Durga Saptashati Image

অথ মূর্তিরহস্যম্

মূর্তিরহস্য

ঋষিরুবাচ

ওঁ নন্দা ভগবতী নাম যা ভবিষ্যতি নন্দজা। স্তুতা সা পূজিতা ভক্ত্যা বশীকুর্যাজ্জগৎত্রয়ম্। ১ ৷৷

ঋষি বললেন-হে রাজন! নন্দ থেকে উৎপন্ন হবেন যে নন্দা নাম্নী দেবী, সেই দেবীর ভক্তিভরে স্তুতি ও পূজা করলে তিনি তাঁর উপাসককে ত্রিলোকের অধীশ্বর করেন। ১ ।।

কনকোত্তমকান্তিঃ সা দেবী কনকবর্ণাভা সুকান্তিকনকাম্বরা। কনকোত্তমভূষণা৷৷ ২৷৷

তিনি উজ্জ্বল-সুবর্ণ কান্তিযুক্তা। তিনি স্বর্ণপ্রভ বস্ত্রপরিহিতা। তিনি কনকবর্ণা ও উত্তম স্বর্ণালঙ্কারশোভিতা৷৷ ২৷৷

কমলাঙ্কুশপাশাজৈরলঙ্কৃত-চতুর্ভুজা। ইন্দিরা কমলা লক্ষ্মীঃ সা শ্রী রুক্মাম্বুজাসনা ৷৷ ৩ ৷৷

তাঁর চারটা হাত পদ্ম, অঙ্কুশ, পাশ ও শঙ্খে শোভিত। তিনি ইন্দিরা, কমলা, লক্ষ্মী, শ্রী ও রুক্সাম্বুজাসনা (সুবর্ণময় কমলের আসনে অধিষ্ঠিতা) ইত্যাদি নামে বন্দিতা। ৩ ।।

যা রক্তদন্তিকা নাম দেবী প্রোক্তা ময়ানঘ। তস্যাঃ স্বরূপং বক্ষ্যামি শৃণু সর্বভয়াপহম্৷ ৪ ৷৷

হে নিষ্পাপ নরেশ! প্রথমে আমি রক্তদন্তিকা দেবীর স্বরূপ বর্ণনা করব, শোনো। তিনি সর্বভয়নাশিনী। ৪ ||

রক্তাম্বরা রক্তবর্ণা রক্তায়ুধা রক্তসর্বাঙ্গভূষণা। রক্তনেত্রা রক্তকেশাতিভীষণা।। ৫ ॥

রক্ততীক্ষনখা রক্তদশনা রক্তদন্তিকা। পতিং নারীবানুরক্তা দেবী ভক্তং ভজেজ্জনম্।। ৬ ৷৷

তিনি রক্তবসনা, রক্তবর্ণা, রক্তবর্ণ অলঙ্কারে ভূষিতা। তাঁর অস্ত্র-শস্ত্র, নেত্র, কেশ, তীক্ষ্ণ নখসমূহ ও দন্তপংক্তি, সবই রক্তবর্ণ; এইজন্য তিনি রক্তদন্তিকা নামে অভিহিতা এবং অতিভীষণদর্শনা। নারী যেমন পতির প্রতি অনুরক্তা হন, দেবীও তাঁর ভক্তের প্রতি (মায়ের মতো) স্নেহশীলা হয়ে অনুরাগিণী হন । ৫-৬।

বসুধেব বিশালা সা সুমেরুযুগলস্তনী। দীর্ঘো লম্বাবতিকূলৌ তাবতীব মনোহরৌ। ৭ ৷৷

কর্কশাবতিকান্তৌ তৌ সর্বানন্দপয়োনিষী। ভক্তান্ সম্পায়য়েদ্দেবী সর্বকামদুঘৌ স্তনৌ৷ ৮ ॥

দেবী রক্তদন্তিকার শরীর বিশ্বের মতো বিশাল। তাঁর স্তনযুগল সুমেরু পর্বতের মতো লম্বা, দীর্ঘ, অতিস্থূল, অতীব মনোহর, কর্কশ হয়েও অত্যন্ত কমনীয় এবং পূর্ণানন্দসমুদ্র। সর্বকামনাপূরক সেই স্তন দুটী দেবী তাঁর ভক্তদের পান করিয়ে থাকেন।। ৭-৮ ।।

খাং পাত্রঞ্চ মুসলং লাঙ্গলঞ্চ বিভর্তি সা। আখ্যাতা রক্তচামুণ্ডা দেবী যোগেশ্বরীতি চ॥৯৷

