Durga Saptashati Image

অথ পঞ্চমোহধ্যায়ঃ

পঞ্চম অধ্যায়

দেবতাদের দ্বারা দেবীস্তুতি, চণ্ড মুণ্ডের মুখে অম্বিকার রূপের প্রশংসা শুনে শুম্ভ কর্তৃক দেবীর কাছে দূত প্রেরণ এবং দূতের নিরাশ হয়ে প্রত্যাবর্তন

বিনিয়োগঃ

ওঁ অস্য শ্রীউত্তরচরিত্রস্য রুদ্র ঋষিঃ, মহাসরস্বতী দেবতা, অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ, ভীমা শক্তিঃ, ভ্রামরী বীজম্, সূর্যস্তত্ত্বম্, সামবেদঃ স্বরূপম্, মহাসরস্বতীপ্রীত্যর্থে উত্তরচরিত্রপাঠে বিনিয়োগঃ।

ওঁ এই উত্তরচরিত্রের ঋষি রুদ্র, দেবতা মহাসরস্বতী, ছন্দ-অনুষ্টুপ, শক্তি-ভীমা, বীজ ভ্রামরী, তত্ত্ব সূর্য এবং স্বরূপ-সামবেদ। মহাসরস্বতীর প্রীতির উদ্দেশ্যে উত্তর চরিত্র পাঠে এদের প্রয়োগ হয়।

ধ্যানম্

ওঁ ঘন্টা-শূল-হলানি শঙ্খ-মুসলে চক্রং ধনুঃ সায়কং হস্তাজৈর্দধতীং গৌরীদেহসমুদ্ভবাং ঘনান্তবিলসচ্ছীতাংশুতুল্যপ্রভাম্।
ত্রিজগতামাধারভূতাং মহা- পূর্বামত্র সরস্বতীমনুভজে শুম্ভাদিদৈত্যার্দিনীম্।।

নিজ করকমলে যিনি ঘন্টা, শূল, লাঙ্গল, শঙ্খ, মুষল, চক্র, ধনুক ও বাণ ধারণ করেন; শারদীয়া চন্দ্রের শোভাসম্পন্ন যাঁর মনোহর কান্তি, যিনি ত্রিলোকের আধারভূতা এবং শুন্তাদি দৈত্যনাশিনী, গৌরীদেহসমুদ্ভূতা সেই অপূর্বা মহাসরস্বতীর আমি ধ্যান করি।

'ওঁ ক্লীং' ঋষিরুবাচ ৷৷ ১ ৷৷

মেধা ঋষি বললেন-৷৷ ১ ।

পুরা শুম্ভনিশুম্ভাভ্যামসুরাভ্যাং শচীপতেঃ।
ত্রৈলোক্যং যজ্ঞভাগাশ্চ হৃতা মদবলাশ্রয়াৎ৷ ২৷

পুরাকালে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই অসুর বলগর্বে গর্বিত হয়ে শচীপতি ইন্দ্রের থেকে ত্রিলোকাধিপত্য ও যজ্ঞভাগসমূহ কেড়ে নিয়েছিল। ২ ৷৷

তাবেব সূর্যতাং তদ্বদধিকারং তথৈন্দবম্।
কৌবেরমথ যাম্যঞ্চ চক্রাতে বরুণস্য চ। ৩৷৷

তাবেব পবনব্ধিঞ্চ চক্রতুর্বহ্নিকর্ম ততো দেবা বিনির্মূতা ভ্রষ্টরাজ্যাঃ পরাজিতাঃ। ৪।।

হৃতাধিকারাস্ত্রিদশাস্তাভ্যাং সর্বে নিরাকৃতাঃ।
মহাসুরাভ্যাং তাং দেবীং সংস্মরন্ত্যপরাজিতাম্।। ৫।

তয়াস্মাকং বরো দত্তো যথাহহপৎসু স্মৃতাখিলা।
ভবতাং নাশয়িষ্যামি তৎক্ষণাৎ পরমাপদঃ ৷৷ ৬ ৷৷

তারা দুজনেই সূর্য, চন্দ্র, কুবের, যম ও বরুণের অধিকারও ছিনিয়ে শাসন করতে লাগল। বায়ু এবং অগ্নির কাজও এরা দুজনে করতে লাগল। সব দেবতাদের অপমানিত, রাজ্যভ্রষ্ট, পরাজিত ও অধিকারহীন করে স্বর্গ থেকে তাড়িয়ে দিল। সেই দুই অসুরের দ্বারা তিরস্কৃত হয়ে দেবতারা অপরাজিতা দেবীকে স্মরণ করে ভাবলেন-জগদম্বা আমাদের বর দিয়েছিলেন যে, বিপদকালে তাঁকে স্মরণ করলে তিনি ঘোর বিপদসমূহ তৎক্ষণাৎ নাশ করবেন।। ৩-৬ ।।

