Durga Saptashati Image

অথ চতুর্থোহধ্যায়ঃ

চতুর্থ অধ্যায়

ইন্দ্রাদিদেবতাগণ দ্বারা দেবীর স্তুতি

ধ্যানম্

ওঁ কালাভ্রাভাং কটাক্ষেররিকুলভয়দাং মৌলিবদ্ধেন্দুরেখাং শঙ্খং চক্রং কৃপাণং ত্রিশিখমপি করৈরুদ্বহন্তীং ত্রিনেত্রাম্। সিংহস্কন্ধাধিরূঢ়াং ত্রিভুবনমখিলং তেজসা পূরয়ন্তীং ধ্যায়েদ্দুর্গাং জয়াখ্যাং ত্রিদশপরিবৃতাং সেবিতাং সিদ্ধিকামৈঃ।।

সিদ্ধিকামী পুরুষগণ সেবিতা, দেবগণ পরিবৃতা 'জয়া' নামধারিণী দুর্গাদেবীর ধ্যান করবে। তাঁর শ্রীঅঙ্গের বর্ণ কালো মেঘের মতো শ্যাম। তিনি কটাক্ষে শত্রুকুলত্রাসিনী। তিনি মস্তকে চন্দ্রকলাশোভিতা। চার হাতে শঙ্খ, চক্র, খড়া ও ত্রিশূল ধারণ করেন। তিনি ত্রিনয়না, সিংহোপরি অধিষ্ঠিতা এবং স্বীয় তেজে সমগ্র ত্রিভুবন পূর্ণকারিণী।

ওঁ ঋষিরুবাচ ।। ১ ৷৷

মেধা ঋষি বললেন-৷৷ ১ ৷৷

শত্রুাদয়ঃ সুরগণা নিহতেহতিবীর্যে তস্মিন্ দুরাত্মনি সুরারিবলে চ দেব্যা।
তাং তুষ্টুবুঃ প্রণতিনম্রশিরোধরাংসা বাভিঃ প্রহর্ষপুলকোদগমচারুদেহাঃ ৷৷ ২ ৷৷

অতিবলশালী দুরাত্মা মহিষাসুর এবং তার দৈত্যসেনারা দেবী কর্তৃক বিনষ্ট হলে ইন্দ্রাদি দেবতারা সব প্রণামের জন্য গ্রীবা ও স্বন্ধ আনত করে উত্তম বাক্যে দেবীর স্তুতি করতে লাগলেন। সেইসময় তাঁদের সুন্দর অঙ্গ আনন্দের আতিশয্যে রোমাঞ্চিত হচ্ছিল৷ ২৷৷

দেব্যা যয়া ততমিদং জগদাত্মশ্যা নিম্নেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্তা।
তামম্বিকামখিলদেবমহর্ষি- পূজ্যাং ভক্ত্যা নতাঃ স্ম বিদধাতু শুভানি সা নঃ৷৷ ৩ ৷৷

দেবতারা বললেন- সমস্ত দেবতাদের শক্তিপুঞ্জের ঘনীভূত মূর্তি যে দেবী স্বীয় শক্তিতে সমগ্র বিশ্ব পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছেন, সমস্ত দেবতা ও ঋষিগণ পূজিতা সেই জগদম্বাকে আমরা ভক্তিপূর্বক প্রণাম করি। তিনি আমাদের মঙ্গল করুন।। ৩ ।।

যস্যাঃ প্রভাবমতুলং ভগবাননন্তো ব্রহ্মা হরশ্চ ন হি বক্কুমলং বলঞ্চ।
সা চণ্ডিকাখিলজগৎপরিপালনায় নাশায় চাশুভভয়স্য মতিং করোতু। ৪৷৷

ভগবান অনন্ত, ব্রহ্মা ও শিব যাঁর অনুপম প্রভার ও শক্তির বর্ণনা করতে সক্ষম নন, সেই ভগবতী চণ্ডিকা সমগ্র জগৎ পালন ও অশুভভীতি নাশ করার ইচ্ছা করুন। ৪ ।

