অথ প্রাধানিকং রহস্যম্
প্রাধানিক রহস্য
ওঁ অস্য শ্রীসপ্তশতীরহস্যত্রয়স্য নারায়ণ ঋষিরনুষ্টুপছন্দঃ, মহাকালীমহালক্ষ্মীমহাসরস্বত্যো দেবতা যথোক্তফলাবাপ্ত্যর্থং জপে বিনিয়োগঃ।
ওঁ সপ্তশতীর এই তিন রহস্যের ঋষি নারায়ণ, অনুষ্টুপ্ ছন্দ, মহাকালী মহালক্ষ্মী ও মহাসরস্বতী দেবতা। শাস্ত্রোক্ত ফল লাভের জন্য এই রহস্য জপে বিনিয়োগ হয়।
রাজোবাচ
ভগবন্নবতারা মে চণ্ডিকায়াস্ত্রয়োদিতাঃ। এতেষাং প্রকৃতিং ব্রহ্মন্ প্রধানং বক্কুমর্হসি ৷৷ ১ ৷৷
রাজা বললেন-ভগবন্! দেবী চণ্ডিকার অবতারসমূহের কথা আপনি বলেছেন। হেব্রহ্মন্! এঁদের প্রধান প্রকৃতির কথা এখন আমাকে বলুন।। ১ ৷৷
আরাধ্যং যন্ময়া দেব্যাঃ স্বরূপং যেন বৈ দ্বিজ। বিধিনা রূহি সকলং যথাবৎ প্রণতস্য মে৷ ২৷
হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! আমি আপনাকে প্রণাম করছি। দেবীকে যেই স্বরূপে এবং যেই বিধিতে আরাধনা করা উচিত, সেই সব যথাযথভাবে আমাকে বলুন৷৷ ২৷৷
ঋষিরুবাচ
মেধা ঋষি বললেন-
ইদং রহস্যং পরমমনাখ্যেয়ং প্রচক্ষতে। ভক্তোহসীতি ন মে কিঞ্চিৎ তবাবাচ্যং নরাধিপ৷ ৩৷৷
হে রাজন! এই রহস্য পরম গোপনীয়। এই রহস্যকে অনাখ্যেয়-কথনযোগ্য নয় বলা হয়; কিন্তু তুমি আমার ভক্ত, তাই তোমাকে না বলার আমার কিছুই নেই। ৩।
সর্বস্যাদ্যা মহালক্ষ্মীস্ত্রিগুণা পরমেশ্বরী। লক্ষ্যালক্ষ্যস্বরূপা সা ব্যাপ্য কৃৎস্নং ব্যবস্থিতা।। ৪৷৷
ত্রিগুণময়ী পরমেশ্বরী মহালক্ষ্মীই সকল কারণের আদি কারণ। তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যরূপে সমগ্র বিশ্ব ব্যাপ্ত করে রয়েছেন।। ৪।।
মাতুলুঙ্গং গদাং খেটং পানপাত্রঞ্চ চ বিভ্রতী। নাগং লিঙ্গঞ্চ যোনিঞ্চ বিভ্রতী নৃপ মূর্খনি৷৷ ৫ ৷৷
হে রাজন! ইনি এঁর চার হাতে মাতুলুঙ্গ (লেবু বা শ্রীফল), গদা, খেট (ঢাল) এবং পানপাত্র আর মস্তকে নাগ, লিঙ্গ ও যোনি ধারণ করেন। ৫ ।।
তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভা তপ্তকাঞ্চনভূষণা। শূন্যং তদখিলং স্বেন পূরয়ামাস তেজসা৷৷ ৬ ৷৷
তাঁর কান্তি তপ্তকাঞ্চনের মতো, তপ্তকাঞ্চনই তাঁর অলঙ্কার। তিনি নিজ তেজে এই শূন্য (মহাকাশ) পরিপূর্ণ করে আছেন ।। ৬৷৷
