সপ্তশ্লোকী দুর্গা

Durga Saptashati Image

সপ্তশ্লোকী দুর্গা

শিব উবাচ

দেবি ত্বং ভক্তসুলভে সর্বকার্যবিধায়িনী।
কলৌ হি কার্যসিদ্ধ্যর্থমুপায়ং ব্রূহি যত্নতঃ ।।

শিব বললেন-হে দেবি! তুমি ভক্তের কাছে সহজলভ্য এবং সমস্ত কর্মের বিধানকারিণী। কলিযুগে কামনাপূরণের যদি কোনও উপায় থাকে, তবে তোমার বাণীদ্বারা সম্যভাবে তা বলো।

দেব্যুবাচ

শৃণু দেব প্রবক্ষ্যামি কলৌ সর্বেষ্টসাধনম্।
ময়া তবৈব স্নেহেনাপ্যম্বাস্তুতিঃ প্রকাশ্যতে।।

দেবী বললেন-হে দেব! আমার ওপরে আপনার অসীম স্নেহ। কলিযুগে সর্বকামনা সিদ্ধির যে সাধন; তা আমি বলছি, শুনুন। তার নাম হল 'অন্বাস্তুতি'।

ওঁ অস্য শ্রীদুর্গাসপ্তশ্লোকীস্তোত্রমন্ত্রস্য নারায়ণ ঋষিঃ, অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ, শ্রীমহাকালীমহালক্ষ্মীমহাসরস্বত্যো দেবতাঃ, শ্রীদুর্গাপ্রীত্যর্থং সপ্তশ্লোকীদুর্গাপাঠে বিনিয়োগঃ।

ওঁ এই দুর্গাসপ্তশ্লোকী স্তোত্রের ঋষি হলেন নারায়ণ, ছন্দ অনুষ্টুপ, শ্রীমহাকালী, মহালক্ষ্মী এবং মহাসরস্বতী হলেন দেবতা; শ্রীদুর্গার প্রীত্যার্থে সপ্তশ্লোকী দুর্গাপাঠে এর বিনিয়োগ করা হয়।

ওঁ জ্ঞানিনামপি চেতাংসি দেবী ভগবতী হি সা।
বলাদাকৃষ্য মোহায় মহামায়া প্রযচ্ছতি। ১ ।।

এই ভগবতী মহামায়া দেবী জ্ঞানীদের চিত্তকেও বলপূর্বক আকর্ষণ করে মোহময় করে দেন। ১।।

দুর্গে স্মৃতা হরসি ভীতিমশেষজন্তোঃ,
স্বস্থৈঃ স্মৃতা মতিমতীব শুভাং দদাসি।
দারিদ্র্যদুঃখভয়হারিণি কা ত্বদন্যা,
সর্বোপকারকরণায় সদার্দ্রচিত্তা। ২ ।।

হে মা দুর্গা! আপনি স্মরণমাত্রই সব প্রাণীর ভয় হরণ করে নেন এবং স্বস্থ পুরুষের দ্বারা চিন্তা করলে তাকে পরম কল্যাণময়ী বুদ্ধি প্রদান করেন। দুঃখ, দারিদ্র্য ও ভয়হারিণী দেবি! আপনি ছাড়া দ্বিতীয়া কে আছেন যার চিত্ত সকলের উপকার করার জন্য সততই দয়াদ্র ।। ২।।

সর্বমঙ্গলমঙ্গলে শিবে সর্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তু তে। ৩ ।।

নারায়নী! আপনি সর্বপ্রকার মঙ্গলপ্রদানকারী মঙ্গলময়ী, কল্যাণদায়িণী শিবা। আপনি সর্ব পুরুষার্থ সিদ্ধিদায়িনী, শরণাগতবৎসলা, ত্রিনয়নী গৌরী। আপনাকে প্রণাম।। ৩।।

শরণাগতদীনার্তপরিত্রাণপরায়ণে
সর্বস্যার্তিহরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তু তে॥৪॥

শরণাগত, দীন এবং পীড়িতকে রক্ষায় সতত নিরত তথা সকলের পীড়া নিবারণকারিণী নারায়ণী দেবি! আপনাকে প্রণাম।। ৪।।

সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে।
ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোহস্তু তে। ৫ ।।

সর্বশ্বরূপা, সর্বেশ্বরী তথা সর্বপ্রকার শক্তিসম্পন্না দিব্যরূপা দেবি দুর্গে ! সকল ভয় থেকে আমাদের রক্ষা করুন, আপনাকে প্রণাম।। ৫।।

রোগানশেষানপহংসি তুষ্টা
রুষ্টা তু কামান্ সকলানভীষ্টান্।
ত্বামাশ্রিতানাং ন বিপন্নরাণাং
ত্বামাশ্রিতা হ্যাশ্রয়তাং প্রয়ান্তি।। ৬ ।।

হে দেবি! আপনি প্রসন্ন হলে সর্বব্যাধি দূর করে দেন, আবার কুপিত হলে মনোবাঞ্ছিত সব কামনা নাশ করে দেন। যারা আপনার শরণ গ্রহণ করেছে, তাদের কাছে বিপদ কখনও আসে না। আপনার শরণগ্রহণকারী ব্যক্তি অপরের শরণদাতা হন।। ৬।।

সর্বাবাধাপ্রশমনং ত্রৈলোক্যস্যাখিলেশ্বরি।
এবমেব ত্বয়া কার্যমস্মদ্বৈরিবিনাশনম্।। ৭।।

হে সর্বেশ্বরি! আপনি এরূপে তিন লোকের সমস্ত বাধা দূর করুন এবং আমাদের শত্রু নাশ করুন।। ৭।।

ইতি শ্রীসপ্তশ্লোকী দুর্গা সম্পূর্ণা।।

শ্রীসপ্তশ্লোকী দুর্গা সম্পূর্ণ হল।।

শ্রীদুর্গাষ্টোত্তরশতনামস্তোত্র

Durga Saptashati
Durga Saptashati Image

।। শ্রীদুর্গায়ৈঃ নমঃ।।

শ্রীদুর্গাষ্টোত্তরশতনামস্তোত্র

ঈশ্বর উবাচ

শতনাম প্রবক্ষ্যামি শৃণুষ কমলাননে।
যস্য প্রসাদমাত্রেণ দুর্গা প্রীতা ভবেৎ সতী৷৷ ১ ৷৷৷

মহাদেব পার্বতীকে বলছেন-হে কমলাননে! আমি এখন অষ্টোত্তর শতনাম বর্ণনা করছি, শোনো; যার প্রসাদ (পাঠ বা শ্রবণ) মাত্রেই পরমা সাঙ্গী ভগবতী দুর্গা প্রসন্না হন৷৷ ১ ৷৷

ওঁ সতী সাধ্বী ভবপ্রীতা ভবানী ভবমোচনী।
আর্যা দুর্গা জয়া চাদ্যা ত্রিনেত্রা শূলধারিণী৷৷ ২৷৷

পিনাকধারিণী চিত্রা চণ্ডঘণ্টা মহাতপাঃ।
মনো বুদ্ধিরহঙ্কারা চিত্তরূপা চিতা চিতিঃ ৷৷ ৩৷৷

সর্বমন্ত্রময়ী সত্তা সত্যানন্দস্বরূপিণী।
অনন্তা ভাবিনী ভাব্যা ভব্যাভব্যা সদাগতিঃ ৷৷ ৪ ৷৷

শাম্ভবী দেবমাতা চ চিন্তা রত্নপ্রিয়া সদা।
সর্ববিদ্যা দক্ষকন্যা দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী।। ৫ ৷৷

অপর্ণানেকবর্ণা চ পাটলা পাটলাবতী।
পট্টাম্বর পরীধানা কলমঞ্জীররঞ্জিনী ৷৷৬৷৷

অমেয়বিক্রমা ক্রুরা সুন্দরী সুরসুন্দরী।
বনদুর্গা চ মাতঙ্গী মতঙ্গমুনিপূজিতা ৷৷ ৭ ৷৷

ব্রাহ্মী মাহেশ্বরী চৈন্দ্রী কৌমারী বৈষ্ণবী তথা।
চামুণ্ডা চৈব বারাহী লক্ষ্মীশ্চ পুরষাকৃতিঃ ৷৷ ৮ ৷৷

বিমলোৎকর্ষিণী জ্ঞানা ক্রিয়া নিত্যা চ বুদ্ধিদা।
বহুলা বহুলপ্রেমা সর্ববাহনবাহনা । ৯ ।।

নিশুম্ভশুম্ভহননী মহিষাসুরমর্দিনী।
মধুকৈটভহন্ত্রী চ চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনী ৷৷ ১০ ৷৷

সর্বাসুরবিনাশা চ সর্বদানবঘাতিনী।
সর্বশাস্ত্রময়ী সত্যা সর্বাস্ত্রধারিণী তথা। ১১ ৷৷

অনেকশস্ত্রহস্তা চ অনেকাস্ত্রস্য ধারিণী।
কুমারী চৈককন্যা চ কৈশোরী যুবতী যতিঃ ৷৷ ১২ ৷৷

অপ্রৌঢ়া চৈব প্রৌঢ়া চ বৃদ্ধমাতা বলপ্রদা।
মহোদরী মুক্তকেশী ঘোররূপা মহাবলা। ১৩ ৷৷

অগ্নিজ্বালা রৌদ্রমুখী কালরাত্রিস্তপস্বিনী।
নারায়ণী ভদ্রকালী বিষ্ণুমায়া জলোদরী ৷৷ ১৪ ৷৷

শিবদূতী করালী চ অনন্তা পরমেশ্বরী।
কাত্যায়নী চ সাবিত্রী প্রত্যক্ষা ব্রহ্মবাদিনী। ১৫ ৷৷

১.১. ওঁ সতী, ২. সাধ্বী, ৩. ভবপ্রীতা (ভগবান শিবের প্রতি প্রীতিপূর্ণ হৃদয়া), ৪. ভবানী, ৫. ভবমোচনী (সংসারবন্ধন থেকে মুক্তিদায়িনী), ৬. আর্যা, ৭. দুর্গা, ৮. জয়া, ৯. আদ্যা, ১০. ত্রিনেত্রা, ১১. শূলধারিণী, ১২. পিনাকধারিণী, ১৩. চিত্রা, ১৪. চণ্ডঘণ্টা (প্রচণ্ড শব্দে ঘণ্টানাদকারিণী), ১৫. মহাতপাঃ (দুশ্চর তপস্যাকারিণী), ১৬. মনঃ (মননশক্তি), ১৭. বুদ্ধিঃ (বোধশক্তি), ১৮. অহংকারা (অহমের আশ্রয়), ১৯. চিত্তরূপা, ২০. চিতা, ২১. চিতিঃ (চেতনা), ২২. সর্বমন্ত্রময়ী, ২৩. সত্তা (সৎ-স্বরূপা), ২৪. সত্যানন্দস্বরূপিণী, ২৫. অনন্তা (যাঁর স্বরূপের কোনও অন্ত নেই), ২৬. ভাবিনী (সব কিছুর উৎপত্তিকারিণী), ২৭. ভাব্যা (ভাবনা এবং ধ্যানের যোগ্যা), ২৮. ভব্যা (কল্যাণরূপা), ২৯. অভব্যা (যাঁর থেকে বেশী ভব্য আর কোথাও নেই), ৩০. সদাগতিঃ, ৩১. শাম্ভবী (শিবপ্রিয়া), ৩২. দেবমাতা, ৩৩. চিন্তা, ৩৪. রত্নপ্রিয়া, ৩৫, সর্ববিদ্যা, ৩৬. দক্ষকন্যা, ৩৭. দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী, ৩৮. অপর্ণা (তপস্যাকালে পর্ণ পাতা পর্যন্ত্য না খাওয়া), ৩৯. অনেকবর্ণা (বহুবর্ণবিশিষ্টা), ৪০. পাটলা (লাল বরণা), ৪১. পাটলাবতী (গোলাপফুল বা লালফুল ধারণকারিণী), ৪২. পট্টাম্বরপরীধানা (রেশমীবস্ত্র পরিহিতা), ৪৩. কলমঞ্জীররঞ্জিনী (মধুর ধ্বনিকারী নূপুর ধারণ করে প্রসন্না), ৪৪. অমেয়বিক্রমা (অসীম পরাক্রমশালিনী), ৪৫. ক্রুরা (দৈত্যদের প্রতি কঠোর), ৪৬. সুন্দরী, ৪৭. সুরসুন্দরী, ৪৮. বনদুর্গা, ৪৯. মাতঙ্গী, ৫০. মতঙ্গমুনিপূজিতা, ৫১. ব্রাহ্মী, ৫২. মাহেশ্বরী, ৫৩. ঐন্দ্রী, ৫৪. কৌমারী, ৫৫. বৈষ্ণবী, ৫৬. চামুণ্ডা, ৫৭. বারাহী, ৫৮. লক্ষ্মী, ৫৯. পুরুষাকৃতি, ৬০. বিমলা, ৬১. উৎকর্ষিণী, ৬২. জ্ঞানা, ৬৩. ক্রিয়া, ৬৪. নিত্যা, ৬৫. বুদ্ধিদা, ৬৬. বহুলা, ৬৭. বহুলপ্রেমা, ৬৮. সর্ববাহনবাহনা, ৬৯. নিশুম্ভশুম্ভহননী, ৭০. মহিষাসুরমর্দিনী, ৭১. মধুকৈটভহন্ত্রী, ৭২. চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনী, ৭৩. সর্বাসুরবিনাশা, ৭৪. সর্বদানবঘাতিনী, ৭৫. সর্বশাস্ত্রময়ী, ৭৬. সত্যা, ৭৭. সর্বাস্ত্রধারিণী, ৭৮. অনেকশস্ত্রহস্তা, ৭৯. অনেকাস্ত্রধারিণী, ৮০. কুমারী, ৮১. এককন্যা, ৮২. কৈশোরী, ৮৩. যুবতী, ৮৪. যতি, ৮৫. অপ্রৌঢ়া, ৮৬. প্রৌঢ়া, ৮৭. বৃদ্ধমাতা, ৮৮. বলপ্রদা, ৮৯. মহোদরী, ৯০. মুক্তকেশী, ৯১. ঘোররূপা, ৯২. মহাবলা, ৯৩. অগ্নি জ্বালা, ৯৪. রৌদ্রমুখী, ৯৫. কালরাত্রি, ৯৬. তপস্বিনী, ৯৭. নারায়ণী, ৯৮. ভদ্রকালী, ৯৯. বিষ্ণুমায়া, ১০০. জলোদরী, ১০১. শিবদূতী, ১০২. করালী, ১০৩. অনন্তা (বিনাশরহিতা), ১০৪. পরমেশ্বরী, ১০৫. কাত্যায়নী, ১০৬. সাবিত্রী, ১০৭. প্রত্যক্ষা, ১০৮. ব্রহ্মবাদিনী। শ্লোক সংখ্যা ৷৷২-১৫৷৷

য ইদং প্রপঠেন্নিত্যং দুর্গানামশতাষ্টকম্।
নাসাধ্যং বিদ্যতে দেবি ত্রিষু লোকেষু পার্বতি ৷৷ ১৬৷৷

মদেবী পার্বতি! যে প্রতিদিন মা দুর্গার এই অষ্টোত্তরশতনাম পাঠ করে, তার কাছে ত্রিলোকে অসাধ্য কিছুই নেই ৷৷ ১৬ ৷৷

ধনং ধান্যং সুতং জায়াং হয়ং হস্তিনমেব চ।
চতুর্বর্গং তথা চান্তে লভেন্মুক্তিং চ শাশ্বতীম্ ।। ১৭ ৷৷