ইতি কৃত্বা মতিং দেবা হিমবন্তং জম্মুস্তত্র ততো দেবীং বিষ্ণুমায়াং নগেশ্বরম্। প্রতুষ্টুবুঃ ৷৷ ৭ ৷৷

এই বিবেচনা করে দেবতারা গিরিরাজ হিমালয়ে গিয়ে ভগবতী বিষ্ণুমায়ার স্তুতি করতে লাগলেন। ৭ ॥

দেবা উচুঃ ৷৷ ৮ ৷৷

দেবগণ বললেন-। ৮ ॥

নমো দেব্যৈ মহাদেব্যৈ শিবায়ৈ সততং নমঃ।
নমঃ প্রকৃত্যৈ ভদ্রায়ৈ নিয়তাঃ প্রণতাঃ স্ম তাম্৷৷ ৯ ৷৷

দেবীকে প্রণাম, মহাদেবী শিবাকে সর্বদা প্রণাম। (সৃষ্টিশক্তিরূপিণী) প্রকৃতিকে প্রণাম এবং (স্থিতিশক্তিরূপিণী) ভদ্রাকে প্রণাম। আমরা স্থিরচিত্তে জগদম্বাকে প্রণাম করি। ৯ ।

রৌদ্রায়ৈ নমো নিত্যায়ৈ গৌর্যে ধাত্র্যৈ নমো নমঃ।
জ্যোৎস্নায়ৈ চেন্দুরূপিণ্যে সুখায়ৈ সততং নমঃ৷৷ ১০ ৷৷

রৌদ্রাকে (সংহারশক্তিকে) প্রণাম। নিত্যা, গৌরী এবং জগদ্ধাত্রীকে বারংবার প্রণাম। জ্যোৎস্নাময়ী, চন্দ্ররূপিণী এবং সুখস্বরূপা দেবীকে সতত প্রণাম। ১০ ৷৷

কল্যাণ্যৈ প্রণতাং (১) বৃদ্ধ্যৈ সিদ্ধ্যৈ কুর্মো নমো নমঃ।
নৈঋত্যৈ ভূভৃতাং লক্ষ্ম্যৈ শর্বাণ্যৈ তে নমো নমঃ৷৷ ১১ ৷৷

শরণাগতের কল্যাণকারিণী, বৃদ্ধি এবং সিদ্ধিরূপা দেবীকে আমরা বারংবার প্রণাম করি। নৈঋতী (রাক্ষসগণের লক্ষ্মী), রাজাদের লক্ষ্মী তথা শর্বাণী (শিবপত্নী) স্বরূপা জগদম্বা আপনাকে বার বার প্রণাম। ১১ ৷

দুর্গায়ৈ দুর্গপারায়ৈ সারায়ৈ সর্বকারিণ্যৈ। খ্যাত্যৈ তথৈব কৃষ্ণায়ৈ ধূম্রায়ৈ সততং নমঃ৷৷ ১২ ৷৷

দুর্গা (দুরধিগম্যা), দুর্গপারা (দুস্তর ভবসাগরতারিণী), সারা (সকলের সারভূতা), সর্বকারিণী, খ্যাতি, কৃষ্ণা ও ধূম্রাদেবীকে সর্বদা প্রণাম৷৷ ১২ ৷৷

অতিসৌম্যাতিরৌদ্রায়ৈ নতান্তস্যৈ নমো নমঃ।
নমো জগৎপ্রতিষ্ঠায়ৈ দেব্যৈ কৃত্যৈ নমো নমঃ৷৷ ১৩৷৷

বিদ্যারূপে অতিসৌম্যা এবং অবিদ্যারূপে অতিরুদ্রারূপা দেবীকে প্রণাম, বারংবার প্রণাম। জগতের আশ্রয়রূপিণী কৃতি (ক্রিয়ারূপা) দেবীকে বারংবার প্রণাম ৷৷ ১৩ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা।নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ১৬৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৷ ১৯৷৷

যে দেবী সব প্রাণীর মধ্যে চেতনা নামে অভিহিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার।। ১৭-১৯ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু বুদ্ধিরূপেণ সংস্থিতা।নমস্তস্যৈ (২০) নমস্তস্যৈ (২১) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ৷৷ ২২৷৷

যে দেবী সর্বভূতে বুদ্ধিরূপে সংস্থিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার ।। ২০-২২ ৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু নিদ্রারূপেণ সংস্থিতা।নমস্তস্যৈ (২৩) নমস্তস্যৈ (২৪) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৷২৫৷৷

যে দেবী সর্বভূতে নিদ্রারূপে বিরাজিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ২৩-২৫ ।

যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষুধারূপেণ সংস্থিতা।নমস্তস্যৈ (২৬) নমস্তস্যৈ (২৭) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৷ ২৮৷৷

যে দেবী প্রাণীদের মধ্যে ক্ষুধারূপে অবস্থিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ২৬-২৮ ॥

যা দেবী সর্বভূতেষু ছায়ারূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (২) নমস্তস্যৈ (৩০) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৩১ ৷৷