শূন্যং তদখিলং লোকং বিলোক্য পরমেশ্বরী। বভার পরমং রূপং তমসা কেবলেন হি। ৭ ॥
পরমেশ্বরী মহালক্ষ্মী এই সমগ্র বিশ্ব শূন্য দেখে কেবল তমোগুণ দ্বারা এক অন্য উৎকৃষ্ট রূপ ধারণ করেছিলেন।। ৭ ।।
সা ভিন্নাঞ্জনসঙ্কাশা দংষ্ট্রাঙ্কিতবরাননা। বিশাললোচনা নারী বভূব তনুমধ্যমা ৷৷ ৮ ৷৷
সেই উৎকৃষ্ট রূপ এক নারীরূপে প্রকাশ পায় যার শরীরের ক্লান্তি ঘন কাজলের মতো গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ ছিল, তাঁর মুখমণ্ডল সুন্দর দন্তপংক্তিতে সুশোভিত ছিল। তিনি বিশালনয়না ও ক্ষীণকটি ছিলেন। ৮।।
খড়া-পাত্র-শিরঃ-খেটৈরলঙ্কৃত-চতুর্ভুজা। কবন্ধহারং শিরসা বিভ্রাণা হি শিরঃস্রজম্।। ৯ ৷৷
তাঁর চার হাত ঢাল, খড়গ, পানপাত্র ও নরমুণ্ডে শোভিত ছিল। তিনি বক্ষদেশে কবন্ধের মালা ও মস্তকে মুণ্ডমালা ধারণ করেন। ৯ ৷
সা প্রোবাচ মহালক্ষ্মীং তামসীং প্রমদোত্তমা। নাম কর্ম চ মে মাতর্দেহি তুভ্যং নমো নমঃ ॥ ১০ ৷৷
এই নারীশ্রেষ্ঠা তামসী দেবী মহালক্ষ্মীকে বললেন-মাতঃ, আপনাকে প্রণাম। আমার নাম এবং কী কাজ বলুন। ১০ ।
তাং প্রোবাচ মহালক্ষ্মীস্তামসীং প্রমদোত্তমাম্। দদামি তব নামানি যানি কর্মাণি তানি তে৷৷ ১১ ৷৷
তখন মহালক্ষ্মী সেই নারীশ্রেষ্ঠা তামসী দেবীকে বললেন-আমি তোমার নামকরণ করছি এবং তোমার যা যা কাজ তাও বলছি৷৷ ১১ ৷৷
মহামায়া মহাকালী মহামারী ক্ষুধা তৃষা। নিদ্রা তৃষ্ণা চৈকবীরা কালরাত্রিদূরত্যয়া৷৷ ১২ ৷৷
মহামায়া, মহাকালী, মহামারী, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা, একবীরা, কালরাত্রি তথা দুরত্যয়া-৷ ১২ ।
ইমানি তব নামানি প্রতিপাদ্যানি কর্মভিঃ। এভিঃ কর্মাণি তে জ্ঞাত্বা যোহধীতে সোহম্মুতে সুখম্। ১৩ ৷৷
এগুলি তোমার নাম, এই নামগুলি তদনুযায়ী কর্মের দ্বারা চরিতার্থ হবে ও এই নাম অনুযায়ী কর্ম দ্বারা তোমাকে জেনে যে তা (চণ্ডী) পাঠ করে সে সুখলাভ করে। ১৩ ৷৷
তামিত্যুত্ত্বা মহালক্ষ্মীঃ স্বরূপমপরং নৃপ। সত্ত্বাখ্যেনাতিশুদ্ধেন গুণেনেন্দুপ্রভং দধৌ৷৷ ১৪ ৷৷
হে রাজন! মহাকালীকে এই কথা বলে মহালক্ষ্মী অত্যন্ত শুদ্ধ সত্ত্বগুণদ্বারা দ্বিতীয় আর এক রূপ ধারণ করলেন যা চন্দ্রের মতো গৌরবর্ণা। ১৪ ৷৷
অক্ষমালাঙ্কুশধরা বীণাপুস্তকধারিণী। সা বভূব বরা নারী নামান্যস্যৈ চ সা দদৌ৷৷ ১৫ ৷৷
