অথ নবার্ণবিধিঃ
এইভাবে রাত্রিসূক্ত ও দেব্যথর্বশীর্ষ পাঠ করার পরে নিম্নলিখিতরাপে নিি নবার্ণমন্ত্রের বিনিয়োগ, ন্যাস ও ধ্যান করা দরকার।
শ্রীগণপতির্জয়তি। ওঁ অস্য শ্রীনবার্ণমন্ত্রস্য ব্রহ্মবিষ্ণুরুদ্রা ঋষয়ঃ, গায়ত্র্যষ্ণিগনুষ্টুভচ্ছন্দাংসি, শ্রীমহাকালীমহালক্ষ্মীমহাসরস্বত্যো দেবতাঃ, ঐং বীজম্, হ্রীং শক্তিঃ, ক্লীং কীলকম্, শ্রীমহাকালীমহালক্ষ্মীমহাসরস্বতীপ্রীত্যর্থে জপে বিনিয়োগঃ।
এই মন্ত্র পাঠ করে জল দিবে।
নিম্নলিখিত ন্যাসবাক্যদের মধ্যে এক-একটি উচ্চারণ করে ডান হাতের আঙ্গুলগুলি একত্র করে ক্রমশঃ মস্তক, মুখ, হৃদয়, গুহ্য, দুই চরণ ও নাভি এই সব অঙ্গে স্পর্শ করতে হবে।
ঋষ্যাদিন্যাসঃ
ব্রহ্মবিষ্ণুরুদ্রঋষিভ্যো নমঃ, শিরসি। গায়ত্র্যষ্ণিগনুষ্টুপ্ন্দোভ্যো নমঃ, মুখে। মহাকালীমহালক্ষ্মীমহাসরস্বতীদেবতাভ্যো নমঃ, হৃদি। ঐং বীজায় নমঃ, গুহ্যে। হ্রীং শক্তয়ে নমঃ, পাদয়োঃ। ক্লীং কীলকায় নমঃ, নাভৌ।
'ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে'-এই মূল মন্ত্রে হাত শুদ্ধ করে করন্যাস করবে।
করন্যাসঃ
করন্যাসে হাতের বিভিন্ন আঙ্গুল, হাতের তালু ও হাতের পৃষ্ঠভাগে মন্ত্রের ন্যাস (স্থাপন) করা হয়। এইভাবেই অঙ্গন্যাসের সময় হৃদয়াদি অঙ্গে মন্ত্রের ন্যাস (স্থাপন) করা হয়। মন্ত্রকে জাগ্রত ও মূর্তিমান চিন্তা করে সেই সব অঙ্গের নাম উচ্চারণ করে সেই মন্ত্রময় দেবতাদের স্পর্শ ও স্তুতি করা হয়। এইভাবে করলে পাঠক বা জাপক স্বয়ং মন্ত্রময় হয়ে মন্ত্রদেবতাদ্বারা সর্বথা সুরক্ষিত
হয়। তার বাহ্য ও অভ্যন্তর শুদ্ধ হয়ে যায়, দিব্য শক্তি লাভ হয় এবং সাধনা নির্বিঘ্নতা লাভ করে পূর্ণ ও পরমফলদায়ক হয়।
ওঁ ঐং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ (দুই হাতের দুই তর্জনী দিয়ে দুই অঙ্গুষ্ঠকে স্পর্শ করবে)।
ওঁ হ্রীং তর্জনীভ্যাং নমঃ (দুই হাতের অঙ্গুষ্ঠ দিয়ে দুই তর্জনীতে স্পর্শ করবে)।
ওঁ ক্লীং মধ্যমাভ্যাং নমঃ (অঙ্গুষ্ঠ দিয়ে দুই মধ্যমাকে স্পর্শ করবে)।
ওঁ চামুণ্ডায়ৈ অনামিকাভ্যাং নমঃ (এইরূপে অনামিকা অঙ্গুলিদ্বয় স্পর্শ করবে)।
ওঁ বিচ্চে কনিষ্ঠিকাভ্যাং নমঃ (কনিষ্ঠা অঙ্গুলিদ্বয় স্পর্শ করবে)।
ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে করতলকরপৃষ্ঠাভ্যাং নমঃ (হাতের তালু এবং পৃষ্ঠদেশ স্পর্শ করবে)।
হৃদয়াদিন্যাসঃ