সে বহু ধন-ধান্য, পুত্র, স্ত্রী, ঘোড়া, হস্তী, ধর্ম আদি চার পুরুষার্থ তথা অন্তে সনাতন মুক্তিও প্রাপ্ত হয় ৷৷ ১৭ ৷৷

কুমারীং পূজয়িত্বা তু ধ্যাত্বা দেবীং সুরেশ্বরীম্।
পূজয়েৎ পরয়া ভক্ত্যা পঠেন্নামশতাষ্টকম্ ।।১৮৷৷

কুমারীপূজা এবং দেবী সুরেশ্বরীর ধ্যান করে পরমভক্তির সহিত তাঁর পূজা করে, তারপর অষ্টোত্তর শতনাম পাঠ আরম্ভ করতে হয় ৷৷ ১৮ ৷৷

তস্য সিদ্ধির্ভবেদ্ দেবি সর্বৈঃ সুরবরৈরপি।
রাজানো দাসতাং যান্তি রাজ্যশ্রিয়মবাপুয়াৎ৷৷ ১৯ ৷৷

দেবি! যে এইরূপ করে, সকল শ্রেষ্ঠ দেবতাদের কাছ থেকেও তার সিদ্ধি প্রাপ্তি হয়। রাজা তার দাস হয়ে যায়, সে রাজলক্ষ্মীকে লাভ করে ।।১৯৷৷

গোরোচনালক্তকুঙ্কুমেন সিন্দুরকপূরমধুত্রয়েণ।
বিলিখ্য যন্ত্রং বিধিনা বিধিজ্ঞো ভবেৎ সদা ধারয়তে পুরারিঃ ৷ ২০ ॥

গোরোচন, লাক্ষা, কুঙ্কুম, সিন্দুর, কপূর, ঘী (অথবা দুধ), চিনি ও মধু- এই সব বস্তু একত্র করে এর দ্বারা বিধিমত যন্ত্র লিখে যে বিধিজ্ঞ পুরুষ সতত ওই যন্ত্র ধারণ করে, সে শিবের তুল্য (মোক্ষরূপ) হয়ে যায়। ২০৷৷

ভৌমাবাস্যানিশামগ্রে চন্দ্রে শতভিষাং গতে।
বিলিখ্য প্রপঠেৎ স্তোত্রং স ভবেৎ সম্পদাং পদম্ ৷৷২১ ৷৷

ভৌমবতী অমাবস্যার মধ্যরাত্রে, চন্দ্র যখন শতভিষা নক্ষত্রে অবস্থান করে, সেই সময় এই স্তোত্র লিখে যে ইহা পাঠ করে সে অতুল সম্পত্তিশালী হয় ।২১৷৷

ইতি শ্রীবিশ্বসারতন্ত্রে শ্রীদুর্গাষ্টোত্তরশতনামস্তোত্রং সমাপ্তম্।।

বিশ্বসারতন্ত্রে উল্লিখিত শ্রীদুর্গাষ্টোত্তরশতনাম স্তোত্র সম্পূর্ণ হল।

পাঠবিধি



পাঠবিধি (১)

সাধক স্নান করে পবিত্র হয়ে আসনশুদ্ধি করে শুদ্ধাসনে বসবে; শুদ্ধ জল, পূজাসামগ্রী ও শ্রীদুর্গাসপ্তশতী (চণ্ডী) পুস্তক সামনে রাখবে। কাষ্ঠাদি নির্মিত শুদ্ধাসনে পুস্তকটি রাখতে হবে। নিজ রুচি অনুযায়ী ললাটে ভস্ম, চন্দন অথবা লাল সিন্দূর এঁকে নেবে, শিখাবন্ধন করবে; তারপর পূর্বমুখ হয়ে তত্ত্বশুদ্ধির জন্য চারবার আচমন করবে এবং নিম্নলিখিত মন্ত্র চারটি ক্রমশঃ পাঠ করবে-

ওঁ ঐং আত্মতত্ত্বং শোধয়ামি নমঃ স্বাহা। 
ওঁ হ্রীং বিদ্যাতত্ত্বং শোধয়ামি নমঃ স্বাহা। 
ওঁ ক্লীং শিবতত্ত্বং শোধয়ামি নমঃ স্বাহা। 
ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং সর্বতত্ত্বং শোধয়ামি নমঃ স্বাহা।।

তারপর প্রাণায়াম করে গণেশাদি দেবতাকে এবং গুরু প্রণাম করে 'পবিত্রেস্থো বৈষ্ণব্যৌ' ইত্যাদি মন্ত্রে কুশের পবিত্র আংটি ধারণ করে হাতে অক্ষত লাল ফুল ও জল নিয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্রে সঙ্কল্প করবে-

ওঁ বিষ্ণুর্বিষ্ণুর্বিষ্ণুঃ। ওঁ নমঃ পরমাত্মনে, শ্রীপুরাণপুরুষোত্তমস্য

(১) এখানে সংক্ষিপ্তরূপে পাঠবিধি দেওয়া হল। নবরাত্রি ইত্যাদি বিশেষ অনুষ্ঠানে অথবা শতচণ্ডীপাঠ অনুষ্ঠানে এই নিয়ম বিস্তারিতভাবে পালন করা হয়। তখন যন্ত্রস্থ কলস, গণেশ, নবগ্রহ, মাতৃকা, বাস্তু, সপ্তর্ষি, সপ্তচিরঞ্জীব, ৬৪ যোগিনী, ৫০ ক্ষেত্রপাল এবং অন্যান্য দেবতাদের বৈদিক নিয়মে পূজা করা হয়। অক্ষয় প্রদীপেরও ব্যবস্থা থাকে। দেবীর অঙ্গন্যাস ও অগ্ন্যুত্তারণ ইত্যাদি নিয়ম অনুসারে শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী পূজা করা হয়। নবদুর্গাপূজা, জ্যোতিঃপূজা, বটুক- গণেশাদিসহ কুমারীপূজা, অভিষেক, নান্দীশ্রাদ্ধ, রক্ষাবন্ধন, পুণ্যাহবাচন, মঙ্গলপাঠ, গুরুপূজা, তীর্থ আবাহন, মন্ত্রস্নান ইত্যাদি, আসনশুদ্ধি, প্রাণায়াম, ভূতশুদ্ধি, প্রাণপ্রতিষ্ঠা, অন্তর্মাতৃকান্যাস, বহির্মাতৃকান্যাস, সৃষ্টিন্যাস, স্থিতিন্যাস, শক্তিকলান্যাস, শিবকলান্যাস, হৃদয়াদিন্যাস, ষোঢ়ান্যাস, বিলোমন্যাস, তত্ত্বন্যাস, অক্ষরন্যাস, ব্যাপকন্যাস, ধ্যান, পীঠপূজা, বিশেষার্ঘ্য, ক্ষেত্রকীলন, মন্ত্রপূজা, বিবিধ মুদ্রাবিধি, আবরণ পূজা এবং প্রধান পূজা ইত্যাদি শাস্ত্রীয় মতে অনুষ্ঠান করা হয়। এইরকম বিস্তৃতরীতিতে পূজা করিতে ইচ্ছুক ভক্তের অন্যান্য পূজাপদ্ধতি পুস্তকের সাহায্য নিয়ে ভগবতীর আরাধনা করে পাঠ আরম্ভ করবে।
শ্রীবিষ্ণোরাজ্ঞয়া প্রবর্তমানস্যাদ্য শ্রীব্রহ্মণো দ্বিতীয়পরার্দ্ধে শ্রীশ্বেতবারাহকল্পে বৈবস্বতমন্বন্তরেহষ্টাবিংশতিতমে কলিযুগে প্রথমচরণে জম্বুদ্বীপে ভারতবর্ষে ভরতখণ্ডে আর্যাবর্তান্তর্গব্রহ্মাবর্তৈকদেশে পুণ্যপ্রদেশে বৌদ্ধাবতারে বর্তমানে যথানামসংবৎসরে অমুকায়নে মহামাঙ্গল্যপ্রদে মাসানাম্ উত্তমে অমুকমাসে অমুকপক্ষে অমুকতিথৌ অমুকবাসরান্বিতায়াম্ অমুকনক্ষত্রে অমুকরাশিস্থিতে সূর্যে অমুকামুকরাশিস্থিতেষু চন্দ্রভৌমবুধগুরুশুক্রশনিষু সৎসু শুভে যোগে শুভকরণে এবংগুণবিশেষণবিশিষ্টায়াং শুভপুণ্যতিথৌ সকলশাস্ত্রশ্রুতিস্মৃতি-পুরাণোক্তফলপ্রাপ্তিকামঃ অমুকগোত্রোৎপন্নঃ অমুকশর্মা অহং মমাত্মনঃ সপুত্রস্ত্রীবান্ধবস্য শ্রীনবদুর্গানুগ্রহতো গ্রহকৃতরাজকৃতসর্ববিধপীডানিবৃত্তিপূর্বকং নৈরুজ্যদীর্ঘায়ুঃ পুষ্টিধনধান্য- সমৃদ্ধ্যর্থং শ্রীনবদুর্গাপ্রসাদেন সর্বাপন্নিবৃত্তিসর্বাভীষ্টফলাবাপ্তি- ধর্মার্থকামমোক্ষচতুর্বিধপুরুষার্থসিদ্ধিদ্বারা শ্রীমহাকালীমহালক্ষ্মী মহাসরস্বতী- দেবতাপ্রীত্যর্থং শাপোদ্ধারপুরসুরং কবচার্গলাকীলকপাঠবেদ- তন্ত্রোক্তরাত্রিসূক্তপাঠদেব্যথর্বশীর্ষপাঠন্যাসবিধিসহিতনবার্ণজপসপ্তশতীন্যাসধ্যান সহিতচরিত্রসম্বন্ধিবিনিয়োগন্যাসধ্যানপূর্বকং চ 'মার্কণ্ডেয় উবাচ।। সাবর্ণিঃ সূর্যতনয়ো যো মনুঃ কথ্যতেহষ্টমঃ।' ইত্যাদ্যারভ্য 'সাবর্ণির্ভবিতা মনুঃ' ইত্যন্তং দুর্গাসপ্তশতীপাঠং (চণ্ডীপাঠং) তদন্তে ন্যাসবিধিসহিতনবার্ণমন্ত্রজপং বেদতন্ত্রোক্তদেবীসূক্তপাঠং রহস্যত্রয়পঠনং শাপোদ্ধারাদিকং চ করিষ্যে।

এইভাবে সঙ্কল্প করে দেবীর ধ্যান করে পঞ্চোপচারে পুস্তকের পূজা(১) করা, যোনিমুদ্রা প্রদর্শন করে ভগবতীকে প্রণাম করা, তারপর মূল নবার্ণমন্ত্রে পীঠাদিতে আধারশক্তিকে স্থাপনা করে পুস্তককে সেই আধারের ওপর রাখতে হয় ।

(১) পুস্তকপূজার মন্ত্র এরূপ

ওঁ নমো দেব্যৈ মহাদেব্যৈ শিবায়ৈ সততং নমঃ।

নমঃ প্রকৃত্যৈ ভদ্রায়ৈ নিয়তাঃ প্রণতাঃ স্ম তাম্।

(বারাহীতন্ত্র এবং চিদম্বরসংহিতা)

(২) ধ্যাত্বা দেবীং পঞ্চপূজাং কৃত্বা যোন্যা প্রণম্য চ।

আধারং স্থাপ্য মূলেন স্থাপয়েত্তত্র পুস্তকম্ ।।

এরপর শাপোদ্ধার(১) করা প্রয়োজন, এর অনেক প্রকার-ভেদ আছে। 'এ হ্রীং ক্লীং শ্রীং ক্রাং ক্রীং চণ্ডিকাদেব্যৈ শাপনাশানুগ্রহং কুরু কুরু স্বাহা'-এই মন্ত্র প্রথমে ও শেষে সাতবার জপ করতে হয়। একে শাপোদ্ধারমন্ত্র বলা হয়। এরপর উৎকীলন মন্ত্র জপ করা হয়। এই মন্ত্রের জপ আদি ও অন্তে একুশ বার করে করা দরকার। এই মন্ত্র হল- 'ওঁ শ্রীং ক্লীং হ্রীং সপ্তশতি চণ্ডিকে উৎকীলনং কুরু কুরু স্বাহা।' এই জপের পরে আদি এবং অন্তে সাতবার করে মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা জপ করা দরকার, যা এরূপ- 'ওঁ হ্রীং হ্রীং বং বং ঐং ঐং মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যে মৃতমুত্থাপয়োত্থাপয় ক্রীং হ্রীং হ্রীং বং স্বাহা।' মারীচকল্পের

(১) 'সপ্তশতী-সর্বস্ব' বর্ণিত উপাসনার ক্রম অনুসারে প্রথমে শাপোদ্ধার করে তারপর ষড়ঙ্গসহিত পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। তারপর কবচাদি পাঠ করে প্রথমেই শাপোদ্ধার করে নেওয়া উচিত। কাত্যায়নী-তন্ত্রে শাপোদ্ধার তথা উৎকীলনের অন্যরকম ক্রম বলা হয়েছে- 'অন্ত্যাদ্যার্কদ্বিরুদ্রত্রিদিগন্ধ্যঙ্কেম্বিভর্তবঃ। অশ্বোহশ্ব ইতি সর্গাণাং শাপোদ্ধারে মনোঃ ক্রমঃ।।' 'উৎকীলনে চরিত্রাণাং মধ্যাদ্যন্তমিতি ক্রমঃ।' অর্থাৎ সপ্তশতীর অধ্যায়ের তের একবার, বার দুইবার, এগার-তিনবার, দশ-চারবার, নয় পাঁচবার তথা আট-ছয়বার ক্রমে পাঠ করে শেষে সপ্তম অধ্যায়কে দুবার পাঠ করা উচিত। একে বলে শাপোদ্ধার এবং প্রথমে মধ্যম চরিত্র, তারপর প্রথম চরিত্র, তারপর উত্তর চরিত্র পাঠ করাকে উৎকীলন বলে। কিছু মতানুসারে কীলকে যে রকম বলা আছে সেই অনুসারে 'দদাতি প্রতিগৃহ্বাতি' নিয়মঅনুযায়ী কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী বা চতুর্দশী তিথিতে দেবীকে সর্বস্ব সমর্পণ করে তাঁর হয়ে তাঁর প্রসাদরূপে প্রত্যেক জিনিষের ব্যবহারই শাপোদ্ধার এবং উৎকীলন। কেউ কেউ বলেন যে, ছয় অঙ্গসহিত পাঠ করাই শাপোদ্ধার। অঙ্গের ত্যাগ বা বাদ দেওয়াই শাপ। আবার পণ্ডিতদের এক অংশের মতে শাপোদ্ধার কর্ম অনিবার্য অর্থাৎ আবশ্যক নয়, কারণ রহস্যাধ্যায়ে পরিষ্কারভাবে বলা আছে যে, যার পক্ষে একই দিনে সম্পূর্ণ পাঠ করা সম্ভব না হয় সে একদিন কেবল মধ্যম চরিত্র এবং পরের দিন শেষ দুটো চরিত্র পাঠ করবে। এছাড়া যে প্রতিদিন নিয়মিত পাঠ করে তার পক্ষে একদিনে সম্পূর্ণ পাঠ করতে না পারলে প্রথম, দ্বিতীয়, প্রথম, চতুর্থ, দ্বিতীয়, প্রথম এবং দ্বিতীয় অধ্যায় ক্রম অনুসারে সাত দিনে পাঠ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ আছে। এই অবস্থায় প্রতিদিন শাপোদ্ধার এবং কীলক কী করে সম্ভব হবে? তবে যাই হোক, জিজ্ঞাসুদের জ্ঞাতার্থে এখানে শাপোদ্ধার ও উৎকীলন দুইয়েরই বিধান দেওয়া হয়েছে।
মতে সপ্তশতী (শ্রীশ্রীচণ্ডী) শাপবিমোচন মন্ত্র এইরকম 'ওঁ শ্রীং শ্রীং ক্লীং হং ওঁ ঐং ক্ষোভয় মোহয় উৎকীলয় উৎকীলয় উৎকীলয় ঠং ঠং।' পাঠের পূর্বেই এই মন্ত্র ১০৮ বার জপ করা উচিত, পাঠের শেষে নয়। অথবা রুদ্রযামল মহামন্ত্রের অন্তর্গত দুর্গাকল্পে লিখিত চণ্ডিকা-শাপ-বিমোচন মন্ত্র পাঠের আগেই জপ করা দরকার। এই মন্ত্র এইপ্রকার-