সেই শ্রেষ্ঠা নারী নিজের হাতে অক্ষমালা, অঙ্কুশ, বীণা ও পুস্তক ধারণ করেছিলেন। মহালক্ষ্মী তাঁরও নামকরণ করলেন।। ১৫ ।।
মহাবিদ্যা মহাবাণী ভারতী বাক্ সরস্বতী। আর্যা ব্রাহ্মী কামধেনুর্বেদগর্ভা চ ধীশ্বরী। ১৬ ৷৷
মহাবিদ্যা, মহাবাণী, ভারতী, বাক্, সরস্বতী, আর্যা, ব্রাহ্মী, কামধেনু, বেদগর্ভা ও ধীশ্বরী (বুদ্ধির ঈশ্বরী)- এইগুলো তোমার নাম হবে । ১৬ ৷
অথোবাচ মহালক্ষ্মীমহাকালীং সরস্বতীম্। যুবাং জনয়তাং দেব্যৌ মিথুনে স্বানুরূপতঃ। ১৭ ৷৷
তারপর মহালক্ষ্মী মহাকালী ও মহাসরস্বতীকে বললেন-হে দেবীদ্বয়! তোমরা দুজনে নিজ নিজ গুণানুরূপ যোগ্য স্ত্রী-পুরুষ উৎপন্ন করো ।। ১৭ ।।
ইত্যুত্ত্বা তে মহালক্ষ্মীঃ সসর্জ মিথুনং স্বয়ম্। হিরণ্যগর্ভো রুচিরৌ স্ত্রীপুংসৌ কমলাসনৌ৷৷ ১৮ ৷৷
তাদের দুজনকে একথা বলে মহালক্ষ্মী প্রথমেই নিজে নিজেই একটি পুরুষ ও একটি তদনুরূপ নারী সৃষ্টি করলেন। এঁরা দুজনে হিরণ্যগর্ভ (বিশুদ্ধজ্ঞান দেহ), সুন্দর ও কমলাসনে বিরাজ করছিলেন।। ১৮ ।।
ব্রহ্মন্ বিধে বিরিঞ্চেতি ধাতরিত্যাহ তং নরম্। শ্রীঃ পদ্মে কমলে লক্ষ্মীত্যাহ মাতা চ তাং স্ত্রিয়ম্ ৷৷ ১৯ ৷৷
তারপর মহালক্ষ্মী সেই পুরুষকে ব্রহ্মন্! বিধে! বিরিঞ্চ! ও ধাতঃ! বলে সম্বোধন করলেন এবং নারীটিকে শ্রী! পদ্মা! কমলা! ও লক্ষ্মী! এই সকল নামে অভিহিতা করলেন ।। ১৯ ।।
মহাকালী ভারতী চ মিথুনে সৃজতঃ সহ। এতয়োরপি রূপাণি নামানি চ বদামি তে৷৷২০৷৷
তারপর মহাকালী এবং মহাসরস্বতীও এক এক যুগল সৃষ্টি করলেন। এদের নাম ও রূপের কথাও তোমাকে বলছি৷৷ ২০ ।।
নীলকণ্ঠং রক্তবাহুং শ্বেতাঙ্গং চন্দ্রশেখরম্। জনয়ামাস পুরুষং মহাকালী সিতাং স্ত্রিয়ম্। ২১ ৷৷
মহাকালী নীলকণ্ঠ, রক্তবাহু, শ্বেতবর্ণ ও ললাটে চন্দ্রমুকুট শোভিত পুরুষ এবং গৌরীদেহা নারী সৃষ্টি করলেন । ২১ ৷৷
স রুদ্রঃ শঙ্করঃ স্থাণুঃ কপর্দী চ ত্রিলোচনঃ। ত্রয়ী বিদ্যা কামধেনুঃ সা স্ত্রী ভাষাক্ষরা স্বরা। ২২ ৷৷
সেই পুরুষ রুদ্র, শঙ্কর, স্থাণু, কপর্দী ও ত্রিলোচন নামে অভিহিত হলেন। সেই নারীর নাম হল ত্রয়ী, বিদ্যা, কামধেনু, ভাষা, অক্ষরা ও স্বরা। ২২ ৷
সরস্বতী স্ত্রিয়ং গৌরীং কৃষ্ণঞ্চ পুরুষং নৃপ। জনয়ামাস নামানি তয়োরপি বদামি তে। ২৩ ॥