এই ন্যাসে ডান হাতের আঙ্গুলদের দিয়ে 'হৃদয়' আদি স্পর্শ করা হয়।
ওঁ ঐং হৃদয়ায় নমঃ (ডান হাতের পাঁচ অঙ্গুলি দিয়ে হৃদয় স্পর্শ)।
ওঁ হ্রীং শিরসে স্বাহা (ডান হাতের পাঁচ অঙ্গুলি দিয়ে মস্তক স্পর্শ)।
ওঁ ক্লীং শিখায়ৈ বষট্ (ডান হাতের পাঁচ অঙ্গুলি দিয়ে শিখাদেশ স্পর্শ)।
ওঁ চামুণ্ডায়ৈ কবচায় হুম্ (ডান হাতের আঙ্গুলগুলি দিয়ে বাম স্কন্ধ এবং বাম হাতের অঙ্গুলিদের দিয়ে দক্ষিণ স্কন্ধ স্পর্শ)।
ওঁ বিচ্চে নেত্রত্রয়ায় বৌষট্ (ডান হাতের অঙ্গুলিদের অগ্রভাগ দিয়ে দুই নেত্র ও ভ্রমধ্য স্পর্শ)।
ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে অস্ত্রায় ফট্ (এই বাক্য উচ্চারণ করে
ডান হাত দিয়ে মস্তকের ওপর দিয়ে বাঁদিকের পেছন দিকে নিয়ে গিয়ে ডান দিকের সামনে নিয়ে আসা এবং তর্জনী তথা মধ্যমা অঙ্গুলিদের দিয়ে বাঁ হাতের তালুর ওপর তালি দেবে)।
অক্ষরন্যাসঃ
নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠ করে ডান হাতের অঙ্গুলাগ্রের দ্বারা যথাক্রমে শিখাদেশ, দক্ষিণ নেত্র ইত্যাদি স্পর্শ করা।
ওঁ ঐং নমঃ, শিখায়াম্। ওঁ হ্রীং নমঃ, দক্ষিণনেত্রে। ওঁ ক্লীং নমঃ, বামনেত্রে। ওঁ চাং নমঃ, দক্ষিণকর্ণে। ওঁ মুং নমঃ, বামকর্ণে। ওঁ ডাং নমঃ, দক্ষিণনাসাপুটে। ওঁ য়ৈং নমঃ, বামনাসাপুটে। ওঁ বিং নমঃ, মুখে। ওঁ চেং নমঃ, গুহ্যে।
এইভাবে ন্যাস করে মূলমন্ত্র দ্বারা আটবার ব্যাপক (দুই হাত দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গ স্পর্শ) করবে, তারপর প্রত্যেক দিকে তুড়ি দিয়ে ন্যাস করা-
দিন্যাসঃ
ওঁ ঐং প্রাচ্যে নমঃ। ওঁ ঐং আগ্নেয্যৈ নমঃ। ওঁ হ্রীং দক্ষিণায়ৈ নমঃ। ওঁ হ্রীং নৈঋত্যৈ নমঃ। ওঁ ক্লীং প্রতীচ্যে নমঃ। ওঁ ক্লীং বায়ব্যৈ নমঃ। ওঁ চামুণ্ডায়ৈ উদীচ্যৈ নমঃ। ওঁ চামুণ্ডায়ৈ ঐশান্যৈ নমঃ। ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে ঊধর্বায়ৈ নমঃ। ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ স বিচ্চে ভূম্যৈ নমঃ।
ধ্যানম্
খাং চক্রগদেষুচাপপরিঘাঞ্ছলং ভুশুণ্ডীং শিরঃ শঙ্খং সংদধতীং করৈস্ত্রিনয়নাং সর্বাঙ্গভূষাবৃতাম্। নীলাম্মদ্যুতিমাস্যপাদদশকাং সেবে মহাকালিকাং যামস্তোৎ স্বপিতে হরৌ কমলজো হন্ত্রং মধুং কৈটভম্৷৷ ১ ॥
অক্ষত্রপরশুং গদেষুকুলিশং পদ্মং ধনুঃ কুণ্ডিকাং দণ্ডং শক্তিমসিং চ চর্ম জলজং ঘন্টাং সুরাভাজনম্। শূলং পাশসুদর্শনে চ দধতীং হস্তৈঃ প্রসন্নাননাং সেবে সৈরিভমর্দিনীমিহ মহালক্ষ্মীং সরোজজিতাম্।। ২।॥