যে দেবী সর্বভূতে ছায়ারূপে বিরাজমানা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বারংবার নমস্কার। ২৯-৩১ ৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৩২) নমস্তস্যৈ (৩৩) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৩৪ ৷৷

যে দেবী সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে শক্তিরূপে অধিষ্ঠিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার।। ৩২-৩৪ ৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু তৃষ্ণারূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৩৫) নমস্তস্যৈ (৩৬) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৩৭ ৷৷

যে দেবী সর্বভূতে তৃষ্ণারূপে স্থিতা আছেন, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার।। ৩৫-৩৭ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষান্তিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৩৮) নমস্তস্যৈ (৩৯) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৪০৷৷

যে দেবী সব প্রাণীদের মধ্যে ক্ষান্তি (ক্ষমা) রূপে অবস্থিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৩৮-৪০।

যা দেবী সর্বভূতেষু জাতিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৪১) নমস্তস্যৈ (৪২) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ৷৷ ৪৩ ৷৷

যে দেবী সব প্রাণীদের মধ্যে জাতিরূপে সংস্থিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৪১-৪৩ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু লজ্জারূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৪৪) নমস্তস্যৈ (৪৫) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৷ ৪৬৷৷

যে দেবী সর্বভূতে লজ্জারূপে অবস্থিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৪৪-৪৬

যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৪৭) নমস্তস্যৈ (৪৮) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৷ ৪৯ ৷৷

যে দেবী সমস্ত প্রাণীর মধ্যে শান্তিরূপে রয়েছেন, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৪৭-৪৯ ।

যা দেবী সর্বভূতেষু শ্রদ্ধারূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৫০) নমস্তস্যৈ (৫১) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ॥৫২৷

যে দেবী সর্বভূতে শ্রদ্ধারূপে বর্তমান রয়েছেন, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৫০-৫২ ।

যা দেবী সর্বভূতেষু কান্তিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৫৩) নমস্তস্যৈ (৫৪) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।৫৫ ৷৷

যে দেবী সর্ব জীবে কান্তিরূপে বিরাজ করছেন, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৫৩-৫৫ ৷

যা দেবী সর্বভূতেষু লক্ষ্মীরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৫৬) নমস্তস্যৈ (৫৭) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৷ ৫৮৷৷

যে দেবী সর্বভূতে লক্ষ্মীরূপে অবস্থিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৫৬-৫৮ ৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু বৃত্তিরূপেণ সংস্থিতা।নমস্তস্যৈ (৫৯) নমস্তস্যৈ (৬০) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৷৬১ ৷৷

যে দেবী সব প্রাণীর মধ্যে বৃত্তিরূপে স্থিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৫৯-৬১ ৷

যা দেবী সর্বভূতেষু স্মৃতিরূপেণ সংস্থিতা।নমস্তস্যৈ (৬২) নমস্তস্যৈ (৬৩) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।৬৪৷৷

যে দেবী সর্বভূতে স্মৃতিরূপে বর্তমান, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার।। ৬২-৬৪ ৷৷

যা দেবী সর্বভূতেষু দয়ারূপেণ সংস্থিতা।নমস্তস্যৈ (৬৫) নমস্তস্যৈ (৬৬) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৬৭ ৷৷

যে দেবী সমস্ত প্রাণীর মধ্যে দয়ারূপে বিরাজিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৬৫-৬৭ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু তুষ্টিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৬৮) নমস্তস্যৈ (৬৯) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৭০৷৷

যে দেবী সমস্ত জীবের মধ্যে তুষ্টিরূপে সংস্থিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার।। ৬৮-৭০ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৭১) নমস্তস্যৈ (৭২) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৭৩ ৷৷

যে দেবী সর্বভূতে মাতৃরূপে অবস্থিতা, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৭১-৭৩ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু ভ্রান্তিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ (৭৪) নমস্তস্যৈ (৭৫) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ৷৷ ৭৬ ৷৷

যে দেবী সর্বজীবে ভ্রান্তিরূপে বর্তমান, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার।। ৭৪-৭৬ ।।

ইন্দ্রিয়াণামধিষ্ঠাত্রী ভূতানাঞ্চাখিলেষু যা।
ভূতেষু সততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমো নমঃ।।৷ ৭৭ ৷৷

সমস্ত জীবগণের ইন্দ্রিয়াদিবর্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রূপে এবং সর্বজীবের মধ্যে ব্যাপ্তা, সেই বিশ্বব্যাপিকা দেবীকে বার বার নমস্কার।। ৭৭ ।।

চিতিরূপেণ যা কৃৎস্নমেতদ্ ব্যাপ্য স্থিতা জগৎ। নমস্তস্যৈ (৭৮) নমস্তস্যৈ (৭৯) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।৮০ ৷৷

যে দেবী চিৎশক্তিরূপে এই সম্পূর্ণ জগৎ ব্যাপ্ত হয়ে স্থিতা আছেন, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে নমস্কার, তাঁকে বার বার নমস্কার। ৭৮-৮০ ৷৷