যা শ্রীঃ স্বয়ং সুকৃতিনাং ভবনেম্বলক্ষ্মীঃ পাপাত্মনাং কৃতধিয়াং হৃদয়েষু বুদ্ধিঃ।
শ্রদ্ধা সতাং কুলজনপ্রভবস্য লজ্জা তাং ত্বাং নতাঃ স্ম পরিপালয় দেবি বিশ্বম্ ।। ৫৷৷

যিনি স্বয়ংই পুণ্যবানদের গৃহে লক্ষ্মীরূপে, পাপীদের গৃহে দারিদ্র্যরূপে, শুদ্ধ অন্তঃকরণ ব্যক্তিদের হৃদয়ে বুদ্ধিরূপে, সৎব্যক্তিদের মধ্যে শ্রদ্ধারূপে এবং সদ্বংশজাত মানুষদের লজ্জারূপে নিবাস করেন, সেই ভগবতী দুর্গাকে আমরা প্রণাম করি। দেবি! আপনি এই সমগ্র বিশ্ব প্রতিপালন করুন। ৫ ॥

কিং বর্ণয়াম তব রূপমচিন্ত্যমেতৎ কিঞ্চাতিবীর্যমসুরক্ষয়কারি ভূরি।
কিঞ্চাহবেষু চরিতানি তবাস্তুতানি সর্বেষু দেব্যসুরদেবগণাদিকেষু।। ৬ ৷৷

হে দেবি, আপনার এই অচিন্ত্য রূপ, অসুরবিনাশী অসীম মহাবীর্য এবং সমস্ত সুরাসুরের সমক্ষে সংগ্রামে প্রকাশিত আপনার এই অত্যদ্ভুত আচরণসমূহ আমরা কীভাবে বর্ণনা করব? ।। ৬ ।

হেতুঃ সমস্তজগতাং ত্রিগুণাপি দোষৈ- র্ন জ্ঞায়সে হরিহরাদিভিরপ্যপারা।
সর্বাশ্রয়াখিলমিদং জগদংশভূত- মব্যাকৃতা হি পরমা প্রকৃতিত্ত্বমাদ্যা। ৭ ৷৷

আপনি সমগ্র জগতের উৎপত্তির কারণ। আপনি সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণাত্মিকা, তা সত্ত্বেও বিকারাদি দোষের সাথে আপনার কোনও সংস্পর্শ নেই। ভগবান বিষ্ণু এবং মহাদেবাদি দেবতারাও আপনার অন্ত জানেন না। আপনিই সকলের আশ্রয়, এই সমগ্র জগৎ আপনারই অংশভূত; কারণ আপনি সকলের আদিভূতা অব্যাকৃতা পরা প্রকৃতি ।। ৭ ।।

যস্যাঃ সমস্তসুরতা সমুদীরণেন তৃপ্তিং প্রয়াতি সকলেষু মখেযু দেবি।
স্বাহাসি বৈ পিতৃগণস্য চ তৃপ্তিহেতু- রুচ্চার্যসে ত্বমত এব জনৈঃ স্বধা চ। ৮ ৷৷

হে দেবি! যাঁর উচ্চারণে সব রকম যজ্ঞে সমস্ত দেবতারা তৃপ্তি লাভ করেন, সেই স্বাহামন্ত্রও আপনি। এছাড়া পিতৃগণের তুষ্টির কারণও আপনি, সেইজন্যই সকলে আপনাকে স্বধাও বলে থাকে। ৮ ৷৷

যা মুক্তিহেতুরবিচিন্ত্যমহাব্রতা ত্ব মভ্যস্যসে সুনিয়তেন্দ্রিয়তত্ত্বসারৈঃ।
মোক্ষার্থিভিমুনিভিরস্তসমস্তদোষৈ- বিদ্যাসি সা ভগবতী পরমা হি দেবি। ৯৷৷

হে দেবি! মোক্ষপ্রাপ্তির যে সাধন, আপনি সেই অচিন্ত্য মহাব্রতস্বরূপা, সমস্ত দোষরহিত, জিতেন্দ্রিয়, তত্ত্বনিষ্ঠ, মোক্ষাভিলাষী মুনিগণ যা অভ্যাস (সাধন) করেন, সেই ভগবতী পরাবিদ্যা (ব্রহ্মবিদ্যা) আপনিই।। ৯ ৷৷