ওঁ অস্য শ্রীচণ্ডিকায়া ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপবিমোচনমন্ত্রস্য বসিষ্ঠনারদসংবাদ-সামবেদাধিপতিব্রহ্মাণ ঋষয়ঃ সর্বৈশ্বর্যকারিণী শ্রীদুর্গা দেবতা চরিত্রত্রয়ং বীজং হ্রীং শক্তিঃ ত্রিগুণাত্মস্বরূপচণ্ডিকাশাপবিমুক্তৌ মম সঙ্কল্পিতকার্যসিদ্ধ্যর্থে জপে বিনিয়োগঃ।

ওঁ (হ্রীং) রীং রেতঃস্বরূপিণ্যৈ মধুকৈটভমর্দিন্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ্ বিমুক্তা ভব৷৷ ১ ৷৷ ওঁ শ্রীং বুদ্ধিস্বরূপিণ্যৈ মহিষাসুরসৈন্যনাশিন্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠ- বিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব। ২ ৷৷ ওঁ রং রক্তস্বরূপিণ্যৈ মহিষাসুরমর্দিন্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব৷৷ ৩ ৷৷ ওঁ ক্ষুং ক্ষুধাস্বরূপিণ্যৈ দেববন্দিতায়ৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব। ৪ ৷৷ ওঁ ছাং হায়াস্বরূপিণ্যৈ দূতসংবাদিন্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব।। ৫ ৷৷ ওঁ শং শক্তিস্বরূপিণ্যৈ ধূম্রলোচনঘাতিন্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব।। ৬ ৷৷ ওঁ তৃং তৃষাস্বরূপিণ্যে চণ্ডমুণ্ডবধকারিণ্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ্ বিমুক্তা ভব। ৭৷ ওঁ ক্ষাং ক্ষান্তিস্বরূপিণ্যৈ রক্তবীজবধকারিণ্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ্ বিমুক্তা ভব। ৮ ৷৷ ওঁ জাং জাতিস্বরূপিণ্যৈ নিশুম্ভবধকারিণ্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব৷ ৯ ৷৷ ওঁ লং লজ্জাস্বরূপিণ্যৈ শুম্ভবধকারিণ্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব।। ১০ ৷৷ ওঁ শাং শান্তিস্বরূপিণ্যৈ দেবস্তুত্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ্ বিমুক্তা ভব। ১১ ৷ ওঁ শ্রং শ্রদ্ধাস্বরূপিণ্যে সকলফলদাত্র্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব৷৷ ১২ ৷৷ ওঁ কাং কান্তিস্বরূপিণ্যে রাজবরপ্রদায়ৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব৷ ১৩ ৷৷ ওঁ মাং মাতৃস্বরূপিণ্যৈ অনর্গল-মহিমসহিতায়ৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব। ১৪ ৷ ওঁ হ্রীং শ্রীং দুং দুর্গায়ৈ সং সর্বৈশ্বর্যকারিণ্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব। ১৫ ৷ ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং নমঃ শিবায়ৈ অভেদ্যকবচস্বরূপিণ্যৈ ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাদ বিমুক্তা ভব৷৷ ১৬ ৷৷ ওঁ ক্রীং কাল্যৈ কালি হ্রীং ফট্ স্বাহায়ৈ ঋগ্বেদস্বরূপিণ্য ব্রহ্মবসিষ্ঠবিশ্বামিত্রশাপাল্ বিমুক্তা ভব৷৷ ১৭ ৷৷ ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং মহাকালীমহালক্ষ্মীমহাসরস্বতীস্বরূপিণ্যে ত্রিগুণাত্মিকায়ৈ দুর্গাদেব্যৈ নমঃ ।। ১৮ ৷৷

ইত্যেবং হি মহামন্ত্রান্ পঠিত্বা পরমেশ্বর।

চণ্ডীপাঠং দিবা রাত্রৌ কুর্যাদেব ন সংশয়ঃ। ১৯ ৷

এবং মন্ত্রং ন জানাতি চণ্ডীপাঠং করোতি যঃ।

আত্মানং চৈব দাতারং ক্ষীণং কুর্যান্ন সংশয়ঃ ৷৷ ২০৷৷

এইভাবে শাপোদ্ধার করে তারপর অন্তর্মাতৃকা ও বহির্মাতৃকা ন্যাসাদি করে শ্রীদেবীর ধ্যানান্তে নয়টি কোষ্ঠযুক্ত যন্ত্রে মহালক্ষ্মী আদির পূজা, তারপর ছয় দুর্গাসপ্তশতীর পাঠ আরম্ভ করা হয়। কবচ, অর্গলা, কীলক এবং তিনটা রহস্য-এদেরও সপ্তশতীর ছয় অঙ্গরূপে মান্য করা হয়। এই ক্রমে মতভেদ আছে। চিদম্বরসংহিতায় প্রথমে অর্গলা, তারপর কীলক এবং শেষে কবচ পাঠের বিধি আছে(১)। কিন্তু যোগরত্নাবলীতে পাঠের ক্রম আবার অন্য রকম। সেখানে কবচের বীজ, অর্গলার শক্তি, কীলকের কীলক সংজ্ঞা বলা আছে। সমস্ত মন্ত্রেই যেমন প্রথমে বীজের, তারপরে শক্তির এবং শেষে কীলকের উচ্চারণ হয়, সেইরকম এখানেও প্রথমে কবচরূপ বীজের, তারপর অর্গলারূপা শক্তির এবং শেষে কীলকরূপ কীলকের ক্রমশঃ পাঠ হওয়া উচিত (২)। বক্ষ্যমাণ পুস্তকে এই ক্রমেরই অনুসরণ করা হয়েছে।
__________________________________________________________________________________
(১)     অর্গলং কীলকং চাদৌ পঠিত্বা কবচং পঠেৎ।
        জপ্যা সপ্তশতী পশ্চাৎ সিদ্ধিকামেন মন্ত্রিণা।।



(২)     কবচং বীজমাদিষ্টমর্গলা শক্তিরুচ্যতে।
        কীলকং কীলকং প্রাহুঃ সপ্তশত্যা মহামনোঃ।।

যথা সর্বমন্ত্রেষু বীজশক্তিকীলকানাং প্রথমমুচ্চারণং তথা সপ্তশতীপাঠেহপি কবচার্গলাকীলকানাং প্রথমং পাঠঃ স্যাৎ।

এই রকম অনেক তন্ত্র অনুসারে সপ্তশতীর পাঠের ক্রম অনেক রকম বর্ণিত আছে। সেই অবস্থায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ে পাঠের যে ক্রম পূর্বপরম্পরায় প্রচলিত আছে, সেই অনুযায়ী পাঠ করাই শ্রেয়।

অথ দেব্যাঃ কবচম্

Durga Saptashati
Durga Saptashati Image

অথ দেব্যাঃ কবচম্

দেবীকবচ

ওঁ অস্য শ্রীচণ্ডীকবচস্য ব্রহ্মা ঋষিঃ, অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ, চামুণ্ডা দেবতা, অঙ্গন্যাসোক্তমাতরো বীজম্, দিগন্ধদেবতাস্তত্ত্বম্, শ্রীজগদম্বাপ্রীত্যর্থে সপ্তশতীপাঠাঙ্গত্বেন জপে বিনিয়োগঃ।

ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ ।।

ওঁ চণ্ডিকা দেবীকে নমস্কার করি।

মার্কণ্ডেয় উবাচ

ওঁ যদ্‌ গুহ্যং পরমং লোকে সর্বরক্ষাকরং নৃণাম্।
যন্ন কস্যচিদাখ্যাতং তন্মে ব্রহি পিতামহ ৷৷ ১ ৷৷

মার্কণ্ডেয় মুনি বললেন-পিতামহ! এই সংসারে পরম গোপনীয় তথা মানুষকে সর্বতোভাবে রক্ষাকারী এবং আজ পর্যন্ত যা আপনি অন্য কাউকে বলেননি, এরকম কোনও সাধন আমাকে বলুন৷৷ ১ ৷

ব্রহ্মোবাচ অস্তি গুহ্যতমং বিপ্র সর্বভূতোপকারকম্।
দেব্যাস্ত কবচং পুণ্যং তৎ শৃণুষ মহামুনে ৷৷২৷৷

ব্রহ্মা বললেন-ব্রহ্মন্! এরকম সাধন তো একমাত্র দেবীকবচই আছে, যা গোপনীয় থেকেও গুহ্যতম, পবিত্র তথা সমস্ত প্রাণীবর্গের মঙ্গলকারী। হে মহামুনি! তা শ্রবণ করুন। ২ ।।

প্রথমং শৈলপুত্রী চ দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী।
তৃতীয়ং চন্দ্রঘণ্টেতি কৃষ্মাণ্ডেতি চতুর্থকম্ ৷৷ ৩ ৷৷

পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা।
সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি চাষ্টমম্॥ ४ ॥

নবমং সিদ্ধিদাত্রী চ নবদুর্গাঃ প্রকীর্তিতাঃ।
উক্তান্যেতানি নামানি ব্রহ্মণৈব মহাত্মনা ৷৷ ৫ ৷৷

দেবীর নয়টি মূর্তি আছে যাকে 'নবদুর্গা' বলা হয়। তাদের পৃথক পৃথক নাম বলছি। প্রথম নাম শৈলপুত্রী(১), দ্বিতীয় মূর্তির নাম ব্রহ্মচারিণী (২)। তৃতীয় স্বরূপ চন্দ্রঘন্টা (৩) নামে প্রসিদ্ধ। চতুর্থ মূর্তিকে বলা হয় কৃষ্মাণ্ডা (৪)। পঞ্চম দুর্গার নাম স্কন্দমাতা(৫)। দেবীর ষষ্ঠরূপকে কাত্যায়নী বলা হয়। সপ্তম রূপ কালরাত্রি (৭) এবং অষ্টম স্বরূপ মহাগৌরী (৮) নামে প্রসিদ্ধা। নবম দুর্গার নাম সিদ্ধিদাত্রী(১)। এই সব নাম সর্বজ্ঞ মহাত্মা বেদ ভগবান দ্বারাই প্রতিপাদিত হয়েছে ৷৷ ৩-৫ ।।

অগ্নিনা দহ্যমানস্তু শত্রুমধ্যে গতো রণে।
বিষমে দুর্গমে চৈব ভয়ার্তাঃ শরণং গতাঃ ৷৷ ৬ ৷৷

ন তেষাং জায়তে কিঞ্চিদশুভং রণসঙ্কটে।
নাপদং তস্য পশ্যামি শোকদুঃখভয়ং ন হি ৷৷৭৷৷

যে মানুষ জ্বলন্ত অগ্নির মধ্যে পুড়ছে, রণক্ষেত্রে শত্রুদ্বারা পরিবেষ্টিত, বিষম সঙ্কটে নিপাতিত তথা এই জাতীয় ভয়ে আর্ত হয়ে, ভগবতী দুর্গার শরণাগতি প্রার্থনা করে, তার কখনই কোনরকম অমঙ্গল হয় না। যুদ্ধের সময়ে সঙ্কটে পড়লেও কোন বিপদ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। সে কখনও শোক, দুঃখ আর ভয়ের অধীন হয় না।। ৬-৭ ।।

যৈস্ত ভক্ত্যা স্মৃতা নূনং তেষাং বৃদ্ধিঃ প্রজায়তে।
যে ত্বাং স্মরন্তি দেবেশি রক্ষসে তান্ন সংশয়ঃ ৷৷ ৮ ৷৷

যারা ভক্তিভাবে দেবীকে স্মরণ করেছে, তাদের অবশ্যই শ্রীবৃদ্ধি হয়। দেবেশ্বরি! যে তোমার ধ্যান করে, তাকে তুমি নিঃসন্দেহে রক্ষা করো ।। ৮ ।।

প্রেতসংস্থা তু চামুণ্ডা বারাহী মহিষাসনা।
ঐন্দ্রী গজসমারূঢ়া বৈষ্ণবী গরুড়াসনা ৷৷ ৯৷৷

চামুণ্ডা দেবী প্রেতের উপর আরূঢ়া। বারাহী মহিষের ওপর আসীনা। ঐন্দ্রীর বাহন ঐরাবত হাতী। বৈষ্ণবীদেবী গরুড়ের পৃষ্ঠে সমাসীনা। ৯ ॥

মাহেশ্বরী বৃষারূঢ়া কৌমারী শিখিবাহনা।
লক্ষ্মীঃ পদ্মাসনা দেবী পদ্মহস্তা হরিপ্রিয়া ৷৷ ১০ ৷৷

মহেশ্বরী বৃষভের উপর আসীনা থাকেন। কৌমারীর বাহন ময়ূর। ভগবান বিষ্ণুর প্রিয়তমা লক্ষ্মীদেবী পদ্মফুলের আসনের ওপর বিরাজমানা এবং হাতেও পদ্মফুল ধারণ করেন।১০ ।।

শ্বেতরূপধরা দেবী ঈশ্বরী বৃষবাহনা।
ব্রাহ্মী হংসসমারূঢ়া সর্বাভরণভূষিতা ৷৷১১ ৷৷

বৃষভারূঢ়া ঈশ্বরীদেবী শ্বেতবর্ণা রূপ ধারণ করেছেন। ব্রাহ্মীদেবী হংসের ওপর বসা এবং সমস্ত রকম আভরণে ভূষিতা ৷৷ ১১ ৷৷

ইত্যেতা মাতরঃ সর্বাঃ সর্বযোগসমন্বিতাঃ।
নানাভরণশোভাঢ্যা নানারত্নোপশোভিতাঃ ৷৷ ১২ ৷৷

এইভাবেই সব মাতৃকাগণ সব রকম যোগশক্তিসম্পন্ন। এঁরা ছাড়া আরও অনেক দেবী রয়েছেন যাঁরা বহুপ্রকার আভরণে বিভূষিতা এবং নানা রত্নে শোভিতা৷৷ ১২ ৷৷

দৃশ্যন্তে রথমারূঢ়া দেব্যঃ ক্রোধসমাকুলাঃ।
শঙ্খং চক্রং গদাং শক্তিং হলঞ্চ মুষলায়ুধম্ ৷৷ ১৩ ৷৷

খেটকং তোমরঞ্চৈব পরশুং পাশমেব চ।
কুন্তায়ুধং ত্রিশূলঞ্চ শাঙ্গমায়ুধমুত্তমম্ ৷৷ ১৪ ৷৷

দৈত্যানাং দেহনাশায় ভক্তানামভয়ায় চ।
ধারয়ন্ত্যায়ুধানীখং দেবানাঞ্চ হিতায় বৈ ৷৷১৫৷৷