প্রতা সুরৈঃ তথা পূর্বমভীষ্টসংশ্রয়াৎ সুরেন্দ্রেণ দিনেষু সেবিতা।করোতু সা নঃ শুভহেতুরীশ্বরী শুভানি ভদ্রাণ্যভিহন্ত চাপদঃ ৷৷ ৮১ ৷৷

পূর্বকালে মহিষাসুর বধরূপ অভীষ্ট ফল প্রাপ্তিতে দেবতারা যাঁর স্তুতি করেছিলেন এবং দেবরাজ ইন্দ্র বহুদিন পর্যন্ত যাঁকে পূজা করেছিলেন, সেই মঙ্গলময়ী পরমেশ্বরী আমাদের কল্যাণ ও মঙ্গল করুন আর সমস্ত বিপদ নাশ করুন । ৮১ ৷৷

যা সাম্প্রতং চোদ্ধতদৈত্যতাপিতৈ- রস্মাভিরীশা চ সুরৈর্নমস্যতে।যা চ স্মৃতা তৎক্ষণমেব হন্তি নঃ সর্বাপদো ভক্তিবিনম্রমূর্তিভিঃ ৷৷ ৮২ ৷

বলদর্পী দৈত্যদের দ্বারা উৎপীড়িত হয়ে আমরা সব দেবতারা যে পরমেশ্বরীকে সম্প্রতি স্তব করছি এবং যাঁকে ভক্তিবিনম্র দেহে স্মরণ করলে তৎক্ষণাৎই সমস্ত বিপদ বিনাশ করে দেন, সেই দেবী জগদম্বা আমাদের সংকটসমূহ নাশ করুন৷৷ ৮২ ৷৷

ঋষিরুবাচ। ৮৩।।

মেধা ঋষি বললেন-॥ ৮৩ ৷৷

এবং স্তবাদিযুক্তানাং দেবানাং তত্র পার্বতী।
স্নাতুমভ্যাযযৌ তোয়ে জাহ্নব্যা নৃপনন্দন৷৷ ৮৪ ৷৷

হে নৃপনন্দন সুরথ! এইভাবে যখন দেবতারা স্তবাদিতে ব্যাপৃত ছিলেন, সেই সময় পার্বতী দেবী গঙ্গায় স্নান করার পথে সেখানে এলেন। ৮৪।

সাব্রবীত্তান্ সুরান্ সুভ্রর্ভবন্তিঃ সূয়তেহত্র কা।
শরীরকোষতশ্চাস্যাঃ সমুদ্ভূতাব্রবীচ্ছিবা৷৷ ৮৫৷৷

সেই অতি সুন্দর ভ্রুবিশিষ্টা ভগবতী দেবতাদের জিজ্ঞাসা করলেন-'আপনারা এখানে কার স্তব করছেন?' তখন সেই অবস্থায় তাঁর দেহকোশ থেকে শিবা দেবী আবির্ভূতা হয়ে বললেন-॥ ৮৫ ৷৷

স্তোত্রং মমৈতৎ ক্রিয়তে শুম্ভদৈত্যনিরাকৃতৈঃ। দেবৈঃ সমেতৈঃ সমরে নিশুন্তেন পরাজিতৈঃ৷৷ ৮৬ ৷৷

শুম্ভ নামক অসুরের দ্বারা বিতাড়িত এবং যুদ্ধে শুম্ভাসুরের কাছে পরাজিত হয়ে এই সব দেবতারা একত্র মিলিত হয়ে এখানে আমারই স্তব করছেন ।। ৮৬।

শরীরকোশাদ) যত্তস্যাঃ পার্বত্যা নিঃসৃতাম্বিকা।
কৌশিকীতি সমস্তেষু ততো লোকেষু গীয়তে৷৷ ৮৭ ৷৷

পার্বতী দেবীর দেহকোশ থেকে আবির্ভূতা হয়েছিলেন বলে তিনি সমস্ত জগতে 'কৌশিকী' নামে অভিহিতা হন । ৮৭ ॥

তস্যাং বিনির্গতায়াপ্ত কৃষ্ণাভূৎ সাপি পার্বতী।
কালিকেতি সমাখ্যাতা হিমাচলকৃতাশ্রয়া।। ৮৮ ৷৷

কৌশিকীর আবির্ভাবের পর পার্বতী দেবীর গায়ের রং কাল হয়ে গেল, তারপর দেবী অম্বিকা হিমালয়ে অধিষ্ঠান করে কালিকাদেবী নামে খ্যাত হলেন। ৮৮ ৷৷

ততোহম্বিকাং পরং রূপং বিভ্রাণাং সুমনোহরম্।
দদর্শ চণ্ডো মুণ্ডশ্চ ভৃত্যৌ শুম্ভনিশুম্ভয়োঃ ৷৷ ৮৯ ৷৷