শব্দাত্মিকা সুবিমল্যজুষাং নিধান- মুদগীথরম্যপদপাঠবতাঞ্চ সাম্রাম্।
দেবী ত্রয়ী ভগবতী ভবভাবনায় বার্তা চ সর্বজগতাং পরমার্তিহন্ত্রী৷৷ ১০৷৷

শব্দব্রহ্মরূপা, বিশুদ্ধ ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ এবং উদাত্তাদি স্বর ও মধুর পদোচ্চারণবিশিষ্ট সামবেদেরও আশ্রয়স্বরূপা আপনিই। আপনি দেবী, ত্রয়ী (বেদত্রয়রূপা) ও ভগবতী (ষড়ৈশ্বর্যময়ী)। এই বিশ্বের উৎপত্তি ও প্রতিপালনের জন্য আপনিই বার্তা (কৃষি, গোপালন ও বাণিজ্যাদি কৃষিস্বরূপা) রূপে প্রকাশিতা। আপনি সমগ্র বিশ্বের দুঃখহারিণী। ১০।

মেধাসি দেবি বিদিতাখিলশাস্ত্রসারা দুর্গাসি দুর্গভবসাগরনৌরসঙ্গা।
শ্রীঃ কৈটভারিহৃদয়ৈককৃতাধিবাসা গৌরী ত্বমেব শশিমৌলিকৃতপ্রতিষ্ঠা৷৷ ১১ ৷৷

দেবি! যাঁর কৃপায় সকল শাস্ত্রের সার জানতে পারা যায়, সেই মেধাশক্তি আপনিই। আপনি দুর্গম ভবসাগর পার হবার তরণী, দুর্গাদেবীও আপনিই। কোন কিছুতেই আপনার আসক্তি নেই। কৈটভারি ভগবান বিষ্ণুর বক্ষনিবাসিনী ভগবতী লক্ষ্মী এবং ভগবান চন্দ্রশেখরের দ্বারা সম্মানিতা গৌরীদেবীও আপনিই। ১১ ।।

ঈষৎসহাসমমলং পরিপূর্ণচন্দ্র- বিম্বানুকারি কনকোত্তমকান্তিকান্তম্।
অত্যভূতং প্রহৃতমাত্তরুষা তথাপি বজ্রং বিলোক্য সহসা মহিষাসুরেণ। ১২ ৷৷

আপনার মৃদু হাস্যময়, নির্মল, পূর্ণচন্দ্রবিশ্ব অনুকারিণী এবং উত্তম স্বর্ণপ্রভাতুল্য মনোহরকান্তিতে কমনীয় মুখমণ্ডল দেখেও মহিষাসুর ক্রুদ্ধ হয়ে সহসা সেই বদনমণ্ডলের ওপর প্রহার করেছিল, এটা বড়ই আশ্চর্যের ব্যাপার। ১২ ।

দৃষ্টা তু দেবি কুপিতং ভ্রুকুটীকরাল- মুদ্যচ্ছশাঙ্কসদৃশচ্ছবি যন্ন সদ্যঃ।
প্রাণাম্মুমোচ মহিষস্তদতীব চিত্রং কৈর্জীব্যতে হি কুপিতান্তকদর্শনেন।। ১৩ ৷৷

আপনার সেই মুখ যখন ক্রোধে আরক্ত হয়ে উদীয়মান চন্দ্রের মত রক্তিম দ্যুতবিশিষ্ট ভ্রূকুটীভীষণ হয়েছিল, তখন সেই মুখ দেখেও যে মহিষাসুর তৎক্ষণাৎ প্রাণত্যাগ করেনি, এটা ওই আশ্চর্যের চেয়েও বেশী আশ্চর্য; কারণ ক্রুদ্ধ যমরাজকে দেখে কে জীবিত থাকতে পারে? ।। ১৩ ৷৷

দেবি প্রসীদ পরমা ভবতী ভবায় সদ্যো বিনাশয়সি কোপবতী কুলানি।
বিজ্ঞাতমেতদধুনৈব যদস্তমেত- ন্নীতং বলং সুবিপুলং মহিষাসুরস্য। ১৪৷৷

