Durga Saptashati
অথ দেব্যাঃ কবচম্
দেবীকবচ
ওঁ অস্য শ্রীচণ্ডীকবচস্য ব্রহ্মা ঋষিঃ, অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ, চামুণ্ডা দেবতা, অঙ্গন্যাসোক্তমাতরো বীজম্, দিগন্ধদেবতাস্তত্ত্বম্, শ্রীজগদম্বাপ্রীত্যর্থে সপ্তশতীপাঠাঙ্গত্বেন জপে বিনিয়োগঃ।
ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ ।।
ওঁ চণ্ডিকা দেবীকে নমস্কার করি।
মার্কণ্ডেয় উবাচ
ওঁ যদ্ গুহ্যং পরমং লোকে সর্বরক্ষাকরং নৃণাম্।
যন্ন কস্যচিদাখ্যাতং তন্মে ব্রহি পিতামহ ৷৷ ১ ৷৷
মার্কণ্ডেয় মুনি বললেন-পিতামহ! এই সংসারে পরম গোপনীয় তথা মানুষকে সর্বতোভাবে রক্ষাকারী এবং আজ পর্যন্ত যা আপনি অন্য কাউকে বলেননি, এরকম কোনও সাধন আমাকে বলুন৷৷ ১ ৷
৷
ব্রহ্মোবাচ অস্তি গুহ্যতমং বিপ্র সর্বভূতোপকারকম্।
দেব্যাস্ত কবচং পুণ্যং তৎ শৃণুষ মহামুনে ৷৷২৷৷
ব্রহ্মা বললেন-ব্রহ্মন্! এরকম সাধন তো একমাত্র দেবীকবচই আছে, যা গোপনীয় থেকেও গুহ্যতম, পবিত্র তথা সমস্ত প্রাণীবর্গের মঙ্গলকারী। হে মহামুনি! তা শ্রবণ করুন। ২ ।।
প্রথমং শৈলপুত্রী চ দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী।
তৃতীয়ং চন্দ্রঘণ্টেতি কৃষ্মাণ্ডেতি চতুর্থকম্ ৷৷ ৩ ৷৷
পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা।
সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি চাষ্টমম্॥ ४ ॥
নবমং সিদ্ধিদাত্রী চ নবদুর্গাঃ প্রকীর্তিতাঃ।
উক্তান্যেতানি নামানি ব্রহ্মণৈব মহাত্মনা ৷৷ ৫ ৷৷
দেবীর নয়টি মূর্তি আছে যাকে 'নবদুর্গা' বলা হয়। তাদের পৃথক পৃথক নাম বলছি। প্রথম নাম শৈলপুত্রী(১), দ্বিতীয় মূর্তির নাম ব্রহ্মচারিণী (২)। তৃতীয় স্বরূপ চন্দ্রঘন্টা (৩) নামে প্রসিদ্ধ। চতুর্থ মূর্তিকে বলা হয় কৃষ্মাণ্ডা (৪)। পঞ্চম দুর্গার নাম স্কন্দমাতা(৫)। দেবীর ষষ্ঠরূপকে কাত্যায়নী বলা হয়। সপ্তম রূপ কালরাত্রি (৭) এবং অষ্টম স্বরূপ মহাগৌরী (৮) নামে প্রসিদ্ধা। নবম দুর্গার নাম সিদ্ধিদাত্রী(১)। এই সব নাম সর্বজ্ঞ মহাত্মা বেদ ভগবান দ্বারাই প্রতিপাদিত হয়েছে ৷৷ ৩-৫ ।।
অগ্নিনা দহ্যমানস্তু শত্রুমধ্যে গতো রণে।