তারপর শুম্ভ-নিশুম্ভের ভৃত্য চণ্ড ও মুণ্ড একদিন সেখানে এল এবং সেই পরম মনোহর মূর্তিধারিণী অম্বিকাদেবীকে দেখতে পেল। ৮৯ ৷৷

তাভ্যাং শুম্ভায় চাখ্যাতা অতীব সুমনোহরা।
কাপ্যান্তে স্ত্রী মহারাজ ভাসয়ন্তী হিমাচলম্৷ ৯০ ৷৷

তারা ফিরে গিয়ে শুম্ভকে বলল-'মহারাজ! পরমা সুন্দরী একটী নারী তার দিব্য অঙ্গশোভায় হিমালয় আলো করে অবস্থান করছেন ৷ ৯০ ৷৷

নৈব তাদৃক্ কচিদ্রূপং দৃষ্টং কেনচিদুত্তমম্।
জ্ঞায়তাং কাপ্যসৌ দেবী গৃহ্যতাঞ্চাসুরেশ্বর৷৷ ৯১ ৷৷

এইরকম অপূর্ব রূপ কেহ কখনও কোথাও দেখেনি। হে অসুরাধিপতে! সেই নারীর বিষয় খোঁজ করে তাঁকে গ্রহণ করুন।। ৯১ ।।

স্ত্রীরত্নমতিচার্বঙ্গী দ্যোতয়ন্তী দিশস্ত্রিষা।
সা তু তিষ্ঠন্তি দৈত্যেন্দ্র তাং ভবান্ দ্রষ্টুমর্হতি।৷ ৯২ ৷৷

নারীদের মধ্যে সে একটী রত্ন, তাঁর প্রতিটি অঙ্গ অতীব সুন্দর এবং সে নিজের শ্রীঅঙ্গের প্রভায় দশদিক আলো করে রয়েছে। হে দৈত্যরাজ! তিনি এখন হিমালয়ে পর্বতে রয়েছেন, তিনি আপনার দর্শনযোগ্যা ।। ৯২ ।।

যানি রত্নানি মণয়ো গজাশ্বাদীনি বৈ প্রভো।
ত্রৈলোক্যে তু সমস্তানি সাম্প্রতং ভান্তি তে গৃহে।। ৯৩ ৷৷

হে প্রভো! ত্রিভুবনে যে সব মণিমাণিক্য, হাতীঘোড়া ইত্যাদি যত রত্ন আছে, এসবই বর্তমানে আপনার প্রাসাদে শোভা পাচ্ছে।। ৯৩ ।।

ঐরাবতঃ সমানীতো গজরত্নং পুরন্দরাৎ।
পারিজাততরুশ্চায়ং তথৈবোচ্চৈঃশ্রবা হয়ঃ ৷৷ ৯৪ ৷৷

গজরাজ ঐরাবত, পারিজাত বৃক্ষ এবং এই উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ব- এই সবই আপনি ইন্দ্রের কাছে থেকে নিয়ে নিয়েছেন। ৯৪ ।।

বিমানং হংসসংযুক্তমেতৎ তিষ্ঠতি তেহঙ্গণে।
রত্নভূতমিহানীতং যদাসীদ্ বেধসোেহদ্ভুতম্ ॥ ৯৫৷৷

রত্নস্বরূপ হংসযুক্ত এই আশ্চর্য বিমান আপনার অঙ্গনে শোভিত রয়েছে। এই অপরূপ বিমান আগে ব্রহ্মার অধিকারে ছিল। এখন আপনি এখানে নিয়ে এসেছেন।। ৯৫ ।।

নিধিরেষ মহাপদ্মঃ সমানীতো ধনেশ্বরাৎ।
কিঞ্জল্কিনীং দদৌ চাব্ধির্মালামম্লানপঙ্কজাম্৷৷ ৯৬৷৷

এই মহাপদ্ম নামক নিধি আপনি কুবেরের কাছ থেকে জয় করে এনেছেন। সমুদ্রও আপনাকে কিঞ্জল্কিনী মালা উপহার দিয়েছে, যে মালা কেসরের দ্বারা সুশোভিত এবং যে মালা অম্লান পদ্মে রচিত। ৯৬ ৷৷

ছত্রং তে বারুণং গেহে কাঞ্চনস্রাবি তিষ্ঠতি।
তথায়ং স্যন্দনবরো যঃ পুরাসীৎ প্রজাপতেঃ৷৷ ৯৭৷৷

সুবর্ণবর্ষণকারী বরুণের ছত্র এবং প্রজাপতির এই শ্রেষ্ঠ রথ এখন আপনার অধিকারে আপনার প্রাসাদে রয়েছে।। ৯৭ ।

মৃত্যোরুৎক্রান্তিদা নাম শক্তিরীশ ত্বয়া হৃতা।
পাশঃ সলিলরাজস্য ভ্রাতুস্তব পরিগ্রহে।। ৯৮৷৷

