অথ দশমোহধ্যায়ঃ
দশম অধ্যায়
শুম্ভ-বধ
ধ্যানম্
ওঁ উত্তপ্তহেমরুচিরাং রবিচন্দ্রবহ্নি- নেত্রাং ধনুশরযুতাঙ্কুশপাশশূলম্।
রম্যৈর্ভুজৈশ্চ দধতীং শিবশক্তিরূপাং কামেশ্বরীং হৃদি ভজামি ধৃতেন্দুলেখাম্ ।।
মস্তকে অর্দ্ধচন্দ্রশোভিতা শিবশক্তিস্বরূপা ভগবতী কামেশ্বরীকে আমি হৃদয়ে ধ্যান করি। তিনি তপ্তকাঞ্চনবর্ণসম সুন্দরী। সূর্য, চন্দ্র আর অগ্নি-তাঁর তিনটী নয়ন, তাঁর কমনীয় চার হাতে তিনি ধনুক-বাণ, অঙ্কুশ, পাশ ও শূল ধারণ করে রয়েছেন।
'ওঁ' ঋষিরুবাচ ৷৷ ১ ৷৷
মেধা ঋষি বললেন–। বললেন-৷৷ ১।
নিশুম্ভং নিহতং দৃষ্টা ভ্রাতরং প্রাণসম্মিতম্।
হন্যমানং বলঞ্চৈব শুম্ভঃ ক্রুদ্ধোব্রবীদ্ বচঃ৷ ২৷৷
হে রাজন! প্রাণপ্রতিম ভাই নিশুম্ভকে নিহত এবং সৈন্যবলও ধ্বংসপ্রায় দেখে শুম্ভ ক্রুদ্ধস্বরে বলল । ২।
বলাবলেপা দুষ্টে ত্বং মা দুর্গে গর্বমাবহ।
অন্যাসাং বলমাশ্রিত্য যুখ্যসে যাতিমানিনী ৷৷ ৩ ৷৷
রে দুষ্টা দুর্গে! বলদর্পে উদ্ধতা হয়ে গর্ব করো না। তুমি অতিগর্বিতা হয়েছ, কিন্তু তুমি অন্যান্য নারীদের শক্তি আশ্রয় করেই যুদ্ধ করছ।। ৩ ।।
দেব্যুবাচ। ৪ ৷৷
দেবী বললেন-।। ৪।
একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা।
পশ্যৈতা দুষ্ট ময্যেব বিশন্ত্যো মদ্বিভূতয়ঃ।। ৫ ৷
রে দুষ্ট! আমি একলাই আছি। এই জগতে আমি ছাড়া দ্বিতীয়া আর কে আছে? দেখ, এই সবই আমার বিভূতি, তাই এরা আমার মধ্যেই বিলীন হচ্ছে৷ ৫ ৷৷
ততঃ সমস্তাস্তা দেব্যো ব্রহ্মাণীপ্রমুখা লয়ম্।
তস্যা দেব্যাস্তনৌ জম্মুরেকৈবাসীৎ তদাম্বিকা ৷৷ ৬ ৷৷
এরপর সেই ব্রহ্মাণী আদি সমস্ত দেবীগণ অম্বিকা দেবীর শরীরে মিলিয়ে গেলেন। একমাত্র অম্বিকা দেবীই রইলেন ।। ৬ ৷৷
দেব্যুবাচ। ৭৷৷
দেবী বললেন-॥ ৭ ৷
অহং বিভূত্যা বহুভিরিহ রূপৈর্যদাস্থিতা।
তৎ সংহৃতং ময়ৈকৈব তিষ্ঠাম্যাজৌ স্থিরো ভব৷ ৮৷৷
এই যুদ্ধে আমার ঐশ্বর্যশক্তির প্রভাবে অনেক রূপে আমি এখানে অবস্থান করছিলাম। সেই সমস্ত রূপ এখন আমি নিজের মধ্যে লয় করে নিয়েছি। এখন একলাই যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছি। তুমি যুদ্ধে প্রস্তুত হও॥৮॥
