ ৷৷

যুধ্যমানৌ ততস্তৌ তু তস্মান্নাগান্মহীং গতৌ।
যুযুধাতেহতিসংরন্ধৌ প্রহারৈরতিদারুণৈঃ ৷৷ ১৫৷৷

দুজনে যুদ্ধ করতে করতে মাটীতে নেমে এল এবং ভীষণ ক্রোধের সাথে পরস্পরকে অতি দারুণ আঘাত করে যুদ্ধ করতে লাগল। ১৫ ৷৷

ততো বেগাৎ খমুৎপত্য নিপত্য চ মৃগারিণা।
করপ্রহারেণ শিরশ্চামরস্য পৃথক্ কৃতম্ ৷৷ ১৬৷৷

তারপর সিংহ ভীষণ বেগে আকাশের দিকে লাফিয়ে উঠলেন এবং সবেগে নীচে নামার সময় করাঘাতে চামরের মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। ১৬ ।।

উদগ্রশ্চ রণে দেব্যা শিলাবৃক্ষাদিভির্হতঃ।
দন্তমুষ্টিতলৈশ্চৈব করালশ্চ নিপাতিতঃ ৷৷ ১৭ ৷৷

এইভাবে শিলা ও বৃক্ষের আঘাতে রণভূমিতে দেবী উদগ্রাসুরকেও বধ করলেন এবং দন্ত, মুষ্টি ও চপেটাঘাতে করালাসুর ধরাশায়ী হল ।। ১৭ ।।

দেবী ক্রুদ্ধা পদাপাতৈমূর্ণয়ামাস চোদ্ধতম্।
বাস্তুলং ভিন্দিপালেন বাণৈস্তাত্রং তথান্ধকম্৷৷ ১৮ ৷৷

ক্রুদ্ধা হয়ে দেবী গদাঘাতে উদ্ধতাসুরকে, ভিন্দিপাল দিয়ে বাস্কলাসুরকে এবং বাণাঘাতে তাম্রাসুর ও অন্ধকাসুরকে চূর্ণবিচূর্ণ করলেন। ১৮ ॥

উগ্রাস্যমুগ্রবীর্যঞ্চ তথৈব চ মহাহনুম্।
ত্রিনেত্রা চ ত্রিশূলেন জঘান পরমেশ্বরী। ১৯ ৷৷

ত্রিনয়না পরমেশ্বরী ত্রিশূল দিয়ে উগ্রাস্য, উগ্রবীর্য ও মহাহনু নামক অসুরদের বধ করলেন। ১৯ ৷৷

বিড়ালস্যাসিনা কায়াৎ পাতয়ামাস বৈ শিরঃ।
দুর্ধরং দুর্মুখঞ্চোভৌ শরৈর্নিন্যে যমক্ষয়ম্ ।। ২০৷৷

তরোয়াল দিয়ে বিড়ালাসুরের শরীর থেকে মস্তক ছিন্ন করে ফেললেন। দুর্ধর ও দুর্মুখ-এই দুই অসুরকেও নিজের বাণ দ্বারা যমালয়ে পাঠিয়ে দিলেন। ২০৷

এবং সংক্ষীয়মাণে তু স্বসৈন্যে মহিষাসুরঃ।
মাহিষেণ স্বরূপেণ ত্রাসয়ামাস তান্ গণান্৷৷ ২১৷

এইভাবে নিজের সৈন্যদের বিনষ্ট হতে দেখে মহিষাসুর মহিষের রূপ ধারণ করে দেবীর সৈন্যদের ভীতি সঞ্চার করতে লাগল। ২১ ॥

কাংশ্চিত্ত্বণ্ডপ্রহারেণ খুরক্ষেপৈস্তথাপরান।
লাঙ্গলতাড়িতাংশ্চান্যান্ শৃঙ্গাভ্যাঞ্চ বিদারিতান্৷ ২২ ৷৷