এইসকল দেবীগণ অতীব ক্রোধযুক্তা এবং ভক্তদের রক্ষার জন্য রথের উপর দৃশ্যতঃ বসে আছেন। তাঁরা শঙ্খ, চক্র, গদা, শক্তি, হল ও মুসল, খেটক ও তোমর, পরশু ও পাশ, কুন্ত ও ত্রিশূল এবং উত্তম শাঙ্গ ধনুকাদি অস্ত্র-শস্ত্র নিজেদের হাতে ধারণ করে রয়েছেন। দৈত্যদের শরীর নাশ করা, ভক্তকে অভয়প্রদান এবং দেবতাদের কল্যাণ করা-তাঁদের শস্ত্রধারণের এই-ই উদ্দেশ্য। ১৩-১৫ ।।

নমস্তেহস্ত মহারৌদ্রে মহাঘোরপরাক্রমে।
মহাবলে মহোৎসাহে মহাভয়বিনাশিনি ৷৷ ১৬৷৷

কবচ পাঠের প্রারম্ভে এইরকম প্রার্থনা করা দরকার-মহান রৌদ্ররূপ, অত্যন্ত ঘোর পরাক্রম, মহান বল ও মহান উৎসাহশালিনী দেবি! তুমি মহান ভয়ের নাশকারী, তোমাকে নমস্কার।। ১৬ ৷৷

ত্রাহি মাং দেবি দুষ্প্রেক্ষ্যে শত্রুণাং ভয়বর্ধিনি।
প্রাচ্যাং রক্ষতু মামৈন্দ্রী আগ্নেয্যামগ্নিদেবতা ৷৷ ১৭৷৷

দক্ষিণেহবতু বারাহী নৈঋত্যাং খড়াধারিণী।
প্রতীচ্যাং বারুণী রক্ষেদ বায়ব্যাং মৃগবাহিনী ৷৷ ১৮ ৷৷

তোমার দিকে তাকানও কঠিন। শত্রুর ভয়বর্দ্ধিনী জগদম্বিকে! আমাকে রক্ষা করো। পূর্বদিকে ঐন্দ্রী (ইন্দ্রশক্তি) আমাকে রক্ষা করুন। অগ্নিকোণে অগ্নিশক্তি, দক্ষিণ দিকে বারাহী এবং নৈঋতকোণে খড়াধারিণী আমাকে রক্ষা করুন, পশ্চিম দিকে বারুণী এবং বায়ুকোণে মৃগারূঢ়া দেবী আমাকে রক্ষা করুন। ১৭-১৮ ।।

উদীচ্যাং পাতু কৌমারী ঐশান্যাং শূলধারিণী।
ঊর্ধ্বং ব্রহ্মাণী মে রক্ষেদধস্তাদ্ বৈষ্ণবী তথা ৷৷১৯ ৷৷

উত্তরদিকে কৌমারী এবং ঈশানকোণে শূলধারিণী দেবী আমাকে রক্ষা করুন। ব্রহ্মাণি! আপনি ঊর্ধ্বদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন এবং বৈষ্ণবীদেবী অধোদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন।। ১৯ ।

এবং দশ দিশো রক্ষেৎ চামুণ্ডা শববাহনা।
জয়া মে চাগ্রতঃ পাতু বিজয়া পাতু পৃষ্ঠতঃ ৷৷ ২০৷৷

ইভাবে শববাহনা চামুণ্ডাদেবী দশদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন। জয়া সামনের দিকে এবং বিজয়া পশ্চাৎদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন। ২০।

অজিতা বামপার্শ্বে তু দক্ষিণে চাপরাজিতা।
শিখাং মে দ্যোতিনী রক্ষেদুমা মূর্রি ব্যবস্থিতা ৷৷ ২১ ৷৷

এবামদিকে অজিতা এবং দক্ষিণদিকে অপরাজিতা আমাকে রক্ষা করুন। আমার শিখা দ্যোতিনী দেবী রক্ষা করুন। উমাদেবী আমার শিরোদেশে অবস্থান করে আমাকে রক্ষা করুন। ২১ ।।

মালাধরী ললাটে চ ভ্রুবৌ রক্ষেদ্ যশস্বিনী।
ত্রিনেত্রা চ বোমধ্যে যমঘণ্টা চ নাসিকে৷ ৷২২ ৷৷

ললাটে মালাধরী রক্ষা করুন এবং যশস্বিনীদেবী আমার ভ্রূদ্বয় রক্ষা করুন। ত্রিনেত্রা দেবী আমার ভ্রূযুগলের মধ্যভাগ এবং যমঘন্টাদেবী নাসিকা রক্ষা করুন ॥ ২২ ৷৷

শঙ্খিনী চক্ষুষোর্মধ্যে শ্রোত্রয়োর্থারবাসিনী।
কপোলৌ কালিকা রক্ষেৎ কর্ণমূলে তু শঙ্করী ।২৩ ৷৷

দুই চোখের মধ্যদেশকে শঙ্খিনী এবং কর্ণদ্বয় দ্বারবাসিনীদেবী রক্ষা করুন। কালিকাদেবী কপোলদ্বয় এবং ভগবতী শঙ্করী কর্ণমূল রক্ষা করুন। ২৩ ৷৷

নাসিকায়াং সুগন্ধা চ উত্তরোষ্ঠে চ চর্চিকা।
অধরে চামৃতকলা জিহ্বায়াঞ্চ সরস্বতী।২৪৷৷

সুগন্ধাদেবী নাসিকাযুগল এবং চর্চিকাদেবী উপরোষ্ঠ রক্ষা করুন। অধরোষ্ঠে অমৃতকলা আর জিহ্বাকে সরস্বতীদেবী রক্ষা করুন। ২৪ ৷৷

দন্তান রক্ষতু কৌমারী কণ্ঠদেশে তু চণ্ডিকা।
ঘণ্টিকাং চিত্রঘণ্টা চ মহামায়া চ তালুকে।২৫ ৷৷

কৌমারী আমায় দাঁত এবং চণ্ডিকা কণ্ঠপ্রদেশ রক্ষা করুন। চিত্রঘন্টা আমার ঘণ্টিকা (আলজিভ) এবং মহামায়া তালুতে অবস্থান করে তালুকে রক্ষা করুন। ২৫ ৷৷

কামাক্ষী চিবুকং রক্ষেদ বাচং মে সর্বমঙ্গলা।
গ্রীবায়াং ভদ্রকালী চ পৃষ্ঠবংশে ধনুর্ধরী।২৬৷৷

কামাক্ষী আমার চিবুক এবং সর্বমঙ্গলা আমার বাণীকে রক্ষা করুন। ভদ্রকালী শ্রীবাদেশ আর ধুনধরী পৃষ্ঠবংশতে (মেরুদণ্ডে) অবস্থান করে তাকে রক্ষা করুন। ২৬ ।।

নীলগ্রীবা বহিঃকণ্ঠে নলিকাং নলকূবরী।
স্বন্ধয়োঃ খড়িগনী রক্ষেদ্ বাহু মে বজ্রধারিণী। ২৭ ॥

কণ্ঠের বর্হিদেশ নীলগ্রীবা এবং কণ্ঠনালীকে নলকূবরী রক্ষা করুন। দুই স্কন্দদেশ খড়িানী এবং আমার দুই বাহু বজ্রধারিণী রক্ষা করুন। ২৭ ।।

হস্তয়োর্দণ্ডিনী রক্ষেদম্বিকা চাঙ্গুলীষু চ।
নখাঞঙ্গুলেশ্বরী রক্ষেৎ কুক্ষৌ রক্ষেৎ কুলেশ্বরী। ২৮৷৷

আমার দুই হাতকে দণ্ডিনী এবং আঙ্গুলগুলিকে অগ্নিকা দেবী রক্ষা করুন। শূলেশ্বরী আমার নখসমূহ রক্ষা করুন। কুলেশ্বরী কুক্ষিতে (পেটে) থেকে রক্ষা করুন। ২৮৷৷

স্তনৌ রক্ষে মহাদেবী মনঃ শোকবিনাশিনী।
হৃদয়ে ললিতা দেবী উদরে শূলধারিণী ৷৷ ২৯ ৷৷

দুই স্তনকে মহাদেবী এবং মনকে শোকবিনাশিনী দেবী রক্ষা করুন। ললিতা দেবী হৃদয় এবং শূলধারিণী উদরে থেকে রক্ষা করুন। ২৯ ।।

নাভৌ চ কামিনী রক্ষেৎ গুহ্যং গুহ্যেশ্বরী তথা।
মেট্রং রক্ষতু দুর্গন্ধা পায়ুং মে গুহ্যবাহিনী ৷৷ ৩০ ॥

নাভিদেশে কামিনী এবং গুহ্যদেশকে গুহ্যেশ্বরী রক্ষা করুন। দুর্গন্ধা দেবী মেট্রদেশ (জননেন্দ্রিয়) এবং গুহ্যবাহিনী দেবী পায়ু রক্ষা করুন। ৩০ ৷

কট্যাং ভগবতী রক্ষেজ্জানুনী বিন্ধ্যবাসিনী।
জঙ্ঘে মহাবলা রক্ষেৎ সর্বকামপ্রদায়িনী ৷৷৩১ ৷৷

কটিভাগে ভগবতী এবং বিন্ধ্যবাসিনী দুই জানুদেশ রক্ষা করুন। সমস্ত কামনাদায়িনী মহাবলা দেবী দুই জঙ্ঘাদেশ রক্ষা করুন।। ৩১ ।।

গুল্ল্ফয়োর্নারসিংহী চ পাদপৃষ্ঠে তু তৈজসী।
পাদাঙ্গুলীষু শ্রী রক্ষেৎ পাদাধস্তলবাসিনী ৷৷৩২ ৷৷

নারসিংহী গুম্ফ দুটি এবং তৈজসী দেবী দুই পায়ের পাতার উপরিদেশ রক্ষা করুন। শ্রীদেবী পায়ের আঙ্গুলগুলি এবং তলবাসিনী পায়ের পাতার তলদেশে অবস্থান করে তাদের রক্ষা করুন। ৩২ ।

নখান্ দংষ্ট্রাকরালী চ কেশাংশ্চৈবোধবকেশিনী।
রোমকূপেষু কৌবেরী ত্বচং বাগীশ্বরী তথা ৷৷৩৩ ৷৷

ভয়ঙ্কররূপিণী দ্রংষ্ট্রাকরালী দেবী নখগুলি এবং ঊর্ধ্বকেশিনী দেবী চুলগুলিকে রক্ষা করুন। লোমকূপগুলিকে কৌবেরী এবং ত্বককে বাগীশ্বরী দেবী রক্ষা করুন। ৩৩ ।

রক্তমজ্জাবসামাং সান্যঙ্গিমেদাংসি পার্বতী।
অস্ত্রাণি কালরাত্রিশ পিত্তঞ্চ মুকুটেশ্বরী ৷৷৩৪ ৷৷

পার্বতী দেবী রক্ত, মজ্জা, চর্বি, মাংস, হাড় এবং মেদকে রক্ষা করুন। কালরাত্রি দেবী অস্ত্র আর মুকুটেশ্বরী দেবী পিত্তকে রক্ষা করুন ।। ৩৪ ।।

পদ্মাবতী পদ্মকোশে কফে চূড়ামণিস্তথা।
জ্বালামুখী নখজ্বালামভেদ্যা সর্বসন্ধিযু৷৷ ৩৫ ৷৷

মূলাধার আদি কমলকোশে পদ্মাবতী দেবী এবং কফে চূড়ামণি দেবী স্থিত হয়ে তাদের রক্ষা করুন। নখের জ্যোতিকে জ্বালামুখী দেবী রক্ষা করুন। যাঁকে কোনও অস্ত্রই ভেদ করতে পারে না, সেই অভেদ্যা দেবী শরীরের সমস্ত সন্ধিস্থানে অবস্থান করে তাদের রক্ষা করুন।। ৩৫।।

শুক্রং ব্রহ্মাণি মে রক্ষেচ্ছায়াং ছত্রেশ্বরী তথা।
অহঙ্কারং মনো বুদ্ধিং রক্ষেন্মে ধর্মধারিণী ৷৷ ৩৬ ৷৷

ব্রহ্মাণি! আপনি আমার বীর্যকে (শুক্র) রক্ষা করুন। ছত্রেশ্বরী ছায়াকে এবং ধর্মধারিণী দেবী আমার অহংকার, মন ও বুদ্ধিকে রক্ষা করুন।। ৩৬ ৷৷

প্রাণাপানৌ তথা ব্যানমুদানঞ্চ সমানকম্।
বজ্রহস্তা চ মে রক্ষেৎ প্রাণং কল্যাণশোভনা৷৷ ৩৭ ৷৷

হাতে বজ্রধারিণী বজ্রহস্তা দেবী আমার প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান ও সমান বায়ুকে রক্ষা করুন। ভগবতী কল্যাণশোভনা আমার প্রাণকে রক্ষা করুন।। ৩৭ ।।

রসে রূপে চ গন্ধে চ শব্দে স্পর্শে চ যোগিনী।
সত্ত্বং রজস্তমশ্চৈব রক্ষেন্নারায়ণী সদা৷৷ ৩৮ ॥

রস, রূপ, গন্ধ, শব্দ আর স্পর্শ এই সব বিষয়ের অনুভূতিকে যোগিনী দেবী রক্ষা করুন এবং সত্ত্বগুণ, রজোগুণ ও তমোগুণকে নারায়ণী দেবী সদাই রক্ষা করুন।। ৩৮ ।।

আয়ূ রক্ষতু বারাহী ধর্মং রক্ষতু বৈষ্ণবী।
যশঃ কীর্তিঞ্চ লক্ষ্মীঞ্চ ধনং বিদ্যাঞ্চ চক্রিণী৷৷ ৩৯ ৷৷

বারাহী দেবী আয়ুকে রক্ষা করুন, বৈষ্ণবী দেবী ধর্মকে এবং চক্রিণী দেবী যশ, কীর্তি, লক্ষ্মী, ধন এবং বিদ্যাকে রক্ষা করুন। ৩৯ ।।

গোত্রমিন্দ্রাণি মে রক্ষেৎ পশূন্ মে রক্ষ চণ্ডিকে।
পুত্রান্ রক্ষেন্মহালক্ষ্মীর্ভার্যাং রক্ষতু ভৈরবী ৷৷৪০॥

ইন্দ্রাণি! আপনি আমার গোত্র রক্ষা করুন। চণ্ডিকে! আপনি আমার পশুকুল রক্ষা করুন। মহালক্ষ্মী পুত্রদের রক্ষা করুন এবং ভৈরবী পত্নীকে রক্ষা করুন ।। ৪০ ।

পন্থানং সুপথা রক্ষেন্মার্গং ক্ষেমঙ্করী তথা।
রাজদ্বারে মহালক্ষ্মীর্বিজয়া সর্বতঃ স্থিতা ৷৷ ৪১ ৷৷

সুপথা দেবী আমার পথ, ক্ষেমঙ্করী মার্গ, রাজদ্বারে মহালক্ষ্মী এবং সর্বব্যাপিনী বিজয়াদেবী আমাকে ভয় থেকে রক্ষা করুন। ৪১ ৷৷

রক্ষাহীনং তু যৎ স্থানং বর্জিতং কবচেন তু। তৎ সর্বং রক্ষ মে দেবি জয়ন্তী পাপনাশিনী ৷৷ ৪২ ৷৷

দেবি! যে সব জায়গা কবচ দিয়ে রক্ষিত হয়নি সুতরাং অরক্ষিত রয়েছে, সে সব আপনার দ্বারা সুরক্ষিত হোক; কারণ, আপনি বিজয়শালিনী ও পাপনাশিনী।। ৪২ ।।