দেবি! আপনি প্রসন্না হোন। পরমাত্মস্বরূপা আপনি প্রসন্না হলে জগতের শ্রীবৃদ্ধি হয় এবং ক্রোধান্বিতা হলে তৎক্ষণাৎই সকল কুল আপনি নাশ করেন, এতো আমরা সদ্যই বুঝতে পেরেছি; কারণ মহিষাসুরের এই বিশাল অসুরকুল মুহূর্তের মধ্যে আপনার ক্রোধে বিনষ্ট হয়ে গেল।। ১৪ ৷৷

তে সম্মতা জনপদেষু ধনানি তেষাং তেষাং যশাংসি ন চ সীদতি ধর্মবর্গঃ।
ধন্যাস্ত এব নিভৃতাত্মজভৃত্যদারা যেষাং সদাভ্যুদয়দা ভবতী প্রসন্না৷৷ ১৫ ৷৷

সদা অভীষ্টপ্রদায়িনী আপনি যাদের ওপর প্রসন্না হন, তারা সর্বত্র সম্মানিত, তাদের ধন, যশ বৃদ্ধি পায়, তাদের ধর্ম-কর্ম কখনও হ্রাস পায় না এবং তারা আত্মীয় স্বজন, স্ত্রী, পুত্র, ভৃত্যাদি সহ নিরাপদে থাকে এবং তারাই ধন্য বলে গণ্য হয়।। ১৫ ৷৷

ধর্ম্যাণি দেবি সকলানি সদৈব কর্মাণ্য- ত্যাদৃতঃ প্রতিদিনং সুকৃতী করোতি।
স্বর্গং প্রয়াতি চ ততো ভবতীপ্রসাদা- ল্লোকত্রয়েহপি ফলদা ননু দেবি তেন৷৷ ১৬ ৷৷

দেবি! আপনারই অনুগ্রহে পুণ্যবান ব্যক্তি প্রতিদিন শ্রদ্ধাসহিত সব রকম ধর্মানুকূল কর্ম সম্পাদন করে এবং তার ফলে স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়; অতএব আপনিই ত্রিলোকে মনোবাঞ্ছা পূরণকারী- ফলদায়িনী। ১৬ ৷৷

দুর্গে স্মৃতা হরসি ভীতিমশেষজন্তোঃ স্বস্থৈঃ স্মৃতা মতিমতীব শুভাং দদাসি।
দারিদ্র্যদুঃখভয়হারিণি কা ত্বদন্যা সর্বোপকারকরণায় সদার্দ্রচিত্তা৷৷ ১৭৷

মা দুর্গে! সঙ্কটকালে আপনাকে স্মরণ করলে আপনি সকলের ভয় দূর করেন এবং বিবেকী পুরুষ দ্বারা চিন্তন করলে আপনি তাদের শুভবুদ্ধি প্রদান করেন। দুঃখ, দারিদ্র্য ও ভয়হারিণী হে দেবি! আপনি ছাড়া অন্য আর কে আছে যে সকলের মঙ্গলের জন্য সদাই দয়ার্দ্র থাকে? ।। ১৭ ৷৷

এভিইতৈর্জগদুপৈতি সুখং তথৈতে কুর্বস্তু নাম নরকায় চিরায় পাপম্।
সংগ্রামমৃত্যুমধিগম্য দিবং প্রয়ান্ত মত্বেতি নূনমহিতান্ বিনিহংসি দেবি। ১৮৷৷

েবি! এই অসুরদের বধ করলে জগৎ শান্তিলাভ করবে এবং এই অসুরেরা চিরকালের জন্য নরকভোেগজনক পাপ কর্ম করতে থাকলেও এখন এই সম্মুখ সমরে মৃত্যুলাভ করে এদের স্বর্গপ্রাপ্তি হবে- এই মনে করে নিশ্চয়ই আপনি শত্রুদের বধ করেছেন ৷৷ ১৮ ॥

দৃষ্ট্রেব কিং ন ভবতী প্রকরোতি ভস্ম সর্বাসুরানরিষু যৎ প্রহিণোষি শস্ত্রম্।
লোকান্ প্রয়ান্ত রিপবোহপি হি শস্ত্রপূতাঃ ইত্থং মতির্ভবতি তেষপি তেহতিসাধ্বী।। ১৯ ৷৷