বেগেন কাংশ্চিদপরান্ নাদেন ভ্রমণেন চ।
নিঃশ্বাসপবনেনান্যান্ পাতয়ামাস ভূতলে। ২৩৷৷

কাউকে নিজের মুখ দিয়ে আঘাত করে, কিছু সৈন্যকে খুরপ্রহারে, কাউকে কাউকে লেজের আঘাতে, কাউকে কাউকে আবার শিংএর আঘাতে বিদীর্ণ করে, কিছু সৈন্যদের দ্রুতগতির দ্বারা, কিছুদের গর্জন দ্বারা, কাউকে কাউকে আবার চক্রাকারে ছোটাছুটি করে আর অন্য অবশিষ্ট কিছুদের নিঃশ্বাস বায়ুর আকর্ষণে ভূতলশায়ী করে দিল। ২২-২৩ ৷৷

নিপাত্য প্রমথানীকমভ্যধাবত সোহসুরঃ।
সিংহং হন্ত্রং মহাদেব্যাঃ কোপঞ্চক্রে ততোহম্বিকা৷৷ ২৪৷৷

দেবীর প্রমথ-সৈন্যদের এইভাবে নিপাতিত করে মহিষাসুর এইবার মহাদেবীর বাহন সিংহকে বধ করবার জন্য ছুটে গেল। এতে জগদম্বা দেবী ভয়ানক ক্রুদ্ধা হলেন ॥ ২৪ ॥

সোহপি কোপান্মাহাবীর্যঃ খুরক্ষুণ্ণমহীতলঃ।
শৃঙ্গাভ্যাং পর্বতানুচ্চাংশ্চিক্ষেপ চ ননাদ চ৷ ২৫৷৷

তাতে আবার মহাপরাক্রমশালী মহিষাসুরও অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে পায়ের খুর দিয়ে ভূমি বিদীর্ণ করে নিজের শিং দিয়ে উঁচু উঁচু পর্বতশৃঙ্গ দেবীর দিকে নিক্ষেপ করে গর্জন করতে লাগল। ২৫ ॥

বেগভ্রমণবিক্ষুণ্ণা মহী তস্য ব্যশীর্যত।
লাঙ্গলেনাহতশ্চাব্ধিঃ প্লাবয়ামাস সর্বতঃ। ২৬৷৷

তার সবেগ দৌড় ঝাঁপে পৃথিবী ক্ষুব্ধা হয়ে কাতর হলেন। মহিষের লেজের তাড়নায় সমুদ্র উদ্বেলিত হয়ে সব ভাসিয়ে দিল। ২৬ ৷৷

ধুতশৃঙ্গবিভিন্নাশ্চ খণ্ডং (১) খণ্ডং যযুর্ঘনাঃ।
শ্বাসানিলাস্তাঃ শতশো নিপেতুর্নভসোহচলাঃ ৷৷ ২৭৷৷

তার কম্পিত শিংয়ের আঘাতে বিদীর্ণ হয়ে মেঘেরা সব খণ্ড বিখণ্ড হয়ে গেল। তার নিঃশ্বাসবায়ুর বেগে শত শত পর্বত আকাশে উৎক্ষিপ্ত হয়ে মাটীতে আছড়ে পড়তে লাগল। ২৭৷৷

ইতি ক্রোধসমাম্মাতমাপতন্তং মহাসুরম্।
দৃষ্টা সা চণ্ডিকা কোপং তদ্বধায় তদাকরোৎ৷ ২৮৷৷

মহাক্রুদ্ধ মহাসুরকে নিজের দিকে সবেগে আসতে দেখে দেবী চণ্ডিকা তাকে বধের জন্য ক্রুদ্ধা হলেন। ২৮ ৷৷

সা ক্ষিপ্তা তস্য বৈ পাশং তং ববন্ধ মহাসুরম্।
তত্যাজ মাহিষং রূপং সোহপি বন্ধো মহামৃধে৷৷ ২৯ ৷৷