পদমেকং ন গচ্ছেৎ তু যদীচ্ছেচ্ছভমাত্মনঃ।
কবচেনাবৃতো নিত্যং যত্র যত্রৈব গচ্ছতি ৷৷৪৩ ৷৷

তত্র তত্রার্থলাভশ্চ বিজয়ঃ সার্বকামিকঃ।
যং যং চিন্তয়তে কামং তং তং প্রাপ্নোতি নিশ্চিতম্। পরমৈশ্বর্যমতুলং প্রাপ্স্যতে ভূতলে পুমান্॥ ৪৪ ॥

মানুষ যদি নিজের শরীরের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা করে, তবে বিনা কবচে একপাও এগোনো উচিত নয়-কবচ পাঠ করেই যাত্রা করা উচিত। কবচের দ্বারা সবদিক থেকে সুরক্ষিত মানুষ যেখানে যেখানে যায়, সেখানেই তার ধনলাভ হয় এবং সর্বকামপ্রদ বিজয় প্রাপ্ত হয়। যে যে অভীষ্ট প্রাপ্তির চিন্তা সে করে, সেই সব তার অবশ্যই প্রাপ্তি হয়। সেই মানুষ এই পৃথিবীতে অতুলনীয় মহান ঐশ্বর্য লাভ করে। ৪৩-৪৪ ॥

নির্ভয়ো জায়তে মর্ত্যঃ সংগ্রামেস্বপরাজিতঃ।
ত্রৈলোক্যে তু ভবেৎ পূজ্যঃ কবচেনাবৃতঃ পুমান্ ৷ ৪৫ ৷৷

কবচের দ্বারা সুরক্ষিত মানুষ নির্ভীক হয়। যুদ্ধে তার কখনও পরাজয় হয় না এবং সে ত্রিলোকের পূজ্য হয়। ৪৫

ইদং তু দেব্যাঃ কবচং দেবানামপি দুর্লভম্।
যঃ পঠেৎ প্রযতো নিত্যং ত্রিসন্ধ্যং শ্রদ্ধয়ান্বিতঃ ৷ ৪৬ ॥

দৈবী কলা ভবেত্তস্য ত্রৈলোক্যে চাপরাজিতঃ।
জীবেদ বর্ষশতং সাগ্রমপমৃত্যুবিবর্জিতঃ।। ৪৭ ॥

দেবীর এই কবচ দেবতাদেরও দুর্লভ। প্রতিদিন নিয়ম করে যে ত্রিসন্ধ্যা শ্রদ্ধার সাথে এই কবচ পাঠ করে তার দৈবী কলা প্রাপ্তি হয় এবং সে ত্রিলোকে কোথাও পরাজিত হয় না। শুধু এইই নয়, সে অপমৃত্যু(১) থেকে রক্ষা পেয়ে একশ বছরেরও বেশী জীবিত থাকে। ৪৬-৪৭ ।।

নশ্যন্তি ব্যাধয়ঃ সর্বে ভূতাবিস্ফোটকাদয়ঃ।
স্থাবরং জঙ্গমঞ্চৈব কৃত্রিমং চাপি যদ্ বিষম্ । ৪৮ ৷৷

কলেরা, বসন্ত এবং কুষ্ঠ ইত্যাদি সমস্ত ব্যাধি থেকে সে মুক্ত থাকে। সিদ্ধি, আফিম, ধুতুরা ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ বিষ, সাপ বিছা ইত্যাদির দংশনজনিত জঙ্গম বিষ এবং আফিম এবং তৈলাদি সংযোগে কৃত্রিম বিষ- এই সব রকম বিষ থেকে সে রক্ষা পায়, এইসব তার কোনও অনিষ্ট করতে পারে না।। ৪৮ ।।

অভিচারাণি সর্বাণি মন্ত্রযন্ত্রাণি ভূতলে।
ভূচরাঃ খেচরাশ্চৈব জলজাশ্চোপদেশিকাঃ ৷৷ ৪৯ ৷৷

সহজা কুলজা মালা ডাকিনী শাকিনী তথা।
অন্তরীক্ষচরা ঘোরা ডাকিন্যশ্চ মহাবলাঃ ॥ ৫০ ৷৷

গ্রহভূতপিশাচাশ্চ যক্ষগন্ধর্বরাক্ষসাঃ।
ব্রহ্মরাক্ষসবেতালাঃ কৃষ্মাণ্ডা ভৈরবাদয়ঃ ।। ৫১ ৷৷

নশ্যন্তি দর্শনাৎ তস্য কবচে হৃদি সংস্থিতে।
মানোন্নতির্ভবেদ রাজ্ঞস্তেজোবৃদ্ধিকরং পরম্ ॥ ৫২৷৷

এই পৃথিবীতে মারণ, মোহন ইত্যাদি যতরকম অভিচারমূলক প্রয়োগ এবং তৎসম্পর্কিত মন্ত্র ও যন্ত্রসকল-এইসব কিছু কবচপাঠকের দৃষ্টিপাতেই নির্বিষ হয়ে যায়। কেবল তাই নয়, পৃথিবীতে বিচরণকারী গ্রামদেবতা, খেচর বিশেষ দেবগণ (কুলজা) জল-সম্পর্কীয় প্রকাশমান গণেরা, উপদেশমাত্র সিদ্ধিপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রদেবতা, জন্মের সাথে সাথেই প্রকাশমান দেবতা, কুলদেবতা, মালা (কণ্ঠমালা ইত্যাদি), ডাকিনী, শাকিনী, অন্তরীক্ষচারী ভয়ানক ডাকিনীগণ, গ্রহ, ভূত, পিশাচ, যক্ষ, গন্ধর্ব, রাক্ষস, ব্রহ্মদৈত্য, বেতাল, কুষ্মাণ্ড এবং ভৈরব আদি অনিষ্টকারী দেবতাও এই কবচধারণকারী মানুষের দৃষ্টিপাতমাত্রই পালিয়ে যায়। কবচধারী পুরুষের রাজদরবারে সম্মানবৃদ্ধি হয়। এই কবচ মানুষের তেজবৃদ্ধিকারী এক অতি উত্তম সাধন । ৪৯-৫২ ।।

যশসা বর্ষতে সোহপি কীর্তিমণ্ডিতভূতলে।
জপেৎ সপ্তশতীং চণ্ডীং কৃত্বা তু কবচং পুরা। ৫৩ ৷

যাবভূমণ্ডলং ধত্তে সশৈলবনকাননম্।
তাবত্তিষ্ঠতি মেদিন্যাং সন্ততিঃ পুত্রপৌত্রিকী৷৷ ৫৪ ৷৷

কবচপাঠক পুরুষের কীর্তিবৃদ্ধি ও যশোবৃদ্ধি হয় এবং সাথে সাথে তদনুযায়ী শ্রীবৃদ্ধি হয়। যে মানুষ প্রথমে কবচ পাঠ করে তারপর এই সপ্তশতী চণ্ডী পাঠ করে; যাবৎ বন, পর্বত এবং কানন যুক্ত ভূমণ্ডল বর্তমান থাকবে, তাবৎ তার পুত্র পৌত্রাদি সন্ততি পৃথিবীতে অবস্থান করবে।। ৫৩-৫৪ ॥

দেহান্তে পরমং স্থানং যৎ সুরৈরপি দুর্লভম্।
প্রাপ্নোতি পুরুষো নিত্যং মহামায়াপ্রসাদতঃ।। ৫৫ ৷৷

অতঃপর দেহান্তে চণ্ডীপাঠক ভগবতী মহামায়ার প্রসাদে সেই নিত্য পরমপদ প্রাপ্ত হয়, যা দেবতাদের কাছেও দুর্লভ। ৫৫ ।

লভতে পরমং রূপং শিবেন সহ মোদতে। ওঁ ৷৷ ৫৬ ৷৷

সে সুন্দর দিব্য রূপ ধারণ করে এবং কল্যাণময় শিবের সাথে আনন্দভাগী হয়৷ ৫৬ ৷৷

ইতি দেব্যাঃ কবচং সম্পূর্ণম্।।

দেবী কবচ সম্পূর্ণ হল।

অথ অর্গলাস্তোত্রম্

Durga Saptashati
Durga Saptashati Image

অর্গলাস্তোত্র

ওঁ অস্য শ্রীঅর্গলাস্তোত্রমন্ত্রস্য বিষ্ণুঋষিঃ, অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ, শ্রীমহালক্ষ্মীদেবতা, শ্রীজগদম্বাপ্রীতয়ে সপ্তশতীপাঠাঙ্গত্বেন জপে বিনিয়োগঃ।

ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ ।।

ওঁ চণ্ডিকাদেবীকে প্রণাম।

মার্কণ্ডেয় উবাচ

ওঁ জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দুর্গা ক্ষমা শিবা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোহস্তু তে৷৷ ১ ৷৷

মার্কণ্ডেয় বললেন-জয়ন্তী', মঙ্গলা', কালী', ভদ্রকালী, কপালিনী', দুর্গা, ক্ষমা', শিবা', ধাত্রী', স্বাহা' এবং স্বধা-এই সকল নামে

জয় ত্বং দেবি চামুণ্ডে জয় ভূতার্তিহারিণি।
জয় সর্বগতে দেবি কালরাত্রি নমোহস্তু তে৷৷ ২৷৷

পরিচিতা জগদম্বিকে! তোমাকে আমার প্রণাম জানাই। দেবি চামুণ্ডে! তোমার জয় হোক। সমস্ত প্রাণীর পীড়াহরণকারিণী দেবি! তোমার জয় হোক। সবের মধ্যে ব্যাপ্তরূপে অবস্থিতা দেবি! তোমার জয় হোক। কালরাত্রি! তোমাকে নমস্কার । ১-২ ।

মধুকৈটভবিদ্রাবিবিধাতৃবরদে নমঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ৩ ॥

মধু ও কৈটভকে নিধনকারিণী ও ব্রহ্মাকে বরদাত্রী দেবি! তোমাকে নমস্কার। তুমি আমাকে জ্ঞান (আত্মতত্ত্বজ্ঞান) দাও, জয় (মোহ থেকে বিজয়) দাও, যশ (মোহ-বিজয় ও জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ) দাও এবং কাম ক্রোধ আদি শত্রুদের নাশ করো।। ৩।।

মহিষাসুরনির্ণাশি ভক্তানাং সুখদে নমঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ৪ ৷৷

মহিষাসুরনিধনকারিণী এবং ভক্তসুখদায়িনী দেবি! তোমাকে নমস্কার। তুমি রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং কামক্রোধাদি রিপুকে নাশ করো।। ৪ ।।

রক্তবীজবধে দেবি চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ৷৷ ৫ ৷৷

রক্তবীজবধকারিণী ও চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনী দেবি! তুমি রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং কামক্রোধাদি রিপুদের বিনাশ করো।। ৫ ।।

শুম্ভস্যৈব নিশুম্ভস্য ধূম্রাক্ষস্য চ মর্দিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ৷৷ ৬৷৷

শুম্ভ এবং নিশুম্ভ ও ধূম্রলোচন- মর্দিনী দেবি! তুমি রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং কামক্রোধাদি রিপুদের নাশ করো।। ৬।।

বন্দিতাঙ্ঘিযুগে দেবি সর্বসৌভাগ্যদায়িনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ৭ ৷৷

অচিন্ত্যরূপচরিতে সর্বশত্রুবিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ৷৷ ৮৷৷

নতেভ্যঃ সর্বদা ভক্ত্যা চণ্ডিকে দুরিতাপহে।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ৷৯ ৷৷

ম্ভবভ্যো ভক্তিপূর্বং ত্বাং চণ্ডিকে ব্যাধিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ৷৷১০৷৷

চণ্ডিকে সততং যে ত্বামচয়ন্তীহ ভক্তিতঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ১১ ৷৷

সর্ববন্দিত যুগলচরণী ও সকল সৌভাগ্যদায়িনী দেবি! তুমি আমাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং কামক্রোধাদি রিপুদের বিনাশ করো। ৭ ॥ অচিন্ত্যরূপ চরিত্রবতী, সর্বশত্রুবিনাশিনী দেবি! তুমি আমাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও ও কাম ক্রোধাদি রিপুদের নাশ করো।। ৮ ।। পাপনাশিনী চণ্ডিকে! ভক্তিভরে তোমার চরণে যে প্রণিপাত করে, তাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং তার কামক্রোধাদি রিপুদের বিনাশ করো ।। ৯ ৷৷ ব্যাধিনাশিনী চণ্ডিকে! ভক্তিপূর্বক যে তোমার স্তুতি করে, তাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং তার কামক্রোধাদি রিপুদের নাশ করো । ১০ ॥ চণ্ডিকে! এই সংসারে ভক্তিভরে যে তোমার পূজা করে, তাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং তার কামক্রোধাদি শত্রুদের বিনাশ করো ৷৷ ১১ ৷৷

দেহি সৌভাগ্যমারোগ্যং দেহি মে পরমং সুখম্।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ৷৷১২৷৷

আমাকে সৌভাগ্য ও আরোগ্য দাও। পরম সুখ দাও, রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং আমার কামক্রোধাদি রিপুদের বিনাশ করো ।। ১২ ।।

বিধেহি দ্বিষতাং নাশং বিধেহি বলমুচ্চকৈঃ৷
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ১৩৷৷

আমাকে যে দ্বেষ করে, তাকে নাশ করো আর আমার বলবৃদ্ধি করো। রূপ দাও, যশ দাও এবং আমার কামক্রোধাদি শত্রু বিনাশ করো ।। ১৩ ।।

বিধেহি দেবি কল্যাণং বিধেহি পরমাং শ্রিয়ম্।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ১৪৷৷

হে দেবি! আমার মঙ্গল করো। আমাকে অতুল বৈভব দাও। রূপ দাও, জয় দাও ও যশ দাও এবং কাম ক্রোধাদি রিপুদের নাশ করো ।। ১৪ ।।

সুরাসুরশিরোরত্ননিষ্টচরণেহম্বিকে।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ১৫৷৷

হে অশ্বিকে! দেবতা ও অসুর সকলেই তাদের শিরোভূষণ মণিমাণিক্য সব তোমার চরণে সমর্পিত করে। তুমি রূপ দাও, ধন দাও আর কামক্রোধাদি রিপুসকল বিনাশ করো ।। ১৫ ৷৷

বিদ্যাবন্তং যশস্বন্তং লক্ষ্মীবন্তং জনং কুরু।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ১৬৷৷

তোমার ভক্তদের তুমি বিদ্বান, যশস্বী ও ধনবান করো তথা রূপ দাও, যশ দাও এবং কামক্রোধাদি রিপুদের নাশ করো ।। ১৬ ৷৷

প্রচণ্ডদৈত্যদর্পঘ্নে চণ্ডিকে প্রণতায় মে।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ১৭ ৷৷

বিশাল বিশাল দৈত্য-দর্পদলনী চণ্ডিকে! আমি তোমার শরণাগত, আমাকে রূপ দাও, যশ দাও এবং আমার কামক্রোধাদি রিপুসকল শেষ করো। ১৭ ৷৷

চতুর্ভুজে চতুর্বক্রসংস্তুতে পরমেশ্বরি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ১৮৷৷

চতুরানন ব্রহ্মার প্রশংসিত চারিহস্তধারিণী হে পরমেশ্বরি! তুমি রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং কামক্রোধাদি শত্রুদের বিনাশ করো। ১৮ ।।

কৃষ্ণেন সংস্তুতে দেবি শশ্বভক্ত্যা সদাম্বিকে।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ৷৷ ১৯৷৷