তাঁর চার হাতে তিনি খড়া, পানপাত্র, মুসল ও লাঙ্গল ধারণ করেন। তিনিই রক্তচামুণ্ডা ও যোগেশ্বরী দেবী নামে অভিহিতা হন।। ৯।।

অনয়া ব্যাপ্তমখিলং জগৎ স্থাবরজঙ্গমম্। ইমাং যঃ পূজয়েদ্ ভক্ত্যা স ব্যাপ্নোতি চরাচরম্। ১০৷

সমগ্র চরাচর জগৎ তাঁর দ্বারা পরিব্যাপ্ত। এই রক্তদন্তিকা দেবীকে যে ভক্তিভরে পূজা করে সে নিজেও চরাচর জগতে পরিব্যাপ্ত হয়ে যায় ।। ১০।।

(ভুক্তা ভোগান্ যথাকামং দেবীসাযুজ্যমাপুয়াৎ।)
অধীতে য ইমং নিত্যং রক্তদন্তা-বপুঃস্তবম্। তং সা পরিচরেদ্দেবী পতিং প্রিয়মিবাঙ্গনা৷৷ ১১ ৷৷

(সে যথেষ্ট ভোগ উপভোগ করে পরিশেষে দেবীর সাথে সাযুজ্য প্রাপ্ত হয়)। যে রক্তদন্তিকা দেবীর মূর্তির স্তব নিত্য পাঠ করে, দেবী স্নেহভরে তার প্রতিপালনরূপ পরিচর্যা করেন- যেমনভাবে নারী তার প্রিয়তম পতিকে পরিচর্যা করে। ১১ ।।

শাকম্ভরী নীলবর্ণা নীলোৎপলবিলোচনা। গম্ভীরনাভিস্ত্রিবলী-বিভূষিত-তন্দরী ॥ ১২৷

শাকম্ভরী দেবী নীলবর্ণা। তাঁর চোখ নীলপদ্মের মতো, নাভিদেশ গভীর এবং ত্রিবলীভূষিত উদর (মধ্যভাগ) ক্ষীণ। ১২ ৷

সুকর্কশ-সমোত্তুঙ্গ-বৃত্তপীনঘনস্তনী। মুষ্টিং শিলীমুখাপূণং কমলং কমলালয়া৷৷ ১৩৷৷

পুষ্পপল্লবমূলাদি-ফলাঢ্যং শাকসঞ্চয়ম্। কাম্যানন্তরসৈযুক্তং ক্ষুৎ-তৃমৃত্যু-ভয়াপহম্৷৷ ১৪ ৷৷

কামুকঞ্চ ক্ষুরৎকান্তি বিভ্রতী পরমেশ্বরী। শাকম্ভরী শতাক্ষী সা সৈব দুর্গা প্রকীর্তিতা৷৷ ১৫ ৷

তাঁর স্তনযুগল সুকর্কশ, সমান, উন্নত, সুগোল, স্থূল এবং ঘনসন্নিবিষ্ট। সেই পরমেশ্বরী কমলাসনা এবং হাতে বাণপূর্ণ মুষ্টি, পদ্ম, শাকসমূহ ও প্রকাশমান ধনুক ধারণ করেন। ঐ শাকসমূহ অনন্ত মনোবাঞ্ছিত রসযুক্ত এবং ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও মৃত্যুভয়নাশক এবং ফুল, পল্লব, মূলাদি ও ফলযুক্ত। এই শাকম্ভরী দেবীকেই শতাক্ষী তথা দুর্গা বলা হয়। ১৩-১৫ ৷৷

বিশোকা দুষ্টদমনী শমনী দূরিতাপদাম্। উমা গৌরী সতী চণ্ডী কালিকা সা চ পার্বতী৷ ১৬৷

তিনি শোকরহিতা, দুষ্টদমনী এবং পাপ ও বিপদতারিণী। উমা, গৌরী, সতী, চণ্ডী, কালিকা ও পাবতীও তিনিই। ১৬ ৷৷

শাকম্ভরীং স্তুবন্ ধ্যায়ন্ জপন্ সম্পূজয়ন্নমন্। অক্ষয্যমশ্নতে শীঘ্রমন্নপানামৃতং ফলম্।। ১৭ ৷৷

শাকম্ভরী দেবীর স্তুতি, ধ্যান, জপ, পূজা ও বন্দনা করলে শীঘ্রই অন্ন, পান ও অমৃতরূপ অক্ষয় ফল লাভ হয়। ১৭ ৷৷

ভীমাপি নীলবর্ণা সা দংষ্টাদশন-ভাসুরা। বিশাললোচনা নারী বৃত্তপীন-পয়োধরা। ১৮ ॥

চন্দ্রহাসঞ্চ ডমরুং শিরঃ পাত্রঞ্চ বিভ্রতী। একবীরা কালরাত্রিঃ সৈবোক্তা কামদা স্তুতা৷ ১৯৷৷