ঋষিরুবাচ।। ৯।।
ঋষি বললেন-॥ ৯ ৷
ততং প্রববৃতে যুদ্ধং দেব্যাঃ শুভস্য চোভয়োঃ।
পশ্যতাং সর্বদেবানামসুরাণাঞ্চ দারুণম্।। ১০৷৷
তারপর দেবী আর শুম্ভ দুজনে দেবতা ও দানবদের সমক্ষে দারুণ যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন।। ১০।।
শরবর্ষৈঃ শিতৈঃ শস্ত্রৈস্তথাস্ত্রৈশ্চৈব দারুণৈঃ।
তয়োযুদ্ধমভূদ্ ভূয়ঃ সর্বলোকভয়ঙ্করম্।। ১১ ৷৷
বাণবৃষ্টি, তীক্ষ্ণ শস্ত্র এবং ভয়ঙ্কর অস্ত্রের সংঘাতে দুজনের যুদ্ধ ত্রিলোকের ভীতিপ্রদানকারী হল।। ১১ ৷৷
দিব্যান্যস্ত্রাণি শতশো মুমুচে যান্যথাম্বিকা।
বভঞ্জ তানি দৈত্যেন্দ্রস্তৎপ্রতীঘাতকর্তৃভিঃ ৷৷ ১২ ৷৷
সেই যুদ্ধে অম্বিকা দেবী যে শত শত দিব্য অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিলেন, দৈত্যরাজ শুম্ভ প্রতিষেধক অস্ত্র শস্ত্র দ্বারা সবই প্রতিরোধ করল। ১২ ।
মুক্তানি তেন চাস্ত্রাণি দিব্যানি পরমেশ্বরী।
বভঞ্জ লীলয়ৈবোগ্রন্থঙ্কারোচ্চারণাদিভিঃ৷৷ ১৩৷৷
এইভাবেই শুম্ভও যে সব দিব্য অস্ত্র ব্যবহার করল, সেই সবই শুধুমাত্র ভয়ানক হুঙ্কার দ্বারাই দেবী ভেঙ্গে দিলেন ।। ১৩ ।।
ততঃ শরশতৈদেবীমাচ্ছাদয়ত সোহসুরঃ।
সাপি তৎ কুপিতা দেবী ধনুশ্চিচ্ছেদ চেষুভিঃ৷৷ ১৪ ৷৷
তখন সেই অসুর শত শত শর দিয়ে দেবীকে আচ্ছাদিত করে ফেলল; তা দেখে দেবী ক্রোধভরে বাণ দিয়ে অসুরের ধনুক কেটে দিলেন ৷৷ ১৪ ।। ৷
ছিন্নে ধনুষি দৈত্যেন্দ্রস্তথা শক্তিমথাদদে।
চিচ্ছেদ দেবী চক্রেণ তামপ্যস্য করে স্থিতাম্৷৷ ১৫৷৷
ধনুক কাটা যাওয়াতে দৈত্যরাজ শক্তি অস্ত্র গ্রহণ করল, কিন্তু সেই হাতের অস্ত্র দেবী চক্র দিয়ে ভেঙ্গে দিলেন ৷৷ ১৫ ৷৷
ততঃ খামুপাদায় শতচন্দ্রঞ্চ ভানুমৎ।
অভ্যধাবৎ তদা(৩) দেবীং দৈত্যানামধিপেশ্বরঃ৷৷ ১৬ ৷৷
তারপর দৈত্যাধিপতি শুম্ভ শতচন্দ্রোজ্জ্বল ঢাল এবং খড়া নিয়ে দেবীর দিকে ধেয়ে গেল। ১৬।
তস্যাপতত এবাশু খাং চিচ্ছেদ চণ্ডিকা।
ধনুর্মুক্তৈঃ শিতৈর্বাণৈশ্চর্ম চার্ককরামলম্ ।। ১৭৷৷
সে আসতেই চণ্ডিকা তাঁর ধনুকের দ্বারা নিক্ষিপ্ত বাণের দ্বারা সূর্যকিরণসম উজ্জ্বল ঢাল এবং তলোয়ারকে তৎক্ষণাৎ কেটে দিলেন।। ১৭ ।।