হে দেবি অশ্বিকে! স্বয়ং বিষ্ণু নিত্য নিরন্তর তোমার স্তুতি করেন। তুমি রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও আর কাম ক্রোধ ইত্যাদি রিপুগণকে দমন করে দাও ।। ১৯ ৷৷

হিমাচলসুতানাথসংস্তুতে পরমেশ্বরি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ২০৷৷

হিমালয়সুতা পার্বতীপতি মহাদেব দ্বারা প্রশংসিতা পরমেশ্বরি! তুমি রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং কামক্রোধাদি রিপুদের বিনাশ করো । ২০ ॥

ইন্দ্রাণীপতিসম্ভাবপূজিতে পরমেশ্বরি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ২১ ৷৷

শচীপতি ইন্দ্রের দ্বারা সৎভাবে পূজিতা হে পরমেশ্বরি! তুমি রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও আর কামক্রোধাদি রিপুদের বিনাশ করে দাও। ২১ ৷

দেবি প্রচণ্ডদোর্দণ্ডদৈত্যদর্পবিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি৷৷ ২২ ৷৷

প্রচণ্ড দোর্দণ্ডদৈত্যদর্পবিনাশিনি দেবি! তুমি রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং কামক্রোধাদি শত্রুদের নাশ করো । ২২ ।

দেবি ভক্তজনোদ্দামদত্তানন্দোদয়েহম্বিকে।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ৷৷ ২৩ ৷৷

দেবি অম্বিকে! তুমি তোমার ভক্তদের সর্বদাই অসীম আনন্দ প্রদান করো। আমাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং আমার কাম ক্রোধাদি রিপুগণকে নাশ করো । ২৩ ৷৷

পত্নীং মনোরমাং দেহি মনোবৃত্তানুসারিণীম্।
তারিণীং দুর্গসংসারসাগরস্য কুলোদ্ভবাম্৷ ২৪৷৷

আমার মন বুঝে চলতে পারে এরকম মনোরমা পত্নী আমাকে প্রদান করো,- যে দুর্গম সংসারসাগরতারিণী তথা উত্তম বংশ-জাতা। ২৪ ।।

ইদং স্তোত্রং পঠিত্বা তু মহাস্তোত্রং পঠেন্নরঃ।
সতু সপ্তশতীসংখ্যাবরমাপ্নোতি সম্পদাম্৷৷ ওঁ ৷৷ ২৫ ৷৷

যে এই স্তোত্র পাঠ ক'রে সপ্তশতীরূপী মহাস্তোত্র পাঠ করে, সে সপ্তশতীর জপসংখ্যাসম শ্রেষ্ঠ ফল প্রাপ্ত হয়। সাথে সাথে সে প্রভৃত সম্পত্তিও লাভ করে। ২৫ ৷৷

ইতি দেব্যা অর্গলাস্তোত্রং সম্পূর্ণম্।

দেবীর অর্গলাস্তোত্র সম্পূর্ণ হল।

অথ কীলকম্

Durga Saptashati
Durga Saptashati Image

অথ কীলকম্

কীলকস্তব

ওঁ অস্য শ্রীকীলকমন্ত্রস্য শিব ঋষিঃ, অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ, শ্রীমহাসরস্বতী দেবতা, শ্রীজগদম্বাপ্রীত্যর্থং সপ্তশতীপাঠাঙ্গত্বেন জপে বিনিয়োগঃ।

ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ।।

ওঁ চণ্ডিকাদেবীকে নমস্কার।

মার্কণ্ডেয় উবাচ।

মহর্ষি মার্কণ্ডেয় তাঁর শিষ্যদের বললেন

ওঁ বিশুদ্ধজ্ঞানদেহায় ত্রিবেদীদিব্যচক্ষুষে।
শ্রেয়ঃপ্রাপ্তিনিমিত্তায় নমঃ সোমার্ধধারিণে ৷৷ ১ ৷৷

বিশুদ্ধজ্ঞান যাঁর দেহ, তিনটি বেদ যাঁর তিনটি দিব্য নেত্র, যিনি কল্যাণ অর্থাৎ মোক্ষের হেতু এবং নিজ মস্তকে অর্ধচন্দ্রের মুকুটধারী সেই মহাদেবকে আমি প্রণাম করি।। ১ ।।

সর্বমেতদ্ বিজানীয়ান্মন্ত্রাণামভিকীলকম্।
সোহপি ক্ষেমমবাপ্নোতি সততং জাপ্যতৎপরঃ ৷৷ ২ ৷৷

মন্ত্রের যে অভিকীলক অর্থাৎ মন্ত্রসিদ্ধিতে বিঘ্ন উৎপাদনকারী শাপরূপী কীলককে যিনি নিবারণ করেন, সেই শ্রীশ্রীচণ্ডীকে সম্পূর্ণরূপে জানা প্রয়োজন (এবং জানার পর তাঁর উপাসনা করা প্রয়োজন)। যদিও চণ্ডী ছাড়া অন্য মন্ত্রও যে নিরন্তর জপ করে, সেও মঙ্গল লাভ করে। ২ ।।

সিধ্য্যচ্চাটনাদীনি বস্তুনি সকলান্যপি।
এতেন স্তবতাং দেবীং স্তোত্রমাত্রেণ সিদ্ধ্যতি ৷৷ ৩ ৷৷

তারও উচ্চাটন আদি কর্ম সিদ্ধি হয় এবং সে সমস্ত দুর্লভ বস্তু প্রাপ্ত হয়; তথাপি যে অন্য কোনও মন্ত্র জপ না করে কেবলমাত্র এই চণ্ডীর স্তোত্রের দ্বারা দেবীর স্তুতি করে, তাঁর স্তুতিমাত্রেই সেই সচ্চিদানন্দস্বরূপিণী দেবী প্রসন্না হন। ৩ ॥

ন মন্ত্রো নৌষধং তত্র ন কিঞ্চিদপি বিদ্যতে।

বিনা জাপ্যেন সিন্ধ্যেত সর্বমুচ্চাটনাদিকম্।। ৪ ৷৷

নিজের কর্মে সিদ্ধিলাভের জন্য তার (সেই মানুষের) মন্ত্র, ঔষধ বা অন্য কোনও সাধনার প্রয়োজন থাকে না। এমন কি জপ না করেও তার উচ্চাটন ইত্যাদি সমস্ত আভিচারিক কর্ম সিদ্ধ হয়ে যায়।। ৪ ।।

সমগ্রাণ্যপি সিদ্ধ্যন্তি লোকশঙ্কামিমাং হরঃ।
কৃত্বা নিমন্ত্রয়ামাস সর্বমেবমিদং শুভম্৷৷ ৫৷৷

শুধু এইই নয়, তার সমস্ত অভীষ্ট পর্যন্ত সিদ্ধ হয়। প্রশ্ন জাগতে পারে যে কেবল চণ্ডীর উপাসনাতেই যখন অথবা চণ্ডী ছাড়া অন্য মন্ত্রের উপাসনাতেও যখন সব কাজ একইভাবে সিদ্ধ হয়, সেক্ষেত্রে এর মধ্যে কোন্টা শ্রেষ্ঠ? এই প্রশ্নের উত্তরে ভগবান শঙ্কর সমস্ত জিজ্ঞাসুদের বলেছেন যে, চণ্ডীর সম্পূর্ণ স্তোত্রই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং মঙ্গলময় ।। ৫ ।।

স্তোত্রং বৈ চণ্ডিকায়াস্ত তচ্চ গুহ্যং চকার সঃ।
সমাপ্তির্ন চ পুণ্যস্য তাং যথাবন্নিয়ন্ত্রণাম্ ।। ৬৷৷

তারপর ভগবতী চণ্ডিকার সপ্তশতীনামক স্তোত্র মহাদেব গুপ্ত করে দিলেন। সপ্তশতী পাঠে যে পুণ্যলাভ হয় সেই পুণ্যের কখনও ক্ষয় হয় না; কিন্তু অন্য মন্ত্রের জপের পুণ্যফল একদিন না একদিন শেষ হয়ে যায়। অতএব ভগবান শিব যে অন্য মন্ত্রের চেয়ে সপ্তশতীর শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদন করেছেন, তাকে সঠিক বলে গ্রহণ করা উচিত।। ৬।

সোহপি ক্ষেমমবাপ্নোতি সর্বমেবং ন সংশয়ঃ।
কৃষ্ণায়াং বা চতুর্দশ্যামষ্টম্যাং বা সমাহিতঃ ৷৷ ৭ ॥

দদাতি প্রতিগৃহ্লাতি নান্যথৈষা প্রসীদতি।
ইত্থংরূপেণ কীলেন মহাদেবেন কীলিতম্। ৮৷৷

অন্য মন্ত্রজপকারী পুরুষও যদি সপ্তশতীর (চণ্ডীর) স্তোত্র এবং জপের অভ্যাস করে, তাহলে সেও পূর্ণরূপে মঙ্গলপ্রাপ্ত হয়, এবিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। যে সাধক কৃষ্ণচতুদশী অথবা কৃষ্ণাষ্টমীতে একাগ্রচিত্তে ভগবতীর সেবায় নিজের সর্বস্ব সমর্পণ করে এবং তারপর প্রসাদরূপে তা গ্রহণ করে, তার প্রতি ভগবতী যেমন প্রসন্না হন অন্য কোনও ভাবেই দেবী এরকম প্রসন্না হন না (১)। সিদ্ধির প্রতিবন্ধকস্বরূপ কীলকদ্বারা মহাদেব এই স্তোত্রকে কীলিত অর্থাৎ দৃঢ়ভাবে বদ্ধ করে রেখেছেন।। ৭-৮ ।।

যো নিষ্কীলাং বিধায়ৈনাং নিত্যং জপতি সংস্ফুটম্। স সিদ্ধঃ স গণঃ সোহপি গন্ধর্বো জায়তে নরঃ ৷৷ ৯ ৷৷

পূর্বোক্ত বিধিমত কীলকবিহীন অর্থাৎ কীলককে খুলে যে প্রতিদিন স্পষ্টউচ্চারণে এই সপ্তশতী স্তোত্র (চণ্ডী) পাঠ করে সে দেবীর পার্ষদ হয়ে সিদ্ধ ও গন্ধর্বদের সঙ্গে বাস করে। ৯ ।।

ন চৈবাপ্যটতস্তস্য ভয়ং ক্বাপীহ জায়তে।
নাপমৃত্যুবশং যাতি মৃতো মোক্ষমানাপুয়াৎ৷৷ ১০৷৷

সর্বত্র বিচরণ করেও এই সংসারে তার কোনও বা কোথাও ভয় থাকে না। তার অপমৃত্যু হয় না এবং মৃত্যুর পর সে মোক্ষলাভ করে। ১০ ।।

জ্ঞাত্বা প্রারভ্য কুর্বীত ন কুর্বাণো বিনশ্যতি।
ততো জ্ঞাত্বৈব সম্পন্নমিদং প্রারভ্যতে বুধৈঃ৷৷ ১১ ৷৷

অতএব কীলককে ভাল করে বুঝে এবং তাকে কীলকবিহীন করে তবেই সপ্তশতী পাঠ করা উচিত। যে তা না রে, তার বিনাশ হবে। (১) এইজন্য কীলক ও নিষ্কীলক জ্ঞান লাভ করলে পরে তবেই এই স্তোত্র নির্দোষ হয় এবং পণ্ডিতগণ এই নির্দোষ স্তোত্রই পাঠ করেন।। ১১ ।।

সৌভাগ্যাদি চযৎ কিঞ্চিদ্ দৃশ্যতে ললনাজনে। তৎ সর্বং তৎপ্রসাদেন তেন জাপ্যমিদং শুভম্৷৷ ১২ ৷৷

নারীদের যা কিছু সৌভাগ্য, সবই অনুগ্রহের ফল। সুতরাং এই কল্যাণকারী স্তোত্র সর্বদা পাঠ করা উচিত । ১২ ৷৷

শনৈস্ত জপ্যমানেহস্মিন্ স্তোত্রে সম্পত্তিরুচ্চকৈঃ। ভবত্যেব সমগ্রাপি ততঃ প্রারভ্যমেব তৎ৷৷ ১৩৷৷

এই স্তোত্র নিম্নস্বরে পাঠ করলে অল্প ফলদায়ী এবং উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করলে পূর্ণফলদায়ী হয়। সুতরাং উচ্চৈঃস্বরেই এই স্তোত্র পাঠ করা উচিত।। ১৩ ।।

ঐশ্বর্যং যৎপ্রসাদেন সৌভাগ্যারোগ্যসম্পদঃ। শত্রুহানিঃ পরো মোক্ষঃ সূয়তে সা ন কিং জনৈঃ। ওঁ৷৷ ১৪ ৷৷

যে দেবীর অনুগ্রহে ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য, আরোগ্য, সম্পত্তি, শত্রুনাশ এবং পরম মোক্ষলাভ পর্যন্ত হয়, সেই মঙ্গলময়ী জগদম্বাকে মানুষ কেন স্তুতি না করবে? ।। ১৪ ৷৷

ইতি দেব্যাঃ কীলকস্তোত্রং সম্পূর্ণম্ ॥

দেবীর কীলকস্তোত্র সম্পূর্ণ হল।

অথ বেদোক্তং রাত্রিসূক্তম্

Durga Saptashati
Durga Saptashati Image

অথ বেদোক্তং রাত্রিসূক্তম্ (১)

বেদোক্ত রাত্রিসূক্ত

ওঁ রাত্রীত্যাদ্যষ্টর্চস্য সূক্তস্য কুশিকঃ সৌভরো রাত্রিবা ভারদ্বাজো ঋষিঃ, রাত্রিদেবতা, গায়ত্রী ছন্দঃ, দেবীমাহাত্ম্যপাঠে বিনিয়োগঃ।

ওঁ রাত্রী ব্যখ্যদায়তী পুরুত্রা দেব্যক্ষভিঃ।
বিশ্বা অধি শ্রিয়োহধিত।। ১ ৷৷

মহৎতত্ত্বাদিরূপ ব্যাপক ইন্দ্রিয়গণের দ্বারা সব দেশে চরাচর সমস্ত বস্তুকে প্রকাশ করার নিমিত্ত এই রাত্রিরূপা দেবী তার মধ্যে থেকে জাত জাগতিক জীবের শুভাশুভ কর্মের ওপর বিশেষরূপে লক্ষ্য রাখেন এবং সেই কর্মানুরূপ ফলের ব্যবস্থা করার উপযুক্ত সমস্ত বিভূতি ধারণ করেন। ১ ৷৷

ওর্বপ্রা অমর্ত্যা নিবতো দেব্যুদ্বতঃ।
জ্যোতিষা বাধতে তমঃ ৷৷ ২ ৷৷

এই দেবী অমর এবং সমগ্র বিশ্বকে অধোমুখী তৃণগুল্ম থেকে ঊর্ধ্বমুখী বৃক্ষ পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয়ে অবস্থান করেন; শুধু তাই নয় ইনি জ্ঞানময় জ্যোতি দিয়ে জীবের অজ্ঞানান্ধকার নাশ করেন। ২ ৷

নিরু স্বসারমতোষসং দেব্যায়তী।
অপেদু হাসতে তমঃ৷৷ ৩ ৷৷

পরা চিৎশক্তিরূপ রাত্রিদেবী এসে তাঁর ভগ্নী ব্রহ্মবিদ্যাময়ী উষাদেবীকে প্রকাশ করেন, যেই প্রকাশে অবিদ্যাময় অন্ধকার স্বতঃই দূর হয়ে যায়।। ৩ ।।