হে রাজন! মহাসরস্বতী গৌরবর্ণা নারী ও শ্যামবর্ণ পুরুষ সৃষ্টি করলেন। সেই দুজনের নামও আমি তোমাকে বলছি ৷৷ ২৩ ৷৷
বিষ্ণুঃ কৃষ্ণো হৃষীকেশো বাসুদেবো জনার্দনঃ। উমা গৌরী সতী চণ্ডী সুন্দরী সুভগা শিবা৷৷ ২৪ ৷৷
সেই পুরুষের নাম বিষ্ণু, কৃষ্ণ, হৃষীকেশ, বাসুদেব এবং জনার্দন আর সেই নারীর নাম হয়েছিল উমা, গৌরী, সতী, চণ্ডী, সুন্দরী, সুভগা ও শিবা। ২৪ ।।
এবং যুবতয়ঃ সদ্যঃ পুরুষত্বং প্রপেদিরে। চক্ষুষ্মন্তো নু পশ্যন্তি নেতরেহতবিদদো জনাঃ৷৷ ২৫ ৷৷
এরপর সেই তিন যুবতীই তৎকালে পুরুষরূপ প্রাপ্ত হলেন। এই বিষয়টি শুধু জ্ঞানীগণই বুঝতে পারে। অজ্ঞানীরা এই রহস্যের তত্ত্ব অবগত হতে পারে না। ২৫ ॥
ব্রহ্মণে প্রদদৌ পত্নীং মহালক্ষ্মীনূপ ত্রয়ীম্। রুদ্রায় গৌরীং বরদাং বাসুদেবায় চ প্রিয়ম্ ॥ ২৬৷৷
হে নৃপ! মহালক্ষ্মী ব্রহ্মার জন্য ত্রয়ীবিদ্যারূপা সরস্বতীকে পত্নীরূপে সমর্পণ করলেন, রুদ্রকে বরদায়িনী গৌরী এবং ভগবান বাসুদেবের পত্নীরূপে লক্ষ্মীকে প্রদান করলেন । ২৬ ।।
স্বরয়া সহ সম্ভূয় বিরিঞ্চোহ গুমজীজনৎ। বিভেদ ভগবান্ রুদ্রস্তদ্ গৌর্যা সহ বীর্যবান্। ২৭ ॥
এইভাবে সরস্বতীর সাথে যুক্ত হয়ে ব্রহ্মা ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করলেন, পরম পরাক্রমী ভগবান রুদ্র গৌরীর সাথে মিলিত হয়ে সেই অণ্ডকে বিভক্ত করলেন। ২৭ ॥
অণ্ডমধ্যে প্রধানাদি-কার্যজাতমভূপ। মহাভূতাত্মকং সর্বং জগৎ স্থাবরজঙ্গমম্।। ২৮ ৷৷
হে রাজন! সেই অণ্ডের মধ্যে প্রধান (মহত্তত্ত্ব) কার্যসমূহ- পঞ্চমহাভূতাত্মক সমস্ত স্থাবর জঙ্গমরূপ জগতের উৎপত্তি হল। ২৮ ।।
পুপোষ পালয়ামাস তল্লক্ষ্ম্যা সহ কেশবঃ। সংজহার জগৎ সর্বং সহ গৌর্যা মহশ্বেরঃ। ২৯ ৷৷
আবার লক্ষ্মীর সাথে ভগবান বিষ্ণু মিলিত হয়ে সেই জগতের পালন পোষণ করলেন আর প্রলয়কালে গৌরীর সাথে মিলে মহেশ্বর ওই সমগ্র জগৎ সংহার করলেন। ২৯।।
মহালক্ষ্মীমহারাজ সর্বসত্ত্বময়ীশ্বরী। নিরাকারা চ সাকারা সৈব নানাভিধানভৃৎ।।॥ ৩০ ৷৷
হে মহারাজ! মহালক্ষ্মীই সর্বসত্ত্বময়ী তথা সকল প্রকার সত্ত্বের অধীশ্বরী। তিনিই নিরাকার ও সাকাররূপে অবস্থান করে নানাপ্রকার নাম ধারণ করেন। ৩০ ॥