হতাশ্বঃ স তদা দৈত্যচ্ছিন্নধন্বা বিসারথিঃ।
জগ্রাহ মুরং ঘোরমম্বিকানিধনোদ্যতঃ৷৷ ১৮ ৷৷
এরপর অসুর-রাজের ঘোড়া এবং সারথিও নিহত হল, ধনুক তো আগেই কেটে গিয়েছিল, তাই এখন অগ্নিকাকে বধ করার জন্য সে ভয়ংকর মুগুর গ্রহণ করল। ১৮ ।।
চিচ্ছেদাপততন্তস্য মুদ্গরং নিশিতৈঃ শরৈঃ।
তথাপি সোহভ্যধাবত্তাং মুষ্টিমুদ্যম্য বেগবান্৷৷ ১৯ ৷৷
তাকে ওইভাবে আসতে দেখে দেবী তীক্ষ্ণ বাণ দিয়ে সেই মুগুর কেটে ফেললেন। তা সত্ত্বেও সে মুষ্টি উদ্যত করে তীব্রবেগে দেবীর দিকে ধাবিত হল।। ১৯ ।।
স মুষ্টিং পাতয়ামাস হৃদয়ে দৈত্যপুঙ্গবঃ।
দেব্যাস্তঞ্চাপি সা দেবী তলেনোরস্যতাড়য়ৎ৷৷ ২০ ৷৷
এইবার সেই দৈত্যরাজ দেবীর বুকে মুষ্টির আঘাত করল (ঘুসি মারল), আর দেবীও শুন্তের বুকে করতলের আঘাত (চপেটাঘাত) করলেন। ২০ ।।
তলপ্রহারাভিহতো নিপপাত মহীতলে।
স দৈত্যরাজঃ সহসা পুনরেব তথোত্থিতঃ৷৷ ২১ ৷৷
থাপ্পড় খেয়ে অসুরপতি শুম্ভ মাটীতে পড়ে গেল, কিন্তু আবার তৎক্ষণাৎই আগের মতো উঠে দাঁড়াল ৷৷ ২১ ৷
উৎপত্য চ প্রগৃহ্যোচ্চৈদেবীং গগনমাস্থিতঃ।
তত্রাপি সা নিরাধারা যুযুধে তেন চণ্ডিকা৷৷ ২২৷৷
তখন দেবীকে ধরে এক বিশাল লাফ দিয়ে শুম্ভ দেবীকে নিয়ে আকাশে উঠল। সেখানে কোনও অবলম্বন ছাড়াই দেবী শুন্তের সাথে যুদ্ধ করতে লাগলেন। ২২ ৷৷ ৷৷
নিযুদ্ধং খে তদা দৈত্যশ্চণ্ডিকা চ পরস্পরম্।
চক্রতুঃ প্রথমং সিদ্ধমুনিবিস্ময়কারকম্ ।। ২৩৷৷
এই অবস্থায় তখন দেবী ও অসুরাধিপতি আকাশমার্গে থেকে পরস্পর যুদ্ধ করতে লাগলেন। সেই অভূতপূর্ব যুদ্ধ সিদ্ধ ও মুনিগণের বিস্ময় উৎপাদন করল। ২৩
ততো নিযুদ্ধং সুচিরং কৃত্বা তেনাম্বিকা সহ।
উৎপাত্য ভ্রাময়ামাস চিক্ষেপ ধরণীতলে৷৷ ২৪৷৷
অতঃপর বহুক্ষণ শুন্তের সাথে বাহুযুদ্ধ করে দেবী তাকে ওপরে তুলে ঘোরালেন এবং মাটীতে ফেলে দিলেন। ২৪ ।। ৷
স ক্ষিপ্তো ধরণীং প্রাপ্য মুষ্টিমুদ্যম্য বেগিতঃ।
অভ্যধাবত দুষ্টাত্মা চণ্ডিকানিধনেচ্ছয়া৷৷ ২৫ ৷৷
উপর থেকে ভূতলে নিক্ষিপ্ত হয়ে সেই দুষ্টাত্মা অসুর চণ্ডিকাকে বধ করবার জন্য আবার মুষ্টি উদ্যত করে তাঁর দিকে বেগে ধেয়ে গেল। ২৫ ॥
তমায়ান্তং ততো দেবী সর্বদৈত্যজনেশ্বরম্।