বিষমে দুর্গমে চৈব ভয়ার্তাঃ শরণং গতাঃ ৷৷ ৬ ৷৷
ন তেষাং জায়তে কিঞ্চিদশুভং রণসঙ্কটে।
নাপদং তস্য পশ্যামি শোকদুঃখভয়ং ন হি ৷৷৭৷৷
যে মানুষ জ্বলন্ত অগ্নির মধ্যে পুড়ছে, রণক্ষেত্রে শত্রুদ্বারা পরিবেষ্টিত, বিষম সঙ্কটে নিপাতিত তথা এই জাতীয় ভয়ে আর্ত হয়ে, ভগবতী দুর্গার শরণাগতি প্রার্থনা করে, তার কখনই কোনরকম অমঙ্গল হয় না। যুদ্ধের সময়ে সঙ্কটে পড়লেও কোন বিপদ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। সে কখনও শোক, দুঃখ আর ভয়ের অধীন হয় না।। ৬-৭ ।।
যৈস্ত ভক্ত্যা স্মৃতা নূনং তেষাং বৃদ্ধিঃ প্রজায়তে।
যে ত্বাং স্মরন্তি দেবেশি রক্ষসে তান্ন সংশয়ঃ ৷৷ ৮ ৷৷
যারা ভক্তিভাবে দেবীকে স্মরণ করেছে, তাদের অবশ্যই শ্রীবৃদ্ধি হয়। দেবেশ্বরি! যে তোমার ধ্যান করে, তাকে তুমি নিঃসন্দেহে রক্ষা করো ।। ৮ ।।
প্রেতসংস্থা তু চামুণ্ডা বারাহী মহিষাসনা।
ঐন্দ্রী গজসমারূঢ়া বৈষ্ণবী গরুড়াসনা ৷৷ ৯৷৷
চামুণ্ডা দেবী প্রেতের উপর আরূঢ়া। বারাহী মহিষের ওপর আসীনা। ঐন্দ্রীর বাহন ঐরাবত হাতী। বৈষ্ণবীদেবী গরুড়ের পৃষ্ঠে সমাসীনা। ৯ ॥
মাহেশ্বরী বৃষারূঢ়া কৌমারী শিখিবাহনা।
লক্ষ্মীঃ পদ্মাসনা দেবী পদ্মহস্তা হরিপ্রিয়া ৷৷ ১০ ৷৷
মহেশ্বরী বৃষভের উপর আসীনা থাকেন। কৌমারীর বাহন ময়ূর। ভগবান বিষ্ণুর প্রিয়তমা লক্ষ্মীদেবী পদ্মফুলের আসনের ওপর বিরাজমানা এবং হাতেও পদ্মফুল ধারণ করেন।১০ ।।
শ্বেতরূপধরা দেবী ঈশ্বরী বৃষবাহনা।
ব্রাহ্মী হংসসমারূঢ়া সর্বাভরণভূষিতা ৷৷১১ ৷৷
বৃষভারূঢ়া ঈশ্বরীদেবী শ্বেতবর্ণা রূপ ধারণ করেছেন। ব্রাহ্মীদেবী হংসের ওপর বসা এবং সমস্ত রকম আভরণে ভূষিতা ৷৷ ১১ ৷৷
ইত্যেতা মাতরঃ সর্বাঃ সর্বযোগসমন্বিতাঃ।
নানাভরণশোভাঢ্যা নানারত্নোপশোভিতাঃ ৷৷ ১২ ৷৷
এইভাবেই সব মাতৃকাগণ সব রকম যোগশক্তিসম্পন্ন। এঁরা ছাড়া আরও অনেক দেবী রয়েছেন যাঁরা বহুপ্রকার আভরণে বিভূষিতা এবং নানা রত্নে শোভিতা৷৷ ১২ ৷৷
দৃশ্যন্তে রথমারূঢ়া দেব্যঃ ক্রোধসমাকুলাঃ।
শঙ্খং চক্রং গদাং শক্তিং হলঞ্চ মুষলায়ুধম্ ৷৷ ১৩ ৷৷
খেটকং তোমরঞ্চৈব পরশুং পাশমেব চ।
কুন্তায়ুধং ত্রিশূলঞ্চ শাঙ্গমায়ুধমুত্তমম্ ৷৷ ১৪ ৷৷