আপনি অসুরদের ওপর শস্ত্রপাত কেন করেন, দৃষ্টিপাতমাত্রই আপনি সমগ্র অসুরদের সংহার কেন করেন না? এর এক গূঢ় কারণ আছে। এই অসুররাও আপনার নিক্ষিপ্ত শস্ত্রপ্রহারে পবিত্র হয়ে যেন উত্তম লোক পায়-তাদের প্রতি আপনার এ এক বিশিষ্ট রকম উদার অনুগ্রহ ৷৷ ১৯ ৷৷

খড়াপ্রভানিকরবিক্ষুরণৈস্তথোগ্রৈঃ শূলাগ্রকান্তিনিবহেন দৃশোহসুরাণাম্।
যন্নাগতা বিলয়মংশুমদিন্দুখণ্ড যোগ্যাননং তব বিলোকয়তাং তদেতৎ। ২০৷

হে দেবি! খড়গের তেজরাশির ভয়ঙ্কর দীপ্তিতে এবং আপনার ত্রিশূলের অগ্রভাগের থেকে নির্গত ঘনীভূত জ্যোতিঃপুঞ্জের তেজে অসুরদের চোখ যে নষ্ট হয়ে যায়নি তার কারণ, এই যে তারা সেইসময় আপনার মনোহর জ্যোতির্ময় মুখচন্দ্রিমা দর্শন করছিল ॥ ২০॥

দুর্বৃত্তবৃত্তশমনং তব দেবি শীলং রূপং তথৈতদবিচিন্ত্যমতুল্যমন্যৈঃ।
বীর্যঞ্চ হন্থ হৃতদেবপরাক্রমাণাং বৈরিষ্কপি প্রকটিতৈব দয়া ত্বয়েখম্। ২১৷৷

দেবি! আপনার শীল অর্থাৎ স্বভাবই হচ্ছে দুরাচারীদের দুষ্টপ্রবৃত্তি দমন করা। আপনার রূপ অচিন্তনীয় ও অতুলনীয়; আপনার শক্তি ও পরাক্রম দৈত্যদেরও বিনাশক, যারা দেবতাদের শৌর্য-বীর্যকেও নষ্ট করে দিয়েছিল। শত্রুদের প্রতি একমাত্র আপনিই এইরকম দয়া প্রদর্শন করেন । ২১ ॥

কেনোপমা ভবতু তেহস্য পরাক্রমস্য রূপঞ্চ শত্রুভয়কার্যতিহারি কুত্র।
চিত্তে কৃপা সমরনিষ্ঠুরতা চ দৃষ্টা ত্বয্যেব দেবি বরদে ভুবনত্রয়েহপি। ২২৷

হে বরদে দেবি! আপনার এই শৌর্য-বীর্যের তুলনা আর কার সঙ্গে হতে পারে? আবার শত্রুদের ভীতি উৎপাদনকারী এবং এত মনোরম এই সৌন্দর্যই বা কার আছে? হহৃদয়ে কৃপা এবং যুদ্ধে নিষ্ঠুরতা-এই দুইয়ের একত্র অবস্থিতি এই ত্রিলোকে কেবল আপনার মধ্যেই দেখা গেছে।। ২২ ৷৷

ত্রৈলোক্যমেতদখিলং রিপুনাশনেন ত্রাতং ত্বয়া সমরমূর্খনি তেহপি হত্বা।
নীতা দিবং রিপুগণা ভয়মপ্যপান্ত- মস্মাকমুন্মদসুরারিভবং নমস্তে। ২৩৷৷

মাতঃ! শত্রুদের বিনাশ করে আপনি এই ত্রিভুবন রক্ষা করেছেন। ওই শত্রুরাও আপনার হাতে নিহত হয়ে স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়েছে এবং উন্মুক্ত অসুরদের ভয়ের থেকেও আমাদের বাঁচিয়েছেন, আপনাকে প্রণাম ৷ ২৩ ॥

শূলেন পাহি নো দেবি পাহি খড়োন চাম্বিকে।
ঘণ্টাস্বনেন নঃ পাহি চাপজ্যানিঃস্বনেন চ৷৷ ২৪৷৷