সানো অদ্য যস্যা বয়ং নি তে যামন্নবিষ্ণুহি।
বৃক্ষে ন বসতিং বয়ঃ ৷৷ ৪ ৷৷

এই রাত্রিদেবী এখন আমার ওপর প্রসন্ন হোন। এঁর আগমনে আমরা ঠিক সেইরকমভাবে নিজেদের গৃহে সুখে শয়ন করি, যেমনভাবে রাত্রিতে গাছের ওপর নিজেদের তৈরী বাসায় পাখীরা সুখে রাত্রিবাস করে। ৷৷ ৪ ৷৷

নি গ্রামাসো অবিক্ষত নি পদ্বন্তো। নি পক্ষিণঃ। নি শ্যেনাসশ্চিদর্থিনঃ।।৫।।

ঐ কৃপাময়ী রাত্রিদেবীর কোলে সমস্ত গ্রামবাসী মানুষ, পদচারী গবাশ্বাদি পশু, পাখী এবং পতঙ্গাদি, প্রয়োজনীয় কর্মে পথচারী পথিক এবং শ্যেনাদিও সুখে শয়ন করে।। ৫ ।।

যাবয়া বৃক্যং বৃকং যবয় স্তেনমূর্য্যে। অথা নঃ সুতরা ভব ॥৬॥

হে রাত্রিময়ী চিৎশক্তি! তুমি কৃপা করে বাসনাময়ী ব্যাঘ্রী ও পাপময় ব্যাঘ্রদের থেকে আমাদের রক্ষা করো। কামাদি তস্করদেরও দূর করে দাও। তারপর সংসারসাগররূপ বৈতরণী অনায়াসে পার করে দাও- মোক্ষদায়িনী কল্যাণকারিণী হও ।। ৬ ।।

উপ মা পেশিশত্তমঃ কৃষ্ণং ব্যক্তমস্থিত। উষ ঋণের যাতয়। ৭॥

হে ঊষা! হে রাত্রির অধিষ্ঠাত্রী দেবী! চতুর্দিকে বিস্তৃত এই অজ্ঞানময় গাঢ় অন্ধকার আমার কাছে এসে হাজির হয়েছে। নিজের স্তোতৃগণকে ধনপ্রদানের দ্বারা তুমি যেমন তাদের ঋণ অপগম কর, সেইরকম এই ঋণের বোঝাও দূর করো-জ্ঞানদান দ্বারা এই অজ্ঞানকেও দূর করো।। ৭ ।।

উপ তে গা ইবাকরং বৃণীষ দুহিতর্দিবঃ। রাত্রি স্তোমং ন জিণ্ড্যষে৷৷৮ ৷৷

হে রাত্রিদেবী! তুমি দুগ্ধবতী গাভীর মতো। তোমার কাছে এসে স্তুতিজপাদি দ্বারা আমি তোমাকে প্রসন্ন করছি। তুমি পরমাকাশরূপ সর্বব্যাপী পরমাত্মার কন্যা! তোমার কৃপাতে আমি কামাদি শত্রুকে জয় করেছি, তুমি স্তোমরূপের ন্যায় আমার প্রদত্ত এই হবিষ্যও কৃপাপূর্বক গ্রহণ করো।। ৮ ৷৷

অথ তন্ত্রোক্তং রাত্রিসূক্তম্

Durga Saptashati
Durga Saptashati Image

অথ তন্ত্রোক্তং রাত্রিসূক্তম্

তন্ত্রোক্ত রাত্রিসূক্ত

ওঁ বিশ্বেশ্বরীং জগদ্ধাত্রীং স্থিতিসংহারকারিণীম্।
নিদ্রাং ভগবতীং বিষ্ণোরতুলাং তেজসঃ প্রভুঃ ৷৷ ১৷৷

ব্রহ্মোবাচ

ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বর্ষস্কারঃ স্বরাত্মিকা।
সুধা ত্বমক্ষরে নিত্যে ত্রিধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা৷৷ ২৷৷

অর্ধমাত্রাস্থিতা নিত্যা যানুচ্চার্যা বিশেষতঃ।
ত্বমেব সন্ধ্যা সাবিত্রী ত্বং দেবি জননী পরা৷৷ ৩৷৷

ত্বয়ৈতষ্কার্যতে বিশ্বং ত্বয়ৈতৎ সৃজ্যতে জগৎ।
ত্বয়ৈতৎ পাল্যতে দেবি ত্বমৎস্যন্তে চ সর্বদা৷ ৪ ৷৷

বিসৃষ্টৌ সৃষ্টিরূপা ত্বং স্থিতিরূপা চ পালনে।
তথা সংহৃতিরূপান্তে জগতোহস্য জগন্ময়ে।। ৫ ৷৷

মহাবিদ্যা মহামায়া মহামেধা মহাস্মৃতিঃ।
মহামোহা চ ভবতী মহাদেবী মহাসুরী ৷৷ ৬৷৷

প্রকৃতিত্ত্বং চ সর্বস্য গুণত্রয়বিভাবিনী।
কালরাত্রিমহারাত্রিমোহরাত্রিশ্চ দারুণা। ৭৷৷

ত্বং শ্রীস্ত্রমীশ্বরী ত্বং হ্রীস্ত্রং বুদ্ধির্বোধলক্ষণা।
লজ্জা পুষ্টিস্তথা তুষ্টিত্ত্বং শান্তিঃ ক্ষান্তিরেব চ৷৷৮৷৷

খজ্ঞিানী শূলিনী ঘোরা গদিনী চক্রিণী তথা।
শঙ্খিনী চাপিনী বাণভূশুণ্ডীপরিঘায়ুধা।। ৯ ৷৷

সৌম্যা সৌম্যতরাশেষসৌম্যেভ্যস্তুতিসুন্দরী।
পরাপরাণাং পরমা ত্বমেব পরমেশ্বরী।। ১০৷৷

যচ্চ কিঞ্চিৎ কৃচিদ্বস্তু সদসদ্বাখিলাত্মিকে।
তস্য সর্বস্য যা শক্তিঃ সা ত্বং কিং সূয়সে তদা৷৷ ১১৷৷

যয়া ত্বয়া জগৎস্রষ্টা জগৎপাত্যত্তি যো জগৎ।
সোহপি নিদ্রাবশং নীতঃ কস্তুাং স্তোতুমিহেশ্বরঃ। ১২ ৷৷

বিষ্ণুঃ শরীরগ্রহণমহমীশান এব চ।
কারিতাস্তে যতোহতত্ত্বাং কঃ স্তোতুং শক্তিমান্ ভবেৎ ৷৷ ১৩৷৷

সা ত্বমিত্থং প্রভাবৈঃ স্বৈরুদারৈর্দেবি সংস্তুতা।
মোহয়ৈতৌ দুরাধর্ষাবসুরৌ মধুকৈটভৌ৷৷ ১৪৷৷

প্রবোধং চ জগৎস্বামী নীয়তামচ্যুতো লঘু।
বোধশ্চ ক্রিয়তামস্য হপ্তমেতৌ মহাসুরৌ। ১৫ ৷৷

ইতি রাত্রিসূক্তম্ রাত্রিসূক্ত সম্পূর্ণ হল। ॥

শ্রীদেব্যথর্বশীর্ষম্

Durga Saptashati Image

শ্রীদেব্যথর্বশীর্ষম্

ওঁ সর্বে বৈ দেবা দেবীমুপতঙ্গুঃ কাসি ত্বং মহাদেবীতি৷৷ ১ ৷৷

ওঁ সকল দেবতারা দেবীর কাছে গিয়ে বিনীতভাবে প্রশ্ন করলেন-হে মহাদেবি! তুমি কে? ।॥১॥

সাব্রবীৎ-অহং ব্রহ্মস্বরূপিণী মত্তঃ। প্রকৃতিপুরুষাত্মকং জগৎ। শূন্যং চাশূন্যং চ৷৷ ২৷৷

তিনি বললেন-আমি ব্রহ্মস্বরূপ। আমার থেকেই প্রকৃতি-পুরুষাত্মক সৎরূপ ও অসৎরূপ জগৎ উৎপন্ন হয়েছে। ২ ৷৷

অহমানন্দানানন্দৌ। অহং বিজ্ঞানাবিজ্ঞানে। অহং ব্রহ্মাব্রহ্মণী বেদিতব্যে। অহং পঞ্চভূতান্যপঞ্চভূতানি। অহমখিলং জগৎ ৷৷ ৩ ॥

আমি আনন্দ ও নিরানন্দরূপা। আমি বিজ্ঞান আর অবিজ্ঞানরূপা। অবশ্য জ্ঞাতব্য ব্রহ্ম এবং আমিই অব্রহ্ম। পঞ্চীকৃত ও অপঞ্চীকৃত মহাভূতও আমিই। এই সমগ্র দৃশ্য জগৎ আমিই৷৷ ৩ ৷৷

বেদোহহমবেদোহহম্। বিদ্যাহমবিদ্যাহম্। অজাহমনজাহম্। অধশ্চোধবং চ তির্যক্ চাহম্।। ৪

বেদ ও অবেদ আমি। বিদ্যা ও অবিদ্যাও আমি, অজা আর অনজাও (প্রকৃতি ও তার থেকে ভিন্ন) আমি, ঊর্ধ্ব অধঃ, চারিদিকও আমিই।। ৪ ৷৷

অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরামি। অহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ। অহং মিত্রাবরুণাবুভৌ বিভর্মি। অহমিন্দ্রাগ্রী অহমশ্বিনাবুভৌ৷৷ ৫ ৷৷

রুদ্র ও বসু রূপে আমি সঞ্চার করি। আমি আদিত্য ও বিশ্বদেবের রূপে বিচরণ করি। মিত্র ও বরুণ এবং ইন্দ্র ও অগ্নি তথা অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের আমি ভরণ পোষণ করি।।৫ ॥

অহং সোমং ত্বষ্টারং পূষণং ভগং দধামি। অহং বিষ্ণুমুরুক্রমং ব্রহ্মাণমুত প্রজাপতিং দধামি।। ৬ ৷৷

সোম, ত্বষ্টা, পূষা এবং ভগকে আমি ধারণ করি। ত্রিলোক অধিকার করার জন্য যে বিশাল পদবিস্তার বিষ্ণু করেছেন সেই বিষ্ণু, ব্রহ্মদেব এবং প্রজাপতিকে আমিই ধারণ করি । ৬ ॥

অহং দধামি দ্রবিণং হবিস্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্নতে। অহং রাষ্ট্রী সঙ্গমনী বসূনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্। অহং সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্মম যোনিরস্বন্তঃ সমুদ্রে। য এবং বেদ। স দৈবীং সম্পদমাপ্নোতি ৷ ৭ ॥

দেবতাদের কাছে উত্তম হবি পৌঁছে দেওয়া এবং সোমরস নিষ্কাষণকারী যজমানের জন্য হবিযুক্ত ধনসম্পদ ধারণ আমিই করি। আমিই সমগ্র জগদীশ্বরী, উপাসককে ফলদায়িনী, ব্রহ্মরূপা ও যজ্ঞহোমের (যজনের উপযুক্ত দেবতাদের মধ্যে) মুখ্যা। আমি নিজ স্বরূপরূপ আকাশাদি সৃষ্টি করি। আমি আত্মতত্ত্বনিহিতা উপলব্ধিরূপ বুদ্ধিবৃত্তি। যে এসব জানে তার দৈবীসম্পত্তি লাভ হয়৷৷ ৭ ॥

তে দেবা অরুবন্ন নমো দেব্যৈ মহাদেব্যৈ শিবায়ৈ সততং নমঃ। নমঃ প্রকৃত্যৈ ভদ্রায়ৈ নিয়তাঃ প্রণতাঃ স্ম তাম্।॥ ৮৷৷

সেই দেবতারা তখন বললেন-দেবীকে প্রণাম! শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠতমদের নিজ নিজ কর্তব্যে প্রবৃত্তিরূপিণী, কল্যাণকর্ত্রীকে সদাই নমস্কার। ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতি দেবীকে প্রণাম। নিয়মিতভাবে আমরা তাঁকে প্রণাম করি।। ৮ ।।

তামগ্নিবর্ণাং তপসা জ্বলন্তীং বৈরোচনীং কর্মফলেষু জুষ্টাম্। দুর্গাং দেবীং শরণং প্রপদ্যামহেহসুরান্নাশয়িত্র্যৈ তে নমঃ। ৯ ৷

সেই অগ্নিবর্ণা, জ্ঞানে দেদীপ্যমানা, দীপ্তিমতী, কর্মফলদায়িনী, দুর্গাদেবীর আমরা শরণাগত হলাম। অসুরদলনী দেবি! তোমাকে প্রণাম ৷৷ ৯ ৷৷

দেবীং বাচমজনয়ন্ত দেবাস্তাং বিশ্বরূপাঃ পশবো বদন্তি। সা নো মন্দ্রেষমূর্জং দুহানা ধেনুর্বার্গম্মানুপ সুষ্টুতৈতু৷৷ ১০ ৷৷

প্রাণরূপ দেবগণ যে প্রকাশমান বৈখরী বাণীর উদ্গাতা, বিভিন্ন প্রাণীরা তাহাই উচ্চারণ করেন। সেই কামধেনুতুল্য আনন্দদায়িনী, অন্ন ও সামর্থ্যদায়িনী বারূপিণী ভগবতী সুন্দর স্তুতিতে প্রীত হয়ে আমাদের কাছে আসুন।। ১০ ৷৷

কালরাত্রীং ব্রহ্মস্তুতাং বৈষ্ণবীং স্কন্দমাতরম্। সরস্বতীমদিতিং দক্ষদুহিতরং নমামঃ পাবনাং শিবাম্৷৷ ১১ ৷৷

কালবিধ্বংসিনী, বেদসূক্তে স্তুতা বিষ্ণুশক্তি, স্কন্দমাতা (শিবশক্তি), সরস্বতী (ব্রহ্মশক্তি), দেবমাতা অদিতি এবং দক্ষকন্যা (সতী), পাপনাশিনী, কল্যাণকারিণী ভগবতীকে আমরা প্রণাম করি।। ১১ ৷৷

মহালক্ষ্ম্যৈ চ বিদ্মহে সর্বশক্ত্যৈ চ ধীমহি। তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ ৷৷ ১২৷৷

আমরা মহালক্ষ্মীকে যেন জানতে পারি এবং সেই সর্বশক্তিরূপিণীরই ধ্যান করি। সেই দেবী আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে সেই দিকে চালিত করুন৷৷ ১২ ৷৷

অদিতিহাজনিষ্ট দক্ষ যা দুহিতা তব। তাং দেবা অন্বজায়ন্ত ভদ্রা অমৃতবন্ধবঃ৷৷ ১৩ ৷৷

হে দক্ষ! আপনার যে কন্যা অদিতি, তিনি প্রসূতা হয়ে অমর কল্যাণময় দেবতাদের উৎপন্ন করেন । ১৩ ৷৷

কামো যোনিঃ কমলা বজ্রপাণিগুহা হসা মাতরিশ্বাভ্রমিন্দ্রঃ। পুনর্ভহা সকলা মায়য়া চ পুরূচ্যৈষা বিশ্বমাতাদিবিদ্যোম্৷৷ ১৪ ৷৷

কাম (ক), যোনি (এ), কমলা (ঈ), বজ্রপাণি-ইন্দ্র (ল), গুহা (হ্রীং), হ, স-বর্ণ, মাতরিশ্বা-বায়ু (ক), অভ্র (হ), ইন্দ্র (ল), পুনঃ গুহা (হ্রীং), স, ক, ল-বর্ণ, এবং মায়া (হ্রীং)-এরা সর্বাত্মিকা জগন্মাতার মূল বিদ্যা ব্রহ্মরূপিণী। ১৪ ৷৷