দৈত্যানাং দেহনাশায় ভক্তানামভয়ায় চ।
ধারয়ন্ত্যায়ুধানীখং দেবানাঞ্চ হিতায় বৈ ৷৷১৫৷৷
এইসকল দেবীগণ অতীব ক্রোধযুক্তা এবং ভক্তদের রক্ষার জন্য রথের উপর দৃশ্যতঃ বসে আছেন। তাঁরা শঙ্খ, চক্র, গদা, শক্তি, হল ও মুসল, খেটক ও তোমর, পরশু ও পাশ, কুন্ত ও ত্রিশূল এবং উত্তম শাঙ্গ ধনুকাদি অস্ত্র-শস্ত্র নিজেদের হাতে ধারণ করে রয়েছেন। দৈত্যদের শরীর নাশ করা, ভক্তকে অভয়প্রদান এবং দেবতাদের কল্যাণ করা-তাঁদের শস্ত্রধারণের এই-ই উদ্দেশ্য। ১৩-১৫ ।।
নমস্তেহস্ত মহারৌদ্রে মহাঘোরপরাক্রমে।
মহাবলে মহোৎসাহে মহাভয়বিনাশিনি ৷৷ ১৬৷৷
কবচ পাঠের প্রারম্ভে এইরকম প্রার্থনা করা দরকার-মহান রৌদ্ররূপ, অত্যন্ত ঘোর পরাক্রম, মহান বল ও মহান উৎসাহশালিনী দেবি! তুমি মহান ভয়ের নাশকারী, তোমাকে নমস্কার।। ১৬ ৷৷
ত্রাহি মাং দেবি দুষ্প্রেক্ষ্যে শত্রুণাং ভয়বর্ধিনি।
প্রাচ্যাং রক্ষতু মামৈন্দ্রী আগ্নেয্যামগ্নিদেবতা ৷৷ ১৭৷৷
দক্ষিণেহবতু বারাহী নৈঋত্যাং খড়াধারিণী।
প্রতীচ্যাং বারুণী রক্ষেদ বায়ব্যাং মৃগবাহিনী ৷৷ ১৮ ৷৷
তোমার দিকে তাকানও কঠিন। শত্রুর ভয়বর্দ্ধিনী জগদম্বিকে! আমাকে রক্ষা করো। পূর্বদিকে ঐন্দ্রী (ইন্দ্রশক্তি) আমাকে রক্ষা করুন। অগ্নিকোণে অগ্নিশক্তি, দক্ষিণ দিকে বারাহী এবং নৈঋতকোণে খড়াধারিণী আমাকে রক্ষা করুন, পশ্চিম দিকে বারুণী এবং বায়ুকোণে মৃগারূঢ়া দেবী আমাকে রক্ষা করুন। ১৭-১৮ ।।
উদীচ্যাং পাতু কৌমারী ঐশান্যাং শূলধারিণী।
ঊর্ধ্বং ব্রহ্মাণী মে রক্ষেদধস্তাদ্ বৈষ্ণবী তথা ৷৷১৯ ৷৷
উত্তরদিকে কৌমারী এবং ঈশানকোণে শূলধারিণী দেবী আমাকে রক্ষা করুন। ব্রহ্মাণি! আপনি ঊর্ধ্বদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন এবং বৈষ্ণবীদেবী অধোদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন।। ১৯ ।
এবং দশ দিশো রক্ষেৎ চামুণ্ডা শববাহনা।
জয়া মে চাগ্রতঃ পাতু বিজয়া পাতু পৃষ্ঠতঃ ৷৷ ২০৷৷
ইভাবে শববাহনা চামুণ্ডাদেবী দশদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন। জয়া সামনের দিকে এবং বিজয়া পশ্চাৎদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন। ২০।