ভীমাদেবীও নীলবর্ণা। তাঁর দাড়া (লম্বা দাঁত) ও দন্তপংক্তি উজ্জ্বল। তাঁর নয়নদ্বয় বিশাল, তিনি স্ত্রীরূপা। তাঁর স্তনযুগল গোলাকার ও স্থূল। তিনি নিজের হাতে চন্দ্রহাসনামক খড়া, ডমরু, মস্তক ও পানপাত্র ধারণ করেন। তিনিই একবীরা, কালরাত্রি তথা কামদা নামে উক্তা ও স্তুতা হন৷৷ ১৮-১৯৷৷

তেজোমণ্ডলদুর্ধর্ষা ভ্রামরী চিত্রকান্তিভৃৎ। চিত্রানুলেপনা দেবী চিত্রাভরণভূষিতা। ২০॥

ভ্রামরী দেবী বিচিত্র (নানারকম) বর্ণধারিণী। তাঁর তেজোমণ্ডলের দরুন তাঁকে দুর্দ্ধর্ষা দেখায়। তিনি নানাবর্ণ অনুলেপনে অনুলিপ্তা ও বিচিত্র অলঙ্কার- বিভূষিতা। ২০ ।

চিত্রভ্রমরপাণিঃ সা মহামারীতি গীয়তে। ইত্যেতা মূর্তয়ো দেব্যা যাঃ খ্যাতা বসুধাধিপ৷ ২১৷৷

চিত্রভ্রমরপাণি ও মহামারী ইত্যাদি নামে তাঁর মহিমা গীত হয়। হে রাজন! এইভাবে জগন্মাতা চণ্ডিকা দেবীর এইসব মূর্তি বর্ণিত হল। ২১ ।।

জগন্মাতুশ্চণ্ডিকায়াঃ কীর্তিতাঃ কামধেনবঃ। ইদং রহস্যং পরমং ন বাচ্যং কস্যচিৎ ত্বয়া। ২২ ৷৷

এই সকল কীর্তন করলে তিনি কামধেনুর মতো সমস্ত কামনা পূর্ণ করেন। ইহা এক পরম গোপনীয় রহস্য। এই রহস্য যাকে-তাকে বলা উচিত নয়।। ২২ ।।

ব্যাখ্যানং দিব্যমূর্তীনামভীষ্টফলদায়কম্। তস্মাৎ সর্বপ্রযত্নেন দেবীং জপ নিরন্তরম্ ।। ২৩৷৷

দিব্যমূর্তির এই আখ্যান মনোবাঞ্ছাপূরণকারী, সুতরাং সর্বপ্রযত্নে তুমি নিরন্তর দেবীর জপ (আরাধনা) করতে থাক।। ২৩ ।।

সপ্তজন্মার্জিতৈর্ঘোরৈব্রহ্মহত্যাসমৈরপি। পাঠমাত্রেণ মন্ত্রাণাং মুচ্যতে সর্বকিল্বিষৈঃ। ২৪ ৷৷

সপ্তশতীর পাঠমাত্রই মানুষ সপ্তজন্মার্জিত ব্রহ্মহত্যাদিরূপ ঘোর পাপ এবং সমস্ত কলুষ থেকে বিমুক্ত হয়। ২৪ ৷৷

দেব্যা ধ্যানং ময়া খ্যাতং গুহ্যাদ্ গুহ্যতরং মহৎ। তস্মাৎ সর্বপ্রযত্নেন সর্বকামফলপ্রদম্৷ ২৫ ৷৷

এইজন্য আমি পূর্ণ প্রযত্ন করে গুহ্য থেকে গুহ্যতর ধ্যানের বর্ণনা করলাম, যা নাকি সমস্ত মনোবাঞ্ছা-পূরণকারী। ২৫ ।।

(এতস্যান্তং প্রসাদেন সর্বমান্যো ভবিষ্যসি।
সর্বরূপময়ী দেবী সর্বং দেবীময়ং জগৎ।
অতোহহং বিশ্বরূপাং তাং নমামি পরমেশ্বরীম্।)

(তাঁর কৃপায় তুমি সর্বমান্য হবে। দেবী সর্বরূপময়ী আর সমস্ত জগৎ দেবীময়ী। অতএব আমি সেই বিশ্বরূপা পরমেশ্বরীকে প্রণাম করি।)

ইতি মূর্তিরহস্যং সম্পূর্ণম্।

মূর্তিরহস্য সম্পূর্ণ হল।