দেবি! আপনি শূল দিয়ে আমাদের রক্ষা করুন। অশ্বিকে! আপনি খড়া দিয়েও আমাদের রক্ষা করুন এবং ঘন্টাধ্বনি ও ধনুকের টঙ্কার দিয়েও আমাদের রক্ষা করুন । ২৪ ।।

প্রাচ্যাং রক্ষ প্রতীচ্যাঞ্চ চণ্ডিকে রক্ষ দক্ষিণে।
ভ্রামণেনাত্মশূলস্য চোত্তরস্যাং তথেশ্বরি। ২৫ ৷৷

হে চণ্ডিকে! পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে আমাদের রক্ষা করুন এবং হে ঈশ্বরি! ত্রিশূলের সঞ্চালন দ্বারা উত্তর দিকেও আমাদের রক্ষা করুন ।। ২৫ ৷৷

সৌম্যানি যানি রূপাণি ত্রৈলোক্যে বিচরন্তি তে।
যানি চাত্যর্থঘোরাণি তৈ রক্ষাস্মাংস্তথা ভুবম্। ২৬৷৷

ত্রিলোকে আপনার যে সকল সুন্দর ও ভয়ঙ্কর মূর্তি বিরাজিত, সেই সব দিয়েও আপনি আমাদের তথা এই ভূলোককে রক্ষা করুন। ২৬।।

খাশূলগদাদীনি যানি চাস্ত্রাণি তেহম্বিকে।
করপল্লবসঙ্গীনি তৈরস্মান্ রক্ষ সর্বতঃ। ২৭ ৷৷

হে অশ্বিকে! আপনার করপল্লবে শোভিত খড়া, শূল ও গদা প্রভৃতি যে সকল অস্ত্র আছে, সে সবগুলি দিয়ে আপনি সর্বদিকে আমাদের রক্ষা করুন। ২৭ ॥

ঋষিরুবাচ। ২৮৷৷

মেধা ঋষি বললেন-।। ২৮ ।

এবং স্তুতা সুরৈর্দিব্যৈঃ কুসুমের্নন্দনোদ্ভবৈঃ।
অর্চিতা জগতাং ধাত্রী তথা গন্ধানুলেপনৈঃ৷৷ ২৯ ৷৷

ভক্ত্যা সমস্তৈস্ত্রিদশৈর্দিব্যৈধূপৈস্তু ধূপিতা।
প্রাহ প্রসাদসুমুখী সমস্তান্ প্রণতান্ সুরান্৷৷ ৩০॥

এইভাবে জগন্মাতা দুর্গাকে সব দেবতারা মিলে স্তব করলেন এবং স্বর্গের নন্দনকাননের দিব্য পুষ্প এবং গন্ধচন্দনাদি দিয়ে তাঁকে পূজা করলেন। তারপর সকলে মিলে যখন ভক্তিভরে দিব্য ধূপ সমূহের সুগন্ধ নিবেদন করলেন, তখন দেবী প্রসন্নবদনে প্রণত দেবতাদের বললেন-॥২৯-৩০।

দেব্যুবাচ৷৷ ৩১ ৷৷

দেবী বললেন-। ৩১ ।।

ব্রিয়তাং ত্রিদশাঃ সর্বে যদস্মত্তোহভিবাঞ্ছিতম্।। ৩২ ৷৷

হে দেবগণ! তোমরা সকলে আমার নিকট হতে তোমাদের অভিলষিত বর প্রার্থনা করো ।। ৩২ ৷

দেবা উচুঃ।। ৩৩।।

দেবগণ বললেন-।। ৩৩ ।

ভগবত্যা কৃতং সর্বং ন কিঞ্চিদবশিষ্যতে।। ৩৪৷৷

হে দেবি ভগবতি! আপনি আমাদের সব ইচ্ছাই পূর্ণ করে দিয়েছেন, এখন আর কিছুই বাকী নেই।। ৩৪ ।।

যদয়ং নিহতঃ শত্রুরস্মাকং মহিষাসুরঃ।
যদি বাপি বরো দেয়ত্ত্বয়াস্মাকং মহেশ্বরি৷৷ ৩৫৷৷