জগত্যাং পাতয়ামাস ভিত্ত্বা শূলেন বক্ষসি৷৷ ২৬৷৷
তখন দৈত্যেশ্বর শুম্ভকে নিজের দিকে আসতে দেখে দেবী শূল দিয়ে তার বুক চিরে ফেলে তাকে ভূতলে পাতিত করলেন।। ২৬ ৷৷
স গতাসুঃ পপাতো্যাং দেবীশূলাগ্রবিক্ষতঃ।
চালয় সকলাং পৃথ্বীং সান্ধিদ্বীপাং সপর্বতাম্। ২৭ ॥
দেবীর শূলাগ্রের আঘাতে তার প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেল এবং সাগর, দ্বীপ ও পর্বত-সমেত সমস্ত পৃথিবী কাঁপিয়ে সে মাটীতে লুটিয়ে পড়ল। ২৭ ।।
ততঃ প্রসন্নমখিলং হতে তস্মিন্ দুরাত্মনি।
জগৎ স্বাস্থ্যমতীবাপ নির্মলঞ্চাভবন্নভঃ ৷৷ ২৮ ৷৷
তখন সেই দুরাত্মা শুম্ভ নিহত হলে সমগ্র জগৎ অতিশয় প্রসন্ন এবং স্বস্থ হয়ে গেল আর আকাশ নির্মল হয়ে গেল। ২৮ ।।
উৎপাতমেঘাঃ সোল্কা যে প্রাগাসংস্তে শমং যযুঃ।
সরিতো মার্গবাহিন্যস্তথাসংস্তত্র পাতিতে। ২৯৷৷
আগে যে সব উৎপাতসূচক মেঘ আর উল্কাপাত হচ্ছিল, সে সব শান্ত হয়ে গেল এবং ঐ দৈত্যের নিধনে নদীগুলিও নিজ নিজ পথে ঠিকমতো প্রবাহিত হতে লাগল। ২৯ ৷
ততো দেবগণাঃ সর্বে হর্ষনির্ভরমানসাঃ।
বভূবুনিহতে তস্মিন্ গন্ধর্বা ললিতং জগুঃ ৷৷ ৩০ ৷৷
তখন শুন্তের নিধনে দেবতাদের হৃদয় আনন্দে পূর্ণ হল এবং গন্ধর্বগণ মধুর গীত গাইতে লাগল। ৩০ ।।
অবাদয়ং স্তথৈবান্যে নন্তুশ্চান্সরোগণাঃ।
ববুঃ পুণ্যাস্তথা বাতাঃ সুপ্রভোহভূদ্দিবাকরঃ ৷৷ ৩১ ৷৷
অন্যান্য গন্ধর্বগণ বাজনা বাজাতে লাগল এবং অপ্সরাগণ নৃত্য করতে লাগল। পবিত্র বায়ু বইতে লাগল, সূর্যের কিরণ উজ্জ্বল হল।। ৩১ ৷৷
জজ্বলুশ্চান্নয়ঃ শান্তাঃ শান্তাদিঞ্জনিতস্বনাঃ ৷৷ ওঁ ৷৷ ৩২ ৷৷
যজ্ঞশালার নিভে যাওয়া অগ্নি নিজে থেকেই জ্বলে উঠল, সবদিকে অশুভ শব্দাদি শান্ত হয়ে গেল।। ৩২ ৷৷
ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যে শুম্ভবধো নাম দশমোহধ্যায়ঃ ।। ১০ ৷৷
এই অধ্যায়ে উবাচ - ৪, অর্দ্ধশ্লোক ১, শ্লোক-২৭, মোট-৩২, আদি হতে সর্বমোট-৫৭৫
শ্রীমার্কণ্ডেয় পুরাণে সাবর্ণিকমন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যপ্রসঙ্গে 'শুম্ভ-বধ' নামক দশম অধ্যায় সম্পূর্ণ হল ৷ ১০ ৷৷