অজিতা বামপার্শ্বে তু দক্ষিণে চাপরাজিতা।
শিখাং মে দ্যোতিনী রক্ষেদুমা মূর্রি ব্যবস্থিতা ৷৷ ২১ ৷৷
এবামদিকে অজিতা এবং দক্ষিণদিকে অপরাজিতা আমাকে রক্ষা করুন। আমার শিখা দ্যোতিনী দেবী রক্ষা করুন। উমাদেবী আমার শিরোদেশে অবস্থান করে আমাকে রক্ষা করুন। ২১ ।।
মালাধরী ললাটে চ ভ্রুবৌ রক্ষেদ্ যশস্বিনী।
ত্রিনেত্রা চ বোমধ্যে যমঘণ্টা চ নাসিকে৷ ৷২২ ৷৷
ললাটে মালাধরী রক্ষা করুন এবং যশস্বিনীদেবী আমার ভ্রূদ্বয় রক্ষা করুন। ত্রিনেত্রা দেবী আমার ভ্রূযুগলের মধ্যভাগ এবং যমঘন্টাদেবী নাসিকা রক্ষা করুন ॥ ২২ ৷৷
শঙ্খিনী চক্ষুষোর্মধ্যে শ্রোত্রয়োর্থারবাসিনী।
কপোলৌ কালিকা রক্ষেৎ কর্ণমূলে তু শঙ্করী ।২৩ ৷৷
দুই চোখের মধ্যদেশকে শঙ্খিনী এবং কর্ণদ্বয় দ্বারবাসিনীদেবী রক্ষা করুন। কালিকাদেবী কপোলদ্বয় এবং ভগবতী শঙ্করী কর্ণমূল রক্ষা করুন। ২৩ ৷৷
নাসিকায়াং সুগন্ধা চ উত্তরোষ্ঠে চ চর্চিকা।
অধরে চামৃতকলা জিহ্বায়াঞ্চ সরস্বতী।২৪৷৷
সুগন্ধাদেবী নাসিকাযুগল এবং চর্চিকাদেবী উপরোষ্ঠ রক্ষা করুন। অধরোষ্ঠে অমৃতকলা আর জিহ্বাকে সরস্বতীদেবী রক্ষা করুন। ২৪ ৷৷
দন্তান রক্ষতু কৌমারী কণ্ঠদেশে তু চণ্ডিকা।
ঘণ্টিকাং চিত্রঘণ্টা চ মহামায়া চ তালুকে।২৫ ৷৷
কৌমারী আমায় দাঁত এবং চণ্ডিকা কণ্ঠপ্রদেশ রক্ষা করুন। চিত্রঘন্টা আমার ঘণ্টিকা (আলজিভ) এবং মহামায়া তালুতে অবস্থান করে তালুকে রক্ষা করুন। ২৫ ৷৷
কামাক্ষী চিবুকং রক্ষেদ বাচং মে সর্বমঙ্গলা।
গ্রীবায়াং ভদ্রকালী চ পৃষ্ঠবংশে ধনুর্ধরী।২৬৷৷
কামাক্ষী আমার চিবুক এবং সর্বমঙ্গলা আমার বাণীকে রক্ষা করুন। ভদ্রকালী শ্রীবাদেশ আর ধুনধরী পৃষ্ঠবংশতে (মেরুদণ্ডে) অবস্থান করে তাকে রক্ষা করুন। ২৬ ।।
নীলগ্রীবা বহিঃকণ্ঠে নলিকাং নলকূবরী।
স্বন্ধয়োঃ খড়িগনী রক্ষেদ্ বাহু মে বজ্রধারিণী। ২৭ ॥
কণ্ঠের বর্হিদেশ নীলগ্রীবা এবং কণ্ঠনালীকে নলকূবরী রক্ষা করুন। দুই স্কন্দদেশ খড়িানী এবং আমার দুই বাহু বজ্রধারিণী রক্ষা করুন। ২৭ ।।
হস্তয়োর্দণ্ডিনী রক্ষেদম্বিকা চাঙ্গুলীষু চ।
নখাঞঙ্গুলেশ্বরী রক্ষেৎ কুক্ষৌ রক্ষেৎ কুলেশ্বরী। ২৮৷৷