এষাহহত্মশক্তিঃ। এষা বিশ্বমোহিনী। পাশাঙ্কুশধনুর্বাণধরা। এষা শ্রীমহাবিদ্যা। য এবং বেদ স শোকং তরতি৷৷ ১৫ ৷৷

এই মন্ত্রের ভাবার্থ-শিবশক্ত্যভেদরূপা, ব্রহ্ম-বিষ্ণু-শিবাত্মিকা, সরস্বতী- লক্ষ্মী- গৌরীরূপা, অশুদ্ধ-মিশ্র-শুদ্ধোপাসনাত্মিকা, সমরসীভূত- শিবশ্যাত্মক ব্রহ্মরূপের নির্বিকল্প জ্ঞানদাত্রী, সর্বতত্ত্বাত্মিকা মহাত্রিপুরসুন্দরী। এই মন্ত্রসকল মন্ত্রের শিরোমণি এবং মন্ত্রশাস্ত্রে পঞ্চদশী ইত্যাদি শ্রীবিদ্যা নামে প্রসিদ্ধ। ইহার ছয়টা অর্থ অর্থাৎ ভাবার্থ, বাচ্যার্থ, সম্প্রদায়ার্থ, লৌকিকার্থ, রহস্যার্থ ও তত্ত্বার্থ 'নিত্যষোড়শীকার্ণব' গ্রন্থে উক্ত আছে। এইভাবে 'বরিবস্যারহস্যাদি' পুস্তকে আরও অনেক রকম অর্থ বলা আছে। শ্রুতিতেও এই মন্ত্র এইভাবে অর্থাৎ ক্বচিৎ স্বরূপোচ্চার, ক্বচিৎ লক্ষণা এবং লক্ষিত লক্ষণার্থে আবার কোথাও বর্ণের পৃথক পৃথক অবয়ব প্রদর্শন করে জেনে শুনেই অসংলগ্নভাবে বর্ণিত আছে। এর থেকে বোঝা যায় যে এই মন্ত্র কত গোপনীয় ও মহত্ত্বপূর্ণ। ইনি পরমাত্মার শক্তি, ইনি বিশ্বমোহিনী, পাশ, অঙ্কুশ, ধনু ও বাণধারিণী। ইনি শ্রীমহাবিদ্যা। যে তাঁকে এইভাবে জানে, সে শোকের দুস্তর সাগর পার হয়ে যায়।। ১৫ |

নমস্তে অস্ত্র ভগবতি মাতরস্মান্ পাহি সর্বতঃ৷৷ ১৬৷৷

ভগবতি! তোমাকে নমস্কার। মাগো! আমাদের সর্বতোভাবে রক্ষা করো।। ১৬ ।।

সৈষাষ্টৌ বসবঃ। সৈষৈকাদশ রুদ্রাঃ। সৈষা দ্বাদশাদিত্যাঃ। সৈষা বিশ্বেদেবাঃ সোমপা অসোমপাশ্চ। সৈষা যাতুধানা অসুরা রক্ষাংসি পিশাচা যক্ষাঃ সিদ্ধাঃ। সৈষা সত্ত্বরজস্তমাংসি। সৈষা ব্রহ্মবিষ্ণুরুদ্ররূপিণী। সৈষা প্রজাপতীন্দ্রমনবঃ। সৈষা গ্রহনক্ষত্রজ্যোতীংষি। কলাকাষ্ঠাদিকালরূপিণী। তামহং প্রণৌমি নিত্যম্। পাপাপহারিণীং দেবীং ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনীম্। অনন্তাং বিজয়াং শুদ্ধাং শরণ্যাং শিবদাং শিবাম্৷৷ ১৭৷৷

(মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিরা বলেন) ইনিই সেই অষ্টবসু, ইনিই একাদশ রুদ্র, ইনিই দ্বাদশ আদিত্য; ইনি সোমপায়ী ও সোম অপায়ী বিশ্বেদেব; ইনি যাতুধান (এক শ্রেণীর রাক্ষস), অসুর, রাক্ষস, পিশাচ, যক্ষ ও সিদ্ধ; ইনিই সত্ত্ব-রজ-তম; ইনিই ব্রহ্ম-বিষ্ণু-রুদ্ররূপিণী, ইনিই প্রজাপতি-ইন্দ্র-মনু, এই গ্রহ, নক্ষত্র ও তারা; ইনিই কলাকাষ্ঠাদি কালরূপিণী, পাপনাশিনী, ভোগ ও মোক্ষদায়িনী, অনন্তা, বিজয়াধিষ্ঠাত্রী, নির্দোষা, শরণ্যা, কল্যাণদাত্রী ও মঙ্গলরূপিণী। এই দেবীকে আমরা সদাই প্রণাম করি।। ১৭ ৷

বিয়দীকারসংযুক্তং বীতিহোত্রসমন্বিতম্। অর্ধেন্দুলসিতং দেব্যা বীজং সর্বার্থসাধকম্৷ ১৮৷৷ এবমেকাক্ষরং ব্রহ্ম যতয়ঃ শুদ্ধচেতসঃ। ধ্যায়ন্তি পরমানন্দময়া জ্ঞানাম্বুরাশয়ঃ ।। ১৯ ৷

বিয়ৎ-আকাশ (হ) তথা ঈ-কার যুক্ত, বীতিহোত্র-অগ্নি-(র) সহিত, অর্ধচন্দ্র অলঙ্কৃত দেবীর যে বীজ, তা সব মনোরথ পূর্ণ করে। এই রকমই এই একাক্ষর ব্রহ্ম (হ্রীং)-এর ধ্যান শুদ্ধচিত্ত যতিগণ করেন, যিনি নিরতিশয় আনন্দময় এবং জ্ঞানের সাগর। এই মন্ত্রকে দেবীপ্রণব বলে মনে করা হয়। ওঁকারের সমতুল্যই এই প্রণবও ব্যাপক অর্থে পরিপূর্ণ। সংক্ষেপে এর অর্থ হল ইচ্ছা-জ্ঞান-ক্রিয়া, ধারণ, অদ্বৈত, অখণ্ড, সচ্চিদানন্দ, সমরসীভূত, শিব শক্তিস্ফুরণ। ১৮-১৯ ৷৷

বাঙ্মায়া ব্রহ্মসূস্তস্মাৎ ষষ্ঠং বজ্রসমন্বিতম্। সূর্যোহ বামশ্রোত্রবিন্দুসংযুক্তষ্টাতৃতীয়কঃ । নারায়ণেন সম্মিশ্রো বায়ুশ্চাধরযুক্ ততঃ। বিচ্চে নবার্ণকোহর্ণঃ স্যান্সহদানন্দদায়কঃ।। ২০ ৷৷

বাণী (ঐং), মায়া (হ্রীং) ব্রহ্মস্-কাম (ক্লীং) এর আগে ছটী ব্যঞ্জন অর্থাৎ চ, সেই বজ্র অর্থাৎ আকারযুক্ত (চা), সূর্য (ম), 'অবাম শ্রোত্র'-দক্ষিণ কর্ণ (উ) আর বিন্দু অর্থাৎ অনুস্বারযুক্ত (মুং), ট বর্গের তৃতীয় বর্ণ ড, সেই নারায়ণ অর্থাৎ আ-সংযুক্ত (ডা), বায়ু (য়), সেই অধর অর্থাৎ এ-র সাথে যুক্ত (ঐ) এবং 'বিচ্চে' এই নবার্ণ মন্ত্র উপাসককে আনন্দ এবং ব্রহ্মসাযুজ্য দাতা ॥ ২০॥

হৃৎপুণ্ডরীকমধ্যস্থাং পাশাঙ্কুশধরাং সৌম্যাং প্রাতঃসূর্যসমপ্রভাম্। বরদাভয়হস্তকাম্। ত্রিনেত্রাং রক্তবসনাং ভক্তকামদুঘাং ভজে৷৷ ২১৷

এই মন্ত্রের অর্থ-হে চিৎস্বরূপিণী মহাসরস্বতী! হে সৎরূপিণী মহালক্ষ্মী! ব্রহ্মবিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্যে আমরা সর্বদাই তোমার ধ্যান করি। হে মহাকালী- মহালক্ষ্মী-মহাসরস্বতীরূপিণী চণ্ডিকে! তোমাকে নমস্কার। অবিদ্যারূপ রজ্জুর শক্ত গ্রন্থি খুলে দিয়ে আমাদের মুক্ত করো। হৃদয়-কমলের মধ্যস্থিত, প্রাতঃসূর্যের সম প্রভাশালিনী, পাশ ও অঙ্কুশ- ধারিণী, মনোহর রূপময়ী, বরাভয়মুদ্রাহস্তিনী, ত্রিনেত্রা, রক্তাম্বর-পরিধেয়া এবং কামধেনুসম ভক্তমনোরথ পূরণকারিণী দেবীকে ভজনা করি। ২১

নমামি ত্বাং মহাদেবীং মহাভয়বিনাশিনীম্।মহাদুর্গপ্রশমনীং মহাকারুণ্যরূপিণীম্।। ২২

মহাভয়নাশিনী, মহাসঙ্কট প্রশমনী ও মহান করুণার মূর্তিমতী তুমি। মহাদেবীকে আমরা নমস্কার করি ।। ২২ ৷৷

যস্যাঃ স্বরূপং ব্রহ্মাদয়ো ন জানন্তি তস্মাদুচ্যতে অজ্ঞেয়া। যস্যা অন্তো ন লভ্যতে তস্মাদুচ্যতে অনন্তা। যস্যা লক্ষ্যং নোপলক্ষ্যতে তস্মাদুচ্যতে অলক্ষ্যা। যস্যা জননং নোপলভ্যতে তস্মাদুচ্যতে অজা। একৈব সর্বত্র বর্ততে তস্মাদুচ্যতে একা। একৈব বিশ্বরূপিণী তস্মাদুচ্যতে নৈকা। অত এবোচ্যতে অজ্ঞেয়ানন্তালক্ষ্যাজৈকা নৈকেতি৷৷ ২৩ ৷৷

ব্রহ্মাদি দেবতাগণ পর্যন্ত যাঁর স্বরূপ জানেন না, যে জন্য তাঁকে অজ্ঞেয়া বলা হয়, যাঁর অন্ত খুঁজে না পাওয়াতে তাঁকে অনন্তা বলা হয়, যাঁর লক্ষ্য বুঝতে পারা যায় না বলে যাঁকে অলক্ষ্যা বলা হয়, যাঁর জন্মরহস্য বোঝাই যায় না বলে যাঁকে অজা বলা হয়, যিনি সর্বত্রই একক-যার জন্য তাঁকে একা বলা হয়, যিনি স্বয়ংই সমগ্র বিশ্বরূপে দৃশ্যমান, ফলে যাঁকে নৈকা বলা হয়, তিনি এইজন্যই অজ্ঞেয়া, অনন্তা, অলক্ষ্যা, অজা, একা ও নৈকা নামে অভিহিতা হন। ২৩।

মন্ত্রাণাং মাতৃকা দেবী শব্দানাং জ্ঞানরূপিণী। জ্ঞানানাং চিন্ময়াতীতা(১) শূন্যানাং শূন্যসাক্ষিণী। যস্যাঃ পরতরং নাস্তি সৈষা দুর্গা প্রকীর্তিতা৷৷ ২৪ ৷৷

সমস্ত মন্ত্রেই 'মাতৃকা'-মূলাক্ষররূপে অবস্থিতা, শব্দসমূহের মধ্যে জ্ঞান (অর্থ) রূপে অবস্থিতা, জ্ঞানের মধ্যে 'চিন্ময়াতীতা', শূন্যের মধ্যে 'শূন্যসাক্ষিণী' তথা যাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ আর কিছুই নেই, তিনি দুর্গা নামে প্রসিদ্ধা। ২৪ ৷৷

তাং দুর্গাং দুর্গমাং দেবীং দুরাচারবিঘাতিনীম্। নমামি ভবভীতোহহং সংসারার্ণবতারিণীম্৷ ২৫ ॥

দুর্বিজ্ঞেয়া, দুরাচারনাশিনী, সংসার সাগর হতে উদ্ধারকারিণী সেই দুর্গা দেবীকে ভবভয়ভীত আমরা নমস্কার করি।। ২৫ ৷

ইদমথর্বশীর্ষং যোহধীতে স পঞ্চাথর্বশীর্ষজপ ফলমাপ্নোতি। ইদমথর্বশীর্ষমজ্ঞাত্বা যোহর্চাং স্থাপয়তি শতলক্ষং প্রজপ্তাপি সোহচাসিদ্ধিং ন বিন্দতি। শতমষ্টোত্তরং চাস্য পুরশ্চর্যাবিধিঃ স্মৃতঃ। দশবারং পঠেদ্ যন্ত্র সদ্যঃ পাপৈঃ প্রমুচ্যতে। মহাদুর্গাণি তরতি মহাদেব্যাঃ প্রসাদতঃ। ২৬৷৷

এই অথর্বশীর্ষ যে পাঠ করে তার পঞ্চ অথর্বশীর্ষ জপের ফল লাভ হয়। এই অথর্বশীর্ষকে না জেনে যে প্রতিমাস্থাপন করে সে শত লক্ষ জপ করেও অর্চাসিদ্ধি পায় না। অষ্টোত্তর শতজপ (ইত্যাদি) ইহার পুরশ্চরণ বিধি। যে এই অথবশীর্ষ দশবার পাঠ করে সে সেই মুহূর্তেই সবপাপ হতে মুক্ত হয়ে যায় এবং মহাদেবীর প্রসাদে অতি বড় দুস্তর সঙ্কট থেকে উত্তীর্ণ হয়ে যায়৷৷ ২৬ ৷৷

সায়মধীয়ানো দিবসকৃতং পাপং নাশয়তি। প্রাতরধীয়ানো রাত্রিকৃতং পাপং নাশয়তি। সায়ং প্রাতঃ রযুঞ্জানো অপাপো ভবতি। নিশীথে তুরীয়সন্ধ্যায়াং জপ্তা বাক্সিদ্ধির্ভবতি। নূতনায়াং প্রতিমায়াং জপ্তা দেবতাসাংনিধ্যং ভবতি। প্রাণপ্রতিষ্ঠায়াং জত্ত্বা প্রাণানাং প্রতিষ্ঠা ভবতি। ভৌমাশ্বিন্যাং মহাদেবীসংনিধৌ জপ্তা মহামৃত্যুং তরতি। স মহামৃত্যুং তরতি য এবং বেদ। ইত্যুপনিষৎ।।

সন্ধ্যকালে পাঠ করলে দিনে কৃত পাপরাশি নষ্ট হয়। প্রাতঃকালে পাঠ করলে রাত্রিকালে কৃত পাপরাশি ধ্বংস হয়ে যায়। দুইবেলা পাঠ করলে পূর্ণ নিষ্পাপ হয়ে যায়। মধ্যরাত্রে তুরীয়(১) সন্ধ্যার সময় জপ করলে বাকসিদ্ধ হয়। নূতন প্রতিমায় জপ করলে দেবতাসান্নিধ্য প্রাপ্ত হয়। প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় জপ করলে প্রাণের প্রতিষ্ঠা হয়। ভৌমাশ্বিনী (অমৃতসিদ্ধি) যোগে মহাদেবীর সান্নিধ্যে জপ করলে মহামৃত্যুর থেকে রক্ষা হয়। যে এসব জানে সে মহামৃত্যুকে অতিক্রম করে। এটা হল অবিদ্যানাশিনী ব্রহ্মবিদ্যা।।