তিনি পাশাস্ত্র নিক্ষেপ করে মহিষাসুরকে বেঁধে ফেললেন। সেই মহাযুদ্ধে পাশবদ্ধ হওয়াতে সেই মহাসুর মহিষাকৃতি পরিত্যাগ করল। ২৯ ৷৷

ততঃ সিংহোহভবৎ সদ্যো যাবত্তস্যাম্বিকা শিরঃ।
ছিনত্তি তাবৎ পুরুষঃ খড়াপাণিরদৃশ্যত ৷৷ ৩০ ৷৷

তৎক্ষণাৎ সিংহের রূপ ধরে প্রকাশ হল, সেই অবস্থায় যেইমাত্র তার মস্তক কাটতে উদ্যত হয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে সে খড়াধারী পুরুষরূপে প্রকাশ হল।। ৩০ ।

তত এবাশু পুরুষং দেবী চিচ্ছেদ সায়কৈঃ।
তং খাচর্মণা সার্থং ততঃ সোহভূন্মহাগজঃ৷৷ ৩১ ৷৷

দেবী তৎক্ষণাৎ বাণ বর্ষণ করে ঢাল ও খড়গ সমেত সেই পুরুষকে ছেদন করলেন। তৎক্ষণাৎ সে এক বিশাল হাতীর রূপ ধারণ করল।। ৩১ ৷৷

করেণ চ মহাসিংহং তং চকর্ষ জগর্জ চ।
কর্যতন্ত্র করং দেবী খড়োন নিরকৃন্তত।। ৩২॥

সেই বিশাল হাতী নিজের শুঁড় দিয়ে দেবীবাহন সিংহকে আকর্ষণ করে গর্জন করতে লাগল। শুঁড় দিয়ে আকর্ষণের সময় দেবী খড়া দিয়ে তার শুঁড়টা কেটে ফেললেন।। ৩২ ৷৷

ততো মহাসুরো ভূয়ো মাহিষং বপুরাশ্রিতঃ।
তথৈব ক্ষোভয়ামাস ত্রৈলোক্যং সচরাচরম্।। ৩৩ ৷৷

তাতে সেই মহাসুর আবার মহিষের শরীর ধারণ করল। আগের মতই মহিষরূপে চরাচর প্রাণী সমেত ত্রিভুবন বিক্ষুব্ধ করতে লাগল।। ৩৩ ৷৷

ততঃ ক্রুদ্ধা জগন্মাতা চণ্ডিকা পানমুত্তমম্।
পপৌ পুনঃ পুনশ্চৈব জহাসারুণলোচনা৷৷ ৩৪ ॥

অনন্তর জগন্মাতা চণ্ডিকা ক্রুদ্ধা হয়ে পুনঃপুনঃ উত্তম মধু পান করতে লাগলেন এবং আরক্ত নয়নে হাসতে লাগলেন। ৩৪ ।।

ননদ চাসুরঃ সোহপি বলবীর্যমদোদ্ধতঃ।
বিষাণাভ্যাঞ্চ চিক্ষেপ চণ্ডিকাং প্রতি ভূধরান্। ৩৫ ৷৷

ওদিকে সেই মহাসুরও দৈহিক বল ও পরাক্রমে মত্ত হয়ে গর্জন করতে লাগল এবং নিজের শিং দিয়ে চণ্ডী দেবীর ওপর বড় বড় পাহাড় ছুঁড়তে লাগল। ৩৫ ।।

সা চ তান্ প্রহিতাংস্তেন চূর্ণয়ন্তী শরোৎকরৈঃ।
উবাচ মদোদ্ধৃতমুখরাগাকুলাক্ষরম্।। ৩৬ ৷৷

দৈবী তাঁর বাণ দিয়ে সেই সব নিক্ষিপ্ত পর্বতসমূহকে চূর্ণ করে মধুর মাদকতায় রক্তিম মুখে বিজড়িত স্বরে বললেন-॥ ৩৬।