নিশুম্ভস্যাব্ধিজাতাশ্চ সমস্তা রত্নজাতয়ঃ।
বহ্নিরপি(১) দদৌ তুভ্যমগ্নিশৌচে চ বাসসী৷৷ ৯৯ ৷৷

হে দৈত্যেশ্বর! যমের উৎক্রান্তিদা নামে শক্তি-অস্ত্র আপনি এনেছেন এবং বরুণের পাশ ও এবং সমুদ্রে উৎপন্ন সর্ববিধ রত্ন আপনার ভাই নিশুম্ভের অধিকারে রয়েছে। অগ্নিদেবও কেবলমাত্র অগ্নিতেই শুদ্ধ হয় এমন দুটী বস্ত্র আপনাকে দিয়েছে।। ৯৮-৯৯ ।।

এবং দৈতেন্দ্র রত্নানি সমস্তান্যাহৃতানি তে।
স্ত্রীরত্নমেষা কল্যাণী ত্বয়া কস্মান্ন গৃহ্যতে৷৷ ১০০৷৷

হে দৈত্যরাজ! এইভাবে সমস্ত রত্নই আপনি সংগ্রহ করেছেন। সুতরাং স্ত্রীদের মধ্যে রত্নস্বরূপ এই কল্যাণময়ী দেবীকে কেন আপনি অধিকার করছেন না?' ॥ ১০০।

ঋষিরুবাচ ।। ১০১৷৷

মেধা ঋষি বললেন-৷৷ ১০১ ।।

নিশম্যেতি বচঃ শুম্ভঃ স তদা চণ্ডমুণ্ডয়োঃ।
প্রেষয়ামাস সুগ্রীবং দূতং দেব্যা মহাসুরম্৷৷ ১০২ ৷৷

ইতি চেতি চ বক্তব্যা সা গত্বা বচনান্মম।
যথা চাভ্যেতি সংপ্রীত্যা তথা কার্যং ত্বয়া লঘু। ১০৩৷৷

চণ্ড ও মুণ্ডের মুখে এই কথা শুনে শুম্ভ মহাসুর সুগ্রীবকে দূত করে দেবীর কাছে পাঠাল এবং তাকে বলে দিল-তুমি আমার নির্দেশ অনুসারে আমার জবানীতে তাকে গিয়ে এই এই কথা বলবে আর এমন ব্যবস্থা করবে যাতে প্রফুল্লমনে সে শীগগিরই এখানে আসে। ১০২-১০৩ ।

সতত্র গত্বা যত্রান্তে শৈলোদ্দেশেহতিশোভনে।
সা দেবী তাং ততঃ প্রাহ শ্লক্ষং মধুরয়া গিরা। ১০৪।

অতি রমণীয় পাহাড়ের চূড়ায় যেখানে দেবী বিরাজ করছিলেন সেখানে গিয়ে সেই দূত অতি মধুর স্বরে কোমলভাবে বলল৷৷ ১০৪ ৷৷

দূত উবাচ। ১০৫ ৷৷

দূত বলল-৷৷ ১০৫ ৷৷

দেবি দৈত্যেশ্বরঃ শুম্ভস্ত্রৈলোক্যে পরমেশ্বরঃ।
দূতোহহং প্রেষিতন্তেন ত্বৎ সকাশমিহাগতঃ৷৷ ১০৬৷৷

দেবি! দৈত্যেশ্বর শুম্ভ ত্রিভুবনের অধিপতি। আমি তার কাছ থেকে দূত হয়ে আপনার কাছে এসেছি। ১০৬ ।।

অব্যাহতাজ্ঞঃ সর্বাসু যঃ সদা দেবযোনিষু।
নির্জিতাখিলদৈত্যারিঃ স যদাহ শৃণুষ তৎ৷৷ ১০৭৷৷

দৈত্যরাজের আদেশ দেবতাদের মধ্যে অলঙ্ঘনীয়, কেউই তার অন্যথা করতে পারে না। তিনি সমস্ত দেবকুলকে পরাজিত করেছেন। তিনি আপনার জন্য যে বার্তা পাঠিয়েছেন তা আমি বলছি, আপনি শুনুন। ১০৭ ৷৷

মম ত্রৈলোক্যমখিলং মম দেবা বশানুগাঃ।
যজ্ঞভাগানহং সর্বানুপাশ্লামি পৃথক্ পৃথক্ ৷ ১০৮৷৷

সমগ্র ত্রিভুবন আমার অধীন। দেবরাজ আমার বশীভূত। দেবতাদের উদ্দেশ্যে ভিন্ন ভিন্ন ভাগে দেওয়া যজ্ঞভাগও আমিই পৃথক পৃথক ভাবে ভোগ করি৷৷ ১০৮ ৷৷

ত্রৈলোক্যে বররত্নানি মম বশ্যান্যশেষতঃ।
তথৈব গজরত্নং (১) চ হৃত্বা (২) দেবেন্দ্রবাহনম্৷৷ ১০৯ ৷৷