আমার দুই হাতকে দণ্ডিনী এবং আঙ্গুলগুলিকে অগ্নিকা দেবী রক্ষা করুন। শূলেশ্বরী আমার নখসমূহ রক্ষা করুন। কুলেশ্বরী কুক্ষিতে (পেটে) থেকে রক্ষা করুন। ২৮৷৷
স্তনৌ রক্ষে মহাদেবী মনঃ শোকবিনাশিনী।
হৃদয়ে ললিতা দেবী উদরে শূলধারিণী ৷৷ ২৯ ৷৷
দুই স্তনকে মহাদেবী এবং মনকে শোকবিনাশিনী দেবী রক্ষা করুন। ললিতা দেবী হৃদয় এবং শূলধারিণী উদরে থেকে রক্ষা করুন। ২৯ ।।
নাভৌ চ কামিনী রক্ষেৎ গুহ্যং গুহ্যেশ্বরী তথা।
মেট্রং রক্ষতু দুর্গন্ধা পায়ুং মে গুহ্যবাহিনী ৷৷ ৩০ ॥
নাভিদেশে কামিনী এবং গুহ্যদেশকে গুহ্যেশ্বরী রক্ষা করুন। দুর্গন্ধা দেবী মেট্রদেশ (জননেন্দ্রিয়) এবং গুহ্যবাহিনী দেবী পায়ু রক্ষা করুন। ৩০ ৷
কট্যাং ভগবতী রক্ষেজ্জানুনী বিন্ধ্যবাসিনী।
জঙ্ঘে মহাবলা রক্ষেৎ সর্বকামপ্রদায়িনী ৷৷৩১ ৷৷
কটিভাগে ভগবতী এবং বিন্ধ্যবাসিনী দুই জানুদেশ রক্ষা করুন। সমস্ত কামনাদায়িনী মহাবলা দেবী দুই জঙ্ঘাদেশ রক্ষা করুন।। ৩১ ।।
গুল্ল্ফয়োর্নারসিংহী চ পাদপৃষ্ঠে তু তৈজসী।
পাদাঙ্গুলীষু শ্রী রক্ষেৎ পাদাধস্তলবাসিনী ৷৷৩২ ৷৷
নারসিংহী গুম্ফ দুটি এবং তৈজসী দেবী দুই পায়ের পাতার উপরিদেশ রক্ষা করুন। শ্রীদেবী পায়ের আঙ্গুলগুলি এবং তলবাসিনী পায়ের পাতার তলদেশে অবস্থান করে তাদের রক্ষা করুন। ৩২ ।
নখান্ দংষ্ট্রাকরালী চ কেশাংশ্চৈবোধবকেশিনী।
রোমকূপেষু কৌবেরী ত্বচং বাগীশ্বরী তথা ৷৷৩৩ ৷৷
ভয়ঙ্কররূপিণী দ্রংষ্ট্রাকরালী দেবী নখগুলি এবং ঊর্ধ্বকেশিনী দেবী চুলগুলিকে রক্ষা করুন। লোমকূপগুলিকে কৌবেরী এবং ত্বককে বাগীশ্বরী দেবী রক্ষা করুন। ৩৩ ।
রক্তমজ্জাবসামাং সান্যঙ্গিমেদাংসি পার্বতী।
অস্ত্রাণি কালরাত্রিশ পিত্তঞ্চ মুকুটেশ্বরী ৷৷৩৪ ৷৷
পার্বতী দেবী রক্ত, মজ্জা, চর্বি, মাংস, হাড় এবং মেদকে রক্ষা করুন। কালরাত্রি দেবী অস্ত্র আর মুকুটেশ্বরী দেবী পিত্তকে রক্ষা করুন ।। ৩৪ ।।
পদ্মাবতী পদ্মকোশে কফে চূড়ামণিস্তথা।
জ্বালামুখী নখজ্বালামভেদ্যা সর্বসন্ধিযু৷৷ ৩৫ ৷৷
মূলাধার আদি কমলকোশে পদ্মাবতী দেবী এবং কফে চূড়ামণি দেবী স্থিত হয়ে তাদের রক্ষা করুন। নখের জ্যোতিকে জ্বালামুখী দেবী রক্ষা করুন। যাঁকে কোনও অস্ত্রই ভেদ করতে পারে না, সেই অভেদ্যা দেবী শরীরের সমস্ত সন্ধিস্থানে অবস্থান করে তাদের রক্ষা করুন।। ৩৫।।