কারণ দেবশত্রু এই মহিষাসুর বধ হয়ে গেছে। হে মহেশ্বরি! তবুও যদি আপনি আমাদের বর দিতে ইচ্ছা করেন ।। ৩৫ ।।

সংস্কৃতা সংস্মৃতা ত্বং নো হিংসেথাঃ পরমাপদঃ।
যশ্চ মর্ত্যঃ স্তবৈরেভিত্ত্বাং ন্তোষ্যত্যমলাননে৷৷ ৩৬ ৷৷

তস্য বিত্তর্দ্ধিবিভবৈর্ধনদারাদিসম্পদাম্।
বৃদ্ধয়েহস্মৎপ্রসন্না ত্বং ভবেথাঃ সর্বদাম্বিকে৷৷ ৩৭ ৷৷

তাহলে আমরা যখনই আপনাকে স্মরণ করব, আপনি তখনই আবির্ভূতা হয়ে আমাদের মহাসঙ্কট থেকে পরিত্রাণ করবেন, আপনি আমাদের এই বর দিন তথা হে অমলাননা দেবি অগ্নিকে! যে মানুষ এই স্তোত্রদ্বারা আপনার স্তব করবে, তার বিত্ত, সমৃদ্ধি ও বৈভব দানের সাথে সাথেই তার ধনসম্পদ ও স্ত্রীপুত্রাদি বৃদ্ধির জন্য আপনি সর্বদাই আমাদের প্রতি প্রসন্না থাকুন ৷৷ ৩৬-৩৭ ॥

ঋষিরুবাচ।। ৩৮ ।।

মেধা ঋষি বললেন-। ৩৮ ।।

ইতি প্রসাদিতা দেবৈর্জগতোহর্থে তথাত্মনঃ।
তথেত্যুত্ত্বা ভদ্রকালী বক্তৃবান্তর্হিতা নৃপ৷৷ ৩৯৷৷

হে রাজন (সুরথ)! দেবতারা যখন নিজেদের তথা জগৎকল্যাণের জন্য ভদ্রকালী দেবীকে এইভাবে প্রসন্ন করলেন, তখন দেবী ভদ্রকালী 'তথাস্তু' বলে অন্তর্হিতা হলেন। ৩৯ ৷

ইত্যেতৎ কথিতং ভূপ সম্ভূতা সা যথা পুরা।
দেবী দেবশরীরেভ্যো জগৎত্রয়হিতৈষিণী। ৪০ ৷৷

হে মহারাজ! ত্রিলোকের হিতকারিণী দেবী পুরাকালে দেবতাদের শরীর থেকে যেভাবে আবির্ভূতা হয়েছিলেন, সে সব কাহিনী তোমাকে শোনালাম।। ৪০ ৷৷

পুনশ্চ গৌরীদেহাৎ সা সমুদ্ভূতা যথাভবৎ।
বধায় দুষ্টদৈত্যানাং তথা শুম্ভনিশুম্ভয়োঃ৷৷ ৪১ ৷৷

রক্ষণায় চ লোকানাং দেবানামুপকারিণী। তচ্ছণুষ ময়াখ্যাতং যথাবৎ কথয়ামি তে৷৷ হ্রীং ওঁ ৷৷ ৪২ ৷৷

আবার দেবতাদের উপকারিণী সেই দেবী দুষ্ট দৈত্যদের তথা শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করার জন্য এবং ত্রিলোকের রক্ষণার্থ গৌরী দেবীর শরীরে যেভাবে আবির্ভূতা হয়েছিলেন, সেই সব প্রসঙ্গ এখন আমার কাছে শোনো। সেই কাহিনী আমি তোমার কাছে যথাযথ বর্ণনা করছি। ৪১-৪২।

ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যে শত্রুাদিকৃতদেবীস্তুতির্নাম চতুর্থোহধ্যায়ঃ। ৪ ৷৷

এই অধ্যায়ে উবাচ-৫, অর্দ্ধশ্লোক-২, শ্লোক-৩৫, মোট-৪২, আদি হতে সর্বমোট-২৫৯

শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিক মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যপ্রসঙ্গে 'ইন্দ্রাদিকৃত- দেবীস্তুতি নামক' চতুর্থ অধ্যায় সম্পূর্ণ হল৷ ৪ ৷৷