ঘণ্টাশূলহলানি শঙ্খমুসলে চক্রং ধনুঃ সায়কং হস্তাজৈর্দধতীং ঘনান্তবিলসচ্ছীতাংশুতুল্যপ্রভাম্। গৌরীদেহসমুদ্ভবাং ত্রিজগতামাধারভূতাং মহা- পূর্বামন্ত্র সরস্বতীমনুভজে শুম্ভাদিদৈত্যার্দিনীম্ ৷৷ ৩ ।।
তারপর ঐং হ্রীং অক্ষমালিকায়ৈ নমঃ এই মন্ত্রে মালা পূজা করে প্রার্থনা-
ওঁ মাং মালে মহামায়ে সর্বশক্তিস্বরূপিণি।
চতুর্বর্গস্তুয়ি ন্যস্তস্তস্মান্মে সিদ্ধিদা ভব।।
ওঁ অবিঘ্নং কুরু মালে ত্বং গৃহ্ণামি দক্ষিণে করে।
জপকালে চ সিদ্ধ্যর্থং প্রসীদ মম সিদ্ধয়ে।।
ওঁ অক্ষমালাধিপতয়ে সুসিদ্ধিং দেহি দেহি সর্বমন্ত্রার্থসাধিনি সাধয় সাধয় সর্বসিদ্ধিং পরিকল্পয় পরিকল্পয় মে স্বাহা।
তারপর 'ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে' এই মন্ত্র ১০৮ বার জপ করবে এবং-
গুহ্যাতিগুহ্যগোত্রী ত্বং গৃহাণাস্মৎকৃতং জপম্।
সিদ্ধির্ভবতু মে দেবি ত্বৎ প্রসাদান্মহেশ্বরি।।
এই শ্লোক পাঠ করে দেবীর বাম হস্তের উদ্দেশ্যে জপ নিবেদন করবে।
সপ্তশতীন্যাসঃ
তারপর সপ্তশতীর বিনিয়োগ, ন্যাস ও ধ্যান করা উচিত। ন্যাসের প্রণালী
আগের মতো-
প্রথমমধ্যমোত্তরচরিত্রাণাং ব্রহ্মবিষ্ণুরুদ্রা ঋষয়ঃ, শ্রীমহাকালী মহালক্ষ্মীমহাসরস্বত্যো দেবতাঃ, গায়ত্র্যষ্ণিগনুষ্টুভচ্ছন্দাংসি, নন্দাশাকম্ভরীভীমাঃ শক্তয়ঃ, রক্তদন্তিকাদুর্গাভ্রামর্যো বীজানি, অগ্নি বায়ুসূর্যাস্তত্ত্বানি, ঋগ্যজুঃসামবেদা ধ্যানানি, সকলকামনাসিদ্ধয়ে শ্রীমহাকালীমহালক্ষ্মী-মহাসরস্বতীদেবতাপ্রীত্যর্থে জপে বিনিয়োগঃ।
ওঁ খড়িানী শূলিনী ঘোরা গদিনী চক্রিণী তথা।
শঙ্খিনী চাপিনী বাণভূশুণ্ডীপরিঘায়ুধা(১)। অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ।
ওঁ শূলেন পাহি নো দেবি পাহি খড়গেন চাম্বিকে।
ঘণ্টাম্বনেন নঃ পাহি চাপজ্যানিঃস্বনেন চ৷ তর্জনীভ্যাং নমঃ। খে
ওঁ প্রাচ্যাং রক্ষ প্রতীচ্যাং চ চণ্ডিকে রক্ষ দক্ষিণে।
ভ্রামণেনাত্মশূলস্য উত্তরস্যাং তথেশ্বরি।। মধ্যমাভ্যাং নমঃ। দে
ওঁ সৌম্যানি যানি রূপাণি ত্রৈলোক্যে বিচরন্তি তে।
যানি চাত্যর্থঘোরাণি তৈ রক্ষাস্মাংস্তথা ভুবম্। অনামিকাভ্যাং নমঃ।
ওঁ খড়াশূলগদাদীনি যানি চাস্ত্রাণি তেহম্বিকে।
করপল্লবসঙ্গীনি তৈরস্মান্ রক্ষ সর্বতঃ ।। কনিষ্ঠিকাভ্যাং নমঃ।
ওঁ সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে।
ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোহস্তু তে ।। করতলকরপৃষ্ঠাভ্যাং নমঃ।
ওঁ খড়িানী শূলিনী ঘোরা. হৃদয়ায় নমঃ।
ওঁ শূলেন পাহি নো দেবি. শিরসে নমঃ। স্বাহা।
ওঁ প্রাচ্যাং রক্ষ প্রতীচ্যাং চ.-শিখায়ৈ বষট্।
ওঁ সৌম্যানি যানি রূপাণি. -কবচায় হুম্।
ওঁ খড়াশূলগদাদীনি. নেত্রত্রয়ায় বৌষট্।
ওঁ সর্বস্বরূপে সর্বেশে. অস্ত্রায় ফট্।
ধ্যানম্
বিদ্যুদ্দামসমপ্রভাং মৃগপতিজ্ঞন্ধস্থিতাং ভীষণাং
কন্যাভিঃ করবালখেটবিলসদ্ধস্তাভিরাসেবিতাম্।
হন্তৈশ্চক্রগদাসিখেটবিশিখাংশ্চাপং গুণং তর্জনীং
বিভ্রাণামনলাত্মিকাং শশিধরাং দুর্গাং ত্রিনেত্রাং ভজে ।
এর পর প্রথম চরিত্রের বিনিয়োগ এবং ধ্যান করে 'মার্কণ্ডেয় উবাচ' থেকে সপ্তশতীর পাঠ আরম্ভ করা। প্রত্যেক চরিত্রের বিনিয়োগ মূল সপ্তশতীর (চণ্ডীর) সঙ্গে দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক অধ্যায়ে প্রারম্ভে অর্থসহিত ধ্যানও দেওয়া হয়েছে। সপ্তশতীপাঠ (চণ্ডী পাঠ) শ্রদ্ধার সঙ্গে ভগবতীর প্রতি ধ্যানযুক্ত হয়ে করা উচিত। সুমিষ্ট স্বরে, স্পষ্ট উচ্চারণে, পদের বিভাগ, উত্তম স্বর, ধীরে ধীরে পাঠ, ছন্দময় পাঠ—এসব হল পাঠকের গুণ। (২) পাঠ করার সময় যে সুর দিয়ে গায়, তাড়াহুড়ো করে, অস্পষ্ট উচ্চারণ করে, মাথা দোলায়, নিজের হাতে লেখা পুস্তক পাঠ করে, অর্থ বোঝে না এবং অসম্পূর্ণ মন্ত্রই কণ্ঠস্থ করে, সেই পাঠক হল অধম শ্রেণীর। (৩) একটী অধ্যায় যতক্ষণ শেষ না হয়, ততক্ষণ পাঠ বন্ধ না করা। যদি প্রমাদবশতঃ অধ্যায়ের মাঝখানে পাঠে বিরতি ঘটে, তবে পুণরায় প্রতিবার সম্পূর্ণ অধ্যায় পাঠ করা উচিত। (১) অজ্ঞানতাবশতঃ পুস্তক যদি হাতের উপর রেখে পাঠ করা হয়, তবে পাঠের অর্ধেক ফল লাভ হয়। স্তোত্র পাঠ মানসিকভাবে করতে নেই, বাচিক হওয়া চাই। শব্দের স্পষ্ট উচ্চারণই উত্তম পাঠ বলা হয়। (২) খুব জোরে জোরে উচ্চৈঃস্বরে পড়া বা বলা বর্জন করা উচিত। যত্ন এবং শুদ্ধ ও স্থির চিত্তে পাঠ করা উচিত। (৩) পাঠ যদি কণ্ঠস্থ না থাকে, তবে বই দেখেই পাঠ করা দরকার। নিজের হাতে লেখা অথবা ব্রাহ্মণেতর পুরুষের লেখা স্তোত্র পাঠ করবে না। (*) পুস্তক যদি এক সহস্র শ্লোক মন্ত্রের হয় তবে বই দেখেই পাঠ করা কর্তব্য; এর থেকে কম সংখ্যক শ্লোক হলে সেই শ্লোক মুখস্থ করে বিনা পুস্তকেও পাঠ করা যায়।(৭) এক একটা অধ্যায় সমাপ্ত হলে 'ইতি' 'বধ' 'অধ্যায়' তথা 'সমাপ্ত' শব্দের উচ্চারণ করা উচিত নয়। (৬)