শুক্রং ব্রহ্মাণি মে রক্ষেচ্ছায়াং ছত্রেশ্বরী তথা।
অহঙ্কারং মনো বুদ্ধিং রক্ষেন্মে ধর্মধারিণী ৷৷ ৩৬ ৷৷
ব্রহ্মাণি! আপনি আমার বীর্যকে (শুক্র) রক্ষা করুন। ছত্রেশ্বরী ছায়াকে এবং ধর্মধারিণী দেবী আমার অহংকার, মন ও বুদ্ধিকে রক্ষা করুন।। ৩৬ ৷৷
প্রাণাপানৌ তথা ব্যানমুদানঞ্চ সমানকম্।
বজ্রহস্তা চ মে রক্ষেৎ প্রাণং কল্যাণশোভনা৷৷ ৩৭ ৷৷
হাতে বজ্রধারিণী বজ্রহস্তা দেবী আমার প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান ও সমান বায়ুকে রক্ষা করুন। ভগবতী কল্যাণশোভনা আমার প্রাণকে রক্ষা করুন।। ৩৭ ।।
রসে রূপে চ গন্ধে চ শব্দে স্পর্শে চ যোগিনী।
সত্ত্বং রজস্তমশ্চৈব রক্ষেন্নারায়ণী সদা৷৷ ৩৮ ॥
রস, রূপ, গন্ধ, শব্দ আর স্পর্শ এই সব বিষয়ের অনুভূতিকে যোগিনী দেবী রক্ষা করুন এবং সত্ত্বগুণ, রজোগুণ ও তমোগুণকে নারায়ণী দেবী সদাই রক্ষা করুন।। ৩৮ ।।
আয়ূ রক্ষতু বারাহী ধর্মং রক্ষতু বৈষ্ণবী।
যশঃ কীর্তিঞ্চ লক্ষ্মীঞ্চ ধনং বিদ্যাঞ্চ চক্রিণী৷৷ ৩৯ ৷৷
বারাহী দেবী আয়ুকে রক্ষা করুন, বৈষ্ণবী দেবী ধর্মকে এবং চক্রিণী দেবী যশ, কীর্তি, লক্ষ্মী, ধন এবং বিদ্যাকে রক্ষা করুন। ৩৯ ।।
গোত্রমিন্দ্রাণি মে রক্ষেৎ পশূন্ মে রক্ষ চণ্ডিকে।
পুত্রান্ রক্ষেন্মহালক্ষ্মীর্ভার্যাং রক্ষতু ভৈরবী ৷৷৪০॥
ইন্দ্রাণি! আপনি আমার গোত্র রক্ষা করুন। চণ্ডিকে! আপনি আমার পশুকুল রক্ষা করুন। মহালক্ষ্মী পুত্রদের রক্ষা করুন এবং ভৈরবী পত্নীকে রক্ষা করুন ।। ৪০ ।
পন্থানং সুপথা রক্ষেন্মার্গং ক্ষেমঙ্করী তথা।
রাজদ্বারে মহালক্ষ্মীর্বিজয়া সর্বতঃ স্থিতা ৷৷ ৪১ ৷৷
সুপথা দেবী আমার পথ, ক্ষেমঙ্করী মার্গ, রাজদ্বারে মহালক্ষ্মী এবং সর্বব্যাপিনী বিজয়াদেবী আমাকে ভয় থেকে রক্ষা করুন। ৪১ ৷৷
রক্ষাহীনং তু যৎ স্থানং বর্জিতং কবচেন তু। তৎ সর্বং রক্ষ মে দেবি জয়ন্তী পাপনাশিনী ৷৷ ৪২ ৷৷
দেবি! যে সব জায়গা কবচ দিয়ে রক্ষিত হয়নি সুতরাং অরক্ষিত রয়েছে, সে সব আপনার দ্বারা সুরক্ষিত হোক; কারণ, আপনি বিজয়শালিনী ও পাপনাশিনী।। ৪২ ।।