এই তিন লোকে যত শ্রেষ্ঠ রত্ন আছে, এ সবই আমার দখলে। দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত যে নাকি হস্তীশ্রেষ্ঠ, আমি তা বলপূর্বক হরণ করেছি।। ১০৯ ৷৷

ক্ষীরোদমথনোভূতমশ্বরত্নং মমামরৈঃ।
উচ্চৈঃশ্রবসসংজ্ঞং তৎ প্রণিপত্য সমর্পিতম্। ১১০৷৷

ক্ষীরসমুদ্রমন্থনের সময় যে অশ্বরত্ন উচ্চৈঃশ্রবা উদ্ভূত হয়েছিল, দেবতারা আমার পায়ে পড়ে সেই উচ্চৈঃশ্রবাকে আমাকে সমর্পণ করেছে ।। ১১০।

যানি চান্যানি দেবেষু গন্ধর্বেষুরগেষু চ।
রত্নভূতানি ভূতানি তানি ময্যেব শোভনে৷৷ ১১১ ৷৷

হে সুন্দরি! দেবতা, গন্ধর্ব ও সর্পদের অধিকারে যত কিছু রত্নতুল্য শ্রেষ্ঠ বস্তু আছে, সবই এখন আমার অধিকারে ৷৷ ১১১ ৷৷

স্ত্রীরত্বভূতাং ত্বাং দেবি লোকে মন্যামহে বয়ম্।
সা ত্বমস্মানুপাগচ্ছ যতো রত্নভুজো বয়ম্৷৷ ১১২৷৷

হে দেবি! আমরা এই জগতে স্ত্রীজাতির মধ্যে আপনাকে রত্নতুল্য মনে করি, সুতরাং আপনি আমার ঘরে আসুন; কারণ, আমিই শ্রেষ্ঠ রত্নসমূহের উপভোগের যোগ্য একমাত্র পাত্র। ১১২ ।।

মাং বা মমানুজং বাপি নিশুম্ভমুরুবিক্রমম্।
ভজ ত্বং চঞ্চলাপাঙ্গি রত্নভূতাসি বৈ যতঃ। ১১৩৷৷

হে চঞ্চলকটাক্ষি সুন্দরি! আপনি আমাকে অথবা মহাপরাক্রমশালী আমার ভাই নিশুম্ভকে বরণ করুন কারণ, আপনি রত্নস্বরূপা ৷৷ ১১৩ ৷৷

পরমৈশ্বর্যমতুলং প্রাপ্স্যসে মৎপরিগ্রহাৎ।
এতদ্বুদ্ধ্যা সমালোচ্য মৎপরিগ্রহতাং ব্রজ। ১১৪৷৷

আমাকে বরণ করলে আপনি অতুলনীয়া মহাঐশ্বর্য লাভ করবেন। বুদ্ধি দিয়ে এই সব ভালভাবে বিচার করে আপনি আমার পত্নী হউন'। ১১৪ ৷৷

ঋষিরুবাচ৷৷ ১১৫৷৷

মেধা ঋষি বললেন-৷৷ ১১৫ ।।

ইত্যুক্তা সা তদা দেবী গম্ভীরান্তঃস্মিতা জগৌ।
দুর্গা ভগবতী ভদ্রা যয়েদং ধার্যতে জগৎ৷৷ ১১৬৷৷

দূতের মুখে এই বার্তা শুনে, মঙ্গলময়ী ভগবতী দুর্গাদেবী, যিনি এই জগৎকে ধারণ করে রয়েছেন, মনে মনে গম্ভীরভাবে মুচকি হেসে বললেন-৷৷ ১১৬ ৷৷

দেব্যুবাচ।। ১১৭৷৷

দেবী বললেন-৷ ১১৭ ॥

সত্যমুক্তং ত্বয়া নাত্র মিথ্যা কিঞ্চিৎ ত্বয়োদিতম্।
ত্রৈলোক্যাধিপতিঃ শুন্তো নিশুম্ভশ্চাপি তাদৃশঃ।। ১১৮৷৷৷

হে দূত! তুমি সত্য কথাই বলেছ, এতে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই, শুম্ভ ত্রিলোকের অধিপতি এবং নিশুম্ভও তার তুল্য পরাক্রমশালী ।। ১১৮ ৷৷

কিং ত্বত্র যৎ প্রতিজ্ঞাতং মিথ্যা তৎ ক্রিয়তে কথম্।
ক্রয়তামল্পবুদ্ধিত্বাৎ প্রতিজ্ঞা যা কৃতা পুরা৷ ১১৯৷৷

কিন্তু এই বিষয়ে আমার যে একটা প্রতিজ্ঞা রয়েছে সেই প্রতিজ্ঞাটা শোনো-৷৷ ১১৯ ।।

যো মাং জয়তি সংগ্রামে যো মে দর্পং ব্যপোহতি।
যো মে প্রতিবলো লোকে সমে ভর্তা ভবিষ্যতি৷৷ ১২০৷৷