দেব্যুবাচ।। ৩৭৷৷

দেবী বললেন—৷৷ ৩৭ ।।

গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম্।
ময়া ত্বয়ি হতেহত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দবতাঃ৷৷ ৩৮ ৷৷

রে মূঢ়! আমি যতক্ষণ মধু পান করছি,ততক্ষণ পর্যন্ত তুই গর্জন কর্। এখানে আমার হাতে তোর মৃত্যু হলেই শীগগিরই দেবতারা আনন্দ কোলাহল করবে ।। ৩৮ ॥

ঋষিরুবাচ।। ৩৯।।

মেধা ঋষি বললেন-।। ৩৯ ।।

এবমুত্ত্বা সমুৎপত্য সারূঢ়া তং মহাসুরম্।
পাদেনাক্রম্য কণ্ঠে চ শূলেনৈনমতাড়য়ৎ।। ৪০ ॥

এই কথা বলে দেবী লম্ফ দিলেন এবং মহিষাসুরের উপরে চড়ে বসলেন। তারপর পা দিয়ে তাকে চেপে ধরে শূল দিয়ে কণ্ঠে আঘাত করলেন ।। ৪০ ।।

ততঃ সোহপি পদাক্রান্তস্তয়া নিজমুখাত্ততঃ।
অর্ধনিষ্ক্রান্ত এবাসীদ্‌ দেব্যা বীর্ষেণ সংবৃতঃ। ৪১ ৷৷

দেবীর পায়ের তলায় পিষ্ট অবস্থায়ও মহিষাসুর নিজের মুখ থেকে (অন্য আর এক রূপে বের হতে চেষ্টা করল) অর্দ্ধেক শরীরেই সে বের হতে পারল, কারণ দেবী তাঁর নিজের তেজে তার বাকীটা আটকে দিলেন। ৪১ ।

অর্ধনিষ্ক্রান্ত এবাসৌ যুধ্যমানো মহাসুরঃ।
তয়া মহাসিনা দেব্যা শিরস্থিত্বা নিপাতিতঃ ৷৷ ৪২ ৷৷

অর্দ্ধেকমাত্র শরীর বাইরে আসা সত্ত্বেও ওই মহাসুর দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে লাগল। তখন এক বিশাল বড়ঙ্গাঘাতে দেবী তার মাথা কেটে মাটীতে লুটিয়ে দিলেন। ৪২ ।।

ততো হাহাকৃতং সর্বং দৈত্যসৈন্যং ননাশ তৎ।
প্রহর্ষঞ্চ পরং জম্মুঃ সকলা দেবতাগণাঃ ৷৷ ৪৩ ৷৷

তখন দৈত্যের সৈন্যসকল হাহাকার করতে করতে পালিয়ে গেল এবং দেবতারা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন।। ৪৩ ।।

তুষ্টুবুস্তাং সুরা দেবীং সহ দিব্যৈর্মহর্ষিভিঃ।
জগুর্গন্ধর্বপতয়ো নতুশ্চান্সরোগণাঃ ।। ওঁ ৷৷ ৪৪ ৷৷

দেবতারা স্বর্গীয় মহর্ষিদের সাথে একত্র হয়ে দুর্গাদেবীকে স্তুতি করলেন। গন্ধর্বপতিগণ গান করলেন আর অপ্সরাগণ নৃত্য করতে লাগলেন ।। ৪৪ ||

ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যে মহিষাসুরবধো নাম তৃতীয়োহধ্যায়ঃ।। ৩ ৷৷

এই অধ্যায়ে উবাচ-৩, শ্লোক-৪১, মোট-৪৪ আদি হতে সর্বমোট ২১৭

শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিক মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যপ্রসঙ্গে 'মহিষাসুর-বধ' নামক তৃতীয় অধ্যায় সম্পূর্ণ হল। ৩ ॥