পদমেকং ন গচ্ছেৎ তু যদীচ্ছেচ্ছভমাত্মনঃ।
কবচেনাবৃতো নিত্যং যত্র যত্রৈব গচ্ছতি ৷৷৪৩ ৷৷
তত্র তত্রার্থলাভশ্চ বিজয়ঃ সার্বকামিকঃ।
যং যং চিন্তয়তে কামং তং তং প্রাপ্নোতি নিশ্চিতম্। পরমৈশ্বর্যমতুলং প্রাপ্স্যতে ভূতলে পুমান্॥ ৪৪ ॥
মানুষ যদি নিজের শরীরের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা করে, তবে বিনা কবচে একপাও এগোনো উচিত নয়-কবচ পাঠ করেই যাত্রা করা উচিত। কবচের দ্বারা সবদিক থেকে সুরক্ষিত মানুষ যেখানে যেখানে যায়, সেখানেই তার ধনলাভ হয় এবং সর্বকামপ্রদ বিজয় প্রাপ্ত হয়। যে যে অভীষ্ট প্রাপ্তির চিন্তা সে করে, সেই সব তার অবশ্যই প্রাপ্তি হয়। সেই মানুষ এই পৃথিবীতে অতুলনীয় মহান ঐশ্বর্য লাভ করে। ৪৩-৪৪ ॥
নির্ভয়ো জায়তে মর্ত্যঃ সংগ্রামেস্বপরাজিতঃ।
ত্রৈলোক্যে তু ভবেৎ পূজ্যঃ কবচেনাবৃতঃ পুমান্ ৷ ৪৫ ৷৷
কবচের দ্বারা সুরক্ষিত মানুষ নির্ভীক হয়। যুদ্ধে তার কখনও পরাজয় হয় না এবং সে ত্রিলোকের পূজ্য হয়। ৪৫
ইদং তু দেব্যাঃ কবচং দেবানামপি দুর্লভম্।
যঃ পঠেৎ প্রযতো নিত্যং ত্রিসন্ধ্যং শ্রদ্ধয়ান্বিতঃ ৷ ৪৬ ॥
দৈবী কলা ভবেত্তস্য ত্রৈলোক্যে চাপরাজিতঃ।
জীবেদ বর্ষশতং সাগ্রমপমৃত্যুবিবর্জিতঃ।। ৪৭ ॥
দেবীর এই কবচ দেবতাদেরও দুর্লভ। প্রতিদিন নিয়ম করে যে ত্রিসন্ধ্যা শ্রদ্ধার সাথে এই কবচ পাঠ করে তার দৈবী কলা প্রাপ্তি হয় এবং সে ত্রিলোকে কোথাও পরাজিত হয় না। শুধু এইই নয়, সে অপমৃত্যু(১) থেকে রক্ষা পেয়ে একশ বছরেরও বেশী জীবিত থাকে। ৪৬-৪৭ ।।
নশ্যন্তি ব্যাধয়ঃ সর্বে ভূতাবিস্ফোটকাদয়ঃ।
স্থাবরং জঙ্গমঞ্চৈব কৃত্রিমং চাপি যদ্ বিষম্ । ৪৮ ৷৷
কলেরা, বসন্ত এবং কুষ্ঠ ইত্যাদি সমস্ত ব্যাধি থেকে সে মুক্ত থাকে। সিদ্ধি, আফিম, ধুতুরা ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ বিষ, সাপ বিছা ইত্যাদির দংশনজনিত জঙ্গম বিষ এবং আফিম এবং তৈলাদি সংযোগে কৃত্রিম বিষ- এই সব রকম বিষ থেকে সে রক্ষা পায়, এইসব তার কোনও অনিষ্ট করতে পারে না।। ৪৮ ।।
অভিচারাণি সর্বাণি মন্ত্রযন্ত্রাণি ভূতলে।
ভূচরাঃ খেচরাশ্চৈব জলজাশ্চোপদেশিকাঃ ৷৷ ৪৯ ৷৷
সহজা কুলজা মালা ডাকিনী শাকিনী তথা।
অন্তরীক্ষচরা ঘোরা ডাকিন্যশ্চ মহাবলাঃ ॥ ৫০ ৷৷
গ্রহভূতপিশাচাশ্চ যক্ষগন্ধর্বরাক্ষসাঃ।
ব্রহ্মরাক্ষসবেতালাঃ কৃষ্মাণ্ডা ভৈরবাদয়ঃ ।। ৫১ ৷৷
নশ্যন্তি দর্শনাৎ তস্য কবচে হৃদি সংস্থিতে।
মানোন্নতির্ভবেদ রাজ্ঞস্তেজোবৃদ্ধিকরং পরম্ ॥ ৫২৷৷
এই পৃথিবীতে মারণ, মোহন ইত্যাদি যতরকম অভিচারমূলক প্রয়োগ এবং তৎসম্পর্কিত মন্ত্র ও যন্ত্রসকল-এইসব কিছু কবচপাঠকের দৃষ্টিপাতেই নির্বিষ হয়ে যায়। কেবল তাই নয়, পৃথিবীতে বিচরণকারী গ্রামদেবতা, খেচর বিশেষ দেবগণ (কুলজা) জল-সম্পর্কীয় প্রকাশমান গণেরা, উপদেশমাত্র সিদ্ধিপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রদেবতা, জন্মের সাথে সাথেই প্রকাশমান দেবতা, কুলদেবতা, মালা (কণ্ঠমালা ইত্যাদি), ডাকিনী, শাকিনী, অন্তরীক্ষচারী ভয়ানক ডাকিনীগণ, গ্রহ, ভূত, পিশাচ, যক্ষ, গন্ধর্ব, রাক্ষস, ব্রহ্মদৈত্য, বেতাল, কুষ্মাণ্ড এবং ভৈরব আদি অনিষ্টকারী দেবতাও এই কবচধারণকারী মানুষের দৃষ্টিপাতমাত্রই পালিয়ে যায়। কবচধারী পুরুষের রাজদরবারে সম্মানবৃদ্ধি হয়। এই কবচ মানুষের তেজবৃদ্ধিকারী এক অতি উত্তম সাধন । ৪৯-৫২ ।।
যশসা বর্ষতে সোহপি কীর্তিমণ্ডিতভূতলে।
জপেৎ সপ্তশতীং চণ্ডীং কৃত্বা তু কবচং পুরা। ৫৩ ৷
যাবভূমণ্ডলং ধত্তে সশৈলবনকাননম্।
তাবত্তিষ্ঠতি মেদিন্যাং সন্ততিঃ পুত্রপৌত্রিকী৷৷ ৫৪ ৷৷
কবচপাঠক পুরুষের কীর্তিবৃদ্ধি ও যশোবৃদ্ধি হয় এবং সাথে সাথে তদনুযায়ী শ্রীবৃদ্ধি হয়। যে মানুষ প্রথমে কবচ পাঠ করে তারপর এই সপ্তশতী চণ্ডী পাঠ করে; যাবৎ বন, পর্বত এবং কানন যুক্ত ভূমণ্ডল বর্তমান থাকবে, তাবৎ তার পুত্র পৌত্রাদি সন্ততি পৃথিবীতে অবস্থান করবে।। ৫৩-৫৪ ॥
দেহান্তে পরমং স্থানং যৎ সুরৈরপি দুর্লভম্।
প্রাপ্নোতি পুরুষো নিত্যং মহামায়াপ্রসাদতঃ।। ৫৫ ৷৷
অতঃপর দেহান্তে চণ্ডীপাঠক ভগবতী মহামায়ার প্রসাদে সেই নিত্য পরমপদ প্রাপ্ত হয়, যা দেবতাদের কাছেও দুর্লভ। ৫৫ ।
লভতে পরমং রূপং শিবেন সহ মোদতে। ওঁ ৷৷ ৫৬ ৷৷
সে সুন্দর দিব্য রূপ ধারণ করে এবং কল্যাণময় শিবের সাথে আনন্দভাগী হয়৷ ৫৬ ৷৷
ইতি দেব্যাঃ কবচং সম্পূর্ণম্।।