যে আমাকে যুদ্ধে হারাতে পারবে, যে আমার দর্পচূর্ণ করতে পারবে এবং জগতে যে আমার সমতুল শক্তিশালী হবে সেই আমার স্বামী হবে'।। ১২০।

তদাগচ্ছতু শুম্ভোহত্র নিশুন্তো বা মহাসুরঃ।
মাং জিত্বা কিং চিরেণাত্র পাণিং গৃহ্বাতু মে লঘু। ১২১৷৷

অতএব শুম্ভ অথবা মহাসুর নিশুম্ভ স্বয়ংই এখানে আসুক এবং আমাকে পরাজিত করে শীগগিরই আমার পাণিগ্রহণ করুক, আর বিলম্বের কী প্রয়োজন? ৷৷ ১২১ ৷

দূত উবাচ। ১২২৷৷

দূত বলল-৷ ১২২।

অবলিপ্তাসি মৈবং ত্বং দেবি ব্রহি মমাগ্রতঃ।
ত্রৈলোক্যে কঃ পুমাংস্তিষ্ঠেদগ্রে শুম্ভনিশুম্ভয়োঃ ৷৷ ১২৩ ৷৷

হে দেবি! আপনি গর্বিত হয়ে রয়েছেন, আমার সামনে এরকম কথা বলবেন না। ত্রিভুবনে এমন কোন্ পুরুষ আছে যে শুম্ভ ও নিশুন্তের সামনে দাঁড়াতে পারে? ।। ১২৩।

অন্যেষামপি দৈত্যানাং সর্বে দেবা ন বৈ যুধি।
তিষ্ঠন্তি সম্মুখে দেবি কিং পুনঃ স্ত্রী ত্বমেকিকা৷৷ ১২৪৷৷

হে দেবি! যুদ্ধে অন্যান্য দৈত্যদের সম্মুখে যখন সমস্ত দেবতা একত্রে টিঁকতে পারে না, তাহলে আপনি একাকিনী স্ত্রী হয়ে কিরূপে সম্মুখীন হবেন? ।। ১২৪ ।

ইন্দ্রাদ্যাঃ সকলা দেবান্তঙ্গুর্যেষাং ন সংযুগে।
শুম্ভাদীনাং কথং তেষাং স্ত্রী প্রযাস্যসি সম্মুখম্৷৷ ১২৫৷৷

ইন্দ্রাদি দেবতারা পর্যন্ত যে শুম্ভাসুরদের সামনে যুদ্ধে স্থির থাকতে পারে না, সেখানে নারী হয়ে আপনি কী করে স্থির থাকবেন? । ১২৫।।

সা ত্বং গচ্ছ ময়ৈবোক্তা পার্শ্বং শুম্ভনিশুম্ভয়োঃ।
কেশাকর্ষণনিধৃতগৌরবা মা গমিষ্যসি৷৷ ১২৬৷৷

সুতরাং আমার কথা শুনে আপনি শুম্ভ-নিশুন্তের কাছে চলুন। একাজ করলে আপনার সম্মানও পুরোপুরি রক্ষা হবে; নয়ত চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলে, আপনার সম্মান ধূলায় লুটিয়ে যাবে। ১২৬ ৷৷

দেব্যুবাচ৷৷ ১২৭৷৷

দেবী বললেন-৷৷ ১২৭ ।।

এবমেতদ্ বলী শুন্তো নিশুম্ভশ্চাতিবীর্যবান্। কিং করোমি প্রতিজ্ঞা মে যদনালোচিতা পুরা৷৷ ১২৮৷৷

তোমার কথা ঠিকই। শুম্ভ বলবান আর নিশুম্ভও অতি পরাক্রমশালী; কিন্তু কী করব? আমি যে না বুঝে আগেই প্রতিজ্ঞা করে রেখেছি। ১২৮ ।

স ত্বং গচ্ছ ময়োক্তং তে যদেতৎ সর্বমাদৃতঃ।
তদাচক্ষাসুরেন্দ্রায় স চ যুক্তং করোতু তৎ।। ওঁ ৷৷ ১২৯৷৷

সুতরাং তুমি এখন যাও; আমি তোমাকে যা কিছু বললাম, সেই সব দৈত্যরাজকে সাদরে গিয়ে জানাও। তারপর সে যা ভাল মনে হয় করবে। ১২৯ ৷৷

ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যে দেব্যা দূতসংবাদো নাম পঞ্চমোহধ্যায়ঃ ॥ ৫ ৷৷

এই অধ্যায়ে উবাচ-৯, ত্রিপাদশ্লোক-৬৬, শ্লোক-৫৪, মোট-১২৯, আদি হতে সর্বমোট ৩৮৮।

শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিক মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যপ্রসঙ্গে দেবীর সহিত দূতের সংবাদ-বিষয়ক পঞ্চম অধ্যায় সম্পূর্ণ হল৷